গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৯

তাপসকিরণ রায়

ধারাবাহিক হ্যান্টেড কাহিনী--৪১

 ড-হীল জঙ্গলের কথা
   

শশীভূষণ একজন রহস্য সন্ধানী। ঠিক রহস্য সন্ধানী তাঁকে বলা যাবে না, বলতে হবে রহস্য পিপাসী। ভূত-ভৌতিকরহস্যময়, প্যারানরমাল ঘটনার সন্ধান পেলে তিন বন্ধু মিলে আলোচনা করে পৌঁছে যান সত্যানুসন্ধানে। শশিভূষণের কোনদিন সংসার-ধর্ম করতে হয় নি। তিনি সারাটা জীবন অবিবাহিতই থেকে গেছেন।  তার বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি হবে। তাইতাঁর অফুরান অবসর বিনোদনের রাস্তা হিসাবে তিনি বেছে নিয়েছেন এমনি ধরণের কাজ। পাড়ার অর্ণব বাবু আর জনান্তিকহলেন তাঁর বাল্যের বন্ধু  ও জুটি। প্রায় সময়ই রহস্যের সন্ধানে শশীভূষণের সঙ্গ দেন তাঁরা। বন্ধুদের জীবনও শশিভূষণেরমতই অনেকটা সাদামাটা। অর্ণব  বিপত্নীক, জনান্তিকের স্ত্রী আছেন কিন্তু কোন সন্তান না থাকায় সংসার নিয়ে তিনি ততজড়িয়ে পড়েন নি।
এবার তাদের অনুসন্ধানের জায়গা ছিল কলকাতার বাইরে দার্জিলিং এর কাছাকাছি কার্শিয়ঙয়ে। এক সকালে শশীভূষণখবরের কাগজ পড়তে পড়তে এক জায়গায় তার চোখ আটকে গেল। তিনি পড়লেন ড-হীল ও ভিক্টোরিয়া বয়েজ স্কুলেররহস্যের কথা।  সেখানে নাকি প্রায় প্রতিদিন কিছু ভৌতিক রহস্যের ঘটনা ঘটতে থাকে। কি সেই ঘটনা ? আর এ সবঘটনার সত্যাসত্যটুকুই বা কতটা বিশ্বাসযোগ্য?
শশীভূষণ খবরের কাগজের পাতায় যা যা পড়লেন ও বিডিওতে যা দেখলেন সেটা সংক্ষেপে ছিল এ রকম-- 
ড-হীল (dow hill) জঙ্গল  খুব ঘন। প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড বৃক্ষ যেন  আকাশ ভেদ করে মাথা ঝাঁপরে দাঁড়িয়ে আছে। জঙ্গল এত ঘনযে দিনের বেলাতেও রাতের কথা মনে করিয়ে দেয়। চারদিকে ছমছম ভাব, নির্জনতার একাকীত্ব বেড়ে যায়। আশপাশেরশব্দহীনতার মাঝ থেকে নিজের শ্বাসপ্রশ্বাস অনুভব করা যায়। যারা সন্ধ্যের পর জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায়। তাদেরঅনেকেই দেখেছে দূরের জঙ্গল থেকে একটা মেয়ের ছায়া বেরিয়ে আসে। ছায়া ওদের দিকে এগিয়ে আসে। সে ছায়া স্পষ্টহতে হতে একটা মেয়ের রূপ নেয়। ওরা দেখে সে মেয়ের মাথা নেই, একটা স্কন্ধকাটা মেয়ে ! এমনি দেখে যখন লোকরাচমকে ওঠে, চীৎকার দিয়ে ওঠে, ঠিক তখনি সে মেয়েটা আচমকা ভেনিস হয়ে যায়। এর ভয়ে অনেকে নাকি জ্ঞান হারায়,অনেকে আবার সুইসাইড করতে প্রবৃত্ত হয়। এমনিতে এ জাগাটায় নাকি অনেক সুইসাইডের ঘটনা ঘটেছে। এখনে অনেকমার্ডারও হয়েছে। এখানকার ভৌতিক ঘটনারগুলির পেছনে লুকিয়ে থাকা রহস্যর কথা কেউ সঠিক ভাবে বলতে পারে না।
এ জঙ্গলে নাকি হঠাৎ এক বুড়িকে দেখতে পাওয়া যায়। সে বুড়ি দেখা দিয়ে আবার জংগলেই মিলিয়ে যায়। রহস্যময়ঘটনার মধ্যে আর ছিল এক স্কুলের ঘটনা। ড-হীল জংগল সংলগ্ন ভিক্টোরিয়া বয়েজ স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে, দিনেরনির্জনতাতে স্কুলের ভেতর থেকে নাকি ভেসে আসে ছাত্রদের কোলাহল, তাদের খেলাধুলার শব্দ, চলাফেরার    আওয়াজ !
