ছবি
উঁহ্! বলে ঘৃণা আর বিরক্তি ছিটিয়ে মাছবাজারে ঢোকে রিকু।শ্যামলের মাছ ছাড়া ভাত চলে না। পলিথিন শিটে গোটা বা কাটা মাছগুলো বিশ্রীভাবে ছড়ানো।আঁশ,তেল অর্থাৎ নাড়িভুঁড়ি,পিত্তথলি এদিকওদিক পড়ে আর প্রচণ্ড দুর্গন্ধ -- এই হোলো নরকের দ্বিতীয় রূপ মাছবাজার,তার খুব অপছন্দের জায়গা।শ্যামল খেয়েদেয়ে অফিসে যায় সাড়ে ন টা নাগাদ।তারপর কাজের দিদি চলে গেলে সে বাজারে আসতে পেরেছে।সব্জি কেনা হয়ে গেলে শেষে ঢোকে মাছবাজারে।বিক্রেতাদের বিরক্তিকর ডাকাডাকি এড়িয়ে কিনে নিতে হবে।এই বাজারে সে নতুন।মাত্র কদিন আগে শ্যামল এই শহরে বদলি হয়েছে।সব অচেনা।বাজারের প্রথম চিৎকার পার হয়ে ভিড় ঠেলে কোনার দিকে পৌঁছালো রিকু।চোখ পড়লো একটি পলিথিনে।মাছ ছোটো থেকে বড়ো, কাটামাছ, চিংড়ি, সামুদ্রিক মাছ সবকিছু খুব সুন্দরভাবে সাজানো ছবির মতো।নোংরা মাছের দোকান এভাবেও সাজানো যায়?অবাক বিস্ময়ে একটু একটু করে এগিয়ে যায় রিকু আর মাছওয়ালার মুখ দেখে সে চমকে ওঠে।
এ যে..... এ যে...…বিকাশ।বহরমপুরের বিকাশ।তখন ওরা লালবাগে।বিকাশ একজন শিল্পী।অদ্ভুত তার আঁকার হাত।সে ছেলেমেয়েদের আঁকা শেখাতো,ওদের মেয়ে তিন্নিকেও।রিকুকে দিদি বলতে বলতে সে ওর ভাইই হয়ে গেছিলো।শ্যামলের বদলির পর আস্তে আস্তে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।চকবাজারে সেই শিল্পী কি না মাছবিক্রেতা! কী বিচিত্র পরিবর্তন!সে ডাকে,বিকাশ!
বিকাশ তাকায়,অবাক চাউনি.....তারপর আলোর দ্যুতি।
-- দিদি,আপনি!
-- যাক চিনতে পেরেছো?তুমি এখানে?
আনন্দের কাহিনি নয়,মামার আশ্রয় হারিয়ে বাবার বাড়ি অর্থাৎ এখানে এসে
পাকেচক্রে বাবার মাছের ব্যবসার মালিক সে।ছবি আর আঁকে না।ছবি সাজায়,মাছের ছবি।কদিন পর ঠিকানা খুঁজে বিকাশের বাড়িতে গেলো রিকু।বিকাশ কোনও কাজে সেদিন বাড়িতে নেই।বুড়ি পিসিমা বাসালেন ওর ঘরে।সেখানে অন্য কোনো ছবি নেই কেবল দেয়ালে একটি বহু যত্নে আঁকা ছবি যার মুখ দেখে ভয়ংকর চমক লাগে রিকুর.... এই ছবি.... মিমির,অধ্যাপক নিশিকান্তবাবুর একমাত্র সুন্দরী মেয়ে,বাথরুমের সিলিং থেকে যার দেহ পাওয়া গিয়েছিলো .....