নষ্ট
রিক্সার টুংটাং আওয়াজে যে সময়ে ভোর হোতো এ শহরে, সেকালে নীল সাদা রঙ মেখে হরিণঘাটা দুধের গাড়ী পাড়া থেকে
পাড়ায় সকাল ফোটাতো । গাড়ী থেকে বোতলের ক্রেট নামানোর শব্দে ঘুম ভাঙতো অনেকের । হালকা
রঙের ছাপা শাড়ীতে একটি শ্যামলা যুবতী সকালের ঠিক সেই সময়ে দুদিকে বেণী দুলিয়ে
হেঁটে যেতো দুধসায়রের দিকে । ধরা যাক নাম তার পাঞ্চালী ।
ব্রাইট স্ট্রীটের ঠিক মোড়ে ছিলো ডিপোটা – দুধসায়র নামটা কে দিয়েছিলো কেউ জানে না । তবে
এর বয়স নয় নয় করে বছর দশেক হোলো । পাঞ্চালী এখানে কাজে ঢুকেছে প্রায় বছর খানেক আগে । রোজ
সকাল সাতটায় দুধের গাড়ী আসে ।তার
আগে তালা না খুললে দুধের গাড়ী ঘুরে যাবে, ফেরতা পথে আবার যখন আসবে ততক্ষণে ডিপোর সামনে লম্বা লাইন,পাবলিকের অসন্তোষ চরমে, চেঁচামেচি, গালাগাল তুঙ্গে । তাই পাঞ্চালীকে প্রায় একরকম না খেয়েই বেরোতে হয় রোজ, হনহন হেঁটে পৌঁছতে হয় । তিলজলা
বস্তি থেকে পাক্কা পনের মিনিটের পথ । তার
ভোর হয় পাঁচটায়, নিজেকে তৈরী করে, ভাইটাকে ওঠায়, স্কুলের
জন্য তৈরী করে তাকেও । তারই মধ্যে ঘর ঝাড়পোঁছ করে, বাবার জন্য রান্না করে, ভাইয়ের দুপুরের খাবার গুছিয়ে, বারোয়ারী কলতলা থেকে তিন বালতি জল ভরে রেখে সে বেরোয় । মা
নেই প্রায় পাঁচ বছর হোলো আর সেই থেকে বাড়ীর সব কাজ পাঞ্চালীর কাঁধে ।
তারপর হনহনিয়ে সোজা দুধের ডিপো, সেখানে এগারোটায় ছুটি হলে আবার দৌড় । ডিপোর
বাইরে সিঁড়িতে একটা হাড়গিলে কুকুর শুয়ে থাকে বারো মাস । বেরিয়ে
পাশের চায়ের দোকান থেকে দুটো বিস্কুট কিনে কুকুরটার সামনে রেখে হাঁটা দেয় পাঞ্চালী । বড়
রাস্তার মোড়ে এসে বাস ধরে পিকনিক গার্ডেনে নামে । ওখানে
সুধাংশু ব্যানার্জীর বাড়ীতে গত তিন মাস ধরে ডিউটি চলছে তার । দুপুর
বারোটা থেকে রাত আটটা, নার্সের
কাজ । সুধাংশুশেখর
একটা বড় স্ট্রোক হয়ে বিছানায় প্রায় দুবছর ধরে । সি আই
টি রোডের মিতালি নার্স সেন্টারের সঙ্গে তখন থেকেই মাসচুক্তি, দিনে দুই পর্বে দুজন নার্স – দুপুর বারোটা থেকে রাত আটটা আর রাত দশটা থেকে ভোর ছ’টা । নার্সিং কোর্স শেষ করে কোথাও কিছু না পেয়ে পাঞ্চালী এই
মিতালি নার্স সেন্টারে নাম লেখানোর দশদিনের মধ্যেই এই কাজটা পায় । আগেরজন
ছেড়ে গেছিলো, তার নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে সেই ডায়মন্ডহারবারে । তাই
পাঞ্চালীর ভাগ্যে শিঁকে ছেঁড়ে । বাড়ীটা ভালোই, মানে মানুষগুলো । সুধাংশুশেখরের দুই ছেলে, তাদের বউ আর চার ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার । পারিবারিক
