সময়টা শ্রাবণ মাস। রাস্তায় রোজ জ্যাম । অফিসে দেরি হয়ে যাচ্ছে রোজই। একা নন্দিতার নয়, প্রায় সকলেরই এক অবস্থা। রাস্তায় মানুষের ঢল নেমেছে।
ওরা হরিদ্বার অভিমুখী। শিবের মাথায় জল ঢালবে। গঙ্গাজল আনবে খোদ হৃষীকেশ থেকে।
ছোটবেলা থেকে এদৃশ্য দেখে অভ্যস্ত নন্দিতা। ওদের ওখানেও তো বছরের একটা বিশেষ সময়
নানা দিক থেকে তারকেশ্বর যাওয়ার রাস্তা, ট্রেন, প্ল্যাটফর্ম সব ভরে থাকে হলুদ জামা আর হলুদ হাফপ্যান্ট
তথা ভোলেবাবার ভক্তের ইউনিফর্ম পরিহিত মানুষের ভিড়ে। ওদের পাথেয় সমস্বরে ‘ভোলেবাবা পার করেগা’ শ্লোগান।
এখানেও সেই একই ইউনিফর্ম। সঙ্গে কোমরে বা পিঠে ব্যাগ, সেও হলুদ বা ঘোর কমলা। যদিও এরা ‘ভোলেবাবা পার করেগা’ শ্লোগান
বলে না তাও ওদের দেখলেই নন্দিতা নিজের অজান্তেই মনে মনে গুনগুন করে, ‘ভোলেবাবা পার করেগা।’ যেন ওই পোশাক, কাঁধে
বাঁক তারসঙ্গে এই শ্লোগান অবিচ্ছেদ্য।
হঠাৎ করেই একদিন নন্দিতার নজরে পড়ল রাস্তার ধারে ধারে
ফেস্টুন, ব্যানারে ছেয়ে গিয়েছে। নন্দিতা বুঝতে পারল
রাজনীতিবিদেরা কাউকেই অবহেলা করেন না। ওই ব্যানারের এক কোণে কোনও এমএলএ বা এমপি বা
পঞ্চায়েত প্রধানের ছবিসহ নাম। চলন্ত গাড়ি থেকে কষ্ট করে করে হিন্দি শব্দগুলো
উদ্ধার করল নন্দিতা। ওই বিশিষ্ট ব্যক্তিটি সমস্ত বাঁকবাহীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা
জানিয়েছেন। ওখান থেকেই নন্দিতা আবিষ্কার করল ‘কাঁওয়াড়’ বলে একটা শব্দ। বুঝতে পারল কথাটার মানে ‘বাঁক’। বহুবছর
আগে শোনা একটা শব্দের মানে উদ্ধার করতে পেরে নন্দিতা খুব খুশি। যেন একটা ধাঁধার
সমাধান করে ফেলছে ও। বছর দশেক আগে নন্দিতা চাকরি সূত্রে উড়িষ্যায় থাকত। ওখানে একটা
গান খুব শোনা যেত, ‘আমকু
সাইড দিও রে,
আমি ত কাউড়িবালা।’ গানটার মধ্যে বেশ একটা ছন্দ ছিল, ছিল ঝমাঝম বাদ্য। মানে বুঝতে না পারলেও গানটা শুনতে ওর
ভালই লাগত। এত জনপ্রিয় গানটার মানে বোঝার চেষ্টা করলেই নন্দিতা ‘কাউড়িবালা’ শব্দটায়
আটকে যেত। কাউকে আর জিজ্ঞেস করা হয় নি। কে জানে শব্দটা ঠিক শুনেছিল কিনা! আজ বুঝল।
হলিডে লিস্টে চোখ পড়তেই নন্দিতার খুশি আরও বেড়ে গেল।
ছুটি নিয়ে কৌতূহল বা আনন্দ কোন চাকুরিজীবির নেই? চা খেতে গিয়ে ক্যান্টিনে জানতে পারল ছুটিটা মহাশিবরাত্রির। ‘শ্রাবণ মাসে শিবরাত্রি! সেটা কোত্থেকে এল?’ জিজ্ঞেস করে কোনও সদুত্তর পেল না নন্দিতা। ছেলের স্কুল