প্রতিবারের মত শশীভূষণ ফোন করে বিস্তারিত ঘটনা জানিয়ে বন্ধুদের রাজিনামা নিয়ে যাত্রার দিন ঠিক করলেন। তারপরশনিবারের এক ছুটির দিনে ওঁরা চেপে বসলেন ট্রেনে। শিয়ালদা স্টেশন থেকে পদাতিক এক্সপ্রেস রাত প্রায় সাড়েএগারোটায় ছাড়ল। আপাতত নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত এই ট্রেনে যেতে হবে।  তারপর সেখান থেকে বাই রোড ওরা গিয়েপৌঁছাবেন কার্শিয়ং।  ব্যবস্থা মত বেলা এগারটায় ওঁরা কার্শিয়ং গিয়ে পৌঁছালেন। সেখানে নেচার-ভিউ হোটেলে গিয়ে ওঁরাউঠলেন।  প্রায় দিন সারা বিশ্রাম করে বেলা তিনটার দিকে ভিক্টোরিয়া বয়েজ স্কুলের দিকে রওনা হবেন ঠিক করলেন।    
দার্জিলিংয়ের খুব কাছাকাছি এই কার্শিয়ং। কার্শিয়ং বড় মনোরম জায়গা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানে জঙ্গল, নদী,পাহাড়-পর্বতের মাঝখানে দৃশ্যমান টুকরো টুকরো সব জনবসতি। ওপর থেকে দেখলে মনে হবে কোন সুন্দর পটে আঁকাএক ছবি।
পর্যটকরা সারা বছরই তাই এখানে ঘুরতে আসেন।  এত সব সৌন্দর্যের মাঝে কিন্তু এর অন্য একটা দিকও আছে। সেটাহল এর ভৌতিক রহস্যের কথা।
বেলা প্রায় সাড়ে তিনটের দিকে শশীভূষণ, অর্ণব ও জনান্তিক পৌঁছে গেলেন ভিক্টোরিয়া বয়েজ স্কুলের প্রাঙ্গণে। তখন স্কুলছুটি হয়ে গেছে। স্কুলের দুই দারোয়ান তখনও স্কুল ছেড়ে বেরোয়নি। শশিভূষণরা এগিয়ে গেলেন স্কুলের দিকে। মনে হলস্কুলের দারোয়ানরা নিজেদের ঘরের দিকে যাবার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। শশীভূষণরা ওদের কাছে এগিয়ে গেলেন।দারোয়ান দুজন অপ্রস্তুত হয়ে  আগন্তুকদের দিকে মুখ তুলে তাকাল, তার অর্থ অনেকটা এমন, আপনারা কারা ? এখানেকেন এসেছেন ?
শশীভূষণ অনেকটা সহজ হয়ে বলবার চেষ্টা করলেন, আমরা একটু অন্য ধরনের কাজে এসেছি
--বলুন কি কাজে ? এক দারোয়ান প্রশ্ন করল। 
অর্ণব মাঝখান থেকে বলে উঠলেন, এই স্কুলের ব্যাপারে আমরা একটা অদ্ভুত ঘটনা শুনেছি-সেটা জানতেই আজ আমাদেরএখানে আসা।
দারোয়ান বলল--কি বলুন তো ?
এবার শশীভূষণ উত্তর দিলেন, তিনি তার পড়া এবং বিডিওতে দেখা ঘটনার কথা দারোয়ানদের খুলে বললেন।
দারোয়ানরা নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে কিছু সময় চুপ করে থাকল, তারপর একজন ধীর গলায় বলল, কথাটাএকেবারে মিথ্যা নয়
অন্য দারোয়ান ফিসফিস করে বলল, না মানে--হইচই চিৎকার-চেঁচামেচি আমরা শুনিনি। তবে হ্যাঁ, বিল্ডিঙের মধ্যে যেনঅনেকের যাতায়াতের আওয়াজ পাই, হঠাৎ যেন কেউ হেসে ওঠে, ফিসফিসিয়ে কথা বলে ওঠে।
জনান্তিক বললেন, আমরা এই ব্যাপারটাই জানতে এসেছি। দিনের বেলাতেই কি এসব ঘটনা ঘটে ?
