গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৪

দেবাশিস কোনার


বদল  


সাংঘাতিক সব কাণ্ড কারখানার মধ্য দিয়ে চলতে চলতে শিবেন এখন বড় ক্লান্ত । তার চিন্তা এক আর চেতনা অন্য । সে যেন নিজেই জানে না তার পথ কোনটা ? সে কি প্রতিবাদের জন্য সেক্যুলার হওয়া ছেড়ে দেবে ? না কি তার নীতি আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে এই এলাকার সকলে যা চাইছে , তাই করবে ? আসলে শিবেন ব্যাপারী জীবনের প্রথম কয়েক বছর জ্ঞান হওয়া ইস্তক বরাবর একটি সম্প্রদায়ের  মানুষকে ঘৃণা করতে শিখেছিল । তারপর সে যখন প্রচণ্ড পরিশ্রম আর মনের জোরে স্কুলের ফাস্ট বেঞ্চে বসবার যোগ্যতা অর্জন করল , তখন থেকে তার জীবনের গতিপথ বদলাতে শুরু করল । বদলে দিলেন শুভ স্যার । শিবেনের জীবনটাকে  তিনিই বদলে দিয়েছেন ।
কি ছিল তাদের ? দুবেলা দুমুঠো খাবার ঠিকমত জুটত না । তাদের পরিবার দেশভাগের বেশ কয়েক বছর পর বলতে গেলে খালি হাতে বেড়া টপকে চলে এসেছিল সীমান্তের এ প্রান্তে পশ্চিমবঙ্গে । শিবেনের তখন ঠিকমত জ্ঞান ফোটে নি । বাবা - মায়ের মুখ থেকে শোনা কথাগুলো সে বিশ্বাস করে এসেছে এতদিন ।
 
তার বাবা বলতেন , 'খবরদার শিবু , সবাইরে বিশ্বাস করবা কিন্তু নেরেরে করবা না !'
বিশাল আঘাত পেয়েছিলেন জীবনে । যাদের ভরসায় ওই দেশে বসবাস করছিলেন লোভের বসে তারাই কি না ছুরি - চাকু লইয়া মারতে আসে ? মানুষের বিশ্বাসে আঘাত লাগলে সে বড় হিংস্র হয়ে ওঠে । সীমান্তের এই এলাকার সকলেরই অভিজ্ঞতা এক । তাই তারা ওই সম্প্রদায়ের মানুষকে ঘৃণা করে । শুভ স্যারই তাকে বুঝিয়ে ছিলেন,' দু'একজন মানুষের জন্য একটা গোটা সম্প্রদায়ের সমস্ত মানুষ খারাপ হয়ে যায় না । ' হাওয়াটা ঘুরিয়ে দিতে চাইছে কেউ কেউ । এখানে তো ওই সম্প্রদায়ের কোন ভূমিকা নেই । তবু কেন প্রতিবাদের রাজনীতিতে বিভেদের বিষ ?
 
