দীর্ঘক্ষণ খদ্দেরের
আশায় তার ভাঙাচোরা ট্যাক্সিটা
নিয়ে অনুকূল অপেক্ষা করে
গাড়িতে উঠে ইঞ্জিন চালু
করতে যাবে, এমন সময়
তিনজন সাধু গোছের মানুষ
তার কাছে এসে হাজির
হয়ে জিজ্ঞাসা করলো “নিউ
আলিপুর যায়গা”? অনুকূল সম্মত হয়ে
গাড়ির মিটার ডাউন করলো।
তিনজনের পরনেই অদ্ভুতভাবে পরা
ধবধবে সাদা ধুতি, সাদা
চাদর, মাথায় গেরুয়া রঙের
পাগড়ি, কপালের ওপর থেকে
ভ্রু পর্যন্ত চওড়া কমলা
রঙের সিঁদুরের টিপ, গায়ে
তীব্র আতরের গন্ধ।
“নিউ আলিপুরের কোথায়
যাবেন”?
“লক্সমীনারাণ্ প্যালেস
যায়গা। তুমে মালুম হ্যায়
ও মকান কিধার হ্যায়”?
“বুঝেছি, ওই তিনতলা
যে বড় বাড়িটা দীর্ঘদিন
ধরে তৈরি হচ্ছে তো”?
যাওয়া আসার পথে সে
অনেকবার বাড়িটা লক্ষ্য করেছে।
যেকোন লোকের বাড়িটার ওপর
নজর যাবেই। বড় রাস্তার
ওপর পাঁচিল দিয়ে ঘেরা
প্রায় চার কাঠা জমির
ওপর রঙিন মার্বেল মোড়া
বাড়িটা নজর পড়তে বাধ্য।
“সহি পহচানা, লেকিন
উও মকান তৈয়ার হো
গয়া। আজ গৃহপ্রবেশ হ্যায়।
হাম তিন আদমি পূজাপাঠ
আউর যজ্ঞ করনে কে
লিয়ে রাজস্থান সে ইধার
আয়া হ্যায়। জানতা হায়
ইসি লিয়ে কিতনা রুপিয়া
হামলোগোকো মিলেগা?
আইডিয়া তো করো। হাম
লোগোকো আশশি হাজার রুপিয়া
ইসি কাম করনেকে লিয়ে
মিলেগা, আশশি হাজার,
প্রণামি আলাগ”।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও
অনুকূল স্বগতোক্তি করলো আআআশিইই
হাআআজাআআর!
“আশশি হাজার বহুত
যাদা হো গিয়া কেয়া?
জানতা হায় উসি এরিয়া
মে চার কঠ্ঠা জমিনকা
ভাও কিতনা? ও মকানকে
লিয়ে লক্সমীনারাণ ঝুনঝুনওয়ালা সাহাব
কিৎনা রুপয়া খরচ কিয়া?
নও কোরোর রুপয়া। নও
কোরোর রুপিয়াকা মকানকা পূজাপাঠকে
লিয়ে আশশি হাজার রুপয়া বহুত
যাদা হো গিয়া কেয়া”?
অনুকূল কথা
না বাড়িয়ে চুপ করে
গাড়ি চালিয়ে একসময় নির্দিষ্ট
বাড়ির খোলা গেটের ভিতর
দিয়ে প্রবেশ দ্বারের কাছে
গাড়ি দাঁড় করালো।
প্রবেশ দ্বারের
কাছে বহু লোকের ভিড়,
কিন্তু পরিবেশটা যেন কিরকম
থমথমে। একজন সাধু কত
ভাড়া উঠেছে জিজ্ঞাসা করায়
অনুকূল জানালো “দুশ’ পঁচাশি
রুপয়া”। সাধুটি তিনটি একশ’
টাকার নোট
দিলে সে একটা দশ
টাকার নোট ও একটা
পাঁচ টাকার কয়েন ফেরৎ
দিল। সাধুটি একটু সময়
নিয়ে “ইয়ে রাখ দেও”
বলে পাঁচ
টাকার কয়েনটা তাকে ফেরৎ
দিল।
অনুকূল গাড়ি
ঘুরিয়ে ফিরে আসার সময়
বাড়ির ভিতর থেকে হঠাৎ
তীব্র কান্নার আওয়াজ শুনে
দাঁড়িয়ে গেল। জানা গেল
গতকাল গভীর রাতে বাড়ির
মালিক লক্ষ্মীনারায়ণ বাবু হৃদরোগে
পরলোক গমন করেছেন। আজ
তাই আর গৃহপ্রবেশ হচ্ছে
না। শুধু তাই নয়, প্রথম দিনই
এই অঘটন ঘটায় তাঁর
স্ত্রী ঊমা দেবী নিশ্চিত, যে এই
বাড়ির কোন বাস্তুদোষ আছে।
তিনি আর কোন ঘটনা
ঘটার আগেই আগামীকালই এই
বাড়ি ছেড়ে দেশে ফিরে
যেতে চান। যে প্রোমোটারকে দিয়ে
বাড়িটা তৈরি করানো হয়েছিল,
তাঁকেই বাড়িটা বিক্রি করার
দায়িত্ব দিলে, তিনি একমুহুর্ত সময়
নষ্ট না করে জলের
দামে বাড়িটি কিনে নেওয়ার
চুক্তি করে এক কোটি
টাকার একটি চেক অগ্রিম
হিসাবে ঊমাদেবীকে দিয়েও দিয়েছেন।
অনুকূলের আজ
আর খদ্দেরের অভাব নেই,
তার ট্যাক্সিতেই ওই তিনজন
আবার আগের জায়গায় ফিরে
চললেন। তাদের মুখে আর
সেই হাসির রেশ নেই।
সেটা লক্ষ্মীনারায়ণ বাবুর মৃত্যুর
জন্য, না আশশি হাজার
রুপয়া হারানোর জন্য বোঝা
গেল না।