গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

ঝর্ণা চট্টোপাধ্যায়


পরিচয়

তারকের  দোকানের সামনে একটা জটলা দেখে থমকে দাঁড়াল মালিনী। সবে স্কুল বাস থেকে নেমেছে। বাস থেকে নেমে  মিনিট তিন/চার হেঁটে গেলেই মালিনীদের বাড়ি। তার একটু আগে উল্টোদিকেই পড়ে দোকানটা। জটলার  মধ্যে অনেকগুলো চেনা মুখ চোখে পড়ল। ছোটুঅংশু, রাজেশ, কণা, মিমি আরও কেউ কেউ ছিল। সকলের মুখ দেখা  যাচ্ছিল  না। রাস্তার এদিক থেকেই ডাকল মালিনী---
-এই, কি হয়েছে রে?
রাজেশ কিছু বলার চেষ্টা করল। কিন্তু ভালো শুনতে পেল না মালিনী। ওদিকে রাস্তা পার হয়ে যাবে কি না ভাবতে ভাবতেই রাজেশ একছুটে রাস্তাটা পেরিয়ে এদিকে চলে এল। বললে---
--সেই যে  বংশী আছে না, মিলিদি, সেই যে গো কালো বংশী, ওকে ধাক্কা মেরে পালিয়েছে একটা  মারুতি। হাত-পা কেটে  গেছে, উঠতে পারছে না।
--ওকে আমাদের বাড়ি নিয়ে আয়, দেখছি...বলে মালিনী পা চালাল তাড়াতাড়ি। বংশীকে একটা ফার্স্ট এড দিতে হবে মনে হচ্ছে।

বাড়ি এসে দ্যাখে বিজয়া, তার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বসে আছে মায়ের কাছে, বসার ঘরের বড় সোফাটায়। মালিনীকে দেখেই উচ্ছসিত হয়ে উঠল।
--বাবা, তোর এত দেরী দেখে চলেই যাচ্ছিলাম। কাকিমা অবশ্য বলেছেন তোর আজকে দেরী হবে, পেরেন্টস মিট আছে নাকি স্কুলে, কেমন আছিস মিলি?
মিলি স্কুলের ব্যাগ, জলের বোতল, খাতা-পত্র সব নামিয়ে রাখল সোফার একপাশে। তারপর কি ভেবে আবার বুকের কাছে জড়ো করে নিয়ে বিজয়াকে বললে----দাঁড়া, একেবারে ধরাচূড়ো ছেড়েই আসি। মা, আমাদের সেই বড় ওষুধের বাক্সটা কোথায় আছে গো, সেই যে যেটাতে তুলো, ব্যান্ডেজ সব থাকে...বীণাপানির দিকে তাকিয়ে বলল মিলি, মালিনী।
বীণাপানি কিছু বলার আগেই বিজয়া লাফিয়ে বলে উঠল---কি হয়েছে, কই দেখি !’    
-আরে, আমার না...ওই বংশী আছে না...দেখলাম রাস্তার ওপরে পড়ে আছে, গাড়ির ধাক্কা  লেগেছে, ছেলেগুলোকে বলেছি নিয়ে আসতেবলেই মায়ের দিকে তাকিয়ে আবার বলল...সেই যে মা , কালো বংশী, বুঝতে পারলে?
বীণাপানি মেয়েকে একবার দেখে নিয়ে বিজয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন...এই এক হয়েছে, আচ্ছা গাড়ি নিয়ে যাবার সময় একবার দেখবেনা মানুষের দিকে তাকিয়ে, কি ঝামেলা বলত? আহা রে, বংশীটার   তো সারাজীবন এর -ওর বাড়ির ফাই-ফরমাশ খেটেই জীবন গেল, আবার এইসব...কথা শেষ করলেন না তিনি। বিজয়া পাশের ঘরে চলে গেল তাড়াতাড়ি। মা আবার না শুরু করেন!  তাছাড়া এখুনি ছেলেগুলোও এসে পড়বে।
                                                       ()

