গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৮

ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী

ইন্দ্রজাল

যখন এক অজানা চোখের সঙ্গে আরেকটি চোখের মিলন হলে বেড়ে যায় হৃদ স্পন্দন মন বলে, “হ্যাঁ এই সেই ছবিযাকে কল্পনায় বারে বারে আঁকি কিন্তু তবুও অস্পষ্ট থেকে যায় আবার পরক্ষণে তাকে সামনে দেখে মণ আকুল হয় তাকে পাওয়ার জন্য। তবে কি সেটাই প্রেমের নিদর্শন নাকি  অবাস্তব এক কল্পনা মাত্র ! কিন্তু তাকেই যে আপনার করার জন্য মন হয় ব্যাকুল যে কিনা সহজে ধরা দেয় না ।  কিশোর মনের এক চঞ্চলতা আচ্ছন্ন করে তবুও ছোটে আলেয়ার পেছনে সেই কল্পনার প্রতিচ্ছবিকে ছুঁতে । সব অসাধ্যকে সাধন করার অদম্য ইচ্ছা ! কিন্তু সত্যি কি তাতে সে সফল হবে ? ................. এই গল্পটা সেইরকম এক নিরবচ্ছিন্ন প্রেমের গল্প ।
অয়ন কলেজের সামনে লাইব্রেরীর দিকে যেতে যেতে এক স্বপ্নের ইন্দ্রজালে বশীভূত হওয়ার মত নানা রঙিন স্বপ্নে বিভোর । স্বভাবতই দেবযানী র প্রতি এক অজানা আকর্ষণে লাইব্রেরীর দিকে নিজের অজান্তেই চলে এসেছে ……
হ্যাঁ দেবযানী নতুন এসেছে এই কলেজে ।  সাইন্স ব্লকে তাকে প্রথম দ্যাখাতেই অয়নের দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে তারঅপরূপ চোখ ধাঁধানো রূপে । ওর রূপের এক আকর্ষণ আছে যা অন্য মেয়েদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা । লম্বা ছিপছিপে , টানা টান চোখ , মেদ হীন চেহারা অথচ লাবণ্যে ভরা। দেবযানীর সুন্দর মুখশ্রী সত্যি যে কোন পুরুষ কেআকৃষ্ট করতে বাধ্য। অয়ন সত্যি এই প্রথম বার  কারু প্রেমে পড়ল। ভেবে কূল কিনারা পায়না তার এই পরিবর্তনের জন্য  রবিঠাকুরের লেখা গান আপনা হতে গুন গুন করে গাইতে ইচ্ছে হবে দেবযানী কে দেখলে ঃ    একি লাবণ্যে পূর্ণ  প্রাণ, প্রাণেশ হে, আনন্দ বসন্তস মাগমে ॥ বিকশিত প্রীতি-কুসুম হে পুলকিত চিতকাননে ॥ জীবনলতাঅবনতা তব চরণে। হরষ গীত উচ্ছ্বসিত হে কিরণ-মগন গগনে।কবির সৃষ্টি বোধ হয় এইরকম ই কোন অপরূপার জন্য ।
অয়ন কলেজের ক্রিকেট টিমের  ক্যাপ্টেন।
অয়ন খেলা ধুলোয় ভালো বিশেষ করে ক্রিকেট তার স্বপ্ন ।  ইউনিভার্সিটি রিপ্রেজেন্ট করেছে এই বছর । টপস্কোরার হিসেবে তার নাম আছে এই কলেজে । তার লম্বাটে গড়ন এবং পুরুষালী ব্যক্তিত্ব অনেক মেয়ের হৃদয়েরস্পন্দন বাড়ায় । খেলার মাঠে ব্যাট হাতে নামলে অনেক ছেলে মেয়েকেই দেখা যায় করতালি দিতে এবং সঙ্গে আপআপ অয়ন”  চিৎকার। অয়ন খেলার সময় বোলারের হাতের বলটা অর্জুনের লক্ষ ভেদের সেই মাছের চোখের মতদেখে পারফেক্ট টাইমে ব্যাট ঘোরায় । বল কানেক্ট হলেই হয় চৌকা নয় ছক্কা । হাত তালিতে গ্যালারি ফেটে পড়ে ।অয়ন বিচলিত না হয়ে ফের পরের বল ফেস করে।
