ময়না ও ময়নার মার
গল্প
"রাতবিরেতে
যহন তহন ময়না মুইগেরে ঘরোওতে কহানেই বেরোত হতি দেহি ,ভয় ধরি যাতি থাহায় আপনাহেরে
ডাহে আনা,ওসতাজ ভাই।" ময়নার মা মায়মুনা বিবি রহম ওঝাকে বলে। পিয়ালজুরীর রহম
ওঝার নামডাক শুনে মায়মুনা তার মেয়ের ঘাড় থেকে ভূতের আছর ছাড়াতে তাকে ডাকে।
মায়মুনার দুই
মেয়ে এক ছেলে।ময়নাই বড়। ময়নাকে ওর বাপ ইন্তা তিনপহর হাই স্কুলে ক্লাস সিক্সে ভর্তি
করে। তিন বছর আগে ইন্তা ওরফে ইন্তাজ আলী কয়েক দিনের জ্বরে মারা যাওয়ায় মায়মুনা
ডুকরে ডুকরে অনেক কেঁদেছিল। পাড়াপ্রতিবেশীরা মায়মুনার কান্না দেখে তার প্রতি
বিরক্ত হয়। তরফদার বাড়ির বড়ুবিবি কয়, " বাঁচে থাকতি সুয়ামীকে তিন ব্যালা মোরন
চাতি,আর ওহন ক্যাদে বুক ভাসাতি দেহি পারে মনে লয় মাগীর মুহে গু মাহায়ে দেই,
পরপুরুষের লগে পিরিতে মজে সোয়ামীডারে মারে ফেলে এহন ক্যাঁদে ভাসাচ্ছিস মাগী!"
সোয়ামী বেঁচে থাকতে এটাওটা নিয়ে তার সাথে নিত্যদিন ঝগড়া করতো ময়নার মা মায়মুনা।
তখন ময়নার বাপের উপর মায়ের অযথা ঝগড়াকে ময়না মোটেই পছন্দ করতো না। সে তার বাপের
দোষ খুঁজে পেতো না।
জমিজিরেত না
থাকলেও বিরামপুরের হাটে তরিতরকারির কারবার করে মোটমুটি সে ভালই সংসার চালাতো। তবে
শেষের দিকে পাটের ব্যবসা করতে যেয়ে দেনাদানিক হয়ে পড়ায় তার বাপ সুখে ছিল না।
চাঁদপুরের পাটের আড়ত থেকে বাপ বাড়ি ফেরার পর থেকে তাদের সংসারে অশান্তি দানা
বাঁধতে শুরু করে। তখন ময়না সাত ক্লাস শেষ করে সবে মেয়েদের স্কুলে আট ক্লাসে ভর্তি
হয়েছে। তার পিঠেপিঠি একমাত্র ভাইটি তিন ক্লাসে উঠেছে। আর ছোটবোন টুনি তখন বছর
আড়াইয়ের মতো হবে।
বাপ প্রত্যেকবার
মোকাম থেকে ফেরবার সময় তাদের জন্যি কত কিছু দিয়ে আসতো ,টুনির লাল টকটকে জামা, সোনা
ভাইটির জুতো,ময়নার স্কুল ব্যাগ,চুলের ফিতে,স্নো পাউডার। লজেন্স,বিস্কুট আর
মিষ্টিমিঠেই তো আনতোই । মার জন্যিও বাপ প্রতিবারই কিছু না কিছু আনতো,কোন বার
ব্লাউজ,কোন বার শাড়ি।ময়না বুঝতে পারতো, তার বাপ কেন যেন মাকে ভয় করে চলতো। পাড়ার
আর পাঁচটা মায়ের থেকে তার মা ভিন্ন ছিল সেটা সে বড় হয়ে বুঝতে শিখলো। তিনটি সন্তান