বিজয়া তার বাচ্চাকে নিয়ে চলে গেছে অনেকক্ষণ। ঠিক কি জন্য এসেছিল জানা হল না মিলির। বংশীকে নিয়ে ছেলেগুলো এলো। বেশ ভালরকমের কেটে-ছড়ে গেছে লোকটার। ওই নিয়েই ব্যস্ত হয়ে রইল, বিজয়াকে আর আলাদা করে কিছু জিজ্ঞেস করা হয়ে উঠল না মিলির। অবিনাশ কি কিছু বলে পাঠিয়েছে বিজয়াকে দিয়ে
 মনটা একটু উশখুস করে উঠল। না,  এখন অনেক রাত হয়ে গেছে... বিজয়া হয়ত তার বাচ্চাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে, হয়ত ঘুম পাড়াচ্ছে... থাক, দরকার নেই। কাল নিজেই একবার যাবে অবিনাশের খবর নিতে। এখনও কি শরীর ভাল হয়নি অবিনাশের? তবে কি আবার জ্বরটা আসছে, নাকি আরও অন্য কিছু? চিন্তায় মুখটা গম্ভীর হল মিলির।  একরাশ চিন্তা মাথায় ঢুকল। বীণাপানি খাবার কথা বলতে এসে দ্যাখেন বাইরের জানালা দিয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে তাকিয়ে  কিছু ভাবছে মালিনী। কাছে এসে পিঠে হাত দিয়ে বললেন,
---কি রে, কি ভাবছিস?
---নাঃ, কিছু না। বংশীটার বেশ ভালোই লেগেছে , জানো  মা। রাজেশদের বললাম হাসপাতালে দিয়ে আসতে। হাসপাতালে না গেলে ঠিক হবে না। কে দেখবে ওকে, বল?
--কেন, একবার ইন্দু-কিরণেগেলেই তো হত!
--কি দরকার! অত ঝামেলার কি দরকার মা! কে দেখবে, না দেখবে...তার চেয়ে সরাসরি হাসপাতাল যাওয়াই তো ভাল......বিরক্তি প্রকাশ করল মালিনী।
বীণাপাণি  বুঝতে পারলেন মেয়ে কোন কারণে এখন বিরক্ত হয়ে আছে, আর কথা বাড়ালেন না। বংশী সকলেরই ফাই-ফরমাশ খাটে। কেউ কোথাও নেই। ছোটবেলা থেকে তাকে এভাবেই দেখছে মালিনীও। আজ এবাড়িতে, তো কাল ওবাড়িতে...এভাবেই চলে। যেখানে কাজ করে, সেখানেই থাকে, খাওয়া-দাওয়া... ইন্দু-কিরণে বেশি থাকে, ওদের কাজই বেশি করে। তাই হয়ত মা ভেবেই নিয়েছেন, এটা ওদেরই দায়িত্ব।   
মায়ের দিকে ফিরে বললে মিলি,---বিজয়া কেন এসেছিল জানাই হল না। ওর বাচ্চাটাকে কি সুন্দর দেখতে হয়েছে, না মা...হাসিমুখে বললে বিজয়া।
---হুঁম, একেবারে বাপের মুখ বসানো। দেবশংকরকে তো দেখতে  ভালই......
--বিজয়াও  তো খুব সুন্দর দেখতে  মা...!
--হুঁ, ওরা দুজনেই খুব ভাল , তাহলে আর বাচ্চারা ভাল হবে না কেন?
--ভাল, না সুন্দর...! তুমি না মা...উফ...ভাল, সুন্দর সব তোমার কাছে এক...হেসে ফেলল মিলি।
--ওই হল, হেসে ফেললেন বীনাপাণিও। --নে চল মিলি..., রাজ্যের কাজ পড়ে রয়েছে আমারসামনেই পুজো, এখনো কত কিছু বাকি আছে, তা জানিস? একটু একটু করে শেষ করতে না পারলে...নে চল খেয়ে নিবি...বাকি কথা আর শেষ করলেন না বীণাপানি।  
একটা সময় তাদের শুধু খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য  বীনাপাণিকে হাতে সেলাই এর কল তুলে নিতে হয়েছিল।এখন আর মা-মেয়ের খাওয়া-পরার অভাব নেই, কিন্তু তিনি আর অভ্যাসটা ছাড়েননি। একটা মেয়ে আছে, সে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অর্ডার নিয়ে আসে, হয়ে গেলে আবার তাদের বাড়ি দিয়ে আসে। তাকে দিয়ে-থুয়ে , সেলাই এর সরঞ্জাম, ইত্যাদি সব মিটিয়েও বীনাপাণির  হাতে বেশ কিছু টাকা থাকে। মিলি দু-একবার বারণ করলেও তিনি কথা শোনেননি। বাড়িতে শুধু শুধু বসে থেকে করবেনই বা কি! মিলিও আর নিষেধ করেনি। যা করছে করুক, এত বড় বাড়িতে সারাদিন একা একা থাকাও তো কষ্টকর! তবু নিজের কাজের মধ্যে থাকা।
--মা, খেতে দাও, চল খেয়ে নিই...উঠল মিলি।

