পূজারিণী
অনেক দিন হয়ে গেছে। নিপা কোন একটা মেলা থেকে রবি ঠাকুরের অর্ধ বক্ষের মাটির মূর্তিটা শাশুড়িমাকে এনে দিয়েছিল। উনি তখনকার দিনের ম্যাট্রিক পাশ। প্রতি বছর ২৫শে বৈশাখ আর ২২শে শ্রাবণ সকালের চায়ের পরে অভয়ের মা ইন্দুবালা সেই মূর্তিটাকে পুরনো একটা ট্রাঙ্ক থেকে বের করে নরম কাপড় দিয়ে পরম যত্নে মুছতেন। তারপরে ছেলেকে অথবা নাতনিকে বলতেন, “একটা মালা আইনা দিবি। তোগো তো বাংলা মাসের খেয়াল থাকে না। ধূপকাঠি আনন লাগব না। ঠাকুরের আসন থ্যেইকা দিয়া দিমু নে”। খুব বড় মালা আনা যেত না। কারণ বিশ্বকবির মূর্তিটা ইঞ্চি ছয় সাতেক লম্বা হবে। ধূপের পূজা নিয়ে মালা গলায় রবি ঠাকুরের সেই মূর্তি সারা দিন শোকেসের মাথায় অবস্থান করত। পরের দিন সকালে আবার সেই ট্রাঙ্কে মূর্তিটার ঠাই হত। বছর দুই হল কবিগুরু তাঁর সেই পূজারিণীকে হারিয়েছেন। অভয়ের মা ইন্দুবালা ইহলোকের মায়া কাটিয়েছেন।
অনেক দিন হয়ে গেছে। নিপা কোন একটা মেলা থেকে রবি ঠাকুরের অর্ধ বক্ষের মাটির মূর্তিটা শাশুড়িমাকে এনে দিয়েছিল। উনি তখনকার দিনের ম্যাট্রিক পাশ। প্রতি বছর ২৫শে বৈশাখ আর ২২শে শ্রাবণ সকালের চায়ের পরে অভয়ের মা ইন্দুবালা সেই মূর্তিটাকে পুরনো একটা ট্রাঙ্ক থেকে বের করে নরম কাপড় দিয়ে পরম যত্নে মুছতেন। তারপরে ছেলেকে অথবা নাতনিকে বলতেন, “একটা মালা আইনা দিবি। তোগো তো বাংলা মাসের খেয়াল থাকে না। ধূপকাঠি আনন লাগব না। ঠাকুরের আসন থ্যেইকা দিয়া দিমু নে”। খুব বড় মালা আনা যেত না। কারণ বিশ্বকবির মূর্তিটা ইঞ্চি ছয় সাতেক লম্বা হবে। ধূপের পূজা নিয়ে মালা গলায় রবি ঠাকুরের সেই মূর্তি সারা দিন শোকেসের মাথায় অবস্থান করত। পরের দিন সকালে আবার সেই ট্রাঙ্কে মূর্তিটার ঠাই হত। বছর দুই হল কবিগুরু তাঁর সেই পূজারিণীকে হারিয়েছেন। অভয়ের মা ইন্দুবালা ইহলোকের মায়া কাটিয়েছেন।
জুলাই মাস
শেষ। রোদের ঝাঁজ আর সেই সাথে আর্দ্রতা মিশে প্রাণ ওষ্ঠাগত হবার জোগাড়। স্বামীকে
প্রথম চা টা দিয়ে নিপা বলল, “এই হদ্দ গরমে বাজারে না গেলেও হত কিন্তু আজ যে বেস্পতিবার। ঠাকুরের ফুল মালা
আর মিষ্টিটা এনে দিও”। পাশ থেকে
ওদের মেয়ে খেয়ালী বলে ওঠে, “বাবাই, একটা মালা বেশি এনো। আজ ২২শে শ্রাবণ। আমি ঠাম্মুর ট্রাঙ্ক থেকে মূর্তিটা বের
করে মুছে রেখেছি। ঠাম্মু থাকলে তো....... ”। একটা
জলভরা মেঘ খেয়ালীর কণ্ঠরুদ্ধ করে অভয়ের বুকের মধ্যে হাহাকার তোলে। মেয়ের মাথায় হাত
বুলিয়ে সম্মতিসূচক মাথা নাড়ে অভয়। অস্ফুটে বলে, “খুব ভাল করেছিস মা। গরম তো কোন
ছার, ভূমিকম্প হলেও মালা এনে দেব। আনতে তো হবেই। আজ যে রবি ঠাকুরের মৃত্যু বার্ষিকী”।