গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ৬ জুন, ২০১৮

সুবর্ণারায়


চৌকাঠ

দাঁতে দাঁত চিপে চৌকাঠ পেরোচ্ছে মেয়েটা।
তার আগে, কয়েকটা পুরনো নরম জামা ভাঁজ করে ভিতরে টুকরো টুকরো রাত ভরে রেখে দিয়েছে আলমারির সবচেয়ে উঁচু তাকটায়। জানালার ভিজে কাচে আঙ্গুল দিয়ে লিখেছিল যা কিছু, বইএর ভাঁজে শুকোতে দিয়েছে যত্ন করে।
পুরনো গলির নোনা অপেক্ষাগুলো ঘষে তুলে দিয়েছে। আর আধভরা পুকুরের কিনারে কাগজের নৌকোদের তুলে শুকিয়ে নিয়েছে ভিতরের আঁচে। 
একলা ছাদে তারে বোকা বোকা মুখ করে যে জলের ফোঁটাগুলো পড়ে যাবে ভাবছিল, তাদের সাবধানে জড়ো করে শুকনো গালে গড়িয়ে নিয়েছে ধারার মতো করে।
দেওয়ালের ছবি থেকে ধুলো আর হাসি নিয়ে ভরে নিয়েছে পাথর বসানো ছোট কৌটোয়। স্মৃতি কিছু ফেলে দিয়েছে জঞ্জালে, কিছু পুঁটলিতে ভরে নিয়েছে।
কার্নিশের চারাটার হালকা সবুজ রঙ গুলে নিয়ে তুলিতে এঁকে দিয়েছে উদারার সা বুড়ো বটের গায়ে। ঝরা পাতার গানের দু'কলি খুঁজলে ওর শাড়ির ভাঁজে ঠিক পাওয়া যাবে।
ভোরবেলার ভেজা কুয়াশা জড়িয়ে নিয়েছে দুটো দোপাটির কুঁড়িতে। বুকের ভিতর ব্যথাগুলো উল্টেপাল্টে দেখে বাসিগুলো ঘরের কোণায় ফেলে দিয়েছে অল্প ছুঁড়ে। 
গীর্জার ঘন্টার রেশটুকু সুতোয় গেঁথে রঙ্গীন পুঁতির সাথে মালা বানিয়েছে। তারপর চিঠিগুলো থেকে শব্দ বেছে রেখে কাগজগুলো পেঁজা তুলো করে উড়িয়ে দিয়েছে বাতাসে।
একটা একা হয়ে যাওয়া কানের দুল থেকে খানিকটা ঝিলিক নিয়ে বসার ঘরে ফুলদানিটার গায়ে মাখিয়ে দিয়েছে। অন্ধকারে জ্বলবে সেটা আর নদীর টানের মতো মনখারাপ খানিকটা বারান্দা দিয়ে ঘরে ঢুকে ভরিয়ে দেবে কোটর, গর্ত্ত, ফাঁক।
এত সব সেরে, লাল রঙের বেনারসী পরে মেয়েটা এখন দুহাতে চাল ছিটিয়ে দিচ্ছে পিছনের দিকে।