গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৫

বিলাল হোসেন / দুটি অনুগল্প

গুল্লু  

 গুল্লুদা অনেক দিন বাদে। খুব ভাল লাগছে।
আমারও। বিদেশে থাকলেও মন পড়ে থাকে এখানে।
/ জনের দলটা বই মেলা থেকে বেরিয়ে একাডেমির রাস্তা ধরে এগিয়ে যায় টিএসসিবরাবর 

এই জায়গাটা একটু অন্ধকার। নিয়ন আলো অবশ্য আছে। কিন্তু মুশকিল হলনিয়নআলোতে মানুষের মুখে বিচ্ছিরি হলুদ রঙটি গলে তরল হয়ে যায়  ফলে চেহারাটা ঠিককাটা কাটা থাকে না আর  একধরণের বীভৎসতাও ভর করে চোখে মুখে।

হাঁটতে হাঁটতে কে একজন বলল গুল্লুদা চলেন, চা খাই 
মেলার বাইরে আশেপাশে অনেক টং দোকানে গরম গরম চা। দাঁড়িয়ে গেলেন গুল্লুরা।

একজন বলল আপনার বিশ্বাসের ভাইরাস  চারদিকে হইচই ফেলে দিয়েছে 
একজন বলল অবিশ্বাসের দর্শন সেটাও বা কম কি ?

একজন বললনতুন কি লিখছেন গুল্লুদা ?

তিনি হাসেন চায়ে চুমুক দিতে দিতে  কথা বলে্ন না  ভাল লাগাটা শুষতে থাকেন 

চা শেষ করে আবার ছোট ছোট পায়ে হাঁটতে লাগল দলটি  হঠাত কি হল কে জানেগুল্লু দেখেন কিছুক্ষণ আগে নিয়ন বাতি থেকে যে হলুদ আলো বে্রুচ্ছিল ওটি আসলেলাল রক্ত।

অদ্ভুত  !

গাছের পাতা বেয়ে টুপ টুপ করে অসময়ের বৃষ্টির মত ঝরে পড়ছে রক্ত , উষ্ণরক্ত।

পায়ের তলায় থকথকে রক্তের কাঁদা ।চটি পায়ে পিছলে পড়ে যেতে যেতে দাঁড়িয়ে গেলেনগুল্লু।
তিনি ভেবে পেলেন না পিচঢালা রাস্তায় রক্ত এলো কোত্থেকে ? তিনি আরো কিছুভাবতে চাচ্ছিলেন  কিন্তু বন্যার কারণে পারছিলেন না  বন্যা হেল্প হেল্প করে এতচেঁচামেচি করছে কেন? কার কাছে হেল্প চাচ্ছে সে ?

মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করছিল গুল্লুর  তাকিয়ে থাকতে পারছিলেন না  বাংলাএকাডেমির গেট দিয়ে অইটা কিসের স্রোত ধাই ধাই করে এগিয়ে আসছে রক্তের !

তার চোখ বন্ধ হয়ে এল  বন্ধ হওয়ার আগে চারপাশ ঘিরে অন্ধকার ছেয়ে আসতেলাগল ।লাল অন্ধকার 

একপাক ঘুরে পড়ে গেলেন তিনি  পাঞ্জাবীর বুক পকেটে ছিল পাঠকদের অটোগ্রাফদেয়ার জন্যে প্রিয় কলম  বেসামাল পড়ে যাবার কারণে কি না , কলমটি গেঁথে গেলবাম নিলয় ধরে সরাসরি হৃদপিঞ্জরে 

শেষবারের মত শুনতে পেলেন বন্যার কণ্ঠস্বরহেল্প , হেল্প 

বন্যা সাড়া পেলেন না ।চারদিকে পোকামাকড়ের দল ঘিরে আছে 


হিসাব নিকাশ অথবা চন্দনের গন্ধ  

আকাশ ফেটে যেদিন চন্দনের গন্ধসহ মেঘের দল এদিকটায় এসে উত্তরের হাওয়ারভেতরে গন্ধ ছড়াতে ছড়াতে চারপাশ ঘিরে ধরেছিল চৌধুরীদের গোরস্থানের ভেতরেতখন শুয়ে শুয়ে দুজন কথা বলছিল  তাদের গলায় ভয় 
: মজিদ !  কিসের আলামত ?
:জানি না বাজান। এমুন বাস্ না আসতেছেকইত্থন ?
:কিয়ামত কি শুরু হয়ে গেল নাকি ?
:কইলেই হইল ? জুম্মার নমাজে ইমাম সাহেব কি কইছে ? কইছে মহতারাম,কিয়ামত আসার আগে ইমাম মেহেদী আসবে , ইছা নবী আসবে , দজ্জাল আসবে  এরানা আসা পর্যন্ত কিয়ামত হইবে না  বুঝলা বাজান ?
:এত লোক আইব কস কি ! আমার  আর শুইয়া থাকতে ভাল লাগতেছে না  পিঠপুঠসব বেদ্না্ হইয়া গেল  শালার মাটির ভিত্রে পিঁপড়া  কামড়াইয়া জান শ্যাষ কইরাদিতাছে 
:খিচ মাইরা থাকো  গোরস্থানে এত মশায় কি করে ? রক্ত খাইতে মশা গোরস্থানেআসেনি বাজান ?
:অই হারামজাদা , সেই তখন থেকে তুই আমারে বাজান ডাকস ক্যান ? আমি কি তরবাপ লাগিনি ?
মজিদ খিক খিক করে হাসে  তুমি একটা বুইড়াবাপ ডাকলে দুষ কি ? আর তুমি তআমারে কত স্নিহ কর সেইটা  আমি জানি  যেবার আমরা ধরা খাইলামতুমিআমারে বাঁচনের লাইগা কত কি কইলাসব আমার মনে আছে 
:মনে রাইখা লাভ কি ! কামের কাম কিছুই  হয় নাই ।চৌধ্রীর লোকেরা কি আমাগোছাইড়া দিছে ?
:তুমি আমার বাপের চেয়েও বেশি 
কুদ্দুসের চোখ চিক চিক করে উঠল  বাতাসে চন্দনের গন্ধটা তীব্র হল হঠাত 
:নে উঠ হারামজাদা  আইজ চৌধ্রী সাবরে যদি না পুঁততে পারি আমার নাম বদলায়াকুত্তা ডাকিছ  আসছে পুন্নিমায় আমরা তিনজন মিল্লা গোরস্থানে শুইয়া দুনিয়ার কায়কারবার দেখুম আর হাসুম 
তারা উঠে পড়ে  কিন্তু চন্দনের গন্ধের রহস্যটা কেউ ভাঙতে পারল না