গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ৩১ আগস্ট, ২০২০

মহম্মদ আনওয়ারুল কবীর / ৩টি অণুগল্প

সমর্পণ 


কনে দেখতে এসে দুপক্ষের মুরুব্বিদের সাথে ফরমাল কিছু কথাবার্তা হওয়ার পর মেয়ের বাবা বলেন, যাও তোমরা দুজনে  রুমে যেয়ে কথা বলো। মেয়েটির ভাবলেশহীন চোখ দেখে বুঝতে পারি সে তার আত্মাকে কারো কাছে জমা রেখে এসেছে। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের উপর আস্থা রেখে কনফিডেন্সের সাথে বলি, 'আপনি যাকে ভালোবাসেন তাকেই আপনি পাবেন!' অবাক বিষ্ময়ে আমার দিকে সে তাকায়। তার চোখে নেমে আসে অশ্রুধারা। কান্না কান্না গলাতেই বলে, 'আমার যে অন্য কারোর সাথে রিলেশন আছে তা আপনি জানলেন কী করে? আপনি কি তাকে চিনেন?' আমি স্মিত হাসি। বলি, 'নাহ, তার সাথে আমার কোন পরিচয় নেই। আপনার মুখই বলে দিয়েছে আপনি কারোর সাথে এনগেজড ... আপনি রাজি থাকলে আপনাকে আমি হেল্প করতে প্রস্তুত ...' 

 আপনি পারবেন? সত্যিই পারবেন? আমার একরোখা পাপা হিন্দু ছেলের সাথে কখনো বিয়ে দিবেন না। আর পাপাকে কষ্ট দিয়ে ওর হাত ধরে বের হয়ে যাবো সেটাও আমি পারবো না ... আপনি কি পারবেন বাবাকে রাজি করাতে? 
'হ্যা, অবশ্যই পারবো...' এবারো আমার সেই কনফিডেন্ড গলা। 

তারপর তো ইতিহাস। রোখসানা একদিন তার আত্মাসহ দেহটি আমার কাছে জমা করে ফেলে। 

প্রমিথিউসের মশাল 

শহীদুল্লাহ হলের পুকুরঘাটের সিঁড়িতে বসা অবস্থায় ভদ্রলোককে প্রায়ই দেখি। দেখতে অনেকটা বয়সী আইনস্টাইনের মতোন, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, মাথায় উশখু-খুশকু কাঁচাপাঁকা চুল। আজ দেখি পানিতে নেমে আঁতিপাঁতি করে কী যেন খুঁজছেন। পাড় থেকে বেশ জোরেই প্রশ্ন করি, 'আংকেল কী খুঁজছেন? কিছু কি হারিয়ে ফেলেছেন?' হতাশ ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন, 'বাবা, সেই কবে থেকেই তো খুঁজছি, পাচ্ছি না কিছুতেই ....' 

- কী খুঁজছেন? 
- মশাল হাতে প্রমিথিউস ডুবে গেছে, তা কি তুই জানিস না? 

বুঝতে পারছি ভদ্রলোকের মাথার স্ক্রু ঢিলা হয়ে গেছে। তাকে আশ্বস্ত করার জন্যই বলি, 'প্রমিথিউস ডুবে গেছে তাতে কী হয়েছে আংকেল? সূর্যের আলো তো আছেই। আর তা ছাড়া রাতের বেলায় তো রয়েছে ইলেকট্রিসিটি।' 
আমার কথায় অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন ভদ্রলোক, ' হাঃ হাঃ হাঃ ... তুই তো দেখি আস্তো এক আবাল! সূর্যের আলোতে কি সবকিছু দেখা যায়? আর ইলেকট্রিসিটি? থুঃ ... দেখার জন্য চাই প্রমিথিউসের মশাল, প্রমিথিউসের মশাল!' 


 প্লাটফরম বদলে গেলে 

জীবন নিয়ে ভাবছিলাম। ক্রমশঃই বুড়ো হয়ে যাচ্ছি, একদিন শেষ হয়ে যাবে জারিজুরি... 
:কি ভাবছো? 

লীনার কথায় সম্বিত ফিরে পাই। 'নাহ, তেমন কিছু না...' 
:আচ্ছা বৃষ্টির বিষয়ে কি কিছু ভেবেছো?  তো জানিয়ে দিয়েছে সজীবকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবে না। চালচুলোহীন ছেলেটার সাথে বিয়ে দিলে তো ওর জীবন কয়লা কয়লা হয়ে যাবে ... 
:দ্যাখো, বৃষ্টিকেই ভাবতে দাও না বৃষ্টির জীবন নিয়ে! 

:বাপ হয়েছো একটা, কোন চেতফেত নাই! তুমি তোমার স্ট্যাটাসও চিন্তা করছো না ... শেষ পর্যন্ত পিয়নের ছেলের সাথে! 

আমি লীনার চোখে চোখ রাখি। আমাদের বাড়ির এককালের মুনিষের মেয়ে লীনা। মনে পড়ছে, প্রয়াত বাবা-মাকে। লুকিয়ে বিয়ে করতেই না ওদের সাথে হয়েছিল আমার সম্পর্কের অবনতি!