গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শুক্রবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৪

দেবাশিস সেনগুপ্ত


নষ্ট


রিক্সার টুংটাং আওয়াজে যে সময়ে ভোর হোতো এ শহরেসেকালে নীল সাদা রঙ মেখে হরিণঘাটা দুধের গাড়ী পাড়া থেকে পাড়ায় সকাল ফোটাতো  গাড়ী থেকে বোতলের ক্রেট নামানোর শব্দে ঘুম ভাঙতো অনেকের  হালকা রঙের ছাপা শাড়ীতে একটি শ্যামলা যুবতী সকালের ঠিক সেই সময়ে দুদিকে বেণী দুলিয়ে হেঁটে যেতো দুধসায়রের দিকে  ধরা যাক নাম তার পাঞ্চালী 

ব্রাইট স্ট্রীটের ঠিক মোড়ে ছিলো ডিপোটা – দুধসায়র নামটা কে দিয়েছিলো কেউ জানে না  তবে এর বয়স নয় নয় করে বছর দশেক হোলো  পাঞ্চালী এখানে কাজে ঢুকেছে প্রায় বছর খানেক আগে  রোজ সকাল সাতটায় দুধের গাড়ী আসে ।তার আগে তালা না খুললে দুধের গাড়ী ঘুরে যাবেফেরতা পথে আবার যখন আসবে ততক্ষণে ডিপোর সামনে লম্বা লাইন,পাবলিকের অসন্তোষ চরমেচেঁচামেচিগালাগাল তুঙ্গে  তাই পাঞ্চালীকে প্রায় একরকম না খেয়েই বেরোতে হয় রোজহনহন হেঁটে পৌঁছতে হয়  তিলজলা বস্তি থেকে পাক্কা পনের মিনিটের পথ  তার ভোর হয় পাঁচটায়নিজেকে তৈরী করেভাইটাকে ওঠায়স্কুলের জন্য তৈরী করে তাকেও  তারই মধ্যে ঘর ঝাড়পোঁছ করেবাবার জন্য রান্না করেভাইয়ের দুপুরের খাবার গুছিয়েবারোয়ারী কলতলা থেকে তিন বালতি জল ভরে রেখে সে বেরোয়  মা নেই প্রায় পাঁচ বছর হোলো আর সেই থেকে বাড়ীর সব কাজ পাঞ্চালীর কাঁধে 

তারপর হনহনিয়ে সোজা দুধের ডিপোসেখানে এগারোটায় ছুটি হলে আবার দৌড়  ডিপোর বাইরে সিঁড়িতে একটা হাড়গিলে কুকুর শুয়ে থাকে বারো মাস  বেরিয়ে পাশের চায়ের দোকান থেকে দুটো বিস্কুট কিনে কুকুরটার সামনে রেখে হাঁটা দেয় পাঞ্চালী  বড় রাস্তার মোড়ে এসে বাস ধরে পিকনিক গার্ডেনে নামে  ওখানে সুধাংশু ব্যানার্জীর বাড়ীতে গত তিন মাস ধরে ডিউটি চলছে তার  দুপুর বারোটা থেকে রাত আটটানার্সের কাজ  সুধাংশুশেখর একটা বড় স্ট্রোক হয়ে বিছানায় প্রায় দুবছর ধরে  সি আই টি রোডের মিতালি নার্স সেন্টারের সঙ্গে তখন থেকেই মাসচুক্তিদিনে দুই পর্বে দুজন নার্স – দুপুর বারোটা থেকে রাত আটটা আর রাত দশটা থেকে ভোর ছটা  নার্সিং কোর্স শেষ করে কোথাও কিছু না পেয়ে পাঞ্চালী এই মিতালি নার্স সেন্টারে নাম লেখানোর দশদিনের মধ্যেই এই কাজটা পায়  আগেরজন ছেড়ে গেছিলোতার নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে সেই ডায়মন্ডহারবারে  তাই পাঞ্চালীর ভাগ্যে শিঁকে ছেঁড়ে  বাড়ীটা ভালোইমানে মানুষগুলো  সুধাংশুশেখরের দুই ছেলেতাদের বউ আর চার ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার  পারিবারিক ব্যবসা ছাপাখানারআনন্দ পালিত রোডে কারখানা ।দুপুরের খাওয়াটা এ বাড়ীতেই হয়ে যায় পাঞ্চালীরবেশ যত্ন করেই খাওয়ায়  রান্নার মাসী লক্ষীদি বেড়ে দেয় আর বড় বউদি সামনে বসে থাকেন  ঐ সময়েই উনি শ্বশুরের খোঁজখবর নেন বিশদেওষুধগুলো ঠিকমত পড়ছে কিনাবাথরুম ঠিক মত হচ্ছে কিনা এইসব  বিকলে চা বিস্কুটও ঠিকমত পায় পাঞ্চালী  শুধু সন্ধ্যের পরে সুধাংশুশেখরের ছোটছেলে শশাঙ্কশেখর এ ঘরে এসে দাঁড়ালেইকোনো এক অজানা কারনে একটা হিমঠান্ডা স্রোত নামতে থাকে পাঞ্চালীর শিরদাঁড়া বেয়ে  লোকটা বাবার কথা জিজ্ঞ্যেস করে অনেকক্ষন ধরে কিন্তু চোখদুটো পাঞ্চালীর সর্বাঙ্গ হাতড়ে বেড়ায়  মানুষটা ঘর থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার পর রোজই একটা কান্নার মত কিছু দলা পাকিয়ে ওঠে গলার কাছে  কষ্টটা থেকেই যায় পাঞ্চালীরযতক্ষন না বাড়ি ফিরে বাথরুমে ঢুকে পাগলের মত জল ঢালতে থাকে সর্বাঙ্গে 

