বিসর্জন
সিধু কাকার দোকান থেকে নিজের জন্য চুড়িদার,মা শাড়ি কিনে বাবার সাইকেলের পিছনে চেপে ফিরছিল
পূর্ণিমা।পরদিন স্কুলে বন্ধুদের কি বলবে তা নিয়ে নিজের মনে রঙিন স্বপ্নের জাল
বুনছিল।উল্টো দিক থেকে আসা একটা লড়ির ধাক্কায়ে এক মুহূর্ত সব স্বপ্নের আবসান।
জ্ঞান ফিরে প্রথম পাওয়া ধাক্কাটাই সামলে উঠতে পূর্ণিমার বেশ কিছুদিন লেগে
গেল।কিছুতেই সে মানতে পারে না যে বাবা আর নেই । হাসপাতালে
নিয়ে যাওয়ার আগেই তার বাবার জীবনের যবনিকা পতন ঘটে যায়। উক্ত ঘটনার পর আরও ৮টি বছর কেটে গেল । স্বামীর
মৃত্যুর পর সুনন্দা মেয়ে পূর্ণিমাকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে আসেন।সেখানে অত্যন্ত কষ্ট
করে তিনি মেয়েকে বি এ পযন্ত পড়ান । পূর্ণিমার মামারা ভালো ছেলে দেখে তার বিয়ে দিল।মেয়ের
বিয়ের পর সুনন্দা দেবী দায়মুক্ত হলেন ঠিকই তবু একমাত্র কন্যাকে তার স্বামীর ঘরে
পাঠিয়ে বাঙালি জননীর চিরন্তন হৃদয়ে বেদনা তাকে বেদনাহত করতো । তবু
এই বেদনার মধ্যে ছিল এক অনির্বচনীয় তৃপ্তি।ছেলেটি এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ
করে।কিছু জমিজমা আছে।স্বচ্ছল পরিবার, পূর্ণিমাও
খুব খুশি । কন্যার সুখ জননীর মনেও প্রশান্তি এনেছে ।
এই বছর পূজোর কদিন খুব আনন্দে কেটেছে পূর্ণিমার । মণ্ডপে
মণ্ডপে ঠাকুর দেখেছে সে অজয়ের সাথে,ফুচকা,আইসক্রিম খেয়েছে।বিয়ের পর অজয়ের সাথে পুরি বেড়াতে
গিয়েছিল,সমুদ্রে স্নান করতে কি ভয় ছিল পূর্ণিমার।ঢেউয়ের
ধাক্কায়ে আছড়ে পড়েছে বেলাভূমিতে।হো হো করে হাসতে হাসতে অজয় তাকে তুলেছে।এর আগে
কোনদিন পূর্ণিমা গ্রামের বাড়ি বাইরে যায়নি। নিজেদের বাড়ি আর মামাবাড়ি এই ছিল তার
জগত
। পূজোর ৪দিন আনন্দের পর আজ পূর্ণিমার মনটা একটু
খারাপ।কারন আজ বিজয়া দশমী।শাশুড়ীর সাথে কুচো নিমকি নাড়ু ও বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন
বানিয়েছে সারা সন্ধ্যে।এবার শাশুড়ীর সাথে সিঁদুর খেলাতে মেতেছে সে।বাড়ী এসে
আয়েনাতে নিজের মুখ দেখে অনাবিল আনন্দে তার বুক ভরে উঠল।তার মনে আছে ছেলেবেলাতে মাও
এমন করে সিঁদুর খেলত কাকিমা জেঠিমাদের সাথে।পাড়ার ছেলেরা সকলে মিলে প্রতিমা নিরঞ্জনের উদ্দেশ্যে “দুর্গা মাই কি জয়” ধ্বনি
দিতে দিতে আসছে গঙ্গার উদ্দেশ্যে।তারপর প্রতিমা নৌকায়ে চাপিয়ে মাঝগঙ্গার দিকে চলল
পাড়ার ছেলেরা।সেই সময় ঘটল চরম বিপত্তি।প্রতিমা নৌকা থেকে নদীতে ফেলার সময় টাল
সামলাতে না পেরে অজয় পড়ে গেল জলে।সে যে সাঁতার জানত না টা পাড়ার কেউ জানতো না । অনেক
খানাতাল্লাশির পরে অজয়ের নিষ্প্রাণ দেহ যখন উদ্ধার হল তখন সবে সূর্য উঠেছে।