অনুগল্প
শোকবাহী এ্যাম্বুলেন্সের
সাইরেনে ফিরে আসি
ভাবছিলাম ভেগে যাব। পালিয়ে যাব নিরুদ্দেশ।
ধরা পরলাম দায়বদ্ধতার হাতে। সমাজের কাছে, পরিবারের কাছে, নিজের কাছে। শেষ অবদি ভালবাসার
মানুষের কাছে দায়বদ্ধ থেকে গেলাম। আমি পালিয়ে গেলে এই
সবুজ
উদ্যানে আমাকে খুঁজে বেড়াবে আমার অতীত-ভবিষ্যত। শুধুবর্তমানকে ফাঁকি দিতে পারলেও
কালের পোট্রেটে জেগে উঠবে আমার অস্তিত্ব।
অস্তিত্বকে কোনদিন অস্বীকার করতে পারিনি।
না আমার-না তোমার। নিজেকে নিজের মাঝে যতটা না
স্বীকার
করি তার চেয়ে তোমাকেই নিজের মাঝে বেশী অনুভব করি। “আমার ও যে পাঁজর জুড়ে
মধ্যাকর্ষন ভালবাসা ছিল/ চুম্বক মাটিতেই গলে একাকার।”
হ্যাঁ মাটিতেই
গলে গেলাম। মাটির টানেই রয়ে গেলাম। আমার কাছে মা আর জন্মমাটি সমর্থক শব্দই মনে হয়।
তবে অতি মানবীয় দেশ প্রেম বিধায় পুরো দেশটাই আমার মা। পালাতে গিয়েও নিরুদ্দেশ
না হতে পেরে
ফিরে এলাম কোন এক মানবীর টানে। পালিয়ে
গিয়েও ছিলাম অনেক দুর। ঠাকুরের কুঠি অবদি প্রায় ৭০০ কিলোমিটার। চৌড়হাঁস মোড়ে টিকেক
কাউন্টারে দাঁড়িয়ে ছিলাম দক্ষিন থেকে উত্তরে...আরো দূরে পালাবো বলে। হঠাৎ চলে
এলো দক্ষিনাঞ্চলগামী তুহিন এক্সপ্রেস। এখানকার গাড়িগুলো
সাধারনত স্টফিজে বেশী সময় অপেক্ষা করেনা। পেছন থেকে পাশ কাটিয়ে কেউ একজন
গাড়িতে উঠল। মুহুর্তেই আমার গন্তব্য ভুলে কোন এক দৈব নেশায়
আমি চেপে
বসলাম বিপরীত মেরুর বাহনে। যেন ঘোড়ের মধ্যেই সামনে-পিছের বিবেচনা ভুলে- বসে পরলাম চোখ
বন্ধ করে। কোথাও যেন ভাঙ্গা রাস্তার ঝাঁকি খেয়ে সম্ভিত ফিরে পেলাম। চোখ মেলে দেখি
পাশের চেয়ারেই বসা মোহনীয় এক নারী। সেই উর্বশীর রূপ বর্ননার
ক্ষমতা এই স্বল্প পরিসরে অসম্ভব কিছু! তার থেকে শুরুহওয়া আলাপচারিতার মোহময়তা আমাকে আচ্ছন্ন
করে রাখল দ্রুত গতিতে চলা গাড়ির জানলার ফাঁক দিয়ে ঢোকা বাতাসের
বেগে। কতটা সময় কেটে গেল; কোথায় অসলাম কিছুই বুঝতে পারলামনা।
ঘন্টার পর ঘন্টা কথোপকথনের মাঝে শুধুএটুকুই মনে পড়ে তার বাড়ি সেখানে যেখান থেকে আমি
পালিয়ে এসেছিলাম। যতদুর মনে পড়ে অসংখ্য টিভি সিরিয়ালে ভালবাসার বিবিধ
পূর্ণদৈর্ঘ্যরে খন্ডাংশ দেখেছি কিন্তুএমন কোনো ভালবাসার
লাইভ টেলিকাষ্ট দেখিনি। উঠে পড়া,
ঢুকে পড়া,
বসে পড়া।
চোখ খোলা, মুখ খোলা, কথা বলা। দীর্ঘ সময়,
মোহময়, ভালোলাগায়। পাশে বসা, কাছে আসা,
ভালবাসা...
...চোখ খুলে চেয়ে দেখি দু’জনার হাত হাতে,
কাঁধ কাঁধে, বাস খাঁদে। শোকবাহী এ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের বিদুরতায়
ফিরে আসি। এরপর পালাতে চাইলেও পালাতে দেয়নি ফ্রেমে বন্ধি জলরঙ্গা ধূসর
অবয়ব।