হলেও তার মাকে দেখলে বোঝা যায় না সে তিন তিনটি সন্তানের জন্ম দিয়েছে। শরীর
স্বাস্থ্যে সে যেন তখনো যুবতী। বাপ যখন তরিতরকারীর ব্যবসা করতো তখন তার মায়ের
স্বভাব চরিত্র ভালই ছিল, ময়না মনে মনে ভাবে। বাপ পাটের কারবারে যাওয়ার পর থিকে
মায়ের মতিগতি পাল্টাতে থাকে,ময়না বুঝতে পারে।
সে সময় ময়নার সব
কিছু বোঝার বয়স হয়েছ। ময়নার মনে প্রশ্ন জাগে, বাপ বাড়ি না থাকলে পাটের আড়তের বিসু
কয়াল কেন কারণে অকারণে রাতবিরেতে তাদের বাড়িতে আসে!ছোট ভাইবোন দুটো সকাল সকাল
ঘুমিয়ে পড়ে,ময়না কেরোসিনের কুপি জ্বালিয়ে পড়াশোনা করতো আগে,বাপ চাঁদপুর থেকে একটা
হেরিকেন কিনে আনে। বাপ চাঁদপুর গেলে বিসু কয়াল প্রতিরাতেই তাদের বাড়িতে আসতো। তখন
ময়না আট ক্লাসে পড়ে। বিসু কয়ালের চাহনিটি ময়নার মোটেই পছন্দ হতো না। ময়নার মা
মায়মুনা চাইতো ময়না সকাল সকাল ঘুমিয়ে যেন পড়ে। ক্লাসে ময়না মোটামুটি পড়াশোনায় ভাল।
ক্লাসের পড়া রেডি করতে তার বেশই রাত হতো।মা তাকে কোন কোন রাতে সকাল সকাল শুয়ে পড়তে
বলতো কেরোসিন তেল নেই এই অজুহাত দেখিয়ে,শুয়ে পড়তে বললে ময়না সে রাতে বুঝতো বিসু
কয়াল আসবে। সে এটাও বুঝতো, মা ইচ্ছে করেই কেরোসিন হারিকেনে কম করে ভরে বাকি তেলটা
বোতলটা থেকে অন্য বোতলে রেখে তা লুকিয়ে রাখতো। ময়না সে সময় থেকেই বুঝতে পারে, তার
মা বিসু কয়ালের সাথে - - -। সে এর বেশি আর কিছু ভাবতে পারে না। সে মনস্থির করতে
পারে না এই অবৈধ কাজ থেকে মাকে কিভাবে বিরত করবে! এক সময় ময়না ভাবে, সব কথা সে তার
বাপকে বলে দেবে!বিসু কয়াল একদিন ময়নাকে বলে," ময়না, তুই তো কয়দিনির মধ্যি
ডাগর হয়ে উঠলিরে!" তারপর সে অস্ফুট স্বরে যা বললো তার প্রথম দুটো শব্দ শুনে
ময়না তো তাজ্জব! লোকটা তাকে বললো মাল নাকি! শব্দটা স্পষ্ট শুনতে পেলে লোকটার টুটি
টিপে ধরতাম, ময়না রাগে ফুঁসে উঠে মনে মনে বলে। তবে সে একেবারে নিশ্চুপ না থেকে
তাকে ময়না বললো,"বাপ বাড়ি না থাকলি পারে আপহনি ক্যানে মুই বাড়ি কী করতি আহেন।"
ময়নার কথা শুনে বিসু'র বেজায় রাগ হয়। সে বলে," ক্যানে আসি তুই তোর মারে
