আম্মু আমাদের পিঠা করবা না!
ক্যান! পিঠা খায়ে কাম কি! পানি আন,গোসল করে ঘরে ঢুকবা..
আব্বায় কইসে পিঠা হইবো,আর আব্বা নারিকেলও আনবো..
যাও পড়তে বসো,পিঠা আর পিঠা!
গজগজ করতে করতে উনুনে দুটো
চ্যালাকাঠ গুঁজে দেয় আমিনা বিবি। আয়েশা দুলে দুলে পড়ে সাতের ঘরের নামতা।
হ্যারিকেনের চিমনিতে রোজ কালি পড়ে,ফিতে বদলাতে হবে। নদীর চরে আরো অনেক অনেক ঠান্ডা
হাওয়া। এবারে জার আরো বেশি। ছেঁড়া চাদরটা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে
উঠোনে নামে আমিনা
বিবি, শাকের আঁঠি চালে তোলে,শিশিরে তাজা থাকবে। সাইকেলে টুংটাং শুনতেপায় আয়েশার আম্মু, ঘরে ঢুকেই
নারকোল দুটো মাটিতে নামিয়ে রাখে জিয়ারুল,আয়েশা দৌড়ে আসে...
আম্মু পিঠা রান্ধবে
আম্মু পিঠা রান্ধবে! হাততালি
দিয়ে নাচে আয়েশা। ক্লান্ত
জিয়ারুল মলিন হাসে।
আম্মু আমারে ইস্টিলের বাক্সোয়
পিঠা দিবা? ইস্কুলে
নিয়া যাব,সক্কলেই আনে আমি শুধু মুড়ি আর
চিড়াভাজা।
হ! আগে
আব্বারে চা নাস্তা
দাও...
পাতলা কুয়াশায় মুড়ে নদীর চর ঝিমোচ্ছে।
দূরে হাইরোড়ে হুশ হাশ ছুটছে ট্রাক, কুয়াশায় দেখা যায়না কিছু। এবারে সত্যিই শীত বড্ডো বেশি,একটু দূরে আগুন জ্বলছে টিমটিম করে, কাঁথাকানি
গুলো আয়েশাকে জড়িয়ে দিয়ে কোলের বাবুটাকে টেনে আগুনের কাছে সরে আসে আমিনা বিবি।
পিঠা করতে গুড় লাগে,দুধ লাগে,চাউল গুঁড়া লাগে,পাই কই?
দেখি একটা ব্যবস্থা হইবই,পোলাপান খাইতে চাইতেছে। ভালোমন্দ ত কিছুই দিতে পারিনা!
দূরে কোথাও শিয়াল ডাকে চরে! আয়েশার ঘুমন্ত মুখে হাসি,আগুনের আঁচে পরীর মত লাগে সাত
বছরের আয়েশাকে।
খেজুরের রস নামানোর পরে নল দিয়ে টুপটুপ
রস পরে,গাছের নীচে হাঁ করে দাঁড়িয়ে তাই খাচ্ছিলো আয়েশা। দূরে মসজিদে
আজান হচ্ছে,আজ বাড়িতে
পিঠা হবে,আব্বা গুড়
এনেছে।আয়েশা থমকে দাঁড়িয়েই এক ছুট দেয়। কড়াইশুঁটির ক্ষেত
পেরোলেই ধানসিদ্ধর মিষ্টি
গন্ধ, সুর্মার মত সুগন্ধি সন্ধ্যা নামে
আয়েশাদের উঠোনে। আয়েশা একপাক ঘুরে নেচে নেয়। নারকেল ভালো করে ছাড়িয়ে
কুড়িয়ে নেয় আম্মু,চাল গুঁড়া করতে করতে গোছা চুল আম্মুর কপালে, বুক ভরে গুড়জ্বালের
আঘ্রাণ নেয়
আয়েশা।ইস্কুলের ব্যাগের সামনে স্টিলের কৌটোটা
গুছিয়ে রাখে আয়েশা। হঠাৎ ধরাধরি করে আব্বাকে ঘরে এনে শুইয়ে
দেয় করিম চাচারা।
ঘর ছাইতে গিয়ে মাটিতে পরে বেহুঁশ! সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে, আম্মুর চুলায় কাঠের জ্বাল দাউদাউ
করে উঠেই নিভে যায়।
মকর সংক্রান্তি,
চারদিকে মেলা। ক্ষীর,পুলি,দেদার বিকোচ্ছে,আর পনেরো টাকা হলেই
আব্বাকে শহরে নিয়ে যেতে পারবে আমিনা বিবি।আয়েশার ছোট্ট কলাইকরা থালায় সাজানো চিতই পিঠে,
পাটিজোড়া। লাল সোয়েটার পরা এক দাদা দরদাম করে পাঁচটে পিঠে নেয়,
বাকি রইলো সাতটা, মিনিট দশেক বাদে সেগুলোও বিক্রি হয়ে যায়। খালি
থালাটা একটু দূরে গিয়ে আঙুল দিয়ে চেটে টিউবওয়েল থেকে ভরপেট
জল খায় আয়েশা। আব্বাকে
আজই ভর্তি করতে হবে। আব্বুগো! সুস্থ হলেই
কত পিঠে হবে! তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাও আব্বু, পিঠার সময়
থাকতে থাকতেই! খুচরো
টাকা গুলো সামলে আয়েশা ছোটে বাড়ির দিকে....