ব্যবসা ছাপাখানার, আনন্দ
পালিত রোডে কারখানা ।দুপুরের
খাওয়াটা এ বাড়ীতেই হয়ে যায় পাঞ্চালীর, বেশ যত্ন করেই খাওয়ায় । রান্নার
মাসী লক্ষীদি বেড়ে দেয় আর বড় বউদি সামনে বসে থাকেন । ঐ
সময়েই উনি শ্বশুরের খোঁজখবর নেন বিশদে, ওষুধগুলো ঠিকমত পড়ছে কিনা, বাথরুম ঠিক মত হচ্ছে কিনা এইসব । বিকলে
চা বিস্কুটও ঠিকমত পায় পাঞ্চালী । শুধু সন্ধ্যের পরে সুধাংশুশেখরের ছোটছেলে শশাঙ্কশেখর এ
ঘরে এসে দাঁড়ালেই, কোনো
এক অজানা কারনে একটা হিমঠান্ডা স্রোত নামতে থাকে পাঞ্চালীর শিরদাঁড়া বেয়ে । লোকটা
বাবার কথা জিজ্ঞ্যেস করে অনেকক্ষন ধরে কিন্তু চোখদুটো পাঞ্চালীর সর্বাঙ্গ হাতড়ে
বেড়ায় । মানুষটা
ঘর থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার পর রোজই একটা কান্নার মত কিছু দলা পাকিয়ে ওঠে গলার কাছে । কষ্টটা
থেকেই যায় পাঞ্চালীর, যতক্ষন
না বাড়ি ফিরে বাথরুমে ঢুকে পাগলের মত জল ঢালতে থাকে সর্বাঙ্গে ।
কোনোদিনই আটটায় বেরোতে পারে না পাঞ্চালী । বড়
বউদিকে সব বুঝিয়ে বেরোতে বেরোতে প্রায় সাড়ে আটটা । তারপর
বাস ধরে তিলজলার মোড়ে এসে পাক্কা দশ মিনিট হেঁটে বাড়ি । সেসময়
শরীর যেন আর চলতে চায় না, তবু
চালাতে হয় ।বাড়ী ফিরে কাপড় পাল্টে স্নান সেরে রান্না চাপাতে হয় । বাবা
তাসের আড্ডা থেকে ফিরতে ফিরতে এগারোটা । তার
আগে ভাইকে খাইয়ে একটু আধটু পড়া দেখিয়ে ঘুমে ঢুলতে থাকে সে । বাবা
ফিরলে একসাথে খাওয়া সেরে তবে ঘুম । এসবের মধ্যে কোনো বৈচিত্র্য নেই, ভালো বা মন্দ লাগা নেই, দম দেওয়া পুতুলের মত দিনভর সে শুধু নিজেকে খরচ করে যায় । শুধু
ঐ দশটা মিনিট ছাড়া, যখন
পাঞ্চালীর ভেতরে প্রতিরাতে একটা নতুন সুর বেজে ওঠে । একটা
অচেনা সুর, একটা অজানা ভালোলাগা তাকে কিছুক্ষনের জন্য বিবশ করে দেয় । কেমন
একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে সে পেরিয়ে আসে বাসস্টপ থেকে বাড়ির পথটুকু । তাদের
বস্তিতে ঢোকার ঠিক আগে ডানদিকের বাড়িটার দোতলায় সে কোনোদিনও সরাসরি তাকায় না, কিন্তু বুঝতে পারে একটা ছায়ামুর্তি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে । রোজ
থাকে, রোজ – একদিনও
বাদ যেতে দেখেনি সে এই তিনমাসে।সকালে যাওয়ার পথে আড়চোখে দেখে সে রোজই, কোনোদিন চোখে পড়েনি তার । অত
সকালে হয়তো ওঠেইনা সে । খুব ইচ্ছে পাঞ্চালীর, একদিন সকালের আলোয় দ্যাখে । নইলে
রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোয় সে কেমন একটা আবছা অবয়ব পায়, একমাথা কোঁকড়া চুল, একটু ফর্সার দিকেই হবে, শুধু শরীরের ওপরটুকু দেখা যায়, দোহারা চেহারা । বয়স বোধহয় চব্বিশ পঁচিশই হবে । চব্বিশের