শুভ স্যারও পূর্ব বাংলার মানুষ । তবে দেশ ভাগের বহু আগে ওনার বাবা এ দেশে চাকরি নিয়ে চলে এসেছিলেন । স্যারের বাবাও ছিলেন শিক্ষক । তিনি বর্ধমানে একটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রর অধিকর্তা ছিলেন । সেই পিতার যোগ্য সন্তান শুভ । মানুষ গড়ার কারিগর হয়ে তিনি চলে আসেন প্রত্যন্ত সীমান্ত বাংলার এই প্রান্তে । তার উদ্যোগে বিদ্যালয়ে পড়াশোনার মান উন্নত হতে থাকে । ছাত্রদের
নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন সমাজসেবা মঞ্চ ও সাংস্কৃতিক গ্রুপ । শিবেন সে দলের পাণ্ডা । আজ আর শুভ স্যার এখানে নেই । তিনি নিজের জেলায় শিক্ষকতার চাকরি নিয়ে চলে গেছেন বহুদিন । পিতৃবিয়োগ ঘটার পর তিনি বিয়ে করেছেন । এখনও শিবেন স্যারের কাছে মাঝে মাঝে যায় জীবনের নানা ঘাত - প্রতিঘাতের কথা আলাপচারিতায় উঠে আসে । তার প্রাণের চেয়ে প্রিয় বন্ধুকে আজ পৃথিবী থেকে সরে যেতে হল শুধুমাত্র দুস্কৃতিকারীদের অপরাধ বন্ধ করতে গিয়ে । সমাজকে পরিশুদ্ধ রাখার প্রচেষ্ঠা করা কি অন্যায় ? বিপ্লব , তার বন্ধু চেয়েছিল বেয়াইনি মদের ঠেক উঠিয়ে দিতে । তাদের পাড়ায় এতদিন কোন মদের দোকান ছিল না । প্রচুর গরীব মানুষের বসবাস এই পাড়ায় । মদ যে তারা খেত না , তেমনটা নয় । তবে পাড়ায় মদ পাওয়া যেত না বলে তাদের দূরে যেতে হত । পাড়ায় ঝুট - ঝামেলা কম হত । এখন প্রায় প্রতিদিন কিচাইন । সেই কারনে তারা কয়েকজন বন্ধু মিলে ঠিক করেছিল , এই মদের ঠেক তুলে দেবে । আর সেই জন্যই বিপ্লবকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করল ওরা ।
      
বিপ্লবের মৃত্যূ তাদের পাড়াটাকে একেবারে বিমূঢ় করে দিয়ে গেছে । দলমত নির্বীশেষে সকলে এক হয়ে বিপ্লবের মৃত্যূতে পথে নেমেছে । অপরাধীদের শাস্তির দাবীতে বিক্ষোভ দেখিয়েছে । কিন্তু  রাজনৈতিক দলগুলো চাইছে এই সুযোগ কাজে লাগাতে । এই সব দেখেশুনে শিবেনের মন খারাপ । এই সময়ে যদি শুভ স্যার থাকতেন ! দিল্লীতে সরকার বদলেছে এই সেদিন । রাজ্যে সরকার বদলেছে
প্রায় তিন বছর । কিছুই বদলায় নি । এখন দূর্বিত্তদের তাণ্ডব আগের থেকে বেড়েছে বই কমেনি । মানুষ তিতবিরক্ত । আগে রাজ্যে যে সরকার ছিল তাকে সকলেই ভুলে গেছে । এখন নতুন যুগ । যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ । কিন্তু সকলেই যেন কেমন বদলে গেছে । বিপ্লবের মৃত্যূর জন্য যারা দায়ী, সকলেই একই সম্প্রদায়ের মানুষ । তবুও ওরা সেই বিভেদের রাজনীতির পথে যেতে চাইছে । এখানেই তার সাথে ওদের মতের মিল হচ্ছে না । তার বন্ধুরা তাকে বলছে আগের সরকারের দালাল । তা বলুক , কিন্তু এখানে সাম্প্রদায়িক হানাহানি সে কখনই বরদাস্ত করবে না ।

এখন পাড়ার মানুষের যা আবেগ , তাতে শিবেন যাই বোঝাক না কেন কেউ তার কথা শুনবে না তবু সে চুপ করে থাকবে না । তার সাধ্য মতন সে বুক চিতিয়ে লড়াই করবে । বিপ্লব যাদের হাতে  প্রান দিয়েছে তারা সকলেই তো হিন্দু ? তাহলে কেন এই জাতি বিদ্বেষ ? শুভ স্যার বলতেন , ' ভারতে প্রধান তিনটি রাষ্ট্রনায়ক খুনের ঘটনায় কিন্তু মুসলিম সমাজ যুক্ত ছিল না ।' 'আপনি কোন খুনের ঘটনার কথা বলছেন স্যার ?' বিস্ময় সূচক প্রশ্ন করেছিল শিবেন । শুভ বলেছিল , ' এক মহাত্মা গান্ধী , দুই ইন্দিরা গান্ধী এবং তিন রাজীব গান্ধী ।'  শিবেন স্যারের কথা শুনে অবাক হয় । সত্যিই তো ! এভাবে সে কখনও গভীর ভাবে চিন্তা করে নি ।  এখন একটা হাওয়া উঠেছে সেই হাওয়ায় সকলে ভেসে যেতে চাইছে । তার পিছনে যুক্তি থাকুক বা না থাকুক । এই ঝড়ের মোকাবিলা করা কি শিবেনের একার পক্ষে সম্ভব ? সে তবুও চেষ্টার কসুর করছে না । তাদের লড়াইটা যে কেন , কিসের জন্য , কি তার ভিত্তি -- এসব না জেনে বুঝেই রাজনৈতিক দাদা - দিদিরা মাতব্বরি করতে আসছেন । ওনাদের যেন কত দরদ ! আসলে ঘোলা জলে  সকলেই মাছ ধরতে চায় । তাদের আন্দোলনকে দমিয়ে দিতে পথে নেমেছে সরকারি দল ও সেই সাথে পুলিশ প্রশাসন । ওদের সাথে পেরে ওঠা কিছুতেই সম্ভব নয় । তাদের ক্ষমতা সীমিত ।  

