রুমাদেবী দুপুরবেলা ফোন করে মেয়ে কে বলেলন,"আমাকে এসে নিয়ে যা, সোনা। আমার আর এক মুহূর্ত এই বাড়িতে ভালো লাগছে না।তুই আস্তে না পারিস আমি একাই ট্রেনে বসে যাবো, তুই হাওড়ায় নাবিয়ে নিবি, সেটাতো পারবি?" সোনা হেসে বলল, "আমি যাব মা , তোমায় নিয়ে চলে আসবো,চিন্তা করোনা। কি হয়েছে আগে সেটা তো বলো।" সোনা মায়ের চাপা গলায় অভিযোগ শুনে বুঝল, সাধারণ ব্যাপার কিন্তু দাদার বলার ধরনটা সত্যিই মাকে বলার মতো নয়। দাদা সব সময় একটু উদ্ধৃত আর বউদি আসারপর, বউদির সামনে মাকে কিছু বললে মায়ের অপমানে লাগছে বেশী লাগতে পারে, সেটা বোঝার মতো মনসিকতা,দাদার কোনোদিনই ছিলনা,এখনো নেই। সোনা এইসব নিয়ে মাথা ঘামায়না কোনোদিনই,এখনওঘামালোনা। সে মাকে বড্ড ভালবাসে,মায়ের কথা তার কাছে বেদ বাক্য।
মাকে নিয়ে আসতে গেল সেই শনিবারই। দেখলো মা ব্যাগ গুছিয়ে তৈরি। মাকে নিয়ে সোনা ট্রেনে বসল,খুব ভীড়। কোনো ক্রমে মায়ের একটা বসার জায়গা করে দিয়ে,মাকে আগলে দাঁড়িয়ে আছে। মা ক্রমাগত বলে চলেছে,কিভাবে অসুস্থ ছেলেকে মরার হাত থেকে বাঁচিয়ে তুলেছিল মা। মাঝে মাঝে বলছে,ভাগ্যিস তুই ছিলি, আমি শেষ বয়সটা তোর কাছেই থাকবো সোনা। রাখবিতো আমায়, সবাই কে বলি,সোনা কোনদিন আমায় জিগ্যেস না করে কোন কাজ করে না,কোনদিন মুখের ওপর একটা কথা বলে না।সোনা বুঝল,এবার মায়ের কষ্টটা খুব বেশীই হয়েছে। হাওড়ায় যখন ট্রেন থামল,মায়ের হাত ধরে চলতে চলতে সোনা মনে মনে ঠিক করতে লাগল মায়ের জন্য কোন ঘরটা ভাল হবে,মায়ের জন্য আর কিকি লাগবে। ডাক্তার মিত্রকে দিয়ে একবার মায়ের সব হেলথ চেকআপের ব্যবস্থা করতে হবে।দুধের সাথে দইএর প্যাকেটও রোজ করে দেবে।
হঠাৎ একটা হইচই একটি বছর পঞ্চাশের লোক হোচট খেয়ে পড়েছে বোধহয়, ঠোঁট ফেটে রক্ত ঝরছে। লোকটি লম্বা, রোগা অনেকটা সোনার দাদার মতোই চেহারা। মাকে নিয়ে টেক্সিতে যখন, মা বললেন, আহা লোকটাকে দেখে কি কষ্ট হলরে! একদম বাবুর মতো।আমার বাবুটাও একদিন এরকম বুড়ো হয়ে যাবে! ভাবলেই বুকটায় কষ্ট হয়। সন্তান চোখের সামনে বুড়ো হয়ে যাচ্ছে, সেটা যেন আমায় না দেখতে হয়,মায়ের চোখের কোণ চিকচিক করছে। সোনা চুপ করে মায়ের দিকে খানিকক্ষণ দেখল, আঁচল দিয়ে চোখটা মুছিয়ে, হাতটা ধরে বলল, সামনের সপ্তাহের রবিবার ছাড়া আমি কিন্তু পৌঁছে দিয়ে আসতে পারবোনা মা।