পাঞ্চালী ভাবতে ভাবতে ঘেমে ওঠে, চলার
গতি অকারণে বেড়ে যায় ।
সে জানে ওটা মল্লিকদের বাড়ি, রঘু মল্লিক, যার
সাত সাতটা বাস খাটে কলকাতার রাস্তায় । আর এও
জানে যে ওই সাতটা বাসেরই কোনো একটার স্টিয়ারিংয়ে বসে তার নিজের বাবা । কিন্তু
রঘু মল্লিকের সম্পর্কে বেশী কিছু জানে না সে, বাবাকে জিজ্ঞাসা করতেও ভয় হয়, যদি কিছু ধরে ফেলে । শুধু
এটুকু জানে মানুষটার এলাকায় খুব প্রতিপত্তি । পার্টি
অফিসে মোটা টাকা চাঁদা দেয়, তিলজলা
এলাকার একমাত্র দুর্গাপুজোটাও মোটামুটি এই লোকটার টাকাতেই হয় । লোকটা
নাকি নেশাভাঙ করে না, ধম্মকম্ম
নিয়ে থাকে, তবে ব্যবসার ব্যাপারে খুব হুঁশিয়ার । মনে
মনে অবয়বটাকে রঘু মল্লিকের ছেলেই ভেবে নেয় সে। আর রাত্রে বিছানায় শুয়ে, ঘুমে ঢলে পড়বার আগে পাঞ্চালী ভাবে ডাকাবুকো রঘু মল্লিকের ছেলে
মাসের পর মাস জানলায় দাঁড়িয়ে কাটায় কেন? সামনে আসে না কেন ? কোনো
কোনোদিন দুছটাক স্বপ্নও দেখে ফেলে সে, ছেলেটার সাথে ভুল করেও যদি মুখোমুখি হয়ে যায় রাস্তায়, কে আগে হাসবে ? কোনো কথা হবে কি ? সে তো লজ্জায় মিশে যাবে মাটিতে । একটা
মিষ্টি রঙীন স্বপ্ন পাঞ্চালীকে যেন পরম আদরে ঘুম পাড়িয়ে দেয় । তার
অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভয় কোথাও একটু নির্ভরতা পায় ।আধোঘুমে পাশ ফিরে ভাইটাকে বুকে টেনে নেয় সে ।
আজ ঘুমভাঙা থেকেই অকারনে একটা আলগা মন খারাপ ছুঁয়ে আছে পাঞ্চালীকে । সকাল
সোয়া ছটায়, যখন সে তৈরী হতে ব্যস্ত, বাবার দুই বন্ধু হঠাৎ এসে খবর দিলো, রঘু মল্লিক তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে আজ । ছেলের
খুব বাড়াবাড়ি, হাসপাতালে ভর্তি করবে সকালেই, তার আগে সবাইকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে যাবে ।
ঘরের ভেতরে দাঁড়িয়ে শুনতে শুনতে মাথাটা একবার টলে গেল পাঞ্চালীর । বাবা
ভেতরে আসতেই দৌড়ে গেল সে “কি
হয়েছে গো রঘু মিত্তিরের ছেলের?’’ মেয়ের
দিকে একটু অবাক চোখে তাকিয়ে যতীন বলল “ওমা ! তুই
জানিস না? ওর ছেলে তো পঙ্গু, শরীরের নার্ভগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে, এতদিন হাঁটাচলা করতে পারতো না তো । একজন
সারাক্ষনের চাকর আছে, সে
রোজ সকাল বিকেল খাইয়ে দিতো, সন্ধ্যায়
জানলায় বসিয়ে দিতো, বাথরুম
করিয়ে দিতো । এবার
বোধহয় রোগ আরো ছড়াচ্ছে, কাল
রাত থেকে খুব জ্বর, ছেলে
