গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ২১ জুন, ২০১৮

নীহার চক্রবর্তী

দিগন্তিনী 

স্বামী মারা যাওয়ার মাস চারেক পরে অঞ্জলি ওর মেয়ে দিব্যার সঙ্গে বিউটি-পার্লারে যাচ্ছে । দুজনের সারা মুখে তখন অম্লান-হাসি । এক প্রতিবেশী মহিলার সঙ্গে ওদের পথে দেখা ।
সে এগিয়ে এসে একমুখ হেসে জিজ্ঞেস করলো,''তা মা-মেয়ের একসঙ্গে যাওয়া হচ্ছে কোথায় ? বেশ লাগছে কিন্তু ।''
তার কথা শুনে দিব্যা মুচকি হেসে জবাব দিলো,''আর কিছু পরে দেখবেন আরও কত সুন্দর লাগছে আমাদের । তবে মাকে আমার চেয়ে বেশী সুন্দর লাগবে ।''
অঞ্জলি শুনে বেশ লজ্জা পেলো । সারা মুখে হাসি নিয়ে অন্যদিকে চেয়ে থাকলো ।
সেই মহিলা অবাক হয়ে বলল,''বুঝলাম না ব্যাপারটা । একটু খুলে বল দেখি ।''
তখন দিব্যা মুখ খুলল দুষ্টু-দুষ্টু হেসে ।
ও বলল তাকে,''আমরা বিউটি-পার্লারে যাচ্ছি । মা কি আর আসতে চায় ? একরকম জোর করেই আনলাম । মাকে আজ নতুন করে সাজাবো ।''
দিব্যার কথা শুনে যেন বিস্তৃত অম্বর মহিলার মাথায় ভেঙে পড়লো ।
সে অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পর ভ্রূ-কুঁচকে বলে উঠলো,''এ আবার কেমন কথা ? তুমি মাকে সাজাবে ? এই কিছুদিন...''
সাথে-সাথে সোল্লাসে ফেটে পড়ে দিব্যা বলল তাকে,''এমা ! আপনি বুঝি জানেন না ? আমি মাকে তো নিজের হাতে বিয়ে দেবো । আমিই তো মার এখন অভিভাবক ।''
অঞ্জলি লজ্জায় তখন জড়সড় ।
দিব্যাকে আলতো ধাক্কা দিয়ে নিচু-গলায় বলল,''তুই পাগল হলি নাকি ? এমন কথা বলতে হয় ?''
''খুব বলতে হয় । খুবই বলতে হয় গো । এর মনোভাবের উদ্দেশ্য বোঝো ? ছাই বোঝো । এবার কথা ছড়াবে । সে ছড়াক । শুভ বার্তাই ছড়াক । তুমি তৈরি হও নতুন দিনের জন্য ''
মার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দিব্যা কথাগুলো বলছিল । তারপরেই সেই মহিলার দিকে ঘুরতেই দেখল সে হাওয়া...
তবে সে হাওয়াকেও দেখা গেলো একটু দূরে । তার চলার গতি বেশ থমকে থমকে । বোধহয় সে তখন ভেবেই যাচ্ছে ।
এ হয় ? এ হতে পারে ? এ কেমন মেয়ে ? এত নষ্টা দুজন ?
এসব ভাবনা আর কি তার মধ্যে তখন ।
দিব্যা এরপর মার হাত ধরে বেশ বলিষ্ঠ গলায় বলল,''বেশ বলিষ্ঠভাবে আমার হাত ধর । হাত ছেড়ো না কিন্তু । এ হাত দিয়েই তোমাকে নব-দিগন্ত দেখাবো ।''
অঞ্জলি দিব্যার হাত ধরে চলতে চলতে মেঘের মধ্যে থেকে নিজেকে একটু-একটু করে সরাতে থাকলোতাই মুখ তুলতেই দেখা গেলো হাসিরা নহবত বসিয়েছে সারা মুখ-জুড়ে ।