বিপ্লবকে নিয়ে চলছে রাজনৈতিক তরজা । সে কোন দলের সাপোর্টার ছিল সেই নিয়ে চলছে দড়ি টানাটানি । লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায় । ছিঃ , এই কি রাজনীতি ? একটা যুবকের মৃত্যূর থেকেবেশি দামী তার রাজনৈ্তিক পরিচয় ? "সত্য সেলুকাশ , কি বিচিত্র এই দেশ !" শিবেন তাজ্জব হয়ে যায় এদের কাণ্ড কারখানা দেখে । যারা বিপ্লবকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিল তারাই কিনা ওর মৃত্যূর জন্য বিচার চাইছে ? তাও আবার কোথায় ? না , বিপ্লব যে কলেজে পড়তো সেই কলেজের অধ্যক্ষের কাছে । নাঃ , এখন দেখছি সকলেই অন্ধ হয়ে গেছে । দেখেও দেখতে পাচ্ছে না । কোথায় যেন হারিয়ে গেল সেই সব প্রতিবাদী মানুষগুলো । কেষ্টবিষ্টুরা একে একে ধরা পড়ল আর সরকারের আস্ফালন এবং হুংকার তত বাড়তে থাকল । তারা বলতে চায়,দেখ আমরা কত তৎপর । আসলে কিন্তু ভাঁড়ে মা ভবানি । গুণ্ডাগুলোকে মদত দিয়েছে ওরা , লালন করেছে ওরা ।এমনকি খুনের পর আশ্রয় পর্যন্ত দিয়েছে । চোরের মায়ের বড় গলা করে এখন বলছে খুনিদের ছাড়া হবে না । মানে ওরা খুন করবে , ওরাই খুনিদের ধরবে এবং ওরাই তাদের শাস্তি দেবে । এর বাইরে যদি কোন অন্দোলন হয় , তাহলে সেটা নাকি সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত । শিবেন জানে এই সব করেও ওরা নিজেদের জনসর্মথন ধরে রাখতে পারে নি।মানুষের ভয় ভাঙ্গছে  ।
 

আকাশে আজ বৃষ্টির ভ্রূকূটি । কালো মেঘে ছেয়ে আছে গোটা আকাশটা । শিবেন যাবে বিপ্লবদের বাড়ি । সেখানে তাদের একটা সভা আছে । সভা শুরুর আগে তাকে পৌঁছাতেই হবে । কেননা সেই ই 'বিপ্লব ঘাতক প্রতিবাদী মঞ্চে'-র সম্পাদক । দ্রুত সাইকেল চালাচ্ছে সে ।এই পাড়াটা তার খুব পরিচিত । একসময় সে এই পাড়ার দায়িত্বে ছিল তখন যুব সংগঠন করত সে । পাড়াটা মুসলিম অধ্যুষিত ।
সকলেই দিন আনা দিন খাওয়া । কেউ ড্রাইভার , কেউ রিকশাচালক , কেউ মেকানিক , শ্রমিক , হকার ইত্যাদি কাজ করেন । দূর থেকে শিবেন দেখল একটা গলির মধ্যে বেশ কিছু অপরিচিত মুখ উঁকি দিচ্ছে । এরা কারা ? দুটো ব্রেক একসাথে গায়ের জোরে টিপে ধারে শিবেন । ছেলেগুলো তার দিকেই এগিয়ে আসছে । এখানকার সব বাড়িতেই একসময় শিবেনের অবাধ যাতায়াত ছিল । সামনেই পটল চাচার বাড়ি । শিবেন সাইকেল সহ তার বাড়িতে প্রবেশ করে ।
 