কোনোদিনই আটটায় বেরোতে পারে না পাঞ্চালী  বড় বউদিকে সব বুঝিয়ে বেরোতে বেরোতে প্রায় সাড়ে আটটা  তারপর বাস ধরে তিলজলার মোড়ে এসে পাক্কা দশ মিনিট হেঁটে বাড়ি  সেসময় শরীর যেন আর চলতে চায় নাতবু চালাতে হয় ।বাড়ী ফিরে কাপড় পাল্টে স্নান সেরে রান্না চাপাতে হয়  বাবা তাসের আড্ডা থেকে ফিরতে ফিরতে এগারোটা  তার আগে ভাইকে খাইয়ে একটু আধটু পড়া দেখিয়ে ঘুমে ঢুলতে থাকে সে  বাবা ফিরলে একসাথে খাওয়া সেরে তবে ঘুম  এসবের মধ্যে কোনো বৈচিত্র্য নেইভালো বা মন্দ লাগা নেইদম দেওয়া পুতুলের মত দিনভর সে শুধু নিজেকে খরচ করে যায়  শুধু ঐ দশটা মিনিট ছাড়াযখন পাঞ্চালীর ভেতরে প্রতিরাতে একটা নতুন সুর বেজে ওঠে  একটা অচেনা সুরএকটা অজানা ভালোলাগা তাকে কিছুক্ষনের জন্য বিবশ করে দেয়  কেমন একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে সে পেরিয়ে আসে বাসস্টপ থেকে বাড়ির পথটুকু  তাদের বস্তিতে ঢোকার ঠিক আগে ডানদিকের বাড়িটার দোতলায় সে কোনোদিনও সরাসরি তাকায় নাকিন্তু বুঝতে পারে একটা ছায়ামুর্তি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে  রোজ থাকেরোজ – একদিনও বাদ যেতে দেখেনি সে এই তিনমাসে।সকালে যাওয়ার পথে আড়চোখে দেখে সে রোজইকোনোদিন চোখে পড়েনি তার  অত সকালে হয়তো ওঠেইনা সে  খুব ইচ্ছে পাঞ্চালীরএকদিন সকালের আলোয় দ্যাখে  নইলে রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোয় সে কেমন একটা আবছা অবয়ব পায়একমাথা কোঁকড়া চুলএকটু ফর্সার দিকেই হবেশুধু শরীরের ওপরটুকু দেখা যায়দোহারা চেহারা  বয়স বোধহয় চব্বিশ পঁচিশই হবে  চব্বিশের পাঞ্চালী ভাবতে ভাবতে ঘেমে ওঠেচলার গতি অকারণে বেড়ে যায় 

