ঘোষণা
এই
শহর কেঁপে
উঠেছে— ভয়ে । মানুষেরা
এখন কোথায়
লুকাবে , কোথায় গেলে
অদৃশ্য হতে
পারবে ? কেউ কারো
মুখের দিকে
তাকাতে পারছে
না । চোখে
চোখ রাখতে
পারছে না
। মা ছেলের
দিকে । বাবা
মেয়ের দিকে
। বোন ভাইয়ের
দিকে ।আত্মীয়
অনাআত্মীয়ের দিকে
। ঘর বাইরের
দিকে । সমাজ
রাষ্ট্রের দিকে
। তাকাতে পারছে
না । সর্বত্র
অসস্থি আর
আতংক । রাজউকে
আতংক । প্রতিটি
মন্ত্রণালয়ে আতংক । সবার
চোখ আনত
। কেউ চোখ
উপরের দিকে
তুলছে না
। যেন চোখ
তোলা যায়
না , কেউ চোখ
তুলে তাকায়নি
কোনদিন । শুধু
ফিসফাস শব্দ
। শুধু কানাঘুষা
। ঘরে ঘরে
। মসজিদ মন্দির
প্যাগোডা সিনাগগে
। বিচারালয় ইশকুল
কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে
। হাসপাতালে । কওমি
-আলীয়ায় । দরগায়
খানকায় । সবাই
নিচু স্বরে
কথা বলছে
। কী হবে
, কী
হবে ? সবাই অস্থির
হয়ে উঠেছে
। সবাইকে অস্থির
করে একটি
ঘোষণা তুলেছে
। শহরের প্রতিটি
দেয়াল ঘোষণা
দিয়েছে : এ-
পর্যন্ত যেসব
কথা তারা
শুনেছে , সব প্রকাশ
করে দেবে
। তারা আরও
বলেছে— দেয়ালের যেমন
কান আছে
, মুখও
আছে— সবাই বুঝুক
।
পড়ে যাবার পরে
নয় তলার ছাদের
উপরে কোমর
অব্দি দেয়াল
, সেখান
থেকে সামান্য
ঝুঁকে নিচের
পথঘাট দেখতে
গিয়ে পড়ে
রফিকুজ্জামানের মেরুদন্ড
ভেঙে কয়েকটি
টুকরা হয়ে
গেল । বুকের
খাঁচা ভাঙল
। বাম ও
ডান পা’র
যা হওয়ার তাই
হল । ছাতু
ছাতু । বলা
বাহুল্য , এরপর সোজা
হাসপাতাল । পুরো
বডি ব্যান্ডেজ
। মা কাঁদল
। বাবা কাঁদল
। ভাই ও
বোনেরা কাঁদল
। অফিসের কলিগ
মন খারাপ করল
। ফ্রন্ট ডেস্কের
মেয়েটি খুব
সাবধানে— যেন কাজল
মুছে না
যায়— এমন ভাবে
টিস্যু কাগজে
চোখের পানি
মুছে নতুন
জয়েন করা
ছেলেটির দিকে
মন দিল । তারপর
অপারেশনের পর
অপারেশন হল
। আবার অপারেশন
হল । হাসপাতাল
থেকে হাসপাতালে
রেফার
হতে
থাকল । কয়েক
মাস কেটে
যাবার পর
কয়েকটি বছর
কাটল । স্থায়ীভাবে
শয্যা নিল
রফিকুজ্জামান । নিনিতা
এখন বাপের
বাড়ি থাকে
। মঞ্জুরীও মার
সাথে । স্কুলে
পড়ে । কানাঘুষা
শুনতে পাওয়া
যায়— মঞ্জুরীর পড়াশোনার
দায়িত্ব নিয়েছে
প্রাক্তন চাচাত
ভাই । বর্তমানের
প্রেম । নয় তলার
ছাদের কিনার
ঘেঁষে দাঁড়িয়ে
ভাবছিল রফিকুজ্জামান— এইসব
।