গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

সূর্যস্নাত বসু


ঐ পারে কী আছে 


কলকাতার এক নামী সওদাগরি অফিসের কর্মচারী অতনু । বয়স ছাব্বিশ, সিঙ্গেল । মা নেই, বাবা আছেন । ব্রিটিশ ইন্ডিয়া স্ট্রীটের চিত্তরঞ্জন এভিনিউ এলাকায় বাড়ি । মাস গেলে মাইনে মন্দ নয় । তবে শৌখিন স্বভাবের অতনুর প্রতি মাসের এই কুড়ি বাইশ তারিখ নাগাদ সামান্য হলেও হাতের টান পরে বৈ কী । বাবা অনেকবার ছেলের জন্য পাত্রীর খোঁজ করেছেন । কিন্তু অতনুর আর কিছুতেই কাউকে পছন্দ হয় না । নয় নয় করে সতেরো আঠারোবার পাত্রীদের বাড়িতে সম্বন্ধ নিয়ে হাজির হয়েছেন পাড়ার হরনাথ সিকদার । কিন্তু ওই অব্দিই । কারো নাক বোঁচা । তো কারো চোখ যেন আরও সামান্য একটু বড় হলে বেশ ভালো হত । কেউ একটু বেশীই স্থূল, তো কেউ আবার অতিরিক্ত হালকা পলকা । বরাবরের মাঝারি মানের ছাত্র অতনুর খুব ছোটো থেকেই শখ দেখতে শুনতে ভালো, এমন কোনো মেয়েকেই বিয়ে করবে । ‘শালা, বেশ একটা ৩৬-২৬-৩৬ এর খোঁজে আছি রে । বোঝাবুঝি, অ্যাডজাস্টমেন্ট উইল বি আপনা আপনি ।’ ছেলেবেলার বন্ধু রিজুর কাছে যেন আরেকটু বেশী মাত্রাতেই খোলামেলা হয়ে যায় অতনু । ব্যাপারটা যদিও ইয়ার্কি-ই, তবুও কোথাও যেন এই বিবাহ-সম্বন্ধীয় এক নির্লিপ্ত বাসনা অতনুর মনে বহু বছর ধরেই রয়ে গেছে । ‘খুব ক্লোস বন্ধুমহলে এসব ইয়ার্কি তো চলেই হামেশা । তাই বলে নিজেকে খারাপ ভাবাও ভুল । আরে কিছুটা হলেও তো নিজের বউকে নিয়েই ভাবছি । আমি তো আর...’

        ভাবনা থামিয়ে দেয় অতনু । আজ রোববার । ছুটির দিন । ক্লান্তিময় নাগরিক জীবনকে কয়েক ঘণ্টার জন্য টা টা করবার সময় । এর আগের রোববার সে পার্ক স্ট্রিটের এক নামী রেস্তরাঁয় গিয়েছিল । সামান্য মদ্যপান, সামান্য হুল্লোড়, সামান্য ঠাট্টা ইয়ার্কি চলেছিল । রাস্তার ধারে নিওনের আলো, ঝাঁ চকচকে শপিং মল, রাতের কলসেণ্টারে কর্মরতা কলকাতার ক্যাটরিনা, বিপাশা পরিবেষ্টিত বায়ুমণ্ডল ও তাদের বায়ুপ্রবাহ---এসব ছিল জোর । হাজারো কন্ট্রাডিকশন টুওয়ার্ডস রাইট ওর রঙ ঘুরে বেড়ায় অতনুর শহরে । অতনু সেখান থেকেই বড় হয়ে সেখানে গিয়েই ছোটো হয়ে যায় প্রতি রোববার ।


