গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শনিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৮

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

জোঁক

মিতা মাসি আমাদের বাড়ির সামনেই থাকেন একটা ছোট্ট ঘরে । আপন জন বলতে তাঁর মেয়ে দোলা তার দুই ছেলে মেয়ে এবং জামাই নন্টে । নন্টে কাজ প্রায় কিছুই করে না.একটা ইলেকট্রিক দোকানে কাজ করত । ছোট খাটো কাজ ধরুন সিলিং ফ্যান লাগানো,টিউব ফিটিং,পূজোর সময় লিচু বালব লাগানো ইত্যাদি.বড় ধরনের কাজ করতে গেলে মাথার দরকার.সেটা নন্টের নেই । এই নন্টের খপ্পরে পড়ে দোলার জীবন ওষ্ঠাগত.এক ছেলে এক মেয়ে কে মানুষ করতে দোলা যায় বুটিকের দোকানে.মিতা মাসির হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম আর দোলার রোজগারে ওদের সংসার চলে।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজোর দিন নন্টে, এল..ডি লাইট ফিটিংয়ের জন্য ডাক পায় পাড়ার পূজো প্যান্ডেলে. নন্টের কাজের চেয়ে অকাজ বেশি সবাই জানে তবুও মিতা মাসির মুখ চেয়ে পাড়ার ছেলেরা ওকেই ডাকে ছোট খাট কাজে.. যদি ওর কিছু রোজগার হয়. মিতা মাসি মুখে কিছু বলেন না নাতি নাতনীর মুখ চেয়ে.দোলা তার বরকে চেনে । পকেটে টাকা পড়লেই সাকি সুরাতে অর্থ অপব্যয়.সুধু তাই নয়, তার ওপর অকথ্য শারীরিক নির্যাতন যেগুলো ভাষা দিয়ে বোঝান যায়না । দু পয়সা রোজগারের ক্ষমতা নেই কিন্তু ফুর্তির শেষ নেই ।  এই দুপেয়ে জোঁক কে দোলা মিতা মাসি বহুদিন সহ্য করছে.ছেলে মেয়ে বাপের কাছ ঘ্যাঁেসনা কারণ ওই অপদার্থ অমানুষ টির ওপর কেউ বাড়ির সন্তুষ্ট নয়।  ছেলে মেয়ের টিফিনের টাকায় যদি তাদের পিতৃদেব সুরা পান করে আসে তবে কোন ছেলে মেয়ে সেই পিতাকে মর্যাদা দেবে? আমাদের ভারতবর্ষে এইরকম পিতার সংখ্যা যদি গণনা করা যায় তবে গণনা কারির মাথা গরম হয়ে যাবে দিন আসে দিন যায় মিতা মাসির বয়েস বাড়ছে.গায়ে গতরে আর খাটতে পারছেন না.এদিকে দোলা আবার অন্তঃসত্ত্বা ।
এই পরিস্থিতে মিতা মাসি, দোলার গর্ভ নষ্ট ছাড়া আর অন্য উপায় দেখলেন না. ডাক্তার খানায় তাকে নিয়ে গিয়ে ডাক্তার বাবুর পরামর্ষে এম.টি.পি করান কিছুদিন পরে ট্যুবোক্টমি অপারেশন করে পরিবার নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অবলম্বন করেন ।
কিন্তু দোলা এই কষ্ট সহ্য করতে পারেনা.সে বেচারি অসুস্থ হয়ে পড়ে. নন্টের কোন হুঁস নেই । ছেলে মেয়ে দুজনেই মায়ের যত্ন করে । ছেলেটি মাধ্যমিক পাসের পর ছোট খাট টিউসন করে.তাতে যা  পায় পড়ার খরচ চালায়.সবচেয়ে বড়কথা ছেলে মেয়ে দুটোই স্বভাবে এবং পড়াশুনোতে খুব ই ভালো ।
নন্টে পাড়ার ছেলেদের এই নিয়ে গর্ব করে বলে তার ছেলে মেয়ের কথা ।
সকলে বলে নন্টে দা তোমার ভাগ্য ভালো তুমি এইরকম হীরের টুকরো সন্তান পেয়েছ ।
নন্টে মাথা নাড়ায় আর বলে হুঁ তা ঠিক ।
 
 এর মধ্যে নন্টে কোথায় উধাও হয়ে গেল। কেউ জানেনা কেউ খোঁজ ও করে না। কার  দরকার ই বা কি আছে ! 
এর মধ্যে দোলা একটু সুস্থ হয়ে আবার কাজে যেতে আরম্ভ করে। নন্টে না থাকাতে যেন পাড়া ঘর দুই শান্তিতে আছে। যে যার কাজে ব্যস্ত। মিতা মাসি একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন । দোলা যেন মনে মনে ভাবে আপদ গিয়েছে ভালো হয়েছে । তবুও তার মন সাড়া দেয় না । যতই হোক স্বামী ত। কি জানি কি খাচ্ছে ! কোথাও মদ গিলে বসে আছে কিনা !
হটাত এক দিন নন্টে এক মহিলা কে নিয়ে হাজির। ঘরে ঢ়ুকে বলে এ আমার নতুন বৌ । আজ থেকে এ আমার কাছেই থাকবে।
সকলে প্রথমে হতভম্ব হয়ে মহিলাটির দিকে তাকায় তার পর দোলা রান্না গর থেকে একটা কাটারী 
নিয়ে মহিলাটিকে তাড়া করে। 
মহিলাটিও ছাড়ার পাত্রী নয় । সে ও তেলুগুতে কি সব বলে দোলার দিকে তেড়ে আসে। এই সময় দোলার দুই ছেলে মেয়ে একটি লাঠি এবং ছাতা নিয়ে বেদম পেটায় তাদের বাবা এবং নতুন নবাগতা মহিলাটিকে। কিছু বোঝার আগেই পাড়ার ছেলেরা খবর পেয়ে মিতা মাসীর বাড়ীতে এসে ওই মহিলাটিকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়।
নন্টে মার খেতে খেতে বলে তোদের সব কটাকে জেলে পুরবো দাঁড়া । মিতা মাসী ওই সময় এক খাবলা নুন এনে নন্টের মুখে গুঁজে দিয়ে বলেন তোর মতন জোঁকের মুখে ভাত না দিয়ে নুন দেওয়া উচিৎ ।
পাড়ার সব ছেলে মিলে নন্টে আর ওই মহিলাকে মেরে তাদের পাড়া থেকে বার করে দেয়। নন্টের সাহস এবং নচ্ছারমি দেখে সকলে আশ্চর্য হয়। সকলে এক সঙ্গে বলে ওঠে জোঁকের মুখে নুন ।
পরে জানা যায় ওই মহিলা খড়গপুরের গণিকা পল্লীর এক গণিকা।
দোলা থানায় গিয়ে নন্টের নামে ডাইরি করে এবং পরে নন্টেকে ডিভোর্স করে উকিলের পরামর্ষে । এখন এই পাড়াতেও শান্তি আর মিতা মাসীও শান্তিতে আছে ।