থেকেও ইমারজেন্সি নোটিস, ‘শিবরাত্রি
পর্যন্ত স্কুল বন্ধ।’ নন্দিতা বুঝল ব্যাপারটা
ভালোই সমারোহময় হবে।
এই তথাকথিত শিবরাত্রির ঠিক আগের দিন। নন্দিতা আর ওর
সহকর্মী গুরপ্রীত বেরিয়েছে অফিসের পথে। নন্দিতা গুড়প্রীতের গাড়িতেই যাওয়া আসা করে।
ওর সঙ্গে বেশ একটু বন্ধুত্বও হয়েছে নন্দিতার। বন্ধু পাতানো আর কৌতূহল ছাড়া
নন্দিতার যেন কোন অস্তিত্বই নেই। নাহলে দশ বছর আগে শোনা একটা অচেনা শব্দ এখনও মাথায়
ঘোরে! ওরা যাবে গাজিয়াবাদ থেকে বুলন্দশহরের দিকে, জিটি রোড ধরে সোজা। রাস্তায় বেরিয়েই নন্দিতা বুঝতে পারল আজই
দুনিয়ার সব পুণ্যার্থী পথে নেমেছে। এখন পুণ্যার্থীরা ফিরতি পথে। হরিদ্বার থেকে যে
যার গ্রামে যাবে, সেই গ্রামের মন্দিরে জল
ঢালবে। কোথাও কোথাও আবার অস্থায়ী শিবলিঙ্গও স্থাপন করা হয়েছে। নন্দিতাদের গাড়ি
গুড়গুড় করে এগোচ্ছিল আর একটু পরপরই দাঁড়িয়ে পড়ছিল। রাস্তায় পথচারি, বাইকধারি, ছোট
গাড়ি, বড় গাড়ি, বাস, ট্রাক, অটো
সব মিলেমিশে পুরো রাস্তাটা জুড়ে বেশ একটা ‘রাস্তায়
চলেছে যত অজগর সাপ’ টাইপের জট। রাস্তার ধারে
ধারে তাঁবু পড়েছে। নন্দিতা সেগুলোই দেখছিল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। নীচে শতরঞ্চ পাতা, মাথার উপর অস্থায়ী পাখা এমন কি খাটিয়া বালিশেরও
ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে বাঁক নামিয়ে বিশ্রাম নেবার বিশেষ আয়োজন। কেউ ভক্তদের পা
ধুইয়ে দিচ্ছে। কেউ আবার পা টিপে দিচ্ছে। ফল, মিষ্টি, শরবৎ, ঠাণ্ডা
পানীয় বিলোনো হচ্ছে। বাঁকধারি যে পুণ্য অর্জন করেছে সেটাই বুঝি ভাগাভাগি করে
নিচ্ছে সবার সঙ্গে। নন্দিতার নজর পানীয়ের দিকে। অফিস মিটিঙেও ওর এরকম হয়। একঘর
লোকের নাকের ডগায় গ্লাসগুলো নামিয়ে দিয়ে যায় পিয়ন। আর সবাই তখন এত সিরিয়াস যেন
জীবনমরন সমস্যা নিয়ে কথা বলছে তো বলছেই। গ্লাসের মত জাগতিক বিষয়ে কারোর নজর নেই।
মিটিঙের কথাগুলো ঠিক মত নন্দিতার মাথায় ঢোকে না তখন। কেবল মনে হয়, ‘এই বুঝি গরম হয়ে গেল, ঝাঁঝ কমে গেল।’ সেই
কোন ছোটবেলা থেকে নন্দিতার কোল্ডড্রিঙ্ক, শরবৎ
এসবের প্রতি দুর্বলতা। ওর বন্ধুরা এই নিয়ে কম পেছনে পড়ত! বিয়ের পর একবার বেড়াতে