নাকি আর উঠে বসতেও পারছে না । ডাক্তার বলেছে এভাবেই বিছানা ধরা হয়ে যাবে। তারপর ……. , যাকগে গিয়ে দেখি । তুই আমাকে জলদি কিছু বেড়ে দে তো” ।
মার্চের শুরুর এই সময়টায় গরমটা জোরালো হয় না তেমন, তার উপর সকাল সাড়ে ছটায় সূর্য তো আড়মোড়া ভাঙে । অথচ
পাঞ্চালীর কেমন যেন মনে হচ্ছে চারপাশটা ঝলসে যাচ্ছে আগুনে, চোখদুটো এত জ্বালা করছে কেন ? গলার কাছে কি যেন একটা চাপ, এত কষ্ট কোথায় লুকিয়ে ছিলো তার ? যন্ত্রের মত বাবা আর ভাইকে খেতে দিয়ে বেড়িয়ে গেলো সে । কোথায়
যেন যাওয়ার কথা না তার? সে
মনে করতে পারে না কিছু, তার
পা দুটো যন্ত্রের মত হাঁটিয়ে নিয়ে যায় তাকে । যাওয়ার
পথে বাঁ পাশে পড়লো সেই চেনা বাড়ি, চেনা
জানালা । কেউ
নেই সেখানে, কেউ থাকবেও না আর । একটা
খালি জানালা শুধু থেকে গেলো তার জীবনে, ছবি উপড়ে নেওয়া ফ্রেমের মত । নিজের
অজান্তেই দুগাল বেয়ে জলের ধারা নামে তার, মুছবে না সে আজ । স্বপ্নগুলো মোমের মত গলে যাক আজ, নিঃশেষ হয়ে যাক । হঠাৎ
সামনে তাকাতেই দুধসায়রের ঝাপসা বোর্ডটা নজরে পড়লো পাঞ্চালীর । অভ্যেসবসে
কাপড়ের সাইডব্যাগে হাত ঢুকিয়ে সে টের পেলো, চাবিটা আনতে ভুলে গেছে আজ ।
গাড়ীটা খালি বোতল ফেরত নিতে নিতে সাড়ে এগারোটা বাজিয়ে দিলো আজ । আসলে, কানাইদা বদলা নিলো । সকালে
চাবি বাড়ীতে ভুলে আসাতে আবার ফিরে গিয়ে নিয়ে আসতে হয়েছে । যদিও
সে রিক্সা করে গেছে ও এসেছে, কানাইদা
কে গাড়ী নিয়ে প্রায় পনের মিনিট দাঁড়াতে হয়েছে । ডিপোর
সামনে লাইন পড়ে গেছে দেখে গাড়ী ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাহস করেনি হয়তো । আর
তাই ফিরতি পথে দেরী করে এলো । কোনোমতে দৌড়ে বাসস্টপে এলো, মিনিট পাঁচেক দাঁড়িয়ে বাস পেলেও ব্যানার্জী বাড়ী পৌছতে
সোয়া বারোটা বেজে গেলো । ঢুকতেই বড়বউদি বললো, “আমরা
তো চিন্তা করতে শুরু করেছিলাম ভাই, আর পাঁচ মিনিট দেখে সেন্টারে ফোন করতাম !’’
কোনমতে বুঝিয়ে পাঞ্চালী সুধাংশুশেখরের ঘরে ঢুকে টুকিটাকি কাজগুলো
সেরে ফেললো । মনটা
কোথায় ফেলে এসেছে নিজেই জানে না, অথচ
হাত পা গুলো যন্ত্রের মত রোজকার কাজগুলো করে চলেছে । হঠাৎ
তার মনে হোলো, এই বাড়ীর কাজটা তো সে ছেড়েই দিতে পারে ! রঘু মল্লিকের ছেলেরও তো এবার নার্স লাগবে একজন । যদি
সে কাজটা করে, তাহলে বাড়ীর কাছেও হবে আর মানুষটার যত্নও হবে । সে
যদি মনপ্রাণ দিয়ে সেবা শুশ্রুষা করে, তাহলে কি ভালো হবে না ? বাবাকে যদি বুঝিয়ে বলতে পারতো সে ! অবশ্য রঘু মল্লিকের তো অনেক পয়সা, বড় হাসপাতালে দেবে, বড় কোনো সেন্টার থেকে ভালো নার্স আনবে । তাকে
কেন রাখবে ?