                                                       ()

আজ শনিবার, মিলির স্কুল ছুটি। তাদের শনি রবি এই দুটো দিন স্কুল বন্ধ থাক্কে। সকালে জনখাবার খেয়ে আটপৌরে  শাড়ীটা পালটা নিচ্ছিল মিলি। বীনাপাণি চেয়ে রইলেন, বুঝলেন  কোথাও বেরোচ্ছে মেয়ে। জিজ্ঞেস করলেন না কোথায়। শুধু বল্লেন,...বেশি  বেলা করিস না, রোদের তাপে মাথা ধরবে।
--ছাতা নিয়ে যাচ্ছি...বলে মুখটা একবার মুছে বাইরে এলো মিলি। কাজের মেয়েটা  বাইরের বারান্দা ধুচ্ছিল। মিলি শাড়ীটা একটু আলগোছে হাতে করে তুলে নিয়ে সিঁড়িতে নামতে নামতে বলল,...বুলা, বাইরের দরজাটা দিয়ে যা...

বাড়ির বাইরে পা রাখল মিলি। খানিকটা এগিয়ে একটা তেমাথার মোড়। সেখান থেকে ডানদিকে যে রাস্তাটা চলে গেছে তার বাঁ-হাতি কয়েকটা বাড়ির পরেই  অবিনাশদের বাড়ি। এখান  থেকে খুব বেশি দুরও নয়। কিন্তু সকালবেলা সকলের চোখের সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে কেন যেন ইচ্ছ হল না মিলির। একটা কি রিক্সা নিয়ে নেবে,...ভাবতে ভাবতেই এগিয়ে এল মিলি বাকি পথটা  আর রিক্সা নেবার কোন  মানেই হয় না! এগিয়ে প্রায় মোড়ের মাথায় চলে এল মিলি। সেখান থেকেই দেখতে পেল চিনুর চায়ের দোকানে বসে আছে অবিনাশ। সঙ্গে আছে তরুণ, নিশীথ আর রূপেন।  ওদের হাতে চায়ের ভাঁড়। অবিনাশকে কেমন যেন রুক্ষ, শুকনো লাগছে দেখতে। ততক্ষণে আরো খানিকটা এগিয়ে এসেছে মিলি। ওরাও দেখতে পেয়েছে ওকে। কাছে এসে অবিনাশকে দেখল মিলি। খুব ফ্যাকাশে লাগছে। চোখমুখ শুকিয়ে কেমন যেন হয়ে গেছে...! খারাপ লাগছিল মিলির, এই অবস্থা অবিনাশের!
মিলিকে দেখে এগিয়ে এল তরুণ। তরুণের ভাইঝি মিলির স্কুলেই পড়ে। হাসিমুখ করে তরুণ বলল--    ---চা খাবি, মিলি? পাড়ার ছেলেরা ছোটবেলা থেকেই তুই-তোকারি করে, অনেক্টা বড় দাদার মতন।
--না, তোমরা খাও, আমি তো বাড়ি থেকেই আসছি।
--বাড়ি থেকে তো আমরাও আসছি, বাড়ি থেকে এলে চা খাওয়া যায় না, নাকি খেতে নেই...হাসল তরুণ।
--না না, অপ্রস্তুতে পড়ল মিলি। ---আমি খাব না, তোমরা খাও, আমি খেয়েই বেরিয়েছি।
