মাঝরাতে
হঠাৎই ঘুম ভেঙে যায় সুপর্ণার। মশারি তুলে হাত বাড়িয়ে জলের বোতলটা নিতে গিয়েই চোখ
চলে যায় ড্রেসিংটেবিলের দিকে। আঁতকে ওঠে।
সুমিতকে ঠেলে তোলে "এই শোনো,
ওঠো ওঠো।"
সুপর্ণার ভয়ার্ত গলায় ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে
সুমিত "কি হয়েছে? বল কি হয়েছে?"
সুপর্ণা হাঁফাচ্ছে। সুমিত আবার জিজ্ঞাসা
করে "কি হল তোমার?"
স্থির চোখ। ফ্যাকাশে মুখে সুপর্ণা বলে
"ড্রেসিংটেবিলের সামনেটা দেখো।"
"কই, কিছু
নেই তো?" আলো জ্বালিয়ে চারিদিক ভাল করে দেখে সুমিত।
"এখনই আমি দেখলাম।"
"কি দেখলে?"
"দেখলাম কাজললতাটা খোলা আর……"
"আর?"
"আর তার ভিতরে দুটো চোখ,হ্যাঁ হ্যাঁ দুটো চোখ। ঠিক ঠিক তার মত।"
"কার মত" ব্যগ্র হয়ে
জিজ্ঞাসা করে সুমিত।
সুপর্ণা কাঁদতে কাঁদতে সুমিতের বুকে
ঝাঁপিয়ে পড়ে "আমি স্পষ্ট দেখেছি।"
সুপর্ণাকে
শান্ত করে কিছুটা জল খাইয়ে দেয় সুমিত। নিজেও কিছুটা খায়। তারপর বলে "শুয়ে
পড়ো। ওটা তোমার মনের ভুল।"
বাচ্ছাটা
হওয়ার আগেই সুপর্ণা কাজললতাটা কিনে এনেছিল। মা বলেছিলেন,
ছেলেমেয়েদের কাজল পরালে টানা টানা চোখ হয়। আর ডানদিকের জুলফির কাছে
একটা কাজলের ফোঁটা দিলে নজর লাগে না। তাই আঁতুর থেকেই ছেলেকে কাজল পরাত সুপর্ণা।
তারপর বাঁ-হাতের কড়ে আঙুল কামড়ে দিত।
জন্ডিস
নিয়ে জন্মে ছেলেটা বাঁচেনি। তারপর থেকেই সুপর্ণা অন্যরকম হয়ে যায়। বেশ কিছুদিন
ডিপ্রেসেনের চিকিৎসা চলছে ডাক্তার গুহনিয়োগীর কাছে। সুপর্ণা এখন দিনরাত ঘুমোয়। তবু
মাঝরাতে মাঝে মাঝেই ও কাজললতায় বাচ্ছার চোখ দেখে। ডাঃ গুহনিয়োগী আশ্বাস দিয়েছেন।
সুপর্ণাকে বাড়িতে একা রাখতে সাহস হয় না সুমিতের। তাই অফিস যাবার সময় পাশের
দত্তবাবুর স্ত্রীর কাছে রেখে যায়।
আজ
অফিসে কাজের প্রচুর চাপ। অন্যমনষ্ক থাকার জন্য বেশ কয়েকদিন বসের কাছে বকুনিও
খেয়েছে সুমিত। কম্পিউটার থেকে উঠে বাথরুমে গিয়েছিল সুমিত। মোবাইল বেজে উঠল,দত্তবাবুর স্ত্রীর ফোন "সুমিত, তাড়াতাড়ি
বাড়ি এস। সুপর্ণা কেমন করছে।"
অফিসের
বসকে বলতেই তিনিই গাড়ি করে বাড়ি পাঠিয়ে দেন সুমিতকে। বাড়িতে ঢুকে দেখেন দত্তবাবুর
স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে গোঁ গোঁ করে আওয়াজ করছে।
দত্তবাবুর
স্ত্রী বলেন "কি একটা দরকারে বাড়ি এল। অনেকক্ষণ ফিরছে না দেখে আমি দেখতে
আসি।"
"কি হয়েছে সুপর্ণা, কি হয়েছে?" ব্যকুল হয়ে জিজ্ঞাসা করে
সুমিত।
অর্দ্ধোন্মীলিত
চোখে সুমিতের দিকে তাকিয়ে সুপর্ণা ড্রেসিংটেবিলের দিকে আঙুল বাড়ায়। তারপরই জ্ঞান
হারায়।
ডাক্তারবাবু সব পরীক্ষা করে বললেন
"সুখবর আছে সুমিতবাবু। কনগ্র্যাচুলেসন।"