আজও রবিবার । সাতাশ তারিখ । ‘আজ আর এসপ্ল্যানেড পার্ক স্ট্রিট না । আজ রুমা অ্যাপার্টমেন্টের বাজারটার কাছাকাছি যাওয়া যাক...’ রিজু বলেছিল । ‘অনেকদিন রতনদার চা টা খাওয়া হয় না ।’ সেইমত ওরা দুজন এই সন্ধ্যে নাগাদ রুমা অ্যাপার্টমেণ্টের নীচের দিকটায় যে সারি সারি চা, কফি, ফুচকা, ফাস্ট ফুডের দোকানগুলো আছে, সে দিকটায় চলে যায় । যদিও আজ রোববার, তাও কিছুটা তাড়াহুড়ো আছে অতনুর । ‘কাল ফিনায়ান্স ডিপার্টমেণ্টের অধীরবাবুর কাছে বেশ কিছু ফাইল জমা দিতে হবে । মানে অফিসিয়াল ডিউটি আর কী । লোকটা বড্ড বেশি ইয়ে । মানে মহিলা স্টাফদের সাথে আহা কি সুব্যবহার ! যেন মুখ নয় ডাবরের মধু । আর আমাদের সাথে ? ঠিক যেন মধ্যযুগীয় ক্রীতদাস আমরা । এই চাকরবৃত্তি করেই শালা অর্ধেক জীবনটা কেটে গেল ।’ চায়ের ভাঁড়ে কিছুটা দীর্ঘশ্বাস আর কিছুটা বিস্কুট ভিজিয়ে একনাগাড়ে বলে গেল অতনু । রুমা অ্যাপার্টমেণ্টের এ দিকটা বেশ জমজমাট । বাস, ট্যাক্সি, মোটর ভেইকেল এসবের চেঁচামেচি প্রচুর, তবে মাত্রাতিরিক্তও নয় । পথ চলতি সাধারণ মানুষ, তাদের মধ্যে কেউ একলা, কেউ কেউ আবার একত্রিত । এনারা সকলেই জমায়েত হয়েছেন এদিক সেদিক । যেখানে শ্রেণী আছে, সেখানে বৈষম্য থাকাটাও স্বাভাবিক । এই এলাকাতেও তাই । ইতিমধ্যে পুজোরও তো আর দেরী নেই । মাত্র এক মাস । তাই জোরকদমে শুরু হয়েছে পুজোর কেনাকাটি । অ্যাপার্টমেণ্টের পাশেই রয়েছে বড় একটি শপিং মল, জুতো-জামা কাপড়ের অনেক ব্র্যাণ্ডেড শোরুম, খাবারের দোকান । সুউচ্চ বিল্ডিং গুলোর ওপারে যে ঠিক কি আছে---জানা যায় না । জানার প্রয়োজনও নেই বোধয় । বিভিন্ন ধরণের, বিভিন্ন পোষাক-পরিচ্ছদের মানুষজন সেখানে ঘুরে বেড়ায় । রাস্তার বাঁদিকে পার্কিং জোন । ঝকঝকে তকতকে বিভিন্ন নামী দামী কোম্পানীর গাড়ি পার্ক করে বেরিয়ে আসেন একে একে সমাজের উচ্চবিত্তরা । এদের দেখলে এন এস এস ও’র পোভার্টি মেসার্মেণ্ট রিপোর্টটিকে ভুল মনে হয় । এছাড়া এই রুমা অ্যাপার্টমেন্টের কাছাকাছি যেসব বাড়ি ঘর আছে, তাদের দেখলে যেন মনে হয়---অট্টালিকা তৈরিতে আদপে কোনো খরচই নেই । গোটা রুমা অ্যাপার্টমেণ্ট ও তার সংলগ্ন পুরো এলাকাটাকে ধীরে ধীরে সংখ্যা এবং সামাজিক বৈষম্যের এক ক্ষুদ্র পৃথিবী বলে মনে হতে থাকে । 