--কোথায় যাচ্ছিস এদিকে --জিজ্ঞেস করল রূপেন। রূপেনের ছোট বোনও মিলির স্কুলের  ছাত্রী, এবারে স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষা দেবে। অবিনাশ তখনও চুপ করে দেখছে মালিনীকে। মালিনী ঠিক কি বলবে ভাবার আগেই নিশীথ বলে উঠল...এই যা তো, ওকে বাড়িতে দিয়ে আয়...তুই ওকে দিয়ে তারপরে যেখানে যাবি যা...আমায় একবার বাজারে যেতে হবে, নইলে দিয়ে আসতামবলেই অবিনাশকে ইঙ্গিত করে বললে নিশীথ, ---যা, মিলির সঙ্গে বাড়ি চলে যা।  একা  যেতে পারবি না। একটু নিজের কথা ভাব এবার, বুঝলি? তুই নিজেও তো দুটো বছর ডাক্তারি পড়েছিলি, নাকি? কি যে করিস...!; দুঃখ, বিরক্তি  মেশানো গলায় বলে  ওঠে নিশীথ।  
--মিলি, ওকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে বেশ ভালো করে খাটের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে আসিস, বুঝলি? যা...কি রে, কথা কানে গেল না--- বলে মিলির দিকে তাকিয়ে হাসল নিশীথ।
--কি রে, যা...তাড়া লাগাল তরুণ। মিলি একবার ওদের দিকে তাকিয়ে সামনের রাস্তায় ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করল।  
--ওকে ধরে নিয়ে যা, অতটা রাস্তা যেতে পারবে না---বলল নিশীথ।
 অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে রইল মিলি অবিনাশের দিকে। মাত্র তো কয়েকটা বাড়ি, এটুকু পথও অবিনাশ নিজে যেতে পারবে না, তাহলে এল কি করে!
অবাক হয়ে অবিনাশের দিকে তাকাতেই করুণ মুখ দেখতে পেল। নিশীথ এগিয়ে এসে অবিনশের হাত ধরে দু/ এক- পা  এগিয়ে দিয়ে গেল, ...নে ধর, এখন জ্বর আছে গায়ে...বলল মিলিকে। মালিনী এবার এগিয়ে এল কিন্তু হাত ধরল ঠিক নয়, পাশাপাশি, খুব কাছাকাছি গা ঘেঁসে হাঁটতে লাগল, যেন পড়ে গেলেই ধরে নিতে পারবে। নিশীথ ফিরে গেল।   
অবিনাশের বাড়ির কাছাকাছি ওরা এসে পড়েছিল। পুরনো, বেশ বড়ো বাংলো ধরণের বাড়ি অবিনাশদের। ছাদের মাথায় বড় বড় করে লেখা আছে ইন্দু-কিরণ অবিনাশের ঠাকুরদাদা-ঠাকুমায়ের নামে এই বাড়ির নাম।  মালিনী দেখল অবিনাশের বাবার সেই পুরনো গাড়ি দাঁড়িয়ে গাড়ি বারান্দায়। যার অর্থ হল অবিনাশের বাবা এখন বাড়িতেই আছেন। ভিতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না ভাবতে ভাবতেই অবিনাশ জোর করে একটা  হাত চেপে ধরল। অবাক হল মালিনী। রাস্তাটা পার হয়ে এল নিজে নিজে, আর বাড়ির সামনে এসে হাত ধরল কেন? অবিনাশের মুখের দিকে তাকাল জিজ্ঞাসার চোখে। অবিনাশ মৃদু স্বরে বললে...জয়া... , বিজয়া তাহলে গতকাল এবাড়িতেই ছিল ! অবিনাশের হাতটা ছাড়িয়ে নিতে নিতে আস্তে করে বলল মালিনী...ঠিক আছে, আসছি...ওকে  ডেকে দাও।

                                            
                                                ()