এক দারোয়ান বলল-- হ্যাঁ বাবুরা, তবে রোজ নয়, হঠাৎ হয়ত কোন দিন শুনতে পেলাম--
--এমনি ঘটনার পর তোমরা স্কুল ঘর খুলে দেখো নি কি ? এমনও তো হতে পারে কোন স্কুলের ছাত্র স্কুল ঘরে আটকা পড়েগেছে ? শশিভূষণ প্রশ্ন করেন।
--না বাবু, শুরুতে আমরাও এমনটা ভাবতাম। স্কুল ঘরের তালা খুলে অনেক দিন ভেতরে গিয়ে খুঁজেছি, কোন দিন কোনছাত্রকে আমরা পাইনি। এমনি কয়েক বার হয়েছে, তারপর থেকে তালা খুলে স্কুলের ভিতরে আর আমরা যেতে সাহস পাইনা।
জনান্তিক এবার মুখ খুললেন, আচ্ছা আজকেও কি এমনি ঘটনা ঘটতে পারে ?
এক দারোয়ান বলল--তা বলতে পারব না বাবু, ঘটতে পারে, নাও পারে--
অর্ণব হয়ত মনে মনে কিছুটা ভয় পেয়েছেন, তিনি কোন কথা না বলে খোলা জালনা দিয়ে কিছু যেন দেখবার চেষ্টাকরছিলেন। তার বুঝি মনে হয়েছিল হতে পারে তিনি অলৌকিক কিছু দেখে ফেলবেন অথবা কোন শব্দ ওই জালনা দিয়েতার কানে এসে বিঁধবে !
স্কুল বিল্ডিঙের বাইরে প্রশস্থ খালি জায়গা--খেলার মাঠ হতে পারে। তার ধারে দু-তিনটে লোহার বেঞ্চ পাতা। স্কুলেরদারোয়ানদের বিদায় দিয়ে তিন বন্ধু মিলে সেই বেঞ্চের ওপর গিয়ে বসলেন। তাঁদের মনে হয়েছিল ঘন্টাখানেক বসলে হয়তো বা এই অলৌকিক ঘটনার কিছু সমাধানে তারা পৌঁছতে পারবেন।
এক সময় অর্ণব চমকে দাঁড়িয়ে উঠলেন। স্কুলের ভেতর থেকে খুটখাট শব্দ আসছিল। আসলে এ শব্দ কোন খোলা জালনা-দরজার হবে। বাইরে থেকে বাতাস স্কুল ঘরের ভেতরে বেগে প্রবেশ করছে হবে। আর সে কারণে দরজা জানালার পাটনড়েচড়ে উঠে শব্দের সৃষ্টি করছে।  কিন্তু অর্ণব অনেকটা ভীতু প্রকৃতির, তিনি বললেন, না, না, এটা হতে পারে না--এ শব্দনিশ্চয় ছাত্রদের চলাফেরার শব্দ ! পাহাড়ি জায়গায় এমনিতেই বাতাসের তোড় বেশি, স্কুলের জালনা-দরজা খোলা থাকলেএ ধরনের শব্দ আসতেই পারে।
সন্ধ্যে নামতে আর বেশি দেরি নেই। এই পাহাড়ি অঞ্চলে অন্ধকার খুব তাড়াতাড়ি নেমে আসে। স্কুলের পাশ থেকেই প্রায়শুরু হয়ে গেছে ড-হিল জঙ্গলের এরিয়া। আসল ভৌতিক ঘটনার উৎস তো ওই ড-হিল জঙ্গল। অর্ণব বলে উঠলো, থাক,থাক, আজকে তো রাত হয়ে গেল, কালকে না হয় দিনের বেলা জঙ্গল ঘুরে দেখা যাবে !
শশীভূষণ বললেন, না না তা হয় না, আমরা যে কারণে এসেছি সেই ভৌতিক অলৌকিক রহস্যের সত্যাসত্য প্রমাণ করতেহলে আজই আমাদের প্রবেশ করতে হবে ড-হিল জঙ্গলে।
অর্ণব কথাটা শুনে যেন ভয়ে একটু কেঁপে উঠলেন। জনান্তিক সেটা বুঝতে পেরে সামান্য হেসে বললেন, কিরে ভয় পাচ্ছিস?