 ‘ওই মেয়েটিকে দ্যাখ । কেমন করে তোর দিকে তাকিয়ে আছে ?’
রতনদার দোকানের বিপরীতে এক লেডিস টেইলার্স, নাম শিবানী লেডিস টেইলার্স । তারই গা ঘেষে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বছর কুড়ি-বাইশের মেয়ের দিকে ইশারা করে রিজু বলে ।
রতনও নিজের ঘাড়টাকে সামান্য একটু বাঁদিকে ঘুরিয়ে মেয়েটিকে দেখে নেয় ।
কেমন যেন অগোছালো । একটু এলোমেলো । এবং অনেকটাই ময়লা । পরনে একটি ফ্রক । কোঁচকানো । তা আবার হাঁটুর ওপর অব্দি ওঠানো । রাতের ধূসর আলোয় ফ্রকের রঙটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না, তবে এটা সিওর যে ফ্রকটার অরিজিনাল কালার এটা নয় । বহুদিন যাবৎ ধুলো-বালি জমে জমে এই হাল হয়েছে । শেষ যে কবে কাচা, কে জানে । মেয়েটা দোকানটার এক কোণায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । হাত দুটো পেছন দিকে রাখা । ফ্রকের বুকের দিককার বোতামগুলো প্রায় নেই বললেই চলে । যেটা আছে সেটাও খোলা । গলার নীচ থেকে সামান্য কিছু ঘাম গড়িয়ে চুঁইয়ে পড়ছে বুকের দিকটায় । বুকের ক্লিভেজটাও বেশ স্পষ্ট । সামান্য ছোটো হয়ে আসা অতনুর চোখে সেটা ধরা পড়ে । হয়ত রিজুও দেখেছে সেটা । দেখাটা স্বাভাবিক । আসলে এই দৃশ্যটা খুব চোখে লাগছে । সহজেই ধরা পড়ে যাচ্ছে, আর তারপর আটকে যাচ্ছে মনের ভেতর । মেয়েটিকে দেখে ওরা সহজেই বুঝতে পারছে মেয়েটি গরীব । আর কিছু না হোক, অন্তত, জামাকাপড়, চোখ-মুখের অগোছালো ভাব থেকে তো এটাই স্পষ্ট । কিন্তু মেয়েটি এমন করে তাকিয়ে আছে কেন ? নীচের ঠোঁটটাকে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে আছে । ঠোঁটের কোণে সামান্য হাসি । এবং তা সত্যিই খুব কুইঙ্গিতপূর্ণ । মাঝেমধ্যে পেছন দিক থেকে একটি হাত বার করে পেটের আশপাশে হাত বোলাচ্ছে । তারপর সেই হাত ক্রমে বুক হয়ে গলা অব্দি উঠছে । চোখে অসম্ভভ একটি কামুক ইঙ্গিত ।


‘মাগি শালা ।’ এতক্ষণেও বুঝে উঠতে পারলি না ? গরীবি হটানোর জন্য এই লাইনে এসেছে ।’ মুখটাকে ডানদিকে বিক্রিত করে বলে ওঠে রিজু ।
রিজু এমনিতে ভালো ছেলে । শান্ত স্বভাবেরই । কিন্তু এই প্রফেশনটাকে একদম সহ্য করতে পারে না । একেবারে সর্বশান্ত হোক, কী মরণাপন্ন; তাই বলে শরীর বিক্রি ! নৈব নৈব চ

