গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৪

সাঈদা মিমি


একটি গ্রাম্য মারামারি

অশুভ সংকেত টের পাওয়া যাচ্ছিলো জোলাপাতির (পিকনিকের) রাতে, শালিকা কে নিয়ে একটু ফুর্তি করতে বেরিয়েছিলো তবারক, প্রসঙ্গত বলতেই হয়, এখানে দুজনেই পরস্পরের জন্য পাগল, নেহায়েত বড়বোন এই ঘরের বৌ তাই প্রকাশ্যে কিছু করা যায় না  

দৃশ্যটা দেখে ফেললো আলিতাজ, এরা পরস্পরের চাচাতো ভাই, ঘোর মিত্র, ঘোর শত্রু, পিকনিকের রাতেই সালিশ বসে গেলো তবারক মনে রাখলো সেই রাতের কথা , প্রতিশোধ…….. এই কথাটাই ঘুরছিলো মাথায়, পরদিন আলিতাজের ভাগ্নেকে পিটিয়ে পায়ের নলা ভেঙে দিলো সে, আলিতাজ পেটালো তবারকের প্রথম পক্ষের ছেলেকে কোন্দলে ঘরের মহিলারাও জড়িয়ে পড়তে লাগলো, ঘরে ঘরে লাঠিতে শান দেয়া শুরু হলো, মারামারিটা লাগলো বিষ্যুতবার, মাগরিবের নামাজের পর, আমি তখন নিতু আপার সঙ্গে বসে চা আর চাপাতি খাচ্ছিলাম দুপক্ষে লাঠিবাজি চলছে, এমন সময় বুলু খালাম্মা তার আপন তাই তবারকের মাথায় সজোরে এক বাড়ি বসিয়ে দিলো, দরদর করে রক্ত পড়ছে, ‘বুবু রে, তুই কি করলি?’ বুলু খালাম্মা ততক্ষণে বাঘিনীর মত চিৎকার করছে, ‘অই তরা কেউ তবারকরে বাঁচা, আলিতাজ বাড়ি মাইরা অর মাথা ফাটাইয়া দিছে

লাশটা

আমি যখন চার কেলাসে পড়ি তখন ওকাল মামু বললেন, মিয়ার বেটি, আমার আজিতেরে এট্টু পড়াইবার পারবা? এটাই মাত্র ছাওয়াল আমার, কোন মেয়াও (মেয়ে) নাই, ছাওয়ালডারে এট্টু শিক্ষিত করবার চাই । আমি মিয়ার বেটি, ওকাল মামু অবস্থাপন্ন কৃষক, এখানে একটা সামাজিক ব্যবধান আছে, কিন্তু গ্রামগঞ্জে আত্মিয়তার সম্পর্ক বাদে মিয়া কৃষকরা মিলেমিশেই থাকে, অন্তত আটত্রিশ বছর আগে যেরকম দেখেছি সেই ভাবনা থেকে বলা, আমিতো মহা খুশি, ছাত্রজীবনেই মাস্টার হতে যাচ্ছি ।

আজিত (আসল নাম আজিজ) কে পড়ানো শুরু করলাম, হতভাগা এমন গাড়ল কে জানতো! একসপ্তাহের মধ্যে অনুভব করলাম, আমি আমার পড়াই ভুলে যাচ্ছি । আজিতের মাথায় টাকা কামানোর চিন্তা ছাড়া আর কোন ভাবনা নেই, বর্ণশিক্ষা কিংবা জসিমুদ্দিনের কবিতা এসবে ওর কোন আগ্রহ নেই, এমনকি তার বাবার জমিগুলো চাষ করার বিষয়েও কোন আগ্রহ? নেই, একেবারেই নেই ।
মামুকে বললাম, পারুম না মামু, ও পড়বার চায় না, মামু আশাহত হলো, আজিত কিন্তু নেহায়েত বালক ছিলো না, আমার চেয়েও বড় কিন্তু সেই কেলাস ওয়ান পাশ দেয়া ওর আর হলো না ।
সাতবছর পরে শুনলাম আজিত বাস ড্রাইভার, পরের বছর শুনি, কোন দুর জনপদের এক ভদ্রলোকের মেয়েকে ভাগিয়ে এনেছে ও, ওর বাবা মা খুব আহাজারি করতো, ‘হায় রে আমাগের জমিজিরাত কিডায় দেখপেতারপর খবর পেলাম আজিত মরে গেছে, ।

সে বড়লোক হয়েছিলো, আরও ধনী হওয়ার জন্য ইয়াবার চোরাচালান শুরু করেছিলো, কার কার সাথে দ্বন্দ্ব ছিলো তা আমি জানি না, আমার জানার কথাও নয়, কেবল জানি ওর বাবার আমন ক্ষেতের আলে পড়ে ছিলো লাশটা ।