কিন্তু দেবযানীকে দেখার পর থেকে ওকে বেশ অন্যমনস্ক  দেখায় । বন্ধুরা অয়নের পরিবর্তন  লক্ষ্য করে কিন্তু কিছুই বলেনা। সামনে ইন্টার কলেজ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি । এই কলেজের অয়ন ই  ভরসা । উইকেটে অয়ন টিকলেই রান গড়গড় করে বেড়ে চলে স্কোর বোর্ডে । অয়নের পার্টনার অমিতসেকেন্ড ডাউনে এলে ওদের জুড়ি বাজি মাত  করে।পনেরো দিন বাদ টুর্নামেন্ট । এই খেলা দেখতে খোদ মুখ্যমন্ত্রী আসবেন । কলেজের সুনাম বজায় রাখা অনেকটা অয়নের-অমিতের জুড়ীর ওপর নির্ভর করে । এই সময় ওকে অনেক  প্র্যাকটিস করতে হবে । কলেজের কোচপ্রত্যেক দিন নেট প্র্যাকটিস করাচ্ছেন । ফিজিক্যাল ফিটনেসের টিপস দিচ্ছেন আর ফিল্ডিং করাচ্ছেন। সব ছেলেদেরমধ্যে আশা উদ্দীপনা এবারে তারা চ্যাম্পিয়ন ট্রফি নিয়ে কলেজে আসবেই । কলেজের প্রিন্সিপাল ডঃ কমলেশ ভট্টাচার্য কলেজের সকল ক্রিকেটার দের এক টি পার্টিতে  আমন্ত্রণ করেন । ওই পার্টিতে দেবযানী , পুষ্প গুচ্ছ দিয়ে প্রত্যেক প্লেয়ার কে স্বাদর অভ্যর্থনা করে। অয়নের কাছে দেবযানী এলে দুজনে দুজনের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থাকে। অয়নের , দেবযানী কে দেখে এক অজানা আকর্ষণে ওর চোখটা স্থির হয়ে যায় ওর মুখের দিকে  তাকিয়ে।
এটাই বোধহয় ওদের প্রথম শুভ দৃষ্টি”.... এটা অয়নের ভাবনা, দেবযানীর কিনা জানিনা!
কলেজের লাইব্রেরীর দিকে নিজের অজান্তেই চলে এসেছে অয়ন। দেবযানী প্রত্যেক দিন আসে তাই ও চলে আসেএই সময় । লাইব্রেরী কার্ড টা এনেছ কিনা দেখেনিল অয়ন । হ্যাঁ সঙ্গে আছে তবে কোনদিন বই নেয়নি । কলেজলাইব্রেরীতে ওকে দেখে কিছু ছেলে মেয়ে একে অপরের দিকে দ্যাখে কিন্তু নীরবতার জন্য মুখে কিছু প্রকাশ করে না।সকলের ই কৌতূহল অয়নের আগমের উদ্দেশ্য নিয়ে ।
অয়ন খুব স্থির পদক্ষেপে দেবযানীর দিকে এগোয় । ওর পাসে বসে বলে হায়কেমন আছ।
একটু ইতস্তত ভাবে দেবযানী অয়নের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে তুমি ! এখানে!!
কেন আমায় কি আসতে নেই !
না তা নয় । তবে ..... !!
তবে কি ?