ভয় পাবারই কথা। অর্ণব বলে উঠল, সামনেই জঙ্গল, ওরে বাবা ! ওখানে তো দেখছি রাত নেমে গেছে ! অর্ণব দুই বন্ধুরমাঝখানে এসে দাঁড়ালেন।
--আর না, এবার যাওয়া যাক, শশীভূষণ বলতে বলতে পা বাড়ালেন। সঙ্গে দুই বন্ধু এগোলেন। ওঁদের সামনে থেকেইজঙ্গল শুরু হয়ে গেছে। সেই বদনাম ভরা ড-হীল জঙ্গল। দেখা যাক না, সত্যি কিনা, সেই রহস্য যেটা কিনা শশীভূষণভিডিওতে দেখেছেন।
জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে একটা মোটামুটি প্রশস্ত রাস্তা এগিয়ে গেছে ঘন জঙ্গলের ভেতর। এ রাস্তার নাম ডেথ রোড। এনামের রহস্য কিছু থেকে থাকবে। এ রাস্তাই বেশ কিছুদূর গিয়ে ফরেস্ট অফিস পর্যন্ত পৌঁছেছে। আর শশীভূষণ পড়েছেন,এ পথেই চলতে চলতে অনেকে দেখেছে সেই সব রহস্যময় অলৌকিক সব ঘটনা।
ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছেন বন্ধুরা। কোথায় দিন ? শশীভূষণ মাঝে মাঝেই মোবাইলের টর্চ দিয়ে রাস্তাকে স্পষ্ট করছেন।জঙ্গলের বাইরে তখনও সন্ধে নামে নি কিন্তু জঙ্গলের ভেতর যেন মধ্যরাত নেমে এসেছে। অর্ণব জনান্তিকের একটা হাতকষে ধরে আছেন। তিনি বারবার এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখবার চেষ্টা করছেন। অথচ হঠাৎ কিছু দেখে ফেললে ভয়ে তারঅবস্থা যে কি হবে তিনি হয়ত তা আন্দাজ করতে পারেন না।  নিজেদের শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই!চারদিক নিঝুম, স্তব্ধতায় ঘেরা। মাঝে মাঝে শশিভূষণের লাইট জ্বলছে আর নিভছে। সে সঙ্গে অর্ণব চমকে চমকে উঠছেন।হঠাৎই তিন জন দেখতে পেলেন, অস্পষ্ট একটা ছায়া যেন গাছের আড়াল থেকে উঠে আসছে। ক্রমশ তাদের দিকেইএগিয়ে আসছিল সে ছায়াটা।
অর্ণবের গলা থেকে গোঙানির শব্দ বেরিয়ে এলো। এবার বুঝি সে জ্ঞান হারাবে। অর্ণবকে শক্ত করে ধরে দুই বন্ধু সেখানেইদাঁড়িয়ে গেলেন। ওঁরা জানেন অর্ণব জ্ঞান হারালে সমূহ বিপদ আসতে পারে। অন্যদিকে সামান্য শব্দের পরেই বুঝি কেইঅস্পষ্ট আলোকছটা অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। আবার চারদিক ঘন অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। শশীভূষণ মোবাইলের টর্চ ধরেরেখেছেন অর্ণবের গায়ে। তিনি এখনও জ্ঞানহারা পড়ে আছেন।  আরও একটু এগিয়ে যাবার ইচ্ছে ছিল বন্ধুদের কিন্তুবর্তমান পরিস্থিতিতে তা কতটা সম্ভব হবে এই মুহূর্তে বলা  কঠিন।
শশীভূষণ বরাবরের মত তাঁর সঙ্গে রাখা হ্যান্ড ব্যাগ খুলে জলের বোতল বের করলেন। অর্ণবের চোখেমুখে জল ছিটিয়েদিলেন। তাতে কাজ হল, একটু পরেই অর্ণব চোখ মেললেন। আর সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, কি হল আমরা কিএখনও জঙ্গলের মধ্যে দাঁড়িয়ে ?
জনান্তিক জিজ্ঞেস করল, এখন কেমন লাগছে তোর ?
অর্ণব বলল, আমার কিছু হয়ে ছিল নাকি ? আমার তো মনে হচ্ছে, আমি দিব্যি আছি !