জিগেকে।" সেই রাতেই ময়না মায়ের কাছে গিয়ে প্রতিবাদের সুরে বলে," বাপ
বাড়ি না থাকলি পারে পাটের কয়াল ক্যানে মুইগেরে বাড়িতি আসে আম্মু?" মায়মুনা
মেয়ের কথা শুনে হতচকিত হয়ে বলে," তোর কয়াল চাচা আমাগেরে ভাল চায়, তুই তা
জানোছ না! তোর বাপেরে টাহা কিঠা দিছে তুই জানোছ না? তোর কয়াল চাচা তা হলি তোর
বাপের পাটের তেজারতি ক্যামনে চলতোনে?" বিসু কয়াল তাকে কটাক্ষ করে যা বলেছে তা
তাকে বলার ফুসরত মায়মুনা মেয়েকে দেয় না।
কয়েক দিন পরে
ময়নার বাপ চাঁদপুর থেকে বাড়ি ফিরে আসে পাটে লোকসান খেয়ে। মোকামে পাটের দাম কমে
যাওয়ায় ময়নার বাপ ইন্তাজ আলীর মূল তহবিলে টান পড়ে! ইন্তাজ আলীর ব্যবসায় ভাটা পড়তে শুরু করে। এদিকে
পাওনাদারদের মধ্যে লাখ টাকার উপরে পাবে বিসু কয়াল। এবার ইন্তাজ বাড়িতে থাকাকালে বিসু
কয়ালের আনাগোনা বেড়ে যায়। ময়নার মা মেয়েকে বলে," যা এহন কয়ালকে বারণ করগে
এখানে আসতি, দরকার হলিপারে বাপকে দিয়ে বারণ করাগে। বাপের মুরোদ কতটুকো
দেখবান।" ময়নার বাপ ব্যবসায় লোকসান দেওয়ার পর এক সময় সে ভাবে, ,ঘরিতি বসে
থাকলি তো সমুস্যার হাত থিকি রেহাই হবি নানে। ইন্তাজ তার বউ মায়মুনাকে বলে, "
বিসু কয়ালকে বলিকয়ি সমুয় নিতি হবি,কতা তোমারেই তাকে কতি হবি, তুমি কলিপারে কয়াল
শুনবিনি।" মায়মুনা সোয়ামীকে কথা দেয় সে কয়ালকে তা বলবে। মায়মুনা ভাবে, তার
সোয়ামী কয়ালের দেনা শোধ করতে পারবিনানে।
কয়াল অবিয়েতো
মর্দ। তার মনের মানুষ সে। বুড়োহবড়া ইন্তাকে তার জীবন তিকি বিদ্যেয় করতি পারলি তারই
পোয়াবার! সে বিসু কয়ালকে বলে, "এটাই সুযুগ অকম্মাটার হাততো আমাগের
বাঁচার।তুমার ঢাহা পানিতি গেলিও মুইতো তুমার হবানে। মুইরে যেমুন করি পরো তেমুন
ক্যোরে চেটেপুটে খাতি পারবানে,মুই'র অকম্মা সুয়ামীডারে- ---" বিসু কয়াল
প্রথমে মায়মুনার কথা সায় দিতে চায় না। সে ভাবে, মায়মুনার মতো ডাসা মাল পায়ে ঢেলে
ফেলতি বিসু কয়ালের মন কিন্তু চায় না। সে মনে মনে বলে," ওর মিয়্যাডাও তো এহনই
ডাসা হতিছে। মিয়্যাডার ত্যাজই দেহে বাঁচিনে!"