দেবযানী লক্ষ্য করল সকলের চোখ ওদের দিকে । খুব অপ্রস্তুত মনে হল নিজেকে।
অয়ন পরিস্থিতি বুঝে একটাই কথা বলে বাইরে লনে অপেক্ষা করছি । আশা করি না বলবে না।এই বলে উঠেপড়ে ।
খুব অপ্রস্তুতে পড়ে দেবযানী । সকলে কি ভাবছে কি জানি ! মনে মনে ভাবে সত্যি ই ছেলেটা হ্যান্ড-সাম কিন্তু তারমানে এই নয় সোজা লাইব্রেরীতে এসে আমার পাসে বসে পড়বে! এটা খুব খারাপ মনে হল । বন্ধুরা টিটকিরি নাআরম্ভ করে ওকে নিয়ে। ওকে দ্যাখা করে করে বলবে ও  যেন আর এরকম না করে। কিছু বই আর নিজের নোটনিয়ে উঠে পড়ে । অয়নের কথাটা মনে  করে কলেজের লন এ এগুচ্ছিল হটাৎ অয়ন সামনে এসে একটা গোলাপ দিয়ে ওকে প্রপোজ করে বসে।

দেবযানী অয়নের এই ব্যাবহারে ক্ষুব্ধ হয় । গোলাপ টা ছুঁড়ে ফেলে বলে , “কি মনে কর নিজেকে ?” আমি এসব একদম পছন্দ করিনা। তুমি হয়ত ভাল ক্রিকেট খেল কিন্তু তার মানে এই নয় যে তোমার প্রেমে আমি পাগল হব। আমাকে আর কখন বিরক্ত করবেনা। এই বলে দেবযানী গট গট করে সেখান থেকে চলে যায় অয়নের উত্তরেরঅপেক্ষা না করে।
এইরকম অপ্রস্তুতে পড়তে হবে অয়ন কে ও ঘুণাক্ষরেও বোঝেনি । ওর নিজের কনফিডেন্স লেভেল টা অনেক বেশিতাই হটাত এই অপ্রত্যাশিত আচরণে চকিত হয়ে যায়।  কোন উত্তর দেওয়ার আগেই দেবযানী চলে যায়।  অয়নফ্যাল ফ্যাল করে দেবযানীর চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে থাকে।
এটা কি হচ্ছে তার ! সে না প্লেয়ার । প্লেয়ারদের শরীর চর্চা , জগিং , জিম এইসব নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা । নারীসংগ অবাঞ্ছনীয় ।  যদিও ভালো প্লেয়ারদের গার্ল ফ্রেন্ডের অভাব থাকে না। কিন্তু দেবযানী অন্য ধাতের মেয়ে। ওরপ্রতি আকর্ষণ টা কেন যে হল ভেবে কুল কিনারা পায়না অয়ন। ওর ভাবনা তে পূর্ণচ্ছেদ পড়ে অমিতের ডাকে।
কিরে কি ভাবছিস? চল ফিল্ডে যাই ।
নারে আজ বাড়ি যাব । এই বলে ওখান থেকে চলে যাচ্ছিল।
কি হল গুরু ? কেস টা কি বলত ?
কিছু না ! কি আর হবে ?
কিছু ত আছে। আমি জানি সেই জন্যই এলাম ।
অয়ন অপ্রস্তুতে পড়ে .....  মানে ?
মানে আবার কি ! অয়ন - দেবযানীর প্রেমের উপাখ্যান এর শুভারম্ভ । চিন্তা করিস না । সব ঠিক হয়ে যাবে । আমারওপর ছেড়ে দে । কিন্তু এখন চল গুরু প্র্যাকটিস করি । এটাই তোর আমার পরীক্ষা । এখানে কোন গোলমাল হলে প্রেস্টিজে গ্যামাক্সিন ....!
অগত্যা অয়ন বাধ্য ছেলের মতন ফিল্ডে যায় নেট প্র্যাকটিস করতে । অমিত বোলিং করে । অফ স্পিন বল । কখনআউট সুইঙ্গার কখন ইন সুইঙ্গার । স্পিন ভালোই করতে পারে অমিত । প্রথম বলটাই অয়ন মিস করে ।
এ কি হচ্ছে ? মেয়েটা ত আচ্ছা মাথা খেল তার পার্টনারের । কাছে এসে বলে গুরু এ কি হচ্ছে? এ্যাঁ ।
না আমি আজ খেলতে পারবোনা ।
এদিকে আর মাত্র ১৫ দিন বাকি টুর্নামেন্টের । কি হবে ? মানসিক প্রস্তুতি না থাকলে খেলা সম্ভব নয় সে যত বড়প্লেয়ার ই হোক না কেন !
অয়ন আজ খুব অন্যমনস্ক দেখাচ্ছিল । অমিত বেশ বুঝতে পাচ্ছিল সেটা । কিছু একটা বুদ্ধি বার করতে হবে ....পার্টনার বলে কথা ! ও এখন কলেজের ভবিষ্যৎ । ফিল্ডে ও না থাকলে রান রেট বাড়বে না জেতার ও চান্স কম । ওথাকলে খেলোয়াড়দের মনে জৌলুশ থাকে । সেটা অন্য কেউ দিতে পারবে না। না না .. এ রিস্ক কিছুতেই নিতে পারেনা অমিত।
ভাবনাতে পূর্ণচ্ছেদ পড়লো , অয়নের ডাকে। আমি আজ যাচ্ছিরে । আমার শরীর ভালো নেই । মাথাটা যন্ত্রণা করছে। বাড়ি যাই । এই বলে অমিতকে বাই বলে চলে যায় ফিল্ড থেকে।
অমিত অন্য প্লেয়ারদের সাথে খেলা নিয়ে আলোচনা করে। আজকের ঘটনার সাক্ষী এক মাত্র অমিত।  কিন্তু এ বিষয় কাউকে কিছু বলে না।
৭ দিন পর:-
ক্রিকেটার অয়নের প্রেমের প্রস্তাব কে ছক্কা মেরে বাউন্ডারি পার করে দিয়েছিল দেবযানী। কিন্তু  নাছোড়বান্দা জিদ-খোর অয়ন হাল ছাড়ে নি । সেদিনের অপমান কে শার্ট থেকে ধুলো ঝাড়ার মতন ঝেড়ে ফেলে  বন্ধুদের দিয়ে সুপারিশ করিয়েও যখন কাজ হল না, নিজেই দেবযানীকে  দিল আবার বন্ধুত্বের প্রস্তাব ফ্রেন্ডশিপ ডে”  তে । দেবযানীর কাছেপ্রেম ট্রেমের  চেয়ে ফ্রেন্ডশিপ টা  অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হল। কিন্তু সে কি জানত, বন্ধুত্বের ইন্দ্রজালে আটকা পড়বে অয়নের  বাকি জীবনের গল্পর সঙ্গে ! হ্যাঁ কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবে অয়নের বন্ধুত্বের ডাকে সাড়া দেয় দেবযানী । নিছক বন্ধুত্বের খাতিরে কলজের ক্যাপ্টেন এর প্রিয়তমা না হোক বন্ধু হতে আপত্তি ছিলোনা তার। তাইখেলা দেখার ছলে বন্ধুর ক্রিকেট পারদর্শিতা কে অগ্রাহ্য করতে পারলনা ।
সেই থেকে শুরু .............
এখন অয়ন কে আর পায় কে ! হাতে চাঁদ পেয়ে অয়ন বেশ খুশি খুশি মেজাজে অমিত কে বলে আজ আমি পার্টি দেব। চল সবাই বন্ধুরা মিলে যাই ক্যানটিনে । স্মিতা , রোজি , দেবযানী , মৌসুমি , অনুষ্কা , প্রিয়াঙ্কা , অম্লান , প্রিতম ,দেবজিৎ, অমিত, অয়ন । মোট এগারো জনের পার্টি । সকলেই ঠিক সময় এল দেবযানী একটু দেরিতে পৌঁছল ।দেবযানী কে দেখে অয়নের ধড়ে প্রাণ এল । কিন্তু মুখে কিছু না বলে দেবযানীর  দিকে মেনু কার্ড টা এগিয়ে দিয়ে বলে আজ তোমার অনারে আমি এই পার্টি দিচ্ছি । তোমাকেই মেনু ঠিক করতে হবে ।
ও মা সেকি ! আমি এসবের কিছু বুঝি না ।
তবুও তুমি ..... অয়ন বলে ।
আরে দিয়েই ফেল না কিন্তু কিন্তু করছিস কেন ? প্রিয়াঙ্কা র কথায় সকলে সায় দিয়ে বলে হ্যাঁ হ্যাঁ , অয়ন যখন এত করে বলছে ........
ঠিক আছে এই বলে দেবযানী খাবার অর্ডার দেয়।
কে বলে তুই কিছু জানিস না ?”  প্রিয়াঙ্কা বলে ।
দেবযানী ঃ   মানে ?
প্রিয়াঙ্কা ঃ মানে তুই সুন্দর মেনু চয়েস করেছিস । আমরা সকলে এনজয়  করব । কি বল অয়ন ?
হ্যাঁ নিশ্চয় নিশ্চয় বলে অয়ন দেবযানীর দিকে তাকায় .....
দেবযানী বোঝে ওকে এইসব বলে ওর মন পাওয়ার চেষ্টা চলেছে। অয়নের হুক সর্টে দেবযানী কুপোকাত হওয়ার মেয়ে নয় । দেখা জাগ কোথাকার জল কোথায় জায়। তবে ওরা সংখ্যায় বেশি এবং অয়নের নিকট বন্ধু তাই চুপ থাকাই শ্রেয় ।
আজ খুব ফুর্তি সকলের মনে । কেন জানিনা আজ দেবযানী ও খোস মেজাজে আছে। সারাদিন পড়াশুনো করতে তারও ভালো লাগে না । মাঝে মাঝে একটু ব্যতিক্রম হলে ক্ষতি কি ? এই বলে নিজেকে বোঝায় ।
দেবযানী: বেশ কাটল দিনটা । লাঞ্চ এর জন্য অশেষ ধন্যবাদ । পাওনা রইল টুর্নামেন্ট জিতলে ।
অয়ন: তোমাকেও ধন্যবাদ তুমি আমার নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে কষ্ট করে এসেছ । তোমার জন্য আরও বেশি সুন্দর কাটল আমাদের সকলের দিনটা । হ্যাঁ টুর্নামেন্ট আমাকে জিততেই হবে। এটা কলেজের তথা আমাদের সকলের সম্মানের ব্যাপার । বড়দের আশীর্বাদ আর তোমাদের শুভেচ্ছা  থাকলে আমরা নিশ্চয় ট্রফি আনবো ।
হ্যাঁ সেতো নিশ্চয় । তোমার প্র্যাকটিস টার গুরুত্ব বেশি । সেটা কি হচ্ছে ? ট্রফি তোমাকে আনতেই হবে । এটাকলেজের এবং আমাদের সকলের সম্মানের ব্যাপার । কথাটা খেয়াল রেখ কিন্তু।
তুমি প্রার্থনা কর ভগবানের কাছে ।
তা করব বই কি ! চলি । সকলের দিকে হাত নাড়িয়ে বাই বলে উঠে পড়ে দেবযানী ।
বা..ই..ইইই সকলে এক স্বরে বলে ।
সকলে একে একে যে যার গন্তব্য স্থলে চলে যায়। অয়ন দেবযানীর কথাগুলো মনে করে , “তোমার প্র্যাকটিস টার গুরুত্ব বেশি । সেটা কি হচ্ছে ? ট্রফি তোমাকে আনতেই হবে। এটা কলেজের এবং আমাদের সকলের সম্মানের ব্যাপার । কথাটা খেয়াল রেখ কিন্তু।
অয়ন ভোরে উঠেই মাঠে দৌড়োয়। নিজের ফিজিক্যাল ফিটনেস টা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন । সকাল ৮ টা অবধি নানা ব্যায়াম ।

তার পর নেট প্র্যাকটিস , ফিল্ডিং ইত্যাদি। বিকেল চারটের থেকে আবার খেলা। অয়ন এবং তাদের টিম সারা দিনফিল্ডে কাটায়। কলেজের ছেলে মেয়েরা উৎসাহ দেয় সকলকে । পরিশ্রমের ফল কখন বৃথা যায় না ।
