গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৫

শেখর কর

দাম

সেদিন বুধুয়া দেনার দায়ে অনিচ্ছাসত্বেও প্রিয় গরুটাকে নিয়ে বিক্রির উদ্দেশে্য রওনা দিয়েছিল হাতিপোতা থেকে শামুকতলার হাটে  । যাবার পথে কয়েকজনকে বসে থাকতে দেখেছিল ধাকসির কালভার্টের উপরে । ওরাও দেখেছিল বুধুয়ার যত্নপালন নধর গরুটিকে আর  মনে মনে কষেছিল তার আনুমানিক বিক্রয়মূল্য ।

ডাঙ্গি শরণার্থী শিবিরের দিক থেকে যে পাকা রাস্তাটা ধওলাঝোরা চা বাগানের মাঝখান দিয়ে শামুকতলা হাটের দিকে চলে গেছে সেখানে একটা ছোট্ট কালভার্ট আছে । তার তলা দিয়ে বয়ে গেছে ধাকসি ঝোরা । এখানেই ওরা হাটের দিন সকাল থেকেই বসে থাকে আর লক্ষ্য করে যায় সেসব গ্রামবাসীদের , যারা  জয়ন্তী হাতিপোতা বা ডাঙ্গি ক্যাম্প অঞ্চল থেকে শাকসব্জী ফলমূল হাস মুরগী ও গবাদি পশু ইত্যাদি নিয়ে শামুকতলা হাটে কেনাবেচা করতে আসে । দিনের শেষে হাটফেরৎ মানুষেরা যখন বাড়ী ফেরার পথ ধরে ,তখন ওরা অতর্কিতে ঝাপিয়ে কেড়ে নেয় তাদের বিক্রির টাকা আর নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনা সামগ্রী ।

সেদিনের হাটে সঠিক দাম না পাওয়াতে বুধুয়া ওর সাধের গাভীটিকে নিয়ে ফিরে আসছিল বাড়ির দিকে । একে সারাদিনের পরিশ্রমের ধকল  তার মধে্যই কালভার্টের কাছে আসতেই ওরা সকলে মিলে ঘিরে ধরলো বুধুয়াকে । একজন রাগতস্বরে প্রশ্ন করলো – কিরে শালা গরুটা বেচিস নাই ক্যান ? বুধুয়া বললো – মনমতন দাম দ্যায় নাই কেউ...তাই । সঙ্গে সঙ্গে আরেকজন অশ্রাব্য গালি দিয়ে বললো- দাম পাইস নাই মানে ! দাম দিয়া তোর কি কাম ? তারপর শুরু হয়ে গেল অজস্র কিল চড় লাথি ঘুষির বর্ষন বুধুয়ার  ক্লান্ত শরীরটার উপর ।

দাম না পাওয়া ক্ষুধার্ত গাভীটি রাস্তার ধারে ঘাস খেতে লাগলো আর  নির্বিকার ভাবে মানুষগুলোর পাশবিক ক্রিয়াকলাপের ছায়াযুদ্ধ দেখতে লাগলো ।  

ততক্ষনে দিনের সূর্য্য মুখ লুকিয়ে ফেলেছে জয়ন্তী পাহাড়ের পিছনে ।