দুধের
কারবারী সিধু গোয়ালা
শহরতলী ছাড়িয়ে গোয়ালাদের
পাড়া । গরু বাছুরের পাল , খড়ে গাদা, এখানে ওখানে ছড়ানে গবর । এখানকার গোয়ালারা শহরে দুধ সরবরাহ করে । দুধে
পানি মেশানোর দুর্নাম ওদের চৌদ্দ পুরুষের সিধু গোয়ালা স্বীকার করতে এখন আর দ্ধিধা করে
না ।
সে
এক সময় নিজেও দুধে পানি মিশাতো । বছর পাঁচেক আগের কখা
, সিধুর মা তখনো বেঁচে । বোন দুটোর তখনো বিয়ে হয় নি । বোনদের
বিয়ে না দিয়ে সে নিজে বিয়েথা করতে পারছিল না । রাধু ও মানু বোন দুটোর জন্য সিধুর পেরাশানী
কম ছিল ।গাভীদুটো খাবার দাবার থেকে শুরু করে গাভীর দুধ দোয়ানোর কাজ দুবোনেই করতো ।সেবার
গন্ডগোলটা করে বসে সিধু নিজেই ।
বোনরা মামা বাড়ি । আজ সব
কাজ তাকেই করতে হবে । সিধু দুধে জল মেশাতে গিয়ে একটু বেশি মাত্রাই মিশিয়ে ফেলে ।ভাগ্যের
এমনই ফের ওইদিন দুধের হাটে কল নামে । সিধু দুধে জল মেশানোর মোটা অংকের জরিমানা করে
মোবাইল কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেট । তারপর থেকেই সিধুর নামে দুধে জল মেশানোর ঘটনা চাউড়
হয়ে পড়ে । মিঠাই তৈরির দোকানদারয়া সিধু দুধ কেনা থেকে বিরত থাকে । সিধুর দুধে কারবার
লাটে ওঠে ।
সিধুর
মা গাল পাড়ে । অনেক ভেবে চিন্তে সিধুর মাথার একটা বুদ্ধি আসে ।সে ভাবে , গাই বাছুর বাড়ি বাড়ি নিয়ে দুধ দুইয়ে দিয়ে
এলে তো আর জল মেশানো কথা উঠবে না । যেমন ভাবনা তেমন কাজ ।সিধু গোয়ালার দুধে চাহিদা
বাড়তে দেরি হয় না । বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে সে দুঘ বিক্রি করে তার অবস্থা একদিন
ফেরে ।
বোন
দুটোর বিয়ে দেয় ,সে
নিজেও সেন গ্রামের নিবারণ গোয়ালার মেয়েকে বিয়ে করে । ঘরে এখন দুটো বাচ্চা । সিধুকে
এখন আর বাড়ি গিয়ে গাই নিয়ে দুধ দুইয়ে দিয়ে আসতে হয় না । তার দুধের বড়ই কদর ।খদ্দেররা
নিজেরা তার বাড়িতে আসে বাচ্চা দুটোর জন্য লিচু কিনতে গিয়ে সিধু ভাবে ফরমালিন দিয়ে লিচু
পাকায়নি তো! তার
সন্দেহ হয় । তাই সে বাজার থেকে লিচু না কিনে নিজের গ্রামের নিধুমন্ডলে গাছ থেকে সদ্য
পাড়া লিচু কিনে বাড়ি ফেরে। সে এক সময় দুধে জল মেশাতো!
ফরমালিন দিয়ে লিচু পাকানো যে দিন
ধরা পড়বে সেদিন লিচুর ব্যাপারিরা বুঝবে কত ধানে কত চাল।