গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৪

ব্রতী মুখোপাধ্যায়


গৌতমের কি হয়েছে !

একমাস পর হাসপাতাল থেকে বাবাকে নিয়ে ঘরে ফিরছে গৌতম। বাবা বাজার নিয়ে ফেরার সময় বাইকবালকদের সৌজন্যে মাথায় ভারি চোট পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। যায়যায় অবস্থাই হয়েছিল। এখন স্বস্তি পাওয়ার কথা। কিন্তু কদিন ধরেই গৌতমের চোখেমুখে কালি পড়ে একটা ভয়ের ছাপ ক্রমশই স্থায়ী। অফিসের কলিগ থেকে পাড়ার

বন্ধুরা, অফিস থেকে ফেরার পথে যে বাড়িতে পড়াতে যায় সেখানে সব ছাত্ররা, হপ্তা দুই দিদি এখানে পড়ে আছে সে আর যে তাকে সবসময় দেখছে সেই মা ---সব্বাই জিজ্ঞেস করছে তার কি হয়েছে। 
এমনিতে সে হাসিখুশিই থাকে। ফুটবল, ক্রিকেট, শীতের সন্ধেয় ব্যাডমিন্টন-এইসব খেলতে খেলতেই বড়ো  আদরে গৌতমের বড় হওয়া তার বাবাই সাহেবদের হাতেপায়ে ধরে তাকে খেলার কোটায় চাকরিতে ঢুকিয়েছে অবশ্য চাকরিটা তার অপছন্দের, কারণ বেতন খুব কম তাছাড়া এখানে উপরি আয়ও নেই
 
বাবার বয়েস সত্তর হবে। হাসপাতালে ভর্তি করার ঠিক আগের রাতেও গৌতম বাবার সঙ্গে অশান্তি করেছে অভিযোগ একটাই, বাবা তার মেয়ের হাতে নাতি -নাতনির মুখেভাত বা জন্মদিনের অজুহাতে টাকাপয়সা যা রয়েছে তুলে দিচ্ছে। হাতিয়ে নিচ্ছে দিদিও। আশঙ্কা, তার ভাগে কিছুই একদিন থাকবে না।

মারুতি থেকে নামিয়ে গৌতম বাবাকে ধরে ধরে নিয়ে আসছে গৌতমের মা মেয়েকে তখন বলল --- কি হয়েছে বল তো ছেলেটার ? টেনশন ? মেয়ে ভাবল মা ওই টাকার কথাই তুলল মাকে কিছু বলল না মুখ খুলল মিনিট কয়েক বাদে --- কি ব্যাপার রে তোর ?
--- কি ব্যাপার ?
--- কেমন যেন লাগছে।
--- কিছু না বলে গৌতম নিজের ঘরে যেতেই তার বউ ভেতর থেকে দুয়ার ভেজিয়ে সামনাসামনি --- আমাকে বল কি হয়েছে

কি করে বলবে সে ? বাবা সব জানে সজ্ঞানেই শুনেছে ডাক্তারও থ হয়ে গেছে যখন সে বলেছিল ‘আমাকে এখন অনেক বছর বাঁচতে হবে বাবা আর কদিন ? রক্ত দিতে পারব না’