সে জানে ওটা মল্লিকদের বাড়িরঘু মল্লিকযার সাত সাতটা বাস খাটে কলকাতার রাস্তায়  আর এও জানে যে ওই সাতটা বাসেরই কোনো একটার স্টিয়ারিংয়ে বসে তার নিজের বাবা  কিন্তু রঘু মল্লিকের সম্পর্কে বেশী কিছু জানে না সেবাবাকে জিজ্ঞাসা করতেও ভয় হয়যদি কিছু ধরে ফেলে  শুধু এটুকু জানে মানুষটার এলাকায় খুব প্রতিপত্তি  পার্টি অফিসে মোটা টাকা চাঁদা দেয়তিলজলা এলাকার একমাত্র দুর্গাপুজোটাও মোটামুটি এই লোকটার টাকাতেই হয়  লোকটা নাকি নেশাভাঙ করে নাধম্মকম্ম নিয়ে থাকেতবে ব্যবসার ব্যাপারে খুব হুঁশিয়ার  মনে মনে অবয়বটাকে রঘু মল্লিকের ছেলেই ভেবে নেয় সে। আর রাত্রে বিছানায় শুয়েঘুমে ঢলে পড়বার আগে পাঞ্চালী ভাবে ডাকাবুকো রঘু মল্লিকের ছেলে মাসের পর মাস জানলায় দাঁড়িয়ে কাটায় কেনসামনে আসে না কেন ? কোনো কোনোদিন দুছটাক স্বপ্নও দেখে ফেলে সেছেলেটার সাথে ভুল করেও যদি মুখোমুখি হয়ে যায় রাস্তায়কে আগে হাসবে ? কোনো কথা হবে কি ? সে তো লজ্জায় মিশে যাবে মাটিতে  একটা মিষ্টি রঙীন স্বপ্ন পাঞ্চালীকে যেন পরম আদরে ঘুম পাড়িয়ে দেয়  তার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভয় কোথাও একটু নির্ভরতা পায় ।আধোঘুমে পাশ ফিরে ভাইটাকে বুকে টেনে নেয় সে 

আজ ঘুমভাঙা থেকেই অকারনে একটা আলগা মন খারাপ ছুঁয়ে আছে পাঞ্চালীকে  সকাল সোয়া ছটায়যখন সে তৈরী হতে ব্যস্তবাবার দুই বন্ধু হঠাৎ এসে খবর দিলোরঘু মল্লিক তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে আজ  ছেলের খুব বাড়াবাড়িহাসপাতালে ভর্তি করবে সকালেইতার আগে সবাইকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে যাবে 

