গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

দোলনচাঁপা ধর


থেকে যেতে চাই

একদিক দিয়ে  দেখতে গেলে পুকুরটার জন্যই পাড়াটা বেঁচে আছে,না জলের কোনও সম্পর্ক নেই এর সাথে কারণ পুকুরটি তিন মাস  ভরা ছয় মাস আধভরা আর  তিন মাস শুকনো থাকে, তবু এটি দুই দিকে খুব সুন্দর করে বাঁধানো,আর বাকি দিক বাঁধানো না হলেও মানুষ নিজের মনে করে আপন করে নিয়েছে। বাঁধানো ঘাট দুটির একটি বরাদ্দ পাড়ার অবসরপ্রাপ্ত মানুষদের জন্য আর একটি পাড়ার মহিলাদের জন্য যারা সারাদিনে একবার অন্তত খোলা হাওয়ায় আসতে পারেন দেখতে পারেন একে অন্যের মন চেখে।দিনান্তে ছায়া পড়লে ঘাটদুটি বেশ কলকলিয়ে ওঠে,বাকি দিক গুলো পাড়ার ছেলেদের জন্য তারা কখনো সাইকেলে ঠেস দিয়ে বা খালি হাতেই এসে  আড্ডায় যোগ দেয়, আগে পুকুরপাড়ে গুছিয়ে বসা এই মানুষগুলো বিকেল হলে পার্কে যেত কিন্তু সে পার্ক এখন কোন ক্লাবের দখলে, ক্রিকেট কোচিং হয়  বা পার্টি মিটিং, সাধারণের প্রবেশ নিষেধ,তাছাড়া প্রোমোটারি রাজত্বে এখন ফাঁকা জায়গা বলেও কিছু নেই।আগে ছিল ছাত, ছাতে উঠলেও মানুষ একা হত না কারণ মুখ ফেরালেই হয়ত দেখা হত পাশের ছাতের মানুষের সাথে,এখন ফ্ল্যাটে বারো ঘর এক ছাত , কে যাবে বাবা ওই সাত আট- দশ কি আরও উঁচু তলার ছাতে, সেখানে মানুষ আজকাল একলা হতে যায়।  

তা সে যাই হোক পুকুর ঘাটে সময় কাটানোয় কারো কোনও অসুবিধা নেই বয়স্করাও জানেন ছেলেরা অকারণে হাসবে, চিৎকার করবে, গালিও দিতে পারে সদ্য শেখা,ধোঁয়াও উড়বে কিছু কারণ এগুলো কোনোভাবে তাঁরাও করে এসেছেন কোনওকালে আর অসুবিধা দেখালে জায়গা ছাড়তে হবে তাদেরই, এদিকে ছেলেরাও জানে এইসব কাকিমা, মাসিমা, জেঠু,দাদুদের সন্মান করে চলাতেই মঙ্গল নাহলে ফালতু বাওয়ালি।তাই নির্বিঘ্নেই এইসব মানুষেরা কাটিয়ে দেয় বাকি জীবন তারা মেনে নিতে পেরেছে যে কালকের  আর আজকের  দিন এক নয়। কম জল, কম জায়গা ,কম খাবার কম প্রাণবায়ু কম আরও কত কি দিয়ে চালিয়ে নিতে হবে।

শিশুরা জায়গা দখল করে না তারা হয় সাইকেল নিয়ে না হয়ত এমনিই হেঁটে দৌড়ে বেড়ায় পুকুরটার চারপাশে, তবে কাউকে জ্বালায় না, আর কেউ জ্বলবেও না এই দুর্দিনে।সকলের আজ দাঁতে দাত, হারবে না কোনও অবস্থায়,অস্তিত্বের তাগিদে জয় করেছে লোভ,ক্রোধ নামের রিপুকেও।আসলে ভাল দিক তো সবকিছুরই থাকে আমরা তা দেখতে পাই অবস্থা বিশেষে।       

আজকাল ফেসবুকের জগতে এসে মনে হয় এই জগত টা ও যেন তেমনই, আমরা নানা বয়সের, মানসিকতার মানুষ নানা উদ্দেশ্যে এখানে মিলিত হই। আমরা জানি বাইরে জায়গা কমে আসছে তাই অন্তরে জায়গা বাড়িয়ে নিতে হবে,হাজার অমিল থাকলেও থাকতে হবে এক হয়ে কারণ বেঁচে থাকতে হলে একতা জরুরী,মানুষ আবার হয়ত টিঁকে যাবে শুধু নিজেকে বদলে নিয়ে।কেই বা শেষ হয়ে যেতে চায়? তাই আমরাও থেকে যেতে চাই না হয়  এভাবেই.....................