কোম্পানি কোম্পানি
মিডিয়া সামলানো ঝক্কির। দুপুরে জম্পেশ
লাঞ্চটির পর সুকুমার সর্দার জর্দাপান মুখে দিয়েছে, একসঙ্গে
বেজে উঠল
তিনচারটে ফোন। বিগহাউসের ফোনটাই আগে ধরে সে।
--- স্যার, নিউজ আছে।
সুকুমার জানে
নিউজটির কথা। চ্যানেলগুলোতে ঘুরিয়েফিরিয়ে দেখানো হচ্ছে।
-- বলুন, ব্রাদার।
--- আপনাদের রামরামব্রত রাজধানীতে অমাত্য সাহেবকে পাবলিক
প্লেসে ম্যানহ্যানডেল করেছে।
--- আ লাই।
--- আমাদের ক্যামেরাম্যান বিক্রম পজিশন নিয়ে ভিডিও তুলেছে।
আমরা টেলিকাস্ট করিনি।
--- রামরামব্রতকে আমরা চিনি। কেরিয়ারে একবারই কলেজের
প্রিন্সিকে পেছন থেকে লাথ মেরেছিল। আমরা এইসব অসভ্যতা বরদাস্ত করি না, আপনারা জানেন।
সুকুমারের মনে
পড়ে যায় রামরামব্রত কোন কৌশলে সাইজ হয়েছিল। তারপর থেকে সে রামশীতল। তারপর থেকে
ছেলেটা ঘরোয়া বৈঠকে যা করেছে করেছে, পাবলিক প্রোগ্রামে ওর নামে আর কোনো
কমপ্লেন নেই।
--- দেখবেন ভিডিওটা ? টেলিকাস্ট করে দিলে কেলো হয়ে যাবে।
সুকুমার আঁতকে
ওঠে। সামনেই ইলেকশন। এমনিতে রামরামব্রত হার্ডওয়ারকিং, হোমওয়ার্ক ভাল
করে, টেলিভিশনের
টকশোগুলোতে বুদ্ধি খাটিয়ে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট আরগুমেন্ট করছে। হ্যান্ডসামও, যা ইন্ডিয়ান মার্কেটে
একান্ত জরুরি।
--- আপনাদের সঙ্গে আমাদের অনেকদিনের রিলেশন।
--- মনে রাখি বলেই তো কনটাক্ট করি।
--- থ্যাঙ্কস।
--- ভিডিওটা এখনও এডিট করিনি। চ্যানেলে স্টিল শটই দেখাচ্ছি।
কিন্তু অন্য হাউজগুলো জেনে ফেলেছে।
ভাল ডিল পসিবল।
--- ওয়েট, ওয়েট, ব্রাদার।
--- রামরামব্রত আপনাদের ভাল প্রোডাক্ট। নেক্সট ইয়ারে ওনাকে
রাজধানীতে লঞ্চ করছেন।
সুকুমার ভাবে, কোম্পানির আর
কিছু নেই। হোমগ্রাউন্ডে এত কামড়াকামড়ি, সব খবর বাইরে বেরিয়ে যায়।
--- ব্ল্যাক আউট করে দিন নিউজটা। আমরা ইতিমধ্যেই স্টেটমেন্ট দিয়েছি, রামরামব্রত ওই
সময় স্পটে ছিল না।
--- ভিডিও স্পিকস দ্য ট্রুথ। আই-উইটনেসও আছে। সারাদিন
রামরামব্রতর নামে প্রশ্ন উঠছে --- কত
রিপিট করি ? টি আর পি ডাউন
হয়ে যাবে।
--- তাহলে ?
--- যা বলবেন।
--- আসুন একবার, কথা হবে।
--- আগের চেয়ে বেশি লাগবে।
--- হোয়াট ?
--- আগের বার ধর্ষণের কেস ছিল। আমাদের কোম্পানি কনসিডার
করেছে। ছোটখাটো ব্যাপার, বিচ্ছিন্ন ব্যাপার, আপনারা যেমন বলেছেন হনেস্টলি টেলিকাস্ট
করেছি। প্যানেল ডিসকাশনে আপনারা আসছেন না। আমরা আপনাদের আরগুমেন্টটাও ইমপরটেন্স
দিয়েই প্লেস করেছিলাম।
--- এখন তো আমাদের আগের মতো অবস্থা নেই। স্টিল। ওকে, ওকে, ওকে। সুকুমার আর
একটি জর্দাপান মুখে দেয়।
অন্য কিছু শিখিনি
--- আমাদের দাবি
মানতে হবে।
সারাটি দিন হিয়ারিং গেছে। পার্টিগুলো যেমন হয়, বিচিত্র তথ্য সাজিয়ে --- রাম শ্যামকে, শ্যাম রামকে,
হিন্দু মুসলমানকে, মুসলমান হিন্দুকে,
বদ্যি বামুনকে, বামুন এসসিএসটিকে,
ডেপুটি চিফ চিফকে, চিফ চিফের ভাইপোকে
--- সবাই সবাইকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।
টেবিলের উল্টোদিক থেকে সমবেত স্বরে কথাটি আসতেই পরীক্ষিতের সব কেমন গুলিয়ে
গেল। সবগুলি দলের জোরালো দাবি উড়িয়ে দিতে না পেরে রাতারাতি জরুরি ভিত্তিতে যে ওয়ান
ম্যান তদন্ত কমিশন গঠিত হয়েছে পরীক্ষিত তার চেয়ারম্যান। ইলেকশন কমিশন তাকে নিয়োগ
করে তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলেছে। স্রেফ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং, নো পরামর্শ। ইলেকশনের মাত্র সাতদিন বাকি।
যা ঘটেছে সেও বেশ বিচিত্র।
ঝড়বিদ্যুৎ ছিল না, মেঘবৃষ্টি ছিল না। ইলেকশন মহোৎসবের কল্যাণে মহল্লায় মহল্লায় রাস্তার খানিকখানিক ব্লক করে যেসব
অস্থায়ী পার্টি অফিস গড়ে উঠেছিল তাদের রঙবেরঙের পতাকা, পোস্টার,
ফেস্টুন, ব্যানার, চেয়ারটেবিল, বাঁশের খুঁটি, মাথার ওপর ত্রিপলের ছাউনিসহ সমস্ত কিছুই একরাতে ধূলিসাৎ হওয়ায় একজন
অন্যজনের নামে, সবাই সবাইকার নামে ইলেকশন কমিশনার থেকে
কোতোয়াল বাহাদুরের কাছে অব্দি নালিশ জানিয়েছে।
পরীক্ষিত জিগগেস করল --- আপনারা ?
--- আমরা
পার্টিক্যাডার।
--- আমরা কিন্তু
এক্স। এক্স পার্টিক্যাডার। সবাই একসঙ্গে কথা বলতে চায়। পরীক্ষিত ধরতে পারে না।
--- সমস্ত পার্টির সঙ্গে
সারাদিন কথা বলেছি।
--- আমরা তবে এখন
কোনো পার্টিতে নেই। সত্যিই নেই। মা কালীর দিব্যি বলছি, নেই। আবার সবাই একসঙ্গে।
--- তাহলে ? আপনারা কীভাবে এমন একটা তদন্তে হেল্প করতে পারেন ?
--- সমস্ত পার্টি
অফিস আমরাই গুঁড়িয়ে দিয়েছি।
--- হোয়াট ডু ইউ মিন
?
পরীক্ষিতের হাঁটু কাঁপতে থাকে। সে
তক্ষুনি এক চুমুক জলে একবার গলা ভিজিয়ে নেয়।
--- ওয়েল। এক এক করে
নিজেদের ইন্ট্রোডিউস করুন। এইসময় লোডশেডিং।
--- আমি কমরেট,
না, না, এক্স, এক্স, কমরেট ঝানু সেন। জাতীয়তাবাদী
বাস্টারগুলোন আমাকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে খুন করে।
--- আমি জাতীয়তাবাদী
মানকে রায়। খুন হয়ে গেলাম বেজম্মা লালপার্টির
বোমায়।
--- জয় ছিরামে জায়েন
কিয়া তিন মাহিনা। গোলিসে ভুন দিয়া কোন শালা বাহিনচোদ...
পরীক্ষিতকে কেউ কিছুই বলতে দেয় না
এবার।
--- ভোটারলিস্টে
একসেএক ভূতের নাম আছে। আমাদের নাম কেন কাটা হল ? বানের
জলে ভেসে
এলাম ? ভোট দেব। ভোট দেয়া ছাড়া আমরা
আর অন্য কিছু শিখিনি।