আমিনা চাচি তাকে দেখে তো অবাক । শিবেন , এতদিন পর চাচির কথা মনে পড়ল বাপ ? শিবেন আমতা আমতা করে বলে , 'চাচি এখন আগের মত পরিস্থিতি নেই । আসবার ইচ্ছে থাকলেও আসা হয় না । তারপর বল, চাচা কেমন আছে ?' গরীব মুসলমান পরিবার । টালির ঘর । প্লাস্টিকের বস্তা ঘেরা একফালি বারান্দা । একটুখানি উঠোন । শিবেন উঠোনের একপাশে দ্বিচক্রযানটি রাখে ।
 
চাচি বলে ,'ছেলেরা লায়েক হয়ে গেছে বাপ । এই বুড়ো মানুষ দুটোকে দেখবার কেউ নেই । সে গেছে ভাঙ্গা টিন - লোহা কেনাবেচা করতে ।' হটাত চাচি তার কাছে এসে  চিবুকে একটি চুম্বন দেয় । ' বেটা , সেই যে অন্ত্যোদয় যোজনার চালের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলে , তাই দুটো খেতে পাচ্ছি ।' শিবেন অবাক হয় । তার সে সব দিনের কথা মনেও নেই । অথচ এরা সব কথা মনে রেখেছে । তবু শিবেন
চাচির ভুল ভাঙ্গানর জন্য বলে , ' ওটা আমি করি নি চাচি । সেই সময়ে যারা সরকারে ছিল তারা করেছে ।'

বাইরের ভিড়টা আস্তে আস্তে যেন এগিয়ে আসছে । কেননা অনেক মানুষের গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে । এতক্ষন বাইরে অপেক্ষা করছিল । এতো দেরি হচ্ছে দেখে ধৈর্য রাখতে পারে নি ওরা । শিবেন মনে মনে প্রস্তুত হয় বড় কিছু ঘটনার জন্য । সে জানে তাকে লড়াইটা করতে হচ্ছে , একদিকে কেন্দ্র ও অপর দিকে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে । সেই সাথে সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে তাকে প্রতিনিয়ত যুঝতে হয় তার শ্ত্রু অনেক । চাচি অনেক মানুষের কণ্ঠস্বর শুনে বলে , ' এই হয়েছে এক জ্বালা , ঘরে খাবার চালটুকু পর্যন্ত নেই আর এরা এসেছে ঈদের চাঁদা নিতে !' চাচি ভেবেছে ওরা সামনে ঈদ , তাই চাঁদা নিতে এসেছে । রে রে করে সে বাইরে বের হয় ।  ভিড়ের ভিতর থেকে একজন বলে ওঠে ,' এই বুড়ি , মালটা এতক্ষন ধরে কি করছে ? ওকে বাড়ি থেকে বের করে দে ! 'চাচি জবাব দেয় , ' কেন রে , ও তোদের কোন বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছে ? ' ভিড়টা পটল চাচার বাড়ির মুখে এসে জড়ো হয়েছে । ওদের আগে থেকেই প্লান ছিল আজ শিবেনকে শারীরিক বা মানসিক ভাবে নির্যাতন করবে । কিন্তু সে সুযোগ ওরা পেল না । ওদের ধৈর্য হারানোটা স্বাভাবিক । আমিনা চাচি এতসব  জানে না । ওকে ওই উন্মত্ত - উশৃঙ্খল যুবক দলের সামনে একা ছেড়ে দেওয়া উচিত কাজ হবে না । সে কারনে শিবেন নিজে এগিয়ে যায় ভিড়টার সামনে ।  তাকে দেখতে পেয়েই ভিড়ের ভিতর থেকে একজন বলে ওঠে , ' এই যে সেক্রেটারি বাম থেকে এখন ধর্মগুরু হয়েছ ,তো মুসলিম পাড়ায় কেন ? ' শিবেন অবাক । সে ধর্মগুরু ? প্রচারটা তাহলে কোন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেচে ? ওরা হিন্দু পাড়ায় গিয়ে একরকম প্রচার করছে আর মুসলিম পাড়ায় গিয়ে অন্যরকম । শিবেন কয়েক মুহূর্ত ভাবে । তারপর ছেলেটির উদ্দেশ্যে বলে ,' আমি কি এমন অন্যায় কাজ করেছি যার জন্য তোমরা আমাকে ধর্মগুরু বলছ ? তাছাড়া বিপ্লবকে খুন করেছে তো হিন্দুরাই ।

ভিড়ের ভিতর থেকে অপর একটি কম বয়েসী ছেলে বলে , ' তাহলে তুমি ওদের সঙ্গে আছো কেন ? ওরা তো সাম্প্রদায়িক ।'  'কে বলেছে বিপ্লব ঘাতক প্রতিবাদী মঞ্চ সাম্প্রদায়িক ? এটা তোমাদের ভুল ধারণা । একদল স্বার্থানেশী এরকম প্রচার করছে ।' শিবেনের কথা শেষ হতে না হতেই দলের ভিতর থেকে একজন সামনে এগিয়ে আসে । মনে হয় এই ওদের লিডার । গাঁট্টাগোঁট্টা চেহারা । গালে একটা কাটা দাগ আছে । দেখলেই মনে হয় গুন্ডা । সকলেই ওকে ফকির দা বলে ডাকছিল । সেই ফকির মারমুখি হয়ে এগিয়ে এলো ।  'বেশি পাঁয়তারা মারিস না । যা বলছি মন দিয়ে শোন । তুই আজই রেজিগনেশন দিয়ে দে, না হলে বিপদে পরবি ।' সরাসরি হুমকি দিল শিবেন কে ।চাচি ফকিরের কথায় বা তার কথা বলার ভঙ্গিতে বেজায় চটে গেল ।  'কি করবি রে মিনসে ? শিবেন তোদের মতো চরিত্রহীন,লম্পট নয় । ও মানুষের উপকার করে । ওকে ভয় দেখাচ্ছিস ? ' চাচি তীব্র প্রতীবাদে ফেটে পড়ে  
 

চাচি তাকে চরিত্রহীন বলায় ফকির প্রচণ্ড অপমানিত বোধ করে । সে এগিয়ে এসে চাচিকে একটা ধাক্কা মারে । চাচি উঠোনে উল্টে পড়ে যায় । সে সময় গোলমাল শুনে আশেপাশের অনেক লোকজন জড়ো হয়েছিল । একে রমজান মাস । রোজাদার এক বয়স্ক মহিলার ওপর আক্রমণ । সকলে হৈ হৈ করে উঠল ।বিপদ বুঝে ফকির এ সময় পিঠটান দেবার মতলব করছিল । শিবেন তক্কেতক্কে ছিল । সে জাপটে ধরল ফকিরকে। সকলে ঝাপিয়ে পড়ল ফকিরের ওপর । এতবড় সাহস রোজার সময় শারীরিক আক্রমণ ! বাকিরা বিপদ বুঝে যে যার কেটে পড়ল । বিপ্লবের খুনের পর থেকেই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন ছিল । তাদের একটি দল এসে ফকিরকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল । আমিনা চাচির আঘাত ততটা গুরুতর না হলেও তাকে নিয়ে যাওয়া হল হাসপাতাল । সন্ধ্যার সময় টিভির খবরে দেখাল যে ফকিরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে । শিবেন আর সেদিন সভায় ঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারেনি । তবে খবরটা জানাজানি হয়ে গিয়েছিল । মঞ্চের লোকজন সকলেই এসে হাজির হয়েছিল ঘটনাস্থলে । সেদিন মঞ্চে সামিল হয়েছিল মুসলিম পাড়ার সাধারন মানুষ । শিবেনের মনে যে খেদ ছিল তা আর রইল না ।