গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৪

মৌ দাশগুপ্ত


শিউলিদিনের অঞ্জলি


শিউলি মনেমনে পায়ে পায়ে বাগানের সবুজ ঘাসে ঢাকা লন ছাড়িয়ে লাল শৌখিন মোরামের পথ ধরে হেঁটে যায়, বাগান পেরিয়েই পিচের রাস্তা, নদীঘাট থেকে  কুয়ারমুন্ডা  রাজবাড়ী ছুঁয়ে ৪১ নম্বর হাইওয়ে। যে রাস্তা ধরে আজ দশ বছরের ওপর ওর নিত্য স্কুলে যাতায়াত সেই অতি পরিচিত রাস্তা ধরেই ওর আনাগোনা।সকালে, দুপুরে,  সন্ধ্যাবেলায়আজকাল রাস্তায় হাঁটার সময় শিউলির কাঁধের কাছটা ধরে থাকে বুড়িপিসি, কিংবা হাতটা ধরে নেয় মেজদাদু । ভীরু দুহাত বাড়িয়ে বুড়িপিসি, কি মেজদাদুকে আকড়ে থাকে শিউলি একলাটি আর কোথাও যায় না শিউলি। বাড়ীর সবাইকে লুকিয়ে দুরুদুরু বুকে রোমাঞ্চ নিয়ে কিশোরীবেলার প্রেমিকও ওকে একলা টানে না আর। ক্লাস নাইনে ওঠার পর শিউলির প্রথম প্রেমিক শরত ওকে চিনিয়েছিল মেয়ে হওয়ার সুখ,মেয়ে হওয়ার আনন্দ, সদ্য কিশোরী তখন প্রথম শরতের সদ্য প্রস্ফুটিত কমলা-বোঁটাওলা নরম ফুল, শুচিশুভ্র নিষ্পাপ । সামান্য একফোঁটা শরতের শিশিরও কাঁপিয়ে দিত সারা শরীর । অলি ভোমরা গুনগুনাতো মধুর লোভে । বয়ঃসন্ধির শিউলিতলায় ফিস ফিসিয়ে চলতো প্রথম প্রেমের পাঠ, মনে মনে শপথ ছিল ‘আমি আছি, আমি  থাকবসারাজীবন সারাজীবন’ ।

  ... আর কোনো শব্দের গুঞ্জন নেই নরপশুর হাতে বিধ্বস্ত শিউলিতলায় । কোন সুর নেই,  গান নেই, কবিতা নেই, রঙ নেই, বর্ণ নেই কিচ্ছুটি নেই। এখন শিউলি আর শিউলি ফুল দেখে না, আকাশ নদী ঘাস গাছপালা কিছুই দেখে না । আয়না, বইয়ের পাতা,  মায়ের মুখ,লক্ষ্মীপূজোর আল্পনা, শরতের সদ্য গোঁফওঠা তরুণ মুখের ছবি কি প্রেমপত্র , তাও দেখে না । দেখতেই পায় না । কালরাত্রির গাঢ় অন্ধকারে ভরে উঠেছে ওর অ্যসিডে পুড়ে ক্ষতবিক্ষত মুখের দৃষ্টিহীন দুটি চোখ।


--