গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৪

অমলেন্দু চন্দ


মালিন্য আর অন্তরদর্শন


রেলপাড়ের মাঠে একটা সজনে গাছ,  থোকা থোকা ফুল আর ছোট ছোট ডাঁটা নিয়ে সজনে সুন্দরী দাঁড়িয়ে আছে, ঠিক তার পরেই কিছু ঝুপড়িলোকটা সেদিকেই চলল কোথায় পায়ের ধুলো দিতে চলেছে, সজনেতলার রক্তাম্বরী ফুল কুড়ানির পাশ দিয়ে যেতে যেতে জিজ্ঞেস করল 
 কাজে বেরস নি যে
ছাইরে দিসি -
কেন,
সে বহুত ঝামেলি হয়েসে 
 রক্তাম্বরী একটা হাফ গেরস্ত নার্সিং সার্ভিসে খেপ খাটতে যায়, লোকটা সেটা জানত
 ঝামেলি আবার কি হল -
সেকটি বাবু হাত ধইরে টানাটানি করসিল কাল রেতে, অনেক রেত হইসিল কাম শেষ করতি -বুইর্যা ড্যাকরা - রক্তাম্বরীর বড় বড় পটলচেরা চোখ আর নাকের পাতা ফুলে ওঠা দেখে লোকটা বুঝলও, ব্যাপারটা হাত টানাটানিতেই শেষ হয়নিবলল তুই কি করলি
পটলাক্ষী  একটু যেন ভেবরে গেল, আমতা আমতা করে বলল কি আর কইরব, ছাইরে দিতি কইসিলাম, না হলে ভাল হবনি 
ছেড়ে দিল ? লোকটা কি একটু হতাশ নাকি অবাক হয়েছিল

মুখ নিচু করে সাদা সোনালী ফুল গুলো খুঁটে খুঁটে তুলতে তুলতে অস্ফুটে যেটা বলল তাতে লোকটা বুঝল ছেড়ে দেওয়া তো অনেক পরে হয়েছিললোকটা যেন একটু আশ্বস্ত হল  যাক তাহলে ছেড়ে দিলি কেন ? কাজে যাওয়া?

সেকটি বাবু ট্যাহা দেয় নাই জ্যা - লোকটা ঠা ঠা করে হেসে ফেলল, পর মুহূর্তেই বুঝল মিনি মাগনার পরিশ্রম চলতে থাকবে এটা বুঝে রক্তাম্বরী সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর ওখানে নয় বলল ঠিক আছে আমি তোকে দিয়ে দেব, কত হয় ?
রক্তাম্বরী ফোঁস করে উঠল  আবার সেই দৃপ্ত বড় বড় পটল চেরা দৃষ্টি যেন জ্বালিয়ে দেবে - মুই ভিক লিই না রে বাবু, পর মুহূর্তে কিসের আবেগে যেন চোখ দুটো ভিজে গেল প্রায়, মাথা নিচু করলেও লুকতে পারে নি মেয়েটা লোকটার কি হয়েছে বলবি তো
আসল কষ্টটা আর মেয়েটা চেপে রাখতে পারে না, কেঁদে ফেলা মুখটা তুলে বলে মরদটা মাইরল যে
সে তো মারবেই
হহ তুঁ  বুঝলিক নাঈ রে বাবু  উয়ার লেইজ্ঞে মারে নাই, মারসিল ট্যাহা না লইয়া চইল্যা আইসি - মু অর পয়েসায় খাই নাই কহুনও, নুয়া কাম খুইজতে হবেক, আজ সইজন্যা ফুল বেইচ্যা পয়েসা আনুম

লোকটা কেমন যেন দিকভ্রান্তের মত হয়ে পরে রেলপাড়ের মাঠের রাস্তায়, কোথায় যাচ্ছিল সেটাও গুলিয়ে যায়জীবনের এই জটিল ঠিকানার সন্ধান - এই নে কুড়িটা টাকা রাখ, ফুল গুলো আমার বাসায় দিয়ে আসবি, আজ দুপুরে ভাত আর সজনে ফুল ভাজা খাবো, তুই আসিস, বৌদি বলেছিল পোস্তর বড়া করবে

কথাগুলো লোকটা মুখ তুলে বলতে পারে নি, খুব মৃদু স্বরেই বলেছিল, উত্তরের ফোঁপানি শোনার জন্য আর দাঁড়াবার সাহস ছিল না, লোকটা পালিয়েছিল