ফাইনাল টুর্ণামেন্ট ঃ
আজ ফাইনাল । ইন্টার কলেজ টুর্নামেন্ট । ফাইনালে দুটি কলেজ । টিম এ তে অয়নদের কলেজ টিম বি তে বর্ধমান কলেজ ।
খেলাটা মূলত টিম এ vs টিম বি  ।
টস জিতে  টিম ’ , টিম বিকে ব্যাটিং এ আমন্ত্রণ করে । দর্শক মহলে জোর হাত তালি ।
দেবযানী বন্ধুদের সঙ্গে তাদের কলেজের টিম র খেলা দেখছিল । সকলের সঙ্গে ও খেলা দেখছিল । সম্ভবত কিছুক্ষণ টাইম ব্রেক মানে লাঞ্চ । সব  খেলোয়াড় রা প্যাভিলিয়নে ফিরে যায় । তাদের লাঞ্চের ব্যবস্থা ডাইনিং হলে করা হয়ে ছিল। হোষ্ট হিসেবে টিম কলেজ সব আয়োজন করে।
লাঞ্চের পর অয়ন কে ব্যাট হাতে ফিল্ডে যেতে দেখে দেবযানীর কৌতূহল বেড়ে যায়।  এই তার প্রথম কোন খেলোয়াড়ের স্বচক্ষে ক্রিকেট খেলা দেখার সুযোগ ।
য়নের পঞ্চাশ করার সুবাদে ওদের টিম চ্যাম্পিয়ন হল । সারা মাঠে কলেজের ছেলে মেয়েরা অয়ন, অমিত , অম্লান ও প্রিতম কে জড়িয়ে ধরে শুভেচ্ছা জানায় । খুশির ফোয়ারা বয়ে যায় শ্যাম্পেনের বোতল খুলে ।   এর বোতল খোলা মানা , তা নাহলে ছেলেরা সেটাও খুলে সেলিব্রেট করত ।
অয়ন কেবল একজনকেই মনে মনে খুঁজছিল সে আর কেউনা দেবযানী । কোথায় সে ? সে কি আসেনি ! তার প্রেরণা আজ সফল করেছে এই ট্রফি জিততে । সেকি জানে ?
ট্রফি নিয়ে পুরো টিম লাফালাফি করে সারা ফিল্ড চক্কর দেয়। ম্যান অফ দি ম্যাচ অয়নকে দেওয়া হয় দ্রুত রানের জন্য। সবাই সেলিব্রেট করতে ব্যস্ত। অয়ন বড় ক্লান্ত । আজ সে ভগবানকে প্রাণ ভরে ডাকবে । এই সফলতার জন্য তাঁর আশীর্বাদ , দেবযানীর প্রেরণা এবং কলেজের সকলের প্রার্থনাই দায়ী । কিন্তু একজন  কে কেন দেখল না ! সেটাই প্রশ্ন করে নিজেকে।
ক্লান্ত অয়ন প্যাভিলিয়ন থেকে ফিরে যায় ড্রেসিং রুমের দিকে। সামনে দেবযানীকে দেখে আশ্চর্য হয়ে যায়।
তুমি ? কোথায় ছিলে ? আমি কত খুঁজেছি তোমায় ! আসলে  আমি তোমার পুরো খেলা দেখেছি । অভিনন্দন . তুমি সত্যি চ্যাম্পিয়ন। আমি আপ্লুত ।  এই বলে জড়িয়ে ধরে। অয়নের মুখ থেকে একটাই কথা স্বতস্ফুর্ত উচ্চারিত হয় , “আমি তোমাকে ভালোবাসি
দুজনে দুজনের দিকে গভীর ভালোবাসায় তাকায় যেন হারান নিধি খুঁজে পেয়েছে দুজনে ।