         অতনু সে দিক থেকে খানিকটা দিলদরিয়াই । দিলদরিয়া বলাটা ভুল । বরং ‘দেখাতে চাইলে দেখতে আপত্তি কীসের’ ; এই ধারণায় বিশ্বাসী । ‘এছাড়া জোয়ান আদমি । কলকাতার মত প্রলভনযুক্ত এলাকায় থেকে কোনো কিছু; মানে এইসব না দেখে থাকা যায় ?’ জিভটা দিয়ে ঠোঁটদুটো সামান্য একটু চেটে নেয় অতনু । আসলে অতনুরও বুঝতে অসুবিধে হয়নি যে মেয়েটা আসলে কী চায় ! এই ভরা মন্দার বাজারে এসব এখন রোজকার ঘটনা । মানুষ এখন অপরচুনিস্ট । শুধুমাত্র টাকার জন্য নয়, সামান্য কিছুর অপরচুনিটি খুঁজতে যৌনতাকেই আঁকড়ে ধরে যখন তখন । কারণ এই যান্ত্রিক যুগে মানুষ  সাময়িকতাকেই বেছে নেয় সবার আগে । সেই তো মাত্র আধ ঘণ্টা । তার মধ্যেই খুঁজে নেওয়া যাবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় খিদেকে । আর যুগটাও এখন দেয়া-নেয়ার । কেউ খাবার দেয় । তো কেউ খাবার নেয় । মাঝখানে অবশ্য কিছু পণ্য বিক্রি হয় । কিছু পণ্য কেনা হয় । এই  তো প্রফুল্লর কাছেই শুনেছিলাম যে ওদের ব্যাচমেট আত্রেয়ী নাকি তাড়াতাড়ি ওর পি এইচ ডি থিসিস সাবমিট করার জন্য দুরাত কাটিয়েও ছিল ওর স্যারের সাথে । এখন নিশ্চয়ই সে কথা আত্রেয়ীর মনে নেই । আখেরে লাভটা কার হল ? দুজনেরই । স্যারেরও খিদে মিটল । আর আত্রেয়ী এখন কলকাতার এক নামী কলেজের লেকচারার হয়ে বসে আছে । কাজেই ব্যাপারটা পুরোটাই নিজের মনের কাছে । তুমি কতটা ভুলে যেতে পারো সব কিছু । তুমি কতটা একা করে দিতে পারো বাকিদের নিজের থেকে, সেটাই দেখার । কাজেই এমন একটা ‘আইটেম’ এমনভাবে প্রোভোক করলে সত্যিই অন্যকিছু না ভেবে পারা যায় না । অতনু খানিকক্ষণ ভাবল এতকিছু । ‘আরে যেসব মেয়ে নিজেদের পণ্য করে তাদের কিনতে আপত্তি কিসের ? তাই বলে অতনু চাটুয্যের টেস্ট এত নীচে নামবে ? শেষে কিনা এই মেয়েটা ?’ একটা অজানা দ্বৈরথ চলে অতনুর মনে । কী করবে ভেবে পায় না । কলেজ লাইফে একটি মেয়ের সাথে অতনুর সম্পর্ক ছিল । সুজাতা নাম । মনের সম্পর্কটি শেষমেশ শরীর অব্দি গড়ায় । তারপর বিশেষ এক কারণবশত সে সম্পর্ক আর টেকেনি । পরবর্তীকালে পড়াশুনো এবং চাকরীর ব্যস্ততায় আর তেমন কোনো সম্পর্কে গড়াও হয়নি অতনুর । খুব ছোটোবেলায় অতনু একটি সংস্কৃত শ্লোকে পড়েছিল ঃ