গিয়েছিল কজন বন্ধু মিলে। ফতেপুর থেকে আগ্রা আসতে আসতে গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। তখন
রাস্তার ধারে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ঠাণ্ডা পানীয়ের বোতলে চুমুক দিয়ে এমন তৃপ্তির শ্বাস
ফেলেছিল যে সবাই হেসেছিল নন্দিতাকে দেখে। নন্দিতা বলেছিল, ‘জীবনে এর চেয়ে বেশি সুখ আমি আর কিছুতে পাই নি।’ ওদের এক বন্ধু মজা করেছিল, ‘ভেবে বল সত্যি এর চেয়ে বেশি সুখ আর কিছুতে পাস নি?’ ওর বন্ধুর কথায় ছিল আদিরসাত্মক ইঙ্গিত সেটা বুঝেও
নন্দিতা হি হি করতে করতে বলেছিল, ‘নেভার, ঠাণ্ডায় চুমুক দিয়ে যা সুখ তা আর কোনও কিছু করে পাই নি।’ কথাটা মনে পড়তেই নন্দিতা মুচকি মুচকি হাসে।
ধর্মের নামে এই বিশৃঙ্খলা বা জমায়েত দেখে গুরপ্রীত বেশ
বিরক্ত। স্টিয়ারিং ধরে কাঁহাতক বসে থাকা যায়! গুরপ্রীত নন্দিতাকে বলল, ‘হাসছেন যে! সারা দেশেই এই প্রথা বিভিন্ন চেহারায় দেখতে
পাবেন আপনি।’
গুরপ্রীত পাঞ্জাবের মানুষ। তবে
পড়াশুনো বা চাকরি সূত্রে ও দেশের উত্তর থেকে দক্ষিনের অনেক যায়গাই চষে ফেলেছে।
নন্দিতা হাসির আসল কারণটা না বলে বলল, ‘জানেন, একবার
না জেনে ভুলবশত ঠিক এই দিনটাতেই আমরা হরিদ্বার পৌঁছে গিয়েছিলাম। গাড়ি ভাড়া করে
বেরিয়েও হৃষীকেশ যেতে পারি নি। ব্যারিকেড করে রাস্তা আটকে রেখেছিল। হর কি পউরি’র ঘাট থেকে ভারত সেবাশ্রম সংঘ পর্যন্ত আসতে আমাদের
অনেকটা হাঁটতে হচ্ছিল, ওখানেও ব্যারিকেড। পুলিশ
দাঁড়িয়ে আছে সব জায়গায়। অটো বা রিক্সা যেতে দেবে না।’ নন্দিতা একথা বলতেই গুড়প্রীত বলল, ‘তাহলে আপনারা ওই ট্যুর প্যাকেজে ফ্রিতে কিছু বাড়তি
পুণ্য সঞ্চয় করেছেন বলুন। লোকে ওই সময় যেতে চায়, আর আপনি বলছেন ভুল করে চলে গিয়েছিলাম!’
গুরপ্রীত ঘড়ি দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। ঘন্টাখানেক ধরে ওরা
মাত্র তিন কিলোমিটার এগিয়েছে। অনেকক্ষণ ধরে সামনে একদল ভক্ত নেচেনেচে যাচ্ছে। ওদের কোনও তাড়া নেই। মূলত ওদের জন্যই
নন্দিতারা আটকে আছে। ওদের সঙ্গে একটা বিশাল বাঁক, প্রায় রথের সাইজের। জনাদশেক লোক কাঁধ পাল্টে পাল্টে নিচ্ছে
বাঁকটাকে। সঙ্গে ট্রাক, অনেকটা নন্দিতাদের
দুর্গাপুজোর ভাসানের মত। ট্রাকে কিছু ভক্ত ও বিশাল আকারের কয়েকটা সাউন্ড বক্স। গান
বাজছে ‘চিকনি চামেলি’। এসব
গান কেন বাজছে?