বাইরের ঘরে বসে ছিল মালিনী। মুখ নীচু, কেমন যেন দুঃখী ভাব। মুখ নীচু করে হাতের নখ দেখছিল মিলি। একটু আগেই এঘরে কত চীৎকার, তর্ক, চ্যাঁচামেচি, ঝগড়ার স্রোত বয়ে গেছে। গতকাল বংশীকে  অবিনাশই পাঠিয়েছিল মালিনীর কাছে। কিছু টাকা আর একটা চিঠি   পাওয়া গেছে বংশীর জামার পকেটে। খামের  ওপরে ইন্দু-কিরণেরঠিকানা লেখা ছিল। আজ সকালে ছেলেরা এসে সেটা দিয়ে গেছে অবিনাশের বাড়িতে ওর বাবার কাছে। চিঠির কথা জানল এখানেই মালিনী, চিঠির বক্তব্যও। জীবনের যে টা দিন আছে, মিলির কাছেই থাকতে চায় অবিনাশ। একথা জানিয়েই চিঠি লিখেছিল অবিনাশ। সেই চিঠি নিয়েই এতক্ষণ তুলকালাম হয়ে গেল এই ঘরে। এখনো চোখ বুঝলে অবিনাশের বাবার চীৎকার শুনতে পাচ্ছে মিলি। এখন একা, একেবারে একা দীনহীনের মত  বসে আছে ঘরে চলে যেতেই চেয়েছিল, কেন যে বিজয়ার কথা শুনে রয়ে গেল। এখানে বসে থাকার  কিই বা মানে হয়! বেলা হচ্ছে, মা চিন্তা করছেন। কিন্তু বিজয়া ভিতরে গেছে অবিনাশের জিনিসপত্র গুছিয়ে আনতে। অবিনাশকে নিয়ে এবাড়ি থেকে চলেই যাক মিলি, এমনটা চায় বিজয়া, নইলে বাঁচবে না ছোড়দা। অবিনাশের বাপ-মাও আর এমন ছেলেকে একটা দিনও ঘরে রাখতে চান না। এই ছেলে তাদের মান-মর্যাদা সব নষ্ট করেছে। কোথাকার একটা মেয়েই তার কাছে বড় হল! যাক, সে তার কাছেই যাক, অবিনাশের বাবা পারলে গলা ধাক্কা দিয়ে বার করে দেন। কিন্তু কোথাও যেন বাধছিল, একটা ছেলেকে তার বাবা-মা, দাদা-বৌদি এভাবে ছেড়ে দিতে পারেন, পারা যায় ! মানুষটা তো শেষ হয়ে যায়নি এখনো, তাহলে? এত আত্মকেন্দ্রিক সকলে! আজ যদি অবিনাশ তার কেউ না হত, কি হত তাহলে অবিনাশের ,ওরা কি অবিনাশকে রাস্তায় ফেলে দিত? চিন্তায় ছেদ পড়ল। বিজয়া ঘরে ঢুকল।
---সব ওষুধগুলো দিয়ে দিয়েছি। চিন্তা করিস ন। আমি মাঝে মাঝে আসব মিলি। আমি তোর মতো একা থাকলে নিয়ে যেতে পারতাম রে, বুঝিসই তো...ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল বিজয়া মিলির হাতদুটো ধরে....তোর কাছে ভাল থাকবে ছোড়দা, নিয়ে যা  মিলি...কাতরস্বরে বলল বিজয়া।

অবাক হয়ে ভাবছিল মিলি, মালিনী। একদিন মিলির এবাড়িতে ঢোকা নিষিদ্ধ ছিল। সে অপমান এখনো গায়ে লেগে আছে মিলির। আজকে তার বাড়িতেই অবিনাশকে নিয়ে গিয়ে রাখতে হচ্ছে। কিন্তু কোন পরিচয়ে রাখবে তাকে? আজ কি পাড়ার লোক নেই, আজ কি শহরের লোক নেই, আজ তার নিজের বাড়ির  লোকেরা নেই, তাদের কাছে কোন পরিচয়ে রাখবে অবিনাশকে নিজের কাছে? নাকি রাগ, অন্ধ রাগই নিজের সন্তানের চেয়েও বড় হল অবিনাশের বাবার কাছে ? আজ কি অবিনাশের বাড়ির লোকেরা নেই, যারা বাধা দিয়েছিল মিলিকে এবাড়ি আসতে...তাহলে শুধুমাত্র একটা অসুস্থ মানুষকে বাড়ি থেকে সরিয়ে দেবার জন্য সব কিছু ধুয়ে মুছে যায়, সব গ্লানি? করুণ মুখে এসে দাঁড়াল অবিনাশ, মালিনীর দিকে চাইল কি এক প্রত্যাশায়। বিজয়া আবার মালিনীর কাঁধে হাত রাখল...তোকে অনেক সইতে হবে রে, জানি না কি করে সইবি, কি বলবি লোকের কাছে..., কত কথা বলবে, কি বলবি তুই...বাধা পেল বিজয়া।
মানুষ বলেই পারলাম রে, সেই পরিচয়েই নিয়ে যাচ্ছি। এর চেয়ে বড় পরিচয় আর কি আছে, বল--- অবিনাশের একটা হাত নিজের মুঠিতে শক্ত করে ধরে এগিয়ে গেল মিলি।