ঘরের ভেতরে দাঁড়িয়ে শুনতে শুনতে মাথাটা একবার টলে গেল পাঞ্চালীর  বাবা ভেতরে আসতেই দৌড়ে গেল সে “কি হয়েছে গো রঘু মিত্তিরের ছেলের?’’ মেয়ের দিকে একটু অবাক চোখে তাকিয়ে যতীন বলল “ওমা ! তুই জানিস নাওর ছেলে তো পঙ্গুশরীরের নার্ভগুলো শুকিয়ে যাচ্ছেএতদিন হাঁটাচলা করতে পারতো না তো  একজন সারাক্ষনের চাকর আছেসে রোজ সকাল বিকেল খাইয়ে দিতোসন্ধ্যায় জানলায় বসিয়ে দিতোবাথরুম করিয়ে দিতো  এবার বোধহয় রোগ আরো ছড়াচ্ছেকাল রাত থেকে খুব জ্বরছেলে নাকি আর উঠে বসতেও পারছে না  ডাক্তার বলেছে এভাবেই বিছানা ধরা হয়ে যাবে। তারপর ……. , যাকগে গিয়ে দেখি  তুই আমাকে জলদি কিছু বেড়ে দে তো” 
মার্চের শুরুর এই সময়টায় গরমটা জোরালো হয় না তেমনতার উপর সকাল সাড়ে ছটায় সূর্য তো আড়মোড়া ভাঙে  অথচ পাঞ্চালীর কেমন যেন মনে হচ্ছে চারপাশটা ঝলসে যাচ্ছে আগুনেচোখদুটো এত জ্বালা করছে কেন ? গলার কাছে কি যেন একটা চাপএত কষ্ট কোথায় লুকিয়ে ছিলো তার ? যন্ত্রের মত বাবা আর ভাইকে খেতে দিয়ে বেড়িয়ে গেলো সে  কোথায় যেন যাওয়ার কথা না তারসে মনে করতে পারে না কিছুতার পা দুটো যন্ত্রের মত হাঁটিয়ে নিয়ে যায় তাকে  যাওয়ার পথে বাঁ পাশে পড়লো সেই চেনা বাড়িচেনা জানালা  কেউ নেই সেখানেকেউ থাকবেও না আর  একটা খালি জানালা শুধু থেকে গেলো তার জীবনেছবি উপড়ে নেওয়া ফ্রেমের মত  নিজের অজান্তেই দুগাল বেয়ে জলের ধারা নামে তারমুছবে না সে আজ  স্বপ্নগুলো মোমের মত গলে যাক আজনিঃশেষ হয়ে যাক  হঠাৎ সামনে তাকাতেই দুধসায়রের ঝাপসা বোর্ডটা নজরে পড়লো পাঞ্চালীর  অভ্যেসবসে কাপড়ের সাইডব্যাগে হাত ঢুকিয়ে সে টের পেলোচাবিটা আনতে ভুলে গেছে আজ 

গাড়ীটা খালি বোতল ফেরত নিতে নিতে সাড়ে এগারোটা বাজিয়ে দিলো আজ  আসলেকানাইদা বদলা নিলো  সকালে চাবি বাড়ীতে ভুলে আসাতে আবার ফিরে গিয়ে নিয়ে আসতে হয়েছে  যদিও সে রিক্সা করে গেছে ও এসেছেকানাইদা কে গাড়ী নিয়ে প্রায় পনের মিনিট দাঁড়াতে হয়েছে  ডিপোর সামনে লাইন পড়ে গেছে দেখে গাড়ী ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাহস করেনি হয়তো  আর তাই ফিরতি পথে দেরী করে এলো  কোনোমতে দৌড়ে বাসস্টপে এলোমিনিট পাঁচেক দাঁড়িয়ে বাস পেলেও ব্যানার্জী বাড়ী পৌছতে সোয়া বারোটা বেজে গেলো  ঢুকতেই বড়বউদি বললো, “আমরা তো চিন্তা করতে শুরু করেছিলাম ভাইআর পাঁচ মিনিট দেখে সেন্টারে ফোন করতাম !’’

কোনমতে বুঝিয়ে পাঞ্চালী সুধাংশুশেখরের ঘরে ঢুকে টুকিটাকি কাজগুলো সেরে ফেললো  মনটা কোথায় ফেলে এসেছে নিজেই জানে নাঅথচ হাত পা গুলো যন্ত্রের মত রোজকার কাজগুলো করে চলেছে  হঠাৎ তার মনে হোলোএই বাড়ীর কাজটা তো সে ছেড়েই দিতে পারে ! রঘু মল্লিকের ছেলেরও তো এবার নার্স লাগবে একজন  যদি সে কাজটা করেতাহলে বাড়ীর কাছেও হবে আর মানুষটার যত্নও হবে  সে যদি মনপ্রাণ দিয়ে সেবা শুশ্রুষা করেতাহলে কি ভালো হবে না ? বাবাকে যদি বুঝিয়ে বলতে পারতো সে ! অবশ্য রঘু মল্লিকের তো অনেক পয়সাবড় হাসপাতালে দেবেবড় কোনো সেন্টার থেকে ভালো নার্স আনবে  তাকে কেন রাখবে ?  
          
