গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ২১ জুন, ২০১৮

রত্না ঘোষ

ইমেজ


        বিয়ে করব না করব না করে বেশ কয়েকটা বসন্ত পার করে দিলাম। আত্মীয়-পরিজনের ঠেলায় শুরু করলাম সন্মন্ধ দেখতে। আমার জন্য পাত্র দেখার কারো সময় নেই। তাই তারা বলল ----" তুমি অন্য বোনদের জন্য যেভাবে সন্মন্ধ দেখেছো সেভাবে নিজেরটাও দেখোনা। আমরা তোমায় সমর্থন কবর।" আমার ও বিয়ে করার ষোলোআনা ইচ্ছে ছিল, তাই প্রতি রবিবার' 'পাত্রী চাই' কলাম এ টিক্ দিই সময় করে ফোন করি। যদি পাত্র নিজে ফোন ধরে তবে আমি সত্য পরিচয় দি। আর অন্য কেউ ধরলে নিজেকে 'পাত্রী র দিদি বলে পরিচয় দেই। এমনই একটি বিজ্ঞাপন দেখে ফোন করায় ওপ্রান্ত থেকে এক ভদ্রলোক জানান , তিনি স্বয়ং পাত্র । তিনি ইংলিশ.এ এম.এ. বর্তমানে আরও পড়াশুনা করছেন অর্থাৎ, পি.এইচ.ডি.করছেন। একটি এইচ.এস. সরকারী স্কুলের শিক্ষক বয়স 43 . দেখলাম বয়সটা আমার থেকে দশ বছর বেশী । তবে ভাবলাম বয়সের পার্থক্য থাকলে প্রেম জমবে ভালো। তাছাড়া ভদ্রলোক সাতিত্যের ছাত্রী হওয়াতে মনে করলাম সাহিত্য আলোচনা হবে ভালো। তাই ওনার বায়োডাটা আমার পছন্দ হোল। ফোনের ওপ্রান্ত থেকে ভদ্রলোক তাঁর বায়োডাটা এক নিঃশ্বাসে বলার পর একটু থামলেন। তারপর কিছুক্ষনের জন্য দম নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,-----"আপনি কে?" আমি বেশ নম্র ভাবে বললাম----" আমি 'পাত্রী' তিনি প্রায় লাফিয়ে উঠে ( অনুভব করলাম) বললেন---"আরে আপনি তো বেশ স্মার্ট ! আমার এমন মেয়েই পছন্দ।" আমার সম্পূর্ণ বায়োডাটা জেনে বললেন----" আমি পরে ফোন করছি।"

        পরেরদিন সকাল নটা নাগাদ ফোনে বললেন---"আমি আর আমার বোন আজই আপনাকে দেখতে আসছি।" সময় বললেন বিকাল চারটা নাগাদ। বাড়ি তে দিদি জামাইবাবু আছেন কদিন ধরে তাই তারাই সব আয়োজন করলেন অভ্যাগতদের আতিথেয়তার। আমি মস্তিতে রূপচর্চা করতে লাগলাম। আমার সাজগোজ শেষ হওয়ার আগেই বিকাল তিনটা নাগাদ তারা এসে উপস্থিত। উপস্থিত বাড়ির সকলে আপ্যায়নে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ পর ওই ঘরে আমার প্রবেশ । ভদ্রলোক অন্যদিকে মুখ করে জামাইবাবু র সাথে গল্প করছিলেন। আমি প্রবেশ করায় আমার দিকে মুখ করলেন । দেখতে মন্দ নয় তবে চশমার পাওয়ার আমার চোখকেও ঝলসে দিচ্ছিল। যাই হোক, দেখা হোল, কথা হোল। যাওয়ার সময় বললেন--- "ফোন করব"। বাড়ি পৌঁছেই ভদ্রলোক ফোন করলেন। বললেন-----" আপনাকে আমার বেশ ভালো লেগেছে। আপনাকে একটা অনুরোধ করব রাখবেন?" আমি সম্মতি দেওয়ায় উনি বললেন-----" আমার জন্য একটু অপেক্ষা করবেন ?" আমি চুপ করে থাকায় বললেন----" উত্তরটাতো পেলাম না।" আমি বললাম ----"কারনটা তো জানিনা।" উনি বললেন----" আসলে আমি একটু পার্টির কাজে ব্যস্ত।" তিনি আরও জানালেন তিনি এক শিক্ষক সংগঠনের একজন নামকরা সদস্য, রুলিং পার্টির একজন কেউকেটা, অনেক উপর মহল পর্যন্ত ওনার যাতায়াত ইত্যাদি ইত্যাদি । আমি ছোট্ট একটা হ্যা ছাড়া কছুই বললাম না। উনি বললেন ----"তাহলে অপেক্ষা করছেন?" আমি বললাম---"হু"। ভদ্রলোক দু-একদিন অন্তর অন্তর কুশল জিজ্ঞাসা করেন। দিন পনেরো বাদে বললেন----"আমার দিদি আর বোন কাল আপনাদের ওখানে যাচ্ছে। ।"