ইন্তাজ আবার
চাঁদপুর পাটে চালান নিয়ে যায় বাকিতে পাট কিনে। মোকামে পাটের দামে তেজি ভাব দেখে
ইন্তাজের মনটাতে ভাল লাগে। এবারের চালানে ভালই লাভ হয় তার। বিসু কয়ালকে দশ হাজার
টাকা শোধ করবে স্থির করে বাসে বাড়ি রওনা
হয় সে।বাসের ফেরিওলার কাছ থেকে সে ময়নাদের জন্যি কমলা ও তিলেখাঁজা কেনে। তার মনটা
এবার খোশমেজাজেই ছিল,কিন্তু আরিচাঘাটে বাস ফেরিতে ওঠার পর থেকে ইন্তাজের শরীরটা
কেন যেন ম্যাজ ম্যাজ করতে থাকে। এক সময় সে বুঝতে পারে যে তার গা জ্বরে পুড়ে
যাচ্ছে। জ্বর নিয়ে সে বাড়ি ফেরে।
ময়না স্কুল থেকে ফিরে বাপকে শুয়ে থাকতে দেখে তার
গায়ে হাত দিয়ে বুঝতে পারে তার গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। বাপের ওই অবস্থা দেখে সে তার
মায়ের ভাবান্তর লক্ষ করে না। গায়ের জ্যোতিষ ডাক্তারকে ময়না ডেকে আনে পরদিন সকালে।
জ্বরের সাথে সাথে কাশি ও হাঁপানী শুরু হয়। তিন দিন পর থেকে ময়নার বাপ জ্বরের ঘোরে
প্রলাপ বকতে থাকে। বাপের খারাপ অবস্থা দেখে ময়না কেঁদে ফেলে। সে জ্যোতিষ ডাক্তারের
কাছে গিয়ে কেঁদে বলে," ডাক্তারবাবু,আমার বাপকে বাঁচান,বাপের কিছু হলি পারে
আমরা শ্যাষ হয়ে যাবানে।"
ময়না ডাক্তারের কাছ থেকে বাড়ি ফিরে দেখতে পায়
তার মা জাম গাছের নিচেয় দাঁড়িয়ে বিসু কয়ালের সাথে গল্প করছে।দৃশ্যটি দেখে ময়নার
বেজায় রাগ হয়। যার সোয়ামী মরতে বসেছে সে কিনা----- বাকীটুকু ভাবতেও লজ্জাবোধ করে
ময়না। এমন মায়ের পেটে জন্মছে সে! সাতদিনে জ্বরে ময়নার বাপ ইন্তাজ আলী মারা গেলে
ময়না অথৈ সমুদ্রে পরে।
ময়না মা লোক
দেখানে কান্নাকাটি করে কয়েকদিন কাটানোর পর এক সময় বিসু কয়ালের পিরিতিতে সে মজে
যায়। একদিন ময়নাকে একা পেয়ে বিসু কয়াল ময়নাকে জাপটে ধরলে,ময়না পা থেকে চটি খুলে তা
দিয়ে কয়ালের গালে কয়েক ঘা বসিয়ে দেয়।বাপ মারা যাওয়ায় ময়না পাগলের মতো হয়ে যায়।
তারপর কয়ালের এই ব্যবহারে ময়নার মনটা যেন চুরমার হয়ে যেতে থাকে।বিসু কয়াল ফঁন্দি
আটে, সে গাছেও পাড়বে,তলাও কুড়াবে। কয়াল মনে মনে বলে, ময়না ডাসা মাল! ডাসা মাল পেলে
কেউ ময়নার মায়ের মতো আধা বয়সী মাগীকে ----!ময়নাকে কব্জা করার জন্য কয়াল মরিয়া হয়ে
উঠে। যে করেই হোক ময়নার লেখাপড়া বন্ধ করে দিতি হবি।লেখাপড়া করতে থাকলি ছুড়িকে বস
মানানো যাবে নানে, এক কাজ করলি পারে ছুড়িটাকে নিজির করে পাওয়া যাতি পারে। ময়নার
মাকে ফুঁসলায়েফাঁসলায়ে ময়নাকে বিয়ে করতি পারলি আমারে পায় কেঠা! উঠন্তো বয়সের
ছুড়িডার শরীলডা যেন রসে টইটুম্বুর, কয়াল মনে মনে ভাবে।
সে ময়নার মাকে
বললো," ধিঙ্গি ম্যিয়াকে পড়ায়ে কাজ নেই। বিয়ে দিয়ে দেও, সোনা। " ময়নার
বাপ মারা যাওয়া পর থেকে কয়াল ময়না মা মাইমুনাকে সোনা বলে ডাকতে শুরু করে। কয়ালের
কথা শুনে মