গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

শনিবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৮

শ্রী সেনগুপ্ত

জয়ী

একটা নিঝুম দুপুর। রাতের মত দুপুরেরও একটা নিজস্ব নিস্তদ্ধতা, নিঝুমতা আছে। আজ বুধবার। সমীরের আসতে রাত হবে। বৃষ্টিলেখা চান সেরে নেওয়ার পর থেকে তৈরী হয়েই আছে। আজ একান্ত নিজস্বতার সাথে কাটাবে দুপুরের প্রতিটা মুহূর্ত । এক মনে ভাববে একে একে মনের ভিতর উথালপাথাল করা ভাবনা গুলো। কোন প্রয়োজনীয়তা বা বিবেকবোধের আঙুল দিয়ে টিপে ধরবে না ওর ভালোবাসা, ভালোলাগার গলাটা। দরজা বন্ধ করে আসতে আসতে হেঁটে এল জানলার কাছে। সবকটা জানলা বন্ধ করে দক্ষিণের জানলাটা অল্প ফাঁক করে দাঁড়াল । 

ঘরের মধ্যে একটা অদ্ভুত আলো খেলে যাচ্ছে। আস্তে করে চালিয়ে দিল ডেকটা। ওর খুব প্রিয় নিখিল ব্যানার্জীর সেতার। রাগ জৌনপুরী। কি যে অদ্ভুত মাদকতা আছে ওনার আঙুলের স্পর্শে। শরীরটা এলিয়ে দিল নরম বিছানার ওপর। মাথার ওপর সিলিং ফ্যানটা অদ্ভূত শব্দে ঘুরছে। হাওয়ার বুঝি নিজস্ব শব্দ আছে। অন্য সময় এত মনযোগ দিয়ে শোনা হয় না। সেভাবে মনযোগ দিয়ে কিছুই করা হল না। ধীরে ধীরে সেতারের আলতো ঝংকার টুকরো টুকরো করে ভেঙে দিচ্ছে এই আলো আঁধারীর নিস্তব্ধতা কে। ঠিক যেন ইলসেগুঁড়ি বৃষ্টির মত । বৃষ্টিলেখার খুব প্রিয়। কিরকম যেন সর্বাঙ্গে মেখে নেওয়া যায় সর্বান্তঃকরণে । 

ঠিক কোনটা শুনছে সে? নিস্তব্ধতার মাঝে সুর না সুরের মাঝে নীরবতার বেদনা। আধবোজা চোখে অদ্ভুত একটা মাদকতা জড়িয়ে আছে ওর সারা শরীর জুড়ে। চোখের সামনে ভেসে উঠল সেই হাসিমাখা মুখটা। ঠোঁটের প্রতিটা ভাঁজে লুকিয়ে থাকা গল্পকথা। চোখের প্রতিটা পলকে নতুন করে দেখতে চাওয়া। সেই দৃৃষ্টিতে আজন্ম আবিষ্ট হয়ে যাওয়া।

সেই গন্ধটা হঠাত নাকের সামনে এল। আর সেই ডাক টা, কানে এলেই সারাটা শরীর যেন কেমন রিনঝিন করে বেজে উঠত। কতরকম ডাকের যে কত মানে থাকত। প্রতিটা ডাক কে ও আলাদা করে চিনত। সেই প্রথম মেলায় একসাথে নাগর দোলায় চাপা। দুটো স্বপ্ন কাছে আসা।। ধীরে ধীরে গন্ধের মতই মিশে গেছিল তারা। ধরা দিচ্ছিল ছন্দপতন। গলিয়ে নস্ট করে দিতে পেরেছিল বৃষ্টিলেখা তার সমস্তরকম সংযম।

খুশি তে মনটা ভরে উঠছিল। পেরেছে সে, জয়ী সে।
এই পৃথিবীতে একটা মনকে জিততে পেরেছে।
ভালবাসা কে দু হাতে বেঁধেছে গেয়ে উঠল গুন গুন করে " ও যো অধুরি সি বাত বাকি হ্যয়.....