উপেনবাবু বোরোলি মাছ খেতে ভালবাসতেন আর খাওয়ার শেষে পাতে একটু ক্ষীরদই । তাই ওনার শ্রাদ্ধের দিন বাজার থেকে বেছে বেছে টাটকা বোরোলী আর ক্ষীরদই
কেনা হল । শুধুমাত্র উত্তরবঙ্গের তিস্তায় আর আসামের ব্রহ্মপুত্রে এই রুপোলী
সুস্বাদু মহা্র্ঘ্য মাছ মেলে । চড়া দামের কারণে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরেই
থাকে এ মাছ । উপেনবাবুর তিন ছেলেই প্রোমোটারী ব্যবসার দৌলতে বিশাল অবস্থা করে
নিয়েছে । ঘাটসরার রান্না করার জন্য পাড়ার ভালো রাধুনী মালতি মাসিকে বলা হয়েছে । ছোলার
ডাল বেগুনভাজা মশলাপনির আর বোরোলী মাছের মাখামাখা ঝোল । সঙ্গে একভাড় ক্ষীরদই ।
শ্রাদ্ধশান্তি আমন্ত্রিতদের আপ্যায়ন খাওয়াদাওয়া চুকে যাবার পর
উপেনবাবুর সদ্যবিধবা স্ত্রী তিন ছেলেকে ডেকে বললেন-“তোরা এবার ঘাটে গিয়ে বাবাকে
খেতে দিয়ে আয় । আর দেরী করিস্ না । শীতের দিনে বেলা পরে যায় তাড়াতাড়ি ।পুরোহিত
মশায় নির্দেশের স্বরে বললেন –“ঘাটসরাটা নামিয়ে দেবার পর আর পিছন ফিরে যেন কেউ দেখবে
না । পাড়ার
ঘনশ্যামদা বললেন – “মাসীমা কোন চিন্তা করবেন না । আমি নিয়ে যাচ্ছি ওদের ।
তখন প্রায় অন্ধকার নেমে এসেছে ।অনেকটা নিচে নেমে শুনসান ঘাটের কাছে
এসে বড়ছেলে নদী থেকে জল নিয়ে পরিস্কার কোরে একটা জায়গা তৈরি করলো । তারপর ঘাটসরা
বসিয়ে তিনভাই মিলে মৃত পিতার উদ্দেশ্যে নিবেদন করে প্রণাম করতেই ঘনশ্যামদা ওদের
পেছন দিকে না তাকিয়ে সোজা উঠে আসতে বললো ।
কিন্তু ও কি ! একটা যেন অদ্ভুত শব্দ হল ! ঠিক যেন ডুবজল থেকে ভুস্
করে কেউ উঠে দাঁড়ালে যেমন হয় ! ঘনশ্যামদা চাঁপা গলায় বললো –“ খেয়ে গেল রে এসে ।
সবাই চলে যেতেই সদানন্দ ভেজা গায়ে এসে একটা প্লাস্টিকের থলি বার
করে খাবারগুলো গুছিয়ে ভরে নিল আর ঘাটসরাগুলো ছুড়ে ফেলে দিল নদীতে । মনে মনে ভাবলো
আজ বাড়ি গিয়ে জমিয়ে খাওয়া যাবে । বৃদ্ধ বাবা অসুস্থ । ডাক্তার বলেছে অপুষ্টি ।
শুধু ভালো কোরে খাওয়াতে হবে ।
এত সুন্দর বুদ্ধি আর কারো মাথায় আসেনি । শুধু একটু খোঁজে থাকো
কোথায় কবে পয়সাওয়ালা বাড়ির শ্রাদ্ধ ।তারপর সময়মতো জলে ডুবে থাকতে পারলেই কেল্লাফতে
। ভাতশিকারী সদানন্দ বাড়ির পথ ধরে বাঁচার
আনন্দে ।