সেদিন বুধুয়া দেনার দায়ে
অনিচ্ছাসত্বেও প্রিয় গরুটাকে নিয়ে বিক্রির উদ্দেশে্য রওনা দিয়েছিল হাতিপোতা থেকে শামুকতলার
হাটে । যাবার পথে কয়েকজনকে বসে থাকতে দেখেছিল ধাকসির কালভার্টের
উপরে । ওরাও দেখেছিল বুধুয়ার যত্নপালন নধর গরুটিকে আর মনে মনে কষেছিল তার আনুমানিক বিক্রয়মূল্য ।
ডাঙ্গি শরণার্থী
শিবিরের দিক থেকে যে পাকা রাস্তাটা ধওলাঝোরা চা বাগানের মাঝখান দিয়ে শামুকতলা
হাটের দিকে চলে গেছে সেখানে একটা ছোট্ট কালভার্ট আছে । তার তলা দিয়ে বয়ে গেছে
ধাকসি ঝোরা । এখানেই ওরা হাটের দিন সকাল থেকেই বসে থাকে আর লক্ষ্য করে যায় সেসব
গ্রামবাসীদের , যারা জয়ন্তী হাতিপোতা বা
ডাঙ্গি ক্যাম্প অঞ্চল থেকে শাকসব্জী ফলমূল হাস মুরগী ও গবাদি পশু ইত্যাদি নিয়ে
শামুকতলা হাটে কেনাবেচা করতে আসে । দিনের শেষে হাটফেরৎ মানুষেরা যখন বাড়ী ফেরার পথ
ধরে ,তখন ওরা অতর্কিতে ঝাপিয়ে কেড়ে নেয় তাদের বিক্রির টাকা আর নিত্যপ্রয়োজনীয়
কেনা সামগ্রী ।
সেদিনের হাটে সঠিক দাম
না পাওয়াতে বুধুয়া ওর সাধের গাভীটিকে নিয়ে ফিরে আসছিল বাড়ির দিকে । একে সারাদিনের
পরিশ্রমের ধকল তার মধে্যই কালভার্টের কাছে
আসতেই ওরা সকলে মিলে ঘিরে ধরলো বুধুয়াকে । একজন রাগতস্বরে প্রশ্ন করলো – কিরে শালা
গরুটা বেচিস নাই ক্যান ? বুধুয়া বললো – মনমতন দাম দ্যায় নাই কেউ...তাই । সঙ্গে
সঙ্গে আরেকজন অশ্রাব্য গালি দিয়ে বললো- দাম পাইস নাই মানে ! দাম দিয়া তোর কি কাম ?
তারপর শুরু হয়ে গেল অজস্র কিল চড় লাথি ঘুষির বর্ষন বুধুয়ার ক্লান্ত শরীরটার উপর ।
দাম না পাওয়া ক্ষুধার্ত
গাভীটি রাস্তার ধারে ঘাস খেতে লাগলো আর
নির্বিকার ভাবে মানুষগুলোর পাশবিক ক্রিয়াকলাপের ছায়াযুদ্ধ দেখতে লাগলো ।
ততক্ষনে দিনের সূর্য্য
মুখ লুকিয়ে ফেলেছে জয়ন্তী পাহাড়ের পিছনে ।