গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৫

নীহার চক্রবর্তী

মনুষ্য-মুখ

হঠাৎ খবরে চলে এলো ভ্যান-চালক গোপাল । খবর ছড়িয়ে পড়লো দ্রুত । গোপাল নাকি লটারিতে দশ লাখ টাকা পেয়েছে । যে শুনল,সেই বলল,’গোপালের দিন ফিরল তবে । অথচ গোপাল কিছুই জানে না ।
পথে গোপালকে কয়েকদিন দেখা যাচ্ছে না । অনেকেই বলল,ও লুকিয়ে পড়েছে । টাকা রাখছে কোথাও । সে তো হবেই । গোপালের বাড়ির দরজাও বন্ধ । পাড়ার লোক কিছুই বলতে পারলো না ।
সবাই মিলে গোপালকে বড়োলোক করে দিলো কথায়-কথায় । আর এই বড়োলোক করে দেওয়ার পরেও কেউ কেউ বলল,'গোপালের দেমাক বেড়েছে । নইলে দেখা যায় না কেন ? তবে এ হয় ।'' সেই গোপাল বাড়ি ফিরল সাতদিন পর ।
অনেকেই ছুটে গেলো গোপালের কাছে । সবার মুখে একই প্রশ্ন কোথায় ছিলিস রে ? টাকা সব পেয়েছিস তো’ ? গোপাল শুনে অবাক । চোখ বড় বড় করে বলল,'টাকা মানে ? কীসের টাকা ? ঘর তৈরির ? সে তো অনেকদিন থেকেই শুনছি । কিন্তু নেতারা শুধু সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছে । কি জানি পাবো কিনা । আমার দুঃখ আর যাবে না । শুনে এত অবাক হল সবাই যে মুখ দিয়ে কথাই বেরোল না ।
একদিন পর জানা গেলো এলাকার অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী গোপাল সেন লটারিতে দশ লাখ টাকা পেয়েছে । পথেও তাকে অনেকবার দেখা গেছে । কিন্তু দেখে কিছুই বোঝা যায়নি । গোপাল নিজেও শুনল । ওকে নিয়ে কথা উঠেছিলো,তাও জানলো । শেষে হাসতে হাসতে অনেককে বলল, ‘উনি টাকা বুঝে পেয়েছেন কিনা, তার খোঁজ কেউ নেবে না’ ?
গোপালের কথা শুনে অনেকেই মিচকি-মিচকি হাসল শুধু । রাগ হল গোপালের । বলে উঠলো, ‘এই গোপাল পেলে বুঝি মনে নানা প্রশ্ন জাগে ? বাবুদের কাছে প্রশ্ন করতে ভয় ? চল সব । আমি পাঁচশো টাকা কুড়িয়ে পেয়েছি কাল পথে । খাবে যারা চল । গোপাল সেন এক কণা বাতাসাও খাওয়াবে না কাউকে
গোপালের কথা শুনে লজ্জায় সব মাথা নত । পালাতে পারলে বাঁচে । কেউ-কেউ পালাতে পালাতে বলতে থাকলো, ‘বেশ হয়েছে । গোপাল পেলে আরও কত কথা শুনতে হত আমাদের । ভগবান বলে কিছু আছে