নন্দিতা গাড়ির কাচ নামিয়ে দিয়ে কান
পাতল। বুঝতে পারল, ‘চিকনি
চামেলি’ নয় গান ভোলেবাবারই শুধু সুরটা ‘চিকনি চামেলি’র।
‘এরা
বেশ রসেবশে থাকা ভক্ত।’ গুরপ্রীতকে বলল নন্দিতা।
ঠিক সেই সময়ই ভিড়টা একটু হাল্কা বুঝে গুরপ্রীত সাইড কাট
নিতে গেল। একজনের বাঁকের কোনায় হাল্কা করে গুরপ্রীতের গাড়ির মিরারটা ঠুকে গিয়ে তার
গঙ্গাজলের ঘটিটা ছিটকে পড়ল হাত খানেক দূরে। গাড়ির গতি এমনিই কম ছিল। সঙ্গে সঙ্গে
গাড়ির পেছনে দুটো বাড়ি পড়ার শব্দ হল। কজন ঘটি ফেলে দিয়ে সুসজ্জিত বাঁককে লাঠি
বানিয়ে নিয়ে তেড়ে এসেছে। বাইরের এই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে গাড়ির আয়নায়। গুড়প্রীত বলল, ‘ওই দুহাজারটাকাটা আজ আর বাঁচানো গেল না।’ নন্দিতা বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল, ‘এখন আপনার দুহাজারের চিন্তা? মাথা না ফাটে তো ভাল। চলুন আমরা নামি, না নেমে তো উপায় নেই।’
গুরপ্রীতের বর গুরপ্রীতকে সাবধান করে দিয়েছে এরকম হলে
সঙ্গে সঙ্গে যেন ও স্যারেন্ডার করে। তাই গুরপ্রীত ব্যাগে সবসময় দুটো হাজার টাকার
নোট রেখে দেয়। যেই যাকে ঠুকুক না কেন বিনা তর্কে সে টাকাটা দিয়ে পার পেতে চায়।
অনেক বছর ধরে গাড়ি চালালেও ওর একটুও আত্মবিশ্বাস নেই। না গাড়ি সম্পর্কে না রাস্তা
ঘাট সম্পর্কে। ওর কিছুটা ধারনাই হয়ে গিয়েছে যে অঘটন ঘটলেই সেটা নিশ্চয় ওর নিজের
দোষ। তবে আজ পর্যন্ত ওই দুহাজার টাকা খরচ করতে হয় নি ওকে। ‘লেডিস’ বলে
লোকজন ক্ষমাঘেন্না করে দেয়। সেটা অপমানজনক মনে হলেও টাকাটা বেঁচে যাওয়ার আনন্দে
ওদের ক্ষমা করে দেয় গুরপ্রীত ।
ক্ষমা চাইবে ভেবে, ওরা
দুজনে দুদিকের দরজা খুলে নেমে এল। নেমেই দেখল নাকের ডগায় উদ্যত বাঁক, লোকগুলো মারবে বলে ছুটে এসেছে। নিমেষেই উদ্যত লাঠি
নামিয়ে নিল ওরা। বোধ হয় দুজন অবলা মেয়েমানুষকে দেখে। তবে মারমূর্তি ধরে রেখেছে।
নন্দিতা ভাবতে শুরু করল, ‘গুরপ্রীতের ওই দুহাজার টাকা তো আছেই এছাড়া আমার নিজের
ব্যাগেও কিছু আছে, দরকার হলে সবটা দিয়ে দেব।
আর আছে ঘড়ি,
আংটি আর কানের দুল, দরকারে তাও দিয়ে দেব।’ খুব আফসোস হল নন্দিতার। কেন যে ও গয়না পরতে ভালবাসে না। গলায় চেন
বা হাতে চুড়ি থাকলে সেগুলোও খুলে দিয়ে দিতে পারত। এখন এদের হাত থেকে ছাড়া পেলেই
হল। লোকগুলো যে ভোলানাথের চ্যালা, তা
ওদের রক্তিম চোখ সগর্বে ঘোষণা করছে। নির্ঘাত সকালবেলা দম দিয়েছে।
ভাবতে ভাবতে নন্দিতা দেখল একদল পুলিশ ঘিরে ফেলেছে ওদের।