বড়বউদির ডাকে হুঁশ ফিরলো পাঞ্চালীর, “শোনো না ভাই, আসলে আজ আমাদের খুড়শ্বশুরের কালীঘাটের বাড়ীতে গৃহপ্রবেশ ।আমাদের সবার নেমন্তন্ন দুপুরে । তোমার
বড়দা তো সকালেই চলে গেছেন, আমরা
এখন যাবো । ছ’টার মধ্যেই ফিরে আসবো সবাই । কারখানার
একটা বড় অর্ডার আছে বলে তোমার ছোড়দাই শুধু যেতে পারলো না । তুমি
একটু খেয়াল রেখো বাবার ।লক্ষীদি
তোমার খাবার বেড়ে দেবে, ঠিকঠাক
খেয়ে নিও । সন্ধ্যেবেলায়
কথা হবে বরং’’।
সবাই বেড়িয়ে গেলে পাঞ্চালী রোজকার মত সুধাংশুশেখরকে খাইয়ে দিলো । লক্ষীদিকে
সে নিজেই ডেকে বলে দিলো আজ সে খাবে না, শরীরটা ভালো নেই । আসলে আজ খিদে বোধটাই যেন নেই । নিজের
ভবিষ্যৎটা সে কিছুতেই ঠাহর করতে পারে না আর । ভাইটা
সবে ক্লাস ফাইভ, বাবার বাস ড্রাইভারীর সামান্য মাইনেতে আধপেটা খেয়ে
থাকতে হয় । মা যে
কি করে চালাতো ! অথচ, মা
মারা যাবার পরই তার হায়ার সেকেন্ডারীর রেজাল্ট বেরোলো । খুব
ইচ্ছে ছিলো আরও পড়ার কিন্তু বাবা বলেই দিলো একদিন, “তোর ভাইটাকে তো এবার স্কুলে দিতে হবে, খরচ আছে পড়ানোর, তোর পড়া আমি কি করে চালাই ?অনেক তো পড়লি এবার আমার সঙ্গে মিলে সংসারটা একটু আগলা!” খুব কেঁদেছিলো পাঞ্চালী লুকিয়ে, তার পর আপনা থেকেই শান্ত হয়ে ধরলো সংসারের হাল । ঘর
সামলে দিনে রাতে চার পাঁচটা টিউশানি করে সংসার টেনেছে সে । টাকা
জমিয়ে নার্সিংয়ের কোর্সটা করে কি আনন্দ যে পেয়েছিলো তা বলার নয় ! সেই থেকে লড়েই যাচ্ছে সে, নিজের সব ভুলে শুধু এই সংসারটার পিছনে দিনরাত এক করে
দিচ্ছে । ভাইটা
দাঁড়াতে আরও দশ বছর, তারপর
তার ছুটি । কিন্তু, তারপর কি ?সে জানে তার রূপ নেই, রঙ নেই, বাবার
টাকা নেই, কোথাও কিছু আলো দেখতে পায় না । তাকেও
বুঝি দেখতে পায় না কেউ, আর
যদি বা দেখছিলো কেউ, সে …. । ভাবতে
ভাবতে অবসাদ আর ক্লান্তিতে সোফায় বসেই ঘুমিয়ে পড়ে পাঞ্চালী ।কতক্ষন ঘুমিয়েছে জানে না, শুধু হঠাৎ প্রচন্ড একটা চাপে দমবন্ধ হয়ে ঘুম ভেঙে যায়
পাঞ্চালীর । মুখটা
কেউ যেন চেপে রেখেছে তার অসম্ভব শক্তিতে, আর একটা ঘিনঘিনে সরীসৃপের মত কিছু হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে তার
সর্বাঙ্গে, নিষ্পেশিত করছে তার প্রত্যেকটা অঙ্গ । প্রবল
আক্রোশে একটা সদ্যফোঁটা ফুল যেন তীব্র দলনে থেঁতলে দিচ্ছে কেউ । কি এক
অসহ্য যন্ত্রণায় টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে যতীন বাগচীর একরত্তি মেয়েটা । শরীরের
সব শক্তি জড়ো করে একবার শেষ চেষ্টা করে সে প্রতিরোধের । পারে
না, কিছুতেই পারে না জন্তুটাকে হার মানাতে । নোনা
জলে ভেসে যাচ্ছে সে ।
...