গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৫

তাপসকিরণ রায়

সাধ আহ্লাদ 

রমাকান্ত চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন আজ সাত বছর হয়ে গেল। বৃদ্ধত্ব তাকে জেঁকে ধরেছে। আজকাল সময় যেন যেতেই চায় না। আবার একেকটা দিন পার হয় তা যেন গোনা থেকে যায় ! সময়ের ফাঁকে স্মৃতির আলোড়ন হয়েই চলে। 
তখন অল্প বয়েস ছিল, মনটা ছিল কচিকাঁচা। সে দিনের অনিতা দির কথা মনে পড়ে। 
কিছুদিন ধরে অনিতা দি বিকেলে রমাকান্তকে ডেকে নিয়ে যাচ্ছিল। অনিতাদি রমাকান্ত দু জনে  হাঁটতে যেত। হাঁটতে হাঁটতে ওরা গ্রামের দিকে চলে যেত।
বন্ধুরা রমাকান্তকে বলত, কি রে তুই খেলতে আসিস না কেন ?
রমাকান্ত অনিতাদির কথা এড়িয়ে যেত, বলত, এমনি !
আসলে ছেলে মেয়ের পার্থক্য ওই অল্প বয়েস থেকেই ধরা পড়ে যায়। অনিতাদির হাত ধরে রমাকান্ত যখন চলত তখন কেন যেন বেশ ভালো লাগত ! ভাল লাগত অনিতাদির ছোঁয়া, তার মিষ্টি কথা বলা, সব কিছু। সেদিন অনিতাদি গ্রামের একটা ছেলেকে দেখিয়ে বলে ছিল, ওই ছেলেটাকে তুই চিনিস ?
--না তো !
--ও খুব ভালো, আমরা এক স্কুলে পড়ি। ওর নাম, বসির, ও তোর বসির দা। 
এরপর অনিতাদি রমাকান্তর সঙ্গে এসে বসিরের সঙ্গে গল্পে মেতে যেত। রমাকান্ত দূরে একলা দাঁড়িয়ে থাকত। সে সময়টা রমাকান্তর কথা ওদের মনেই থাকত না! তলে তলে রমাকান্তর মনে রাগ জমা হত। কোন দিন বলত, আজ আমার যেতে ভাল লাগছে না, অনিতাদি !
অনিতাদি রমাকান্তর মাথায় হাত রাখত, কেন যাবি না বল তো ?
--তুমি তো বসিরদাকে ভালবাস  ! 
--ধুর, বসিরকে ভালবাসা আর তোকে ভালবাসা কি এক হল ? 
--কেন হবে না ? আমি দেখেছি, তুমি বসিরদাকে চুমু দাও--
ওরে দুষ্টু, এই নে, বলে অনিতাদি রমাকান্তকে চুমু দিয়েছিল। রমাকান্তর রাগ সঙ্গে সঙ্গে কোথায় যেন উবে গিয়ে ছল। 
আজের রমাকান্ত ভাবেন যে ভালবাসার রকমফের হলেও সেদিনের বসিরের ভালবাসা আর তার ভালবাসার মাঝে কোথাও যেন মিল থেকে গিয়েছিল! 
সমাপ্ত