বড়বউদির ডাকে হুঁশ ফিরলো পাঞ্চালীর, “শোনো না ভাইআসলে আজ আমাদের খুড়শ্বশুরের কালীঘাটের বাড়ীতে গৃহপ্রবেশ ।আমাদের সবার নেমন্তন্ন দুপুরে  তোমার বড়দা তো সকালেই চলে গেছেনআমরা এখন যাবো  টার মধ্যেই ফিরে আসবো সবাই  কারখানার একটা বড় অর্ডার আছে বলে তোমার ছোড়দাই শুধু যেতে পারলো না  তুমি একটু খেয়াল রেখো বাবার ।লক্ষীদি তোমার খাবার বেড়ে দেবেঠিকঠাক খেয়ে নিও  সন্ধ্যেবেলায় কথা হবে বরং’’

সবাই বেড়িয়ে গেলে পাঞ্চালী রোজকার মত সুধাংশুশেখরকে খাইয়ে দিলো  লক্ষীদিকে সে নিজেই ডেকে বলে দিলো আজ সে খাবে নাশরীরটা ভালো নেই  আসলে আজ খিদে বোধটাই যেন নেই  নিজের ভবিষ্যৎটা সে কিছুতেই ঠাহর করতে পারে না আর  ভাইটা সবে ক্লাস ফাইভবাবার বাস ড্রাইভারীর সামান্য মাইনেতে আধপেটা খেয়ে থাকতে হয়  মা যে কি করে চালাতো ! অথচমা মারা যাবার পরই তার হায়ার সেকেন্ডারীর রেজাল্ট বেরোলো  খুব ইচ্ছে ছিলো আরও পড়ার কিন্তু বাবা বলেই দিলো একদিন, “তোর ভাইটাকে তো এবার স্কুলে দিতে হবেখরচ আছে পড়ানোরতোর পড়া আমি কি করে চালাই ?অনেক তো পড়লি এবার আমার সঙ্গে মিলে সংসারটা একটু আগলা!” খুব কেঁদেছিলো পাঞ্চালী লুকিয়েতার পর আপনা থেকেই শান্ত হয়ে ধরলো সংসারের হাল  ঘর সামলে দিনে রাতে চার পাঁচটা টিউশানি করে সংসার টেনেছে সে  টাকা জমিয়ে নার্সিংয়ের কোর্সটা করে কি আনন্দ যে পেয়েছিলো তা বলার নয় ! সেই থেকে লড়েই যাচ্ছে সেনিজের সব ভুলে শুধু এই সংসারটার পিছনে দিনরাত এক করে দিচ্ছে  ভাইটা দাঁড়াতে আরও দশ বছরতারপর তার ছুটি  কিন্তুতারপর কি ?সে জানে তার রূপ নেইরঙ নেইবাবার টাকা নেইকোথাও কিছু আলো দেখতে পায় না  তাকেও বুঝি দেখতে পায় না কেউআর যদি বা দেখছিলো কেউসে ….  ভাবতে ভাবতে অবসাদ আর ক্লান্তিতে সোফায় বসেই ঘুমিয়ে পড়ে পাঞ্চালী ।কতক্ষন ঘুমিয়েছে জানে নাশুধু হঠাৎ প্রচন্ড একটা চাপে দমবন্ধ হয়ে ঘুম ভেঙে যায় পাঞ্চালীর  মুখটা কেউ যেন চেপে রেখেছে তার অসম্ভব শক্তিতেআর একটা ঘিনঘিনে সরীসৃপের মত কিছু হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে তার সর্বাঙ্গেনিষ্পেশিত করছে তার প্রত্যেকটা অঙ্গ  প্রবল আক্রোশে একটা সদ্যফোঁটা ফুল যেন তীব্র দলনে থেঁতলে দিচ্ছে কেউ  কি এক অসহ্য যন্ত্রণায় টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে যতীন বাগচীর একরত্তি মেয়েটা  শরীরের সব শক্তি জড়ো করে একবার শেষ চেষ্টা করে সে প্রতিরোধের  পারে নাকিছুতেই পারে না জন্তুটাকে হার মানাতে  নোনা জলে ভেসে যাচ্ছে সে 

...