রাস্তায় যাতে জ্যাম না লাগে তারজন্যে জায়গায় জায়গায় পুলিশের স্পেশাল ডিউটি আজ।
পুলিশই ওদের উদ্ধার করল ওই মারমূর্তি জনতার মাঝখান থেকে। তারপর শুরু হল উপদেশ
বর্ষণ আর প্রশ্নবান, ‘এমন
দিনে আপনরা বের হন কেন ঘর থেকে? বের
হনই যদি, অন্য রাস্তা নিতে পারেন না? জানেন না, ডিএম
অর্ডার দিয়েছে স্কুল বন্ধ রাখতে? আপনারা
কি এমন মহৎ কাজ করেন যে এসব দিনেও আপনাদের বেরোতে হয়? মেয়েদের জন্যে বাড়ির আশেপাশে স্কুলের চাকরিই ভাল।’
মহৎ কাজ করার অপরাধে ওরা দুজনেই যেন কুঁকড়ে গেল। গুরপ্রীত
ইংরাজি, হিন্দি এবং পাঞ্জাবী ভাষায় বারে বারে ক্ষমা চাইল।
পুলিশগুলোর মধ্যে দুজন সর্দারকে দেখেই ও পাঞ্জাবীভাষার প্রয়োগ করেছে। তবুও
পুলিশগুলো থামবে না। তখন নন্দিতা ওর বিখ্যাত ভুলে ভরা হিন্দিতে বলল, ‘এবারের মত ক্ষমা করে দিন। কথা দিচ্ছি সামনের বার থেকে
আর বেরবো না,
আর কোনও মহৎকাজও করব না। করলে
ছোটখাট কাজ করব। স্কুলে চাকরি না পেলে বাড়িতে বাসন মাজব। একবার ক্ষমা করেই দেখুন।’ নন্দিতার হিন্দির ভয়ে নাকি এই বিচিত্র প্রতিশ্রুতি পেয়ে
কে জানে ওরা নন্দিতাদের নিষ্কৃতি দিল।
নন্দিতা গাড়ির পেছন দিকটা টোল খেল কি না দেখতে যাচ্ছিল।
গুড়প্রীত টেনে ওকে বসিয়ে দিল ড্রাইভারের পাশের আসনে। নিজে বসে পড়ল ড্রাইভারের
আসনে। নন্দিতা দেখল বাঁদিক থেকে বিশাল ট্রে হাতে লাল রঙের শরবৎ নিয়ে এসেছে দুটো
বাচ্চা ছেলে। কাঁচ নামিয়ে হাত বাড়িয়ে একটা গ্লাস তুলে নিল নন্দিতা।
‘উঃ
আপনি পারেন ও। কি জল, কি রং ঠিক নেই।’ বলল গুরপ্রীত।
নন্দিতা বলল, ‘আপনি
যদি খান তাহলে আর একটা গ্লাস নেব। এতগুলো টাকা বেঁচে গেল, সেলিব্রেট করব না ?’
পুলিশ ততক্ষণে সামনেটা খালি
করে দিয়েছে। ওরা দেখল শরবৎ হাতে বাচ্চাগুলো ওই দলটাকে আহ্বান জানাচ্ছে ওদের
তাঁবুতে আতিথ্য স্বীকার করে নিতে। গাড়ি চালু হতেই আবার ট্রাকে গান বেজে উঠল, ‘উ লালা, উ
লালা...।’ যদিও নন্দিতার কানে ঢুকছে ‘তু হ্যায় মেরি ফ্যান্টাসি’ কিন্তু নন্দিতা জানে ওটা ভোলেবাবারই কোনও গান নিশ্চয়।
নন্দিতার মনে হল ‘আমাকু
সাইড দিও রে।’
গানটার মধ্যে শুধু ছন্দই ছিল না, বিনয়ও ছিল। সেকথা আর বলা হল না। ধীরে ধীরে আবছা হয়ে গেল
‘উ লা লা’ দল।
সামনে আবার একটা ছোট্ট দল দেখে ওরা দুজনেই সতর্ক হয়ে উঠল।
‘উফঃ, এরকম ছোট ছোট আরও কত দল যে পেরোতে হবে!’ বলল গুরপ্রীত।
নন্দিতা হাসল, ‘ডোন্ট
ওয়ারি। একবার বলুন ‘ভোলেবাবা পার করেগা।’ দেখুন মনে জোর আসবে।’
গুরপ্রীত আর নন্দিতা সমস্বরে বলল, ‘ভোলেবাবা পার করেগা।’ তারপর দুজনেই হেসে উঠল।
---