শশীভূষণ ও জনান্তিক কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকলেন অর্ণবের মুখের দিকে। আজকের কাজটা সম্পূর্ণ করে নিতে পারলেইভালো হয়। তিনি অর্ণবকে বললেন, চল, তাহলে আর একটু এগিয়ে যাবি ?
ঘাড় নেড়ে সায় দিল অর্ণব। জনান্তিকের ভয় হতে লাগলোঅর্ণব আবার কিছু দেখতে পেয়ে না ভিরমি খায় ! তবে ইচ্ছেতো তাঁরও আছে আরও একটু এগিয়ে গিয়ে দেখার।
তিন জনে ধীর পায়ে এগিয়ে যেতে লাগলেন ফরেস্ট অফিসের দিকে। শশীভূষণ মাঝে মাঝে মোবাইলের টর্চ জ্বালছেন। আর মুহূর্ত খানেক যেতে না যেতেই তারা দেখলেন, জঙ্গলের মধ্য থেকে একটা বুড়ি বেরিয়ে তাদের পথেই তাদের আগেআগে হেঁটে চলছে। কে হবে ? বাস্তবে কি ও কোন বুড়ি হবে ? নাকি কোন অলৌকিক কিছু ?  বুড়িটা হেঁটে চলেছে ওদেরইপথ ধরে আগে আগে।  ওরা যে ভাবে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে সামনের বুড়িটাও যেন তেমনি গতিতে হেঁটে চলছে।
চুপচাপ তিন বন্ধু এই দৃশ্য দেখে চলেছেন।  জোর দিয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না। আসলে বুড়িটা মানুষ না অন্য ভৌতিক কিছু--
ইতিমধ্যে আচমকা একটা ঘটনা ঘটে গেল।  অর্ণবের মধ্যে হঠাৎ এত সাহস কি ভাবে এসে গেল সে নিজেও বুঝি জানে না।  হঠাৎ অর্ণব চিৎকার দিয়ে ডেকে উঠলো, এই কে তুমি, আমাদের আগে আগে যাচ্ছ ? শশীভূষণ ও জনান্তিক ভীষণ অবাকহলেন, অর্ণবের মধ্যে এত সাহস এলো কোত্থেকে ! এ কথা ভাবার আগেই সামনের বুড়িটা হঠাৎই যেন ভ্যানিশ হয়ে গেল।শশীভূষণ হঠাৎ  ছুটে এগিয়ে গেলেন। বুড়িটা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল ঠিক সে জায়গায় গিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে পড়লেন। নেই,আশপাশে তো কিছুই নেই ! তাহলে বুড়িটা গেল কোথায় ? এ প্রশ্নের জবাব কে দেবে ? তবে কি এটাও কোন অলৌকিকঘটনা যে ঘটনা শশীভূষণ পত্রিকা ও ভিডিওতে পেয়েছেন ? আগের অস্পষ্ট ছায়ামূর্তি হতে পারে কোন আলোর আভাস।বন্ধুদের মনে মনে গড়া সেই মুন্ডুহীন মেয়েটির দৃশ্য, হতে পারে কোন মানসিক চিন্তার ফল।  হয়ত কোন আলোরপ্রতিফলন ঘন অরণ্যের বাধা অতিক্রম করে এমনি এক আকৃতির সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু বুড়িটা ? সেটাও কি তাদের মনেরবিভ্রম ?  না এতটা কি করে হবে ?  বুড়িটা যদি বাস্তব হত তা হলে এমন ভাবে রাস্তার ওপর থেকে তাদের চোখের সামনেথেকে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারতো কি ? এসব রহস্যের সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়।
তিন বন্ধু জঙ্গল পার করে আবার এসে দাঁড়ালেন ভিক্টোরিয়া বয়েজ স্কুলের সামনে।এখন চারদিক অন্ধকার, স্কুলেরচারপাশটা নির্জনতা ঘিরে আছে। ওঁরা তিনজনেই কান পেতে থাকলেন এই নির্জন তালা বন্ধ স্কুলের ভেতর থেকে যদিকোন ছাত্রের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। না, তেমনটা হল না। কেবল বাতাস বয়ে যাওয়ার অস্পষ্ট শব্দ কানে ভেসেআসছে। স্কুলের দরজা জানালার নাড়াচাড়ার শব্দ, নির্জনতাকে চিরে সামান্য অলৌকিকতার সৃষ্টি করছে বটে কিন্তু একেঅলৌকিক কিছু বলা যাবে না।