        সময়টা দুপুরবেলা হওয়ায় আমরা একটু ডালভাতের ব্যবস্থা। করলাম। ওনারা খুব খুশি হলেন আমাদের আতিথেয়তায়। সেদিন সন্ধ্যাবেলা তিনি ফোন করে বলেন-----" দিদির আপনাকে ভালো লেগেছে। । আর শুনুন আপনি রক্তটা পরীক্ষা করান। এইচ.আই.ভি. থ্যালাসেমিয়া এসব আর কি।" আমি বললাম---"ঠিক আছে। আপনার টা করেছেন?" " কি?" বললাম---" রক্ত পরীক্ষা? " ফোনের ওপ্রান্ত চুপচাপ। আমি হ্যালো ,হ্যালো করি কোনো সাড়া পাইনা। দেখি কল এণ্ডেড আবার রিং করি ,রিং হয়ে যায় কেউ ধরে না। দুদিন পর লোকটির দিদি ফোনে আমার ঠিকানা চান আমার ফটো পাঠাবেন বলে। ঠিকানা লিখে উনি বলেন----" তোমাকে আমাদের ভালো লেগেছিল কিন্তু তোমার পাকামোর জন্য এগোতে পারছিনা। তুমি জান, আমার ভাইয়ের পজিশন ? তোমায় রক্ত পরীক্ষা করতে বলায় তুমি উল্টে ওকে রক্ত পরীক্ষা করতে বল। একজন টিচার এর সাথে এভাবে কেউ কথা বলে? এই তোমার শিক্ষা দীক্ষা?" ওনার কথা বলার ধরনে আমার মনটা বেশ উত্তপ্ত হলেও যথেষ্ট ভদ্রভাবে বললাম---" দিদি, উনি যে আমার শিক্ষক তা জানতাম না। ওনার সাথে আমার বিয়ে হলে আমি ওনার স্ত্রী হোতাম। ছাত্রী তো নয়!" বলে ফোনটা কেটে দিলাম। মা পাশে দাঁড়িয়ে সব শুনছিলেন। বললেন---"বেঁচে গেছিস। অপরিচিত এক মেয়েকে যারা ধমকাতে পারে তারা বিয়ের পর সব করতে পারে।

        এর বছর সাতেক পর ননদের জন্য বিজ্ঞাপন দেখে ফোন করি। বায়োডাটা টা বেশ চেনা চেনা লাগছে। সেই এক নিঃশ্বাসে নিজের ঢাক নিজে পেটানো। খুব আগ্রহের সাথে নাম জিজ্ঞাসা করায় তাও মিলল। বুঝলাম ,অর্ধ শতক পার করেও ভদ্রলোক একজন ছাত্রী রূপ স্ত্রী পেলেন না ।