‘ষড়দোষাঃ পুরুষেনেহ হাতব্যা ভুতিমিচ্ছতা / নিদ্রাং তন্দ্রাং ভয়ং ক্রোধঃ আলস্যং দীর্ঘসূত্রতা ।’ কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই শ্লোকটা নিয়ে ভাববার সময় অতনুর মনে হয়েছিল যে এই যে ছয়টি দোষ, মানে ঘুমানো, ঝিমোনো, ভয়, রাগ, অলসতা এবং দীর্ঘসূত্রতা---এসবের সাথে আরও একটি বিষয় অ্যাড করা উচিত । আর তা হল ‘কাম’ । সাধারণ মানুষ কাম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । অতনুও তাই । কিন্তু অতনুর মধ্যে সেই নিয়ন্রণ যেন একটু বেশিই । ওর যেন আর তরই সয় না । কামের নিয়ন্ত্রণ ওর শরীরে যে বেশী এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ যে ওর একদমই নেই তা ও খুব ভালো মতই জানে । বধু বান্ধবের সাথে আড্ডার সময়ে তাই এইসব প্রসঙ্গ বারবার চলে আসে অতনুর মুখে । অনেকবার প্ল্যান প্রোগ্রামিংও করেছে ও । অনেক কটা ফোন নম্বরও জোগাড় করেছিল একসময় । অনেকবার রেড লাইট এরিয়াগুলোতেও ঘুরে বেড়িয়েছে সে । কিন্তু ওই অব্দিই । হয় দু একবার রিং বেজেই কেটে দিয়েছে ফোন । নয়ত কারো সামনে গিয়ে সোজাসুজি কথা বলবার সাহস হয়নি । অতনু বরাবরই ভেবে এসেছে কেউ যদি নিজে থেকে একবার এসে প্রোপসাল দেয়, কিংবা সামান্য একটু ইঙ্গিতও দেয়, তবে খেল কাকে বলে দেখাবো । অথচ তেমনটা কোনদিনই বাস্তবায়িত হয় নি । কিন্তু আজ, যতই নোংরা-অগোছালো হোক, যতই নিম্নমানের হোক---একটা ইঙ্গিত তো পাচ্ছি । ‘অতনু, বাবা এই সুযোগ হাতছাড়া করিস নে । একটা ভালো হোটেলে নিয়ে যা, ভাল্লো করে স্নান ঠান সারিয়ে এক্কেবারে ফ্রেশ করে রেডি করবি ।’ এমনটা ভাবতে থাকে অতনু । আবার পরক্ষণেই বুকের ভেতর থেকে একটা অপরাধবোধ গ্রাস করতে থাকে । এই অপরাধবোধটি অতনুর বহুপরিচিত । প্রায় প্রতিদিনই একটিবার এসে অতনুর কানে কানে বলে যায় । কী করবে ভেবে না পেয়ে, এবং এতক্ষণ যাবৎ সে কী ব্যাপারে ভাবছে; সেটা ভেবে অতনু মুচকি হাসে । সঙ্গে সঙ্গে সেই মেয়েটিও ওই একই কামুক দৃষ্টিভঙ্গীতে হেসে ওঠে ।

ঠোঁটের কোণের এই হাসি অতনু বহু বছর ধরে স্বপ্নে দেখেছে । কিন্তু সবশেষে নিজের চিন্তাভাবনার তোয়াক্কা না করেই আরেকটি বিস্কুটের অর্ডার দিয়ে বসে । ইতিমধ্যে দোকানের পেছন দিক দিয়ে এক বয়স্কা মহিলার আগমন হয় । ইনিও অগোছালো । ইনিও নোংরা । তবে একটু যেন বেশীই ভঙ্গুর । চোখের পাতা ঢুলে পড়ছে । সামনের দিকে কিছুটা নুইয়েও আছেন । পরনে ময়লা একটি শাড়ি । আঁচলের এক অংশ গোল করে ছেঁড়া । হঠাৎ অতনু-রিজুর কাছাকাছি এসে বলেন, ‘দুটাকা দিন না ভাই ।’ তারপর মাথা কোনো মতে ঘুরিয়ে তর্জনী দিয়ে সেই মেয়েটির দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলেন, ‘আমার মেয়ে । পাগল । পেটে কিছু পড়ে নি অনেকদিন ।’

নিজেকে বেজন্মা মনে হতে থাকে অতনুর । রুমা অ্যাপার্টমেন্ট ও তার সংলগ্ন এলাকা, ঘরবাড়ি, মানুষজন আসলে যে অনেকটাই ছোট হঠাৎ করে অনুভব করে সে । কি বলবে, কি করবে কোনো মতে ঠাহর করতে পারে না । সুউচ্চ বাড়িগুলোর ওইপারে ঠিক কী আছে, অতনুকে সেটা জানতেই হবে । কারণ বুড়ি মা তাঁর মেয়েকে নিয়ে হাঁটা দিয়েছে ওই অ্যাপার্টমেণ্টের পিছনে ।  রাত বেড়ে যায় । পুজোর কেনাকাটি সেরে একে একে বেরিয়ে আসে সমাজ, সংস্কৃতি, সভ্যতা । একটা ইতিহাস বুঝি হারিয়ে যায় ধীরে ধীরে । কিসের ইতিহাস ? কী ঘটেছে সেখানে ? কেউ জানে না । শুধু যাওয়ার আগে অতনু লক্ষ্য করে পাগলি মেয়েটিকে । বুকের বোতামগুলো এখনও খোলা । কামুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে অতনুর হাতে রাখা বিস্কুটের দিকে ।