স্বপ্নপূরণ
নাঃ এ জীবনে আর কোন চাকরি পাবে বলে আশা করে না শুভ্র। খুব ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র না হলেও মোটামুটি রেজাল্ট করে গুটিগুটি পায়ে কলেজের গণ্ডিটা তো ঠিকই পেরিয়েছিল। তারপর বেশ কয়েক বছর ধরে প্রায় রোজই দইয়ের ফোঁটা কপালে লাগিয়ে চাকরি খুঁজতে গেছে,কিন্তু দুঃখের বিষয়, ভাগ্য প্রসন্ন হয় নি,আজকাল তো আর চেষ্টা করতেও ইচ্ছে করে না। দু-একটা টিউশনি আছে হাতে,ওই যা সম্বল!
-“কত কষ্ট করে,কত টাকাপয়সা খরচা করে, নিজের শখসাধ বিসর্জন দিয়ে ছেলেকে কলেজে পড়ালাম,অথচ সে এখনো একটা চাকরি জোটাতে পারলো না, কি মন্দ কপাল আমার!”,
বাবা’র এই সংলাপগুলো শুভ্র’র আজকাল মুখস্থ হয়ে গেছে,খাওয়ার থালাটা একপাশে সরিয়ে মাথা নিচু করে উঠে পড়ে সে। মায়ের অসহায় ও করুণ মুখটা চোখ এড়ায় না শুভ্র’র, কিন্তু সে নিরুপায়, চুপচাপ খালি পেটে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে।
দুই
চাকরি না পেলেও কবিতা’টা মন্দ লেখে না শুভ্র,ইন ফ্যাক্ট,কাব্য চর্চা না করলে রাতে ঘুমই আসতে চায় না ওর। ফেসবুকে শুভ্র’র কবিতা বেশ জনপ্রিয় একটা ছোটখাটো পেজও আছে ওর।
ফেসবুক থেকেই একটি প্রকাশনার সঙ্গে সম্প্রতি আলাপ হয়েছিল,ওরা তরুণ লেখকদের কবিতার বই প্রকাশ করছে,তবে বেশ কয়েক হাজার টাকার বিনিময়ে,যা শুভ্র’র কাছে এই মুহূর্তে নেই।
শুভ্র’র খুব ইচ্ছে,ওর একটা কবিতার বই বেরোক,জনগণ ওর কবিতা পড়ুক, ওকে চিনুক। লজ্জার মাথা খেয়ে বাবার কাছে টাকা চাইতে যায়,বাবা ঝেঁঝে ওঠে,
-“একটা চাকরি পাওয়ার নাম নেই,আবার বই প্রকাশের টাকা চাইতে এসেছো নির্লজ্জের মতো? আমার কত স্বপ্ন ছিল,তুমি বড় চাকরি করবে,গর্বে আমাদের বুক ফুলে উঠবে! সেই স্বপ্ন কি পূরণ করেছো তুমি? তবে কোন মুখে আশা করো যে আমি তোমার স্বপ্নপূরণ করবো?”
শুভ্র চুপচাপ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়,আজ সত্যিই কিছু বলার নেই ওর।
তিন
অবশেষে একটা চাকরি পেলো শুভ্র। ছোট চাকরি, মাইনে খুব বেশি নয়,তবু যেন আনন্দ বাঁধ মানছে না তার। অবশেষে বাবা’র স্বপ্নপূরণ তো করতে পেরেছে সে। ইন্টারভিউয়ের শেষে তাড়াতাড়ি বাড়ির পথে পা বাড়াতে থাকে, বাবা-মা’কে সুখবরটা জানাতে আর যেন তর সয় না তার!
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ মনে পড়ে,বইপ্রকাশের জন্য টাকা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ দুদিন আগেই অতিবাহিত হয়ে গেছে,এখন আর কোন উপায় নেই। মনটা যেন আবার নতুন করে ভেঙে যায় শুভ্র’র। ঈশ এমন সুযোগটা হাত ফসকে গেল!
হঠাৎই বেজে ওঠে মুঠোফোনটা,স্ক্রিনে দেখে প্রকাশনার নম্বর। অবাক হয়ে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সম্পাদক বলে ওঠেন,“টাকাটা পেয়ে গেছি আমরা,আপনার বই শীঘ্রই প্রকাশিত হবে!”
শুভ্র যেন আকাশ থেকে পড়ে,হতবাক হয়ে প্রশ্ন করে,
-“কে দিলো টাকা!?”
-“আরে আপনার বাবাই তো পরশু এসে দিয়ে গেলেন ! আপনি জানেন না?”,সম্পাদক মহাশয়ের উত্তর।
শুভ্র’র চোখে জল এসে যায়। সত্যিই তো,বাবা-মা যতই বাহ্যিক অনাদর দেখান, তাঁরা কি কখনো সন্তানের স্বপ্ন অপূর্ণ রাখতে পারেন? আপন মনেই হাসতে থাকে সে, অবশেষে পিতাপুত্র দুজনেই পরস্পরের স্বপ্ন পূর্ণ করলো তবে!
নাঃ এ জীবনে আর কোন চাকরি পাবে বলে আশা করে না শুভ্র। খুব ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র না হলেও মোটামুটি রেজাল্ট করে গুটিগুটি পায়ে কলেজের গণ্ডিটা তো ঠিকই পেরিয়েছিল। তারপর বেশ কয়েক বছর ধরে প্রায় রোজই দইয়ের ফোঁটা কপালে লাগিয়ে চাকরি খুঁজতে গেছে,কিন্তু দুঃখের বিষয়, ভাগ্য প্রসন্ন হয় নি,আজকাল তো আর চেষ্টা করতেও ইচ্ছে করে না। দু-একটা টিউশনি আছে হাতে,ওই যা সম্বল!
-“কত কষ্ট করে,কত টাকাপয়সা খরচা করে, নিজের শখসাধ বিসর্জন দিয়ে ছেলেকে কলেজে পড়ালাম,অথচ সে এখনো একটা চাকরি জোটাতে পারলো না, কি মন্দ কপাল আমার!”,
বাবা’র এই সংলাপগুলো শুভ্র’র আজকাল মুখস্থ হয়ে গেছে,খাওয়ার থালাটা একপাশে সরিয়ে মাথা নিচু করে উঠে পড়ে সে। মায়ের অসহায় ও করুণ মুখটা চোখ এড়ায় না শুভ্র’র, কিন্তু সে নিরুপায়, চুপচাপ খালি পেটে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে।
দুই
চাকরি না পেলেও কবিতা’টা মন্দ লেখে না শুভ্র,ইন ফ্যাক্ট,কাব্য চর্চা না করলে রাতে ঘুমই আসতে চায় না ওর। ফেসবুকে শুভ্র’র কবিতা বেশ জনপ্রিয় একটা ছোটখাটো পেজও আছে ওর।
ফেসবুক থেকেই একটি প্রকাশনার সঙ্গে সম্প্রতি আলাপ হয়েছিল,ওরা তরুণ লেখকদের কবিতার বই প্রকাশ করছে,তবে বেশ কয়েক হাজার টাকার বিনিময়ে,যা শুভ্র’র কাছে এই মুহূর্তে নেই।
শুভ্র’র খুব ইচ্ছে,ওর একটা কবিতার বই বেরোক,জনগণ ওর কবিতা পড়ুক, ওকে চিনুক। লজ্জার মাথা খেয়ে বাবার কাছে টাকা চাইতে যায়,বাবা ঝেঁঝে ওঠে,
-“একটা চাকরি পাওয়ার নাম নেই,আবার বই প্রকাশের টাকা চাইতে এসেছো নির্লজ্জের মতো? আমার কত স্বপ্ন ছিল,তুমি বড় চাকরি করবে,গর্বে আমাদের বুক ফুলে উঠবে! সেই স্বপ্ন কি পূরণ করেছো তুমি? তবে কোন মুখে আশা করো যে আমি তোমার স্বপ্নপূরণ করবো?”
শুভ্র চুপচাপ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়,আজ সত্যিই কিছু বলার নেই ওর।
তিন
অবশেষে একটা চাকরি পেলো শুভ্র। ছোট চাকরি, মাইনে খুব বেশি নয়,তবু যেন আনন্দ বাঁধ মানছে না তার। অবশেষে বাবা’র স্বপ্নপূরণ তো করতে পেরেছে সে। ইন্টারভিউয়ের শেষে তাড়াতাড়ি বাড়ির পথে পা বাড়াতে থাকে, বাবা-মা’কে সুখবরটা জানাতে আর যেন তর সয় না তার!
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ মনে পড়ে,বইপ্রকাশের জন্য টাকা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ দুদিন আগেই অতিবাহিত হয়ে গেছে,এখন আর কোন উপায় নেই। মনটা যেন আবার নতুন করে ভেঙে যায় শুভ্র’র। ঈশ এমন সুযোগটা হাত ফসকে গেল!
হঠাৎই বেজে ওঠে মুঠোফোনটা,স্ক্রিনে দেখে প্রকাশনার নম্বর। অবাক হয়ে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সম্পাদক বলে ওঠেন,“টাকাটা পেয়ে গেছি আমরা,আপনার বই শীঘ্রই প্রকাশিত হবে!”
শুভ্র যেন আকাশ থেকে পড়ে,হতবাক হয়ে প্রশ্ন করে,
-“কে দিলো টাকা!?”
-“আরে আপনার বাবাই তো পরশু এসে দিয়ে গেলেন ! আপনি জানেন না?”,সম্পাদক মহাশয়ের উত্তর।
শুভ্র’র চোখে জল এসে যায়। সত্যিই তো,বাবা-মা যতই বাহ্যিক অনাদর দেখান, তাঁরা কি কখনো সন্তানের স্বপ্ন অপূর্ণ রাখতে পারেন? আপন মনেই হাসতে থাকে সে, অবশেষে পিতাপুত্র দুজনেই পরস্পরের স্বপ্ন পূর্ণ করলো তবে!