গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৪

দোলনচাঁপা ধর



ভুল না ফুল 


ডাক্তার জবাব দিয়ে যাওয়ার পর থেকেই মিত্র বাড়িতে শোকের পরিবেশ,ছেলেরা অবাক কি এমন হল যে দুইদিনের জ্বরে মা চলে যাবেনএমন কি ঠিকমত চিকিৎসারও ব্যবস্থা করা গেল না,বাড়ির দীর্ঘদিনের গৃহচিকিৎসক পতিত পাবন ব্যানারজি এসেই এই খবর জানালেনসাথে অবশ্য এও বললেন যে আর কোনও ডাক্তার দেখাতে চাইলে যেন তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করা হয়।মেজ ছেলের সেজ শ্যালক নব্য বিলেত ফেরত ডাক্তার,তাকে ডাকারই ইচ্ছে মেজবৌমার,সময়ও কম তাই তাকে ডাকাই সাব্যস্ত হল। মিত্র মশাই বিকেল থেকেই চোখের জল ফেলছেন প্রায় ৬০/৬৫ বছরের দাম্পত্যের কি তবে এই পরিণতি?শিবানী এভাবেই কি তাকে একা করে যাবে শেষে।যাকে একা একটি দিনও বাড়ির বাইরে পা দিতে দেন নি তিনিভালবাসার বেড়াজালে চিরদিন আটকে রেখেছেন তার প্রানপাখিকে সেই আজ তার আগে রাজরানীর মত সকলের চোখের সামনে একা একা চলে যাবে।সন্ধ্যের পরে ডাক্তার আসবে তার আগে শিবানীর ডাক আসে,স্বামীর সাথে দেখা করতে চান তিনিঝি চাকরের চোখের জলে তিনি বুঝেছেন যে তার হাতে সময় বড় কম তাই জীবনের সেই কথাটা স্বামীকে না বলে মরতেও পারছেন না তিনি।চোখের জলে ভাসতে দেখে মিত্র মশাই নিজেকে সামলাতে পারেন না,শিবানী হাতেরইশারায় তাকে কাছে ডেকে কানে কানে বলেন

---আমি চললুমএ জন্মের মত মাফ কোর
---এসব কি বলছ শিবু?
---না গো,অমল কে মনে আছে?সেই যে বড়খোকা যখন দেড় বছর পাশের মুকুন্দ বাবুর বাড়িতে ছিল কিছুদিনওনার কেমন ভাই ।
---হ্যাঁ তাকে আবার কেন এখন?
---ছাতে কাপড় শুকোতে গিয়ে ---কি কাণ্ণা---তাকে ভেবে আমি বেশ কিছুদিন ঘুমাই নি গো,আর সেও আমাকে......
---চুপ কর পাপীয়সী,তোর তলে তলে ...............

ছেলেরা দৌড়ে আসে বাবার চিৎকারে আর রাগে কাঁপতে কাঁপতে বাবা বেরিয়ে যান ঘর ছেড়ে আর মায়ের মুখে শান্তির হাসি,এদিকে ডাক্তার এসে পড়ায় এ ঘটনা চাপা পড়ে যায়।বিলেত ফেরত ডাক্তার জানিয়ে যায় বুকে জল জমেছে বটে তবে ভয়ের কারণ নেই, এখন অনেক নতুন চিকিৎসা আছে আশা রাখা যেতেই পারে।