গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৫

দুপুর মিত্র

বড়দের রূপকথা -

এটা ছিল শিয়ালদের দেশ। একবার এই দেশে বিড়াল ছাত্রদের কি পড়ানো হবে, কিভাবে পড়ান হবে, কি কি কারিকুলাম থাকবে- এসব নিয়ে ব্যাপক ঝগড়াঝাটি শুরু হয়ে গেল শিয়াল শিক্ষামন্ত্রীর সাথে অন্যান্য শিয়ালদের। কারণ শেয়াল শিক্ষমন্ত্রী বলেছিলেন, এক দেশে হাজার রকমের শিক্ষা থাকতে পারে না। এতে বৈষম্য বাড়ে। এক এক শিয়াল ছাত্র এক এক রকম হয়। কেউ গরিব হয় আবার কেউ হয় ধনী। কেউ হয় প্রচণ্ড ধার্মিক-গোড়া, মৌলবাদী আবার কেউ হয় উগ্র, অনেক ইংরেজি জানা হয় কেউ, কেউ আবার নিজ ভাষা ভুলে যায়। কেউ কেউ কেবল নিজ ভাষাটাই ভাল করে জানে; অন্য ভাষা জানার প্রয়োজন মনে করে না বা নৈতিকভাবে মনে করে না। এতে এক দেশে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়। শিয়াল শিক্ষামন্ত্রীর এই কথায় বিভিন্ন শিয়াল রাজনীতিবিদরা ক্ষেপে গেল। এদের কেউ কেউ বলল- দেশ থেকে ধর্মীয় শিক্ষাকে শেষ করে দেবার জন্য এই মন্ত্রী এসব করছে। আবার কেউ কেউ বলল, গরিব মানুষের এত ইংরেজি বা উচ্চ শিক্ষার কি দরকার। বড়লোকের ছেলে-মেয়েরাই কেবল এই শিক্ষার সুযোগ পাবে। এই অবস্থায় অনেক শিয়াল রাজনীতিবিদ আন্দোলনও শুরু করল। তারা শিয়াল শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চাইল। এই অবস্থায় শিক্ষামন্ত্রী অনেকটা বিপাকেই পড়ল বলা যায়। ঠিক এমন সময়েই শিয়াল শিক্ষামন্ত্রী আমেরিকা সফরে গেলেন। দেশে তখন আন্দোলন তুঙ্গে। আমেরিকা থেকে ফিরে এসেই শিয়াল শিক্ষামন্ত্রী সকল শিয়াল রাজনীতিবিদদের ডাকলেন। সবাইকে তিনি তাদের দাবিনামা জানাতে বললেন। সবাই দাবিনামা জানাল। শিয়াল শিক্ষামন্ত্রী বললেন, আমি আপনাদের সব দাবিই মানব। কেবল আমার একটি মাত্র শর্ত আছে। সকল শিয়াল রাজনীতিবিদ জানতে চাইলেন- কি সেই শর্ত। শিয়াল শিক্ষামন্ত্রী বললেন, আপনাদেরকে প্রত্যেক ছাত্রদের চশমা পড়াতে হবে। এই চশমার ব্যবস্থা সরকার করবে। মানে আমেরিকা সরকার আমাদের দেশের ছাত্রদের জন্য এসব চশমা পাঠাবে। আপনারা রাজি কিনা? সবাই একবাক্যে রাজি হয়ে গেল। ছাত্ররা সবাই চশমা পাবে , তাও আবার আমেরিকার চশমা। এটা তো ভালই। সব দাবিই মানা হল। মানে শিক্ষাব্যবস্থা আগের মতই থাকল। আর শিয়াল শিক্ষার্থীরাও আমেরিকার চশমা পড়ে শিক্ষা নিতে শুরু করল।

বড়দের রূপকথা -

বিড়ালদের দেশে ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকত। আজ এতজন খুন,কাল এতজন ধর্ষিত। আজ এখানে হাতবোমা,কাল ওখানে গ্রেনেড। এমনকি এমনও ঘটনা ঘটছে বিড়ালদের ঘরে গিয়ে খুন খারাবি হচ্ছে। কিন্তু বিড়াল পুলিশ এসবের কোনও কুল কিনারাই করতে পারছে না। এখনও পর্যন্ত বিড়াল পুলিশ কোনও ঘটনার বিচার তো দূরের কথা কাউকে আটক পর্যন্ত করতে পারেনি।
এসব নিয়ে বিড়াল সাংবাদিক, বিড়াল এনজিও কর্মী, বিড়াল রাজনীতিবিদ এমনকি বামপন্থি বিড়ালরাও ক্ষুব্ধ। শুধু দেশের এইসব ঘটনার কারণে এইসব অনিশ্চয়তার কারণে এইসব অশান্তির কারণেই ক্সুব্ধ নন, বিড়াল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নানা সময়ের নানা বক্তব্যে তারা যারপর নাই বিরক্ত।
একবার এক বিড়াল সাংবাদিক কোনও এক অনুষ্ঠানে বিড়াল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন- দেশে এসব হচ্ছে। এই প্রশ্নের উত্তরে বিড়াল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, তাতো হবেই। দেশের অধিকাংশ মানুষ অশিক্ষিত। অশিক্ষিত বিড়ালদের দেশে খুন একটু বেশিই হয়। এটা সরকারের কোনও ব্যর্থতা নয়।
একবার এক সেমিনারে বিড়াল এনজিও কর্মীরা বিড়াল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ঘিরে ধরলেন। দেশে এত এত ধর্ষণ হচ্ছে। কয়েক বছরে ধর্ষণের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০%। কিন্তু আপনারা কিছুই করছেন না। বিড়াল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, তাতো হবেই। অশিক্ষিতের দেশে একটু ধর্ষণ বেশিই হয়। আপনারা শিক্ষিতের হার বাড়ানোর কাজ করেন, তাহলেই ধর্ষণ কমে আসবে। এইভাবে বিড়ালদের দেশ চলতে লাগল। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক দল, কোনও এনজিও, কোনও দূতাবাস এসব নিয়ে কোনও ইস্যুই তৈরি করতে পারল না।
একদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিব বললেন, স্যার ভাবীকে ইদানিং প্রায়ই বিরোধী দলের একজন নেতার বাড়িতে দেখা যায়।
বিড়াল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, তাতো হবেই। বিড়াল দেশের জন্য এত সময় দিতে হয়, আপনার ভাবীকে সময় দেবার মত কোনও সময় কি আমার আছে?