সকাল
থেকে অস্থির অরুণিমা। অনিমেষ আজ বাইরে যাবে। এমন নয় যে কলকাতা থাকলে রোজ দেখা হয়
ওদের।আর ফোনে কথা তো এখন পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে বলা যায়।তবু এলোমেলো
অরুণিমা। তবু কেমন সামলে রাখতে পারছেনা আঁচল।অরুণিমা আজ একটা লেখা লিখবে ,আসলে ইচ্ছে একটা সিরিজ লেখার, অনিমেষ কে নিয়ে।
ফিরে এলে দেখাবে, "দেখ কেমন করে তোমার জন্য অপেক্ষা
রা অক্ষরে ঢেলেছে প্রাণ।" এমন করে ও একসময় সৌগতকেও দেখাতো ওর লেখা আর উৎসাহী
চোখে তাকিয়ে থাকত ওর প্রতিক্রিয়া জানার জন্য। প্রতিক্রিয়া জানা হয়নি কোনদিন। কেননা
লেখা টা কোনদিন পড়েনি সৌগত। এখন আর বলেনা অরুণিমা।সক্কাল বেলায় ৫.৪৬র সময় লিখে পাঠালো
"সাবধানে যেও"। তারপর খালি খালি সব।এই সময় টা সবাই ঘুমোয়। তাই এই সময়টা
জরুরী বইপত্র পড়ে নেয় অরুণিমা। ছটা বেজে গেল খুব তাড়াতাড়ি।এবারে ছেলের টিফিন
বানাতে হবে,নইলে স্কুল যেতে পারবেনা।পরে লিখবখন্।চা বসিয়ে
দিল বড় বার্ণারে।আরেকদিকে পাউরুটি সেঁকতে দিল। শাশুড়ির নিয়ম অনুযায়ী খাবার টেবিল
মুছল। রান্নাঘরের তাক মুছল। প্রতিটি বাসন ধুলো জল দিয়ে।তারপর এর মধ্যে থেকে একটা
প্লেট ধুয়ে মুছে পাউরুটি নামিয়ে মাখন মাখালো। ওদিকে চা ভিজিয়ে দিয়েছে।টিফিনটা করে
রাহুলকে হেল্থ ড্রিঙ্কের সাথে দুধ একটা কাপে দিয়ে, লেখাটা
আবার শুরু করবে।
রাহুল
বেরিয়ে গেল টা টা বলে। অরুণিমা ভাতটা বসিয়ে দিল।এবারে লিখবে কিছুটা। শ্বশুর মশাই
ডাকলেন, বৌমা, দেখো না,
ওষুধ টা হাত থেকে কোথায় পড়ে গেল...। খুব রাগ হলে ও অরুণিমা বলল,
আসছি...। প্রতিদিন ই উনি ওষুধ মাটিতে ফেলে দেন। তেরো বছর ধরে ,
রোজ....ওনার হাত থেকে পড়ে যায়। আজ ও কুড়িয়ে দিল অরুণিমা।
"বৌমা চা টা দাও, এখানেই"। দিল। মাথার মধ্যে
ঘুরছে দুটো লাইন। আচ্ছা, তুমি পৌঁছে গেছ? গিয়ে কি জানাবে? আচ্ছা, তোমার ও এত কষ্ট হয়? কে জানে... দীর্ঘ শ্বাস
ফেলল অরুণিমা।
চা এনে দিল। রান্না ঘরে ফিরতে না ফিরতেই আবার ডাক এল,"বৌমা, বিস্কুট টা গলে চায়ের মধ্যে পড়ে গেছে, আরেকটা দাও। নাহ্,আর এখন লেখা হবেনা। খাতা তুলে রাখল অরুণিমা । অফিসে বেরোবেন শ্বশুর। যদিও ৭৫এর উপরে বয়স,তবুও ওনার আগের কোম্পানি তে অ্যাডভাইসর হিসেবে রয়ে গেছেন। তরকারি কেটে বসিয়ে দিয়ে ভাত নামিয়ে নিল অরুণিমা। মনে মনে কটা লাইন ভাবার চেষ্টা করল অনিমেষ মেঘেদের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে,কোন মেঘ ঝাপসা করে দিচ্ছে,কোনোটা ঝলমলে করে দিচ্ছে অনিমেষের মুখ...নাহ,পুরোটা চটকে গেছে একটাও লাইন মাথায় আসছেনা। যেটা মাথায় এসেছিল সেটাও পালিয়েছে। ডাল সিদ্ধ বসিয়ে স্নানে চলে যায় অরুণিমা। স্নান করতে গিয়ে নিজেকে ই নিজে আদর করে।অনিমেষের ছুঁয়ে যাওয়া জায়গা গুলো স্পর্শ করে।কিছু আবোলতাবোল বকে,যা ওর নিজের কানেও যায় না। খেয়াল হয়,ডাল পুড়ে যাবে। হুড়মুড়িয়ে বেরোয় বাথরুম থেকে।তখনও চুল থেকে গাল গড়িয়ে পড়ছে এক ফোঁটা দু ফোঁটা অনিমেষ। ডাল ঢালতে গিয়ে হাতের উপরে পড়ে। আকস্মিকতা আর তীব্র জ্বালায় চিৎকার করে ওঠে অরুণিমা। শাশুড়ি ছুটে আসেন। জ্ঞান শুরু হয়, কীভাবে পড়ল, এত কেয়ার লেস কেন, এত নাটকের কি আছে,আমাদের তো হামেশাই পড়ত, আসলে এখন কাজ না করার ধান্দা। অরুণিমা একচোট ধুয়ে দিতে পারত, কিন্তু চুপ করে গেল, জ্বালা টা হজম করে নেবে । চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে । ঠান্ডা জলে হাত ধুচ্ছে আর রান্না করছে। শাশুড়ি ছেলে কে ডাকলেন। 'এই বাবু,ওঠ্,তোর বৌ এর হাতে ডাল পড়েছে। আবার পরে বলবে আমি কোনো ব্যবস্থা নিইনি । দশবার ডাকার পর সৌগত এসে বলল,"ফোন পাশে নিয়ে রান্না করলে হবেনা? মন তো ওখানে।এবারে চেচিয়ে উঠল অরুণিমা,"তোমার কি প্রবলেম হয়েছে? আমি তোমাকে কিছু করতে বলেছি? স্বার্থপর যত! যা ই হোক,ঠিক রান্না করেই যাব যাতে গুষ্টির লোক খেতে পারে। আর অফিস ও যাব, কেননা আমি অফিস না করলে তো তোমাদের ভাত জুটবেনা। আর ছুটি নিয়ে চব্বিশ ঘন্টা খিদমদগারির ইচ্ছা আমার নেই।"এই বাজে মেজাজ দেখাবেনা। পয়সা র গরম দেখাবেনা।অফিসে কী পীরিত মারাচ্ছ,জানা নেই ভেবেছ? সৌগত বলে উঠল।"বেশ করেছি মারাচ্ছি। কি করবে তুমি? ঘুমাচ্ছিলে,ঘুমাও। আমি অফিস থেকে আজ মায়ের কাছে চলে যাব। দুদিন ওখানে ই থাকব। "সৌগত,"এত ঔদ্ধত্য ভাল নয় "বলতে বলতে সিলভারেক্স কিনতে গেল। অরুণিমা ঝনঝন করে বাসন ধুলো। গমগম করে হেঁটে টেবিলে খাবার সাজালো। কিছুতেই লাইনগুলো মনে করতে পারলনা। লাইন গুলো কোথায় চলে গেছে অনিমেষ....।তুমি কি জানো কী কষ্টের মধ্যে তোমাকে সাজিয়ে রাখি খাতায়! চোখ মুছে অরুণিমা শাড়ি পরতে গেল। অফিসে দেরি হয়ে যাচ্ছে...। সিলভারেক্সটা ছুঁড়ে খাটের উপর দিল অনিমেষ। "এই নাও। লাগিয়ে নাও। "অরুণিমা কোনো কথা না বলে লাগিয়ে নিল। অল্প ভাত খেয়ে বেরিয়ে পড়ল অফিস। কেউ কোনো কথা বললনা ,ও-ও কোনো কথা বলল না কারো সাথে। দরজা দিয়ে বেরোনোর সময় শ্বশুর মশাই বললেন আমার হাতের কাটা জায়গায় ড্রেসিংটা করে দিয়ে গেলেনা?অরুণিমা কিছু না বলে ল্যাপটপ ব্যাগটা রেখে সোফায় বসে ড্রেসিংটা করে দিল। তারপর দরজা বন্ধ করে চলে গেল লিফ্টের দরজায়। নীচে ওলা দাঁড়িয়ে আছে। ট্যাক্সিতে উঠে লোকেশন দিল অফিসে র । ওটিপি টা বলে গা এলিয়ে দিল সিটে । কী যেন লিখতে চাইছিল...কী? শব্দগুলো জন্মের শোধ নিচ্ছে। অন্যমনস্ক অরুণিমা হাত বোলাতে লাগল পোড়া জায়গাটায়...
চা এনে দিল। রান্না ঘরে ফিরতে না ফিরতেই আবার ডাক এল,"বৌমা, বিস্কুট টা গলে চায়ের মধ্যে পড়ে গেছে, আরেকটা দাও। নাহ্,আর এখন লেখা হবেনা। খাতা তুলে রাখল অরুণিমা । অফিসে বেরোবেন শ্বশুর। যদিও ৭৫এর উপরে বয়স,তবুও ওনার আগের কোম্পানি তে অ্যাডভাইসর হিসেবে রয়ে গেছেন। তরকারি কেটে বসিয়ে দিয়ে ভাত নামিয়ে নিল অরুণিমা। মনে মনে কটা লাইন ভাবার চেষ্টা করল অনিমেষ মেঘেদের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে,কোন মেঘ ঝাপসা করে দিচ্ছে,কোনোটা ঝলমলে করে দিচ্ছে অনিমেষের মুখ...নাহ,পুরোটা চটকে গেছে একটাও লাইন মাথায় আসছেনা। যেটা মাথায় এসেছিল সেটাও পালিয়েছে। ডাল সিদ্ধ বসিয়ে স্নানে চলে যায় অরুণিমা। স্নান করতে গিয়ে নিজেকে ই নিজে আদর করে।অনিমেষের ছুঁয়ে যাওয়া জায়গা গুলো স্পর্শ করে।কিছু আবোলতাবোল বকে,যা ওর নিজের কানেও যায় না। খেয়াল হয়,ডাল পুড়ে যাবে। হুড়মুড়িয়ে বেরোয় বাথরুম থেকে।তখনও চুল থেকে গাল গড়িয়ে পড়ছে এক ফোঁটা দু ফোঁটা অনিমেষ। ডাল ঢালতে গিয়ে হাতের উপরে পড়ে। আকস্মিকতা আর তীব্র জ্বালায় চিৎকার করে ওঠে অরুণিমা। শাশুড়ি ছুটে আসেন। জ্ঞান শুরু হয়, কীভাবে পড়ল, এত কেয়ার লেস কেন, এত নাটকের কি আছে,আমাদের তো হামেশাই পড়ত, আসলে এখন কাজ না করার ধান্দা। অরুণিমা একচোট ধুয়ে দিতে পারত, কিন্তু চুপ করে গেল, জ্বালা টা হজম করে নেবে । চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে । ঠান্ডা জলে হাত ধুচ্ছে আর রান্না করছে। শাশুড়ি ছেলে কে ডাকলেন। 'এই বাবু,ওঠ্,তোর বৌ এর হাতে ডাল পড়েছে। আবার পরে বলবে আমি কোনো ব্যবস্থা নিইনি । দশবার ডাকার পর সৌগত এসে বলল,"ফোন পাশে নিয়ে রান্না করলে হবেনা? মন তো ওখানে।এবারে চেচিয়ে উঠল অরুণিমা,"তোমার কি প্রবলেম হয়েছে? আমি তোমাকে কিছু করতে বলেছি? স্বার্থপর যত! যা ই হোক,ঠিক রান্না করেই যাব যাতে গুষ্টির লোক খেতে পারে। আর অফিস ও যাব, কেননা আমি অফিস না করলে তো তোমাদের ভাত জুটবেনা। আর ছুটি নিয়ে চব্বিশ ঘন্টা খিদমদগারির ইচ্ছা আমার নেই।"এই বাজে মেজাজ দেখাবেনা। পয়সা র গরম দেখাবেনা।অফিসে কী পীরিত মারাচ্ছ,জানা নেই ভেবেছ? সৌগত বলে উঠল।"বেশ করেছি মারাচ্ছি। কি করবে তুমি? ঘুমাচ্ছিলে,ঘুমাও। আমি অফিস থেকে আজ মায়ের কাছে চলে যাব। দুদিন ওখানে ই থাকব। "সৌগত,"এত ঔদ্ধত্য ভাল নয় "বলতে বলতে সিলভারেক্স কিনতে গেল। অরুণিমা ঝনঝন করে বাসন ধুলো। গমগম করে হেঁটে টেবিলে খাবার সাজালো। কিছুতেই লাইনগুলো মনে করতে পারলনা। লাইন গুলো কোথায় চলে গেছে অনিমেষ....।তুমি কি জানো কী কষ্টের মধ্যে তোমাকে সাজিয়ে রাখি খাতায়! চোখ মুছে অরুণিমা শাড়ি পরতে গেল। অফিসে দেরি হয়ে যাচ্ছে...। সিলভারেক্সটা ছুঁড়ে খাটের উপর দিল অনিমেষ। "এই নাও। লাগিয়ে নাও। "অরুণিমা কোনো কথা না বলে লাগিয়ে নিল। অল্প ভাত খেয়ে বেরিয়ে পড়ল অফিস। কেউ কোনো কথা বললনা ,ও-ও কোনো কথা বলল না কারো সাথে। দরজা দিয়ে বেরোনোর সময় শ্বশুর মশাই বললেন আমার হাতের কাটা জায়গায় ড্রেসিংটা করে দিয়ে গেলেনা?অরুণিমা কিছু না বলে ল্যাপটপ ব্যাগটা রেখে সোফায় বসে ড্রেসিংটা করে দিল। তারপর দরজা বন্ধ করে চলে গেল লিফ্টের দরজায়। নীচে ওলা দাঁড়িয়ে আছে। ট্যাক্সিতে উঠে লোকেশন দিল অফিসে র । ওটিপি টা বলে গা এলিয়ে দিল সিটে । কী যেন লিখতে চাইছিল...কী? শব্দগুলো জন্মের শোধ নিচ্ছে। অন্যমনস্ক অরুণিমা হাত বোলাতে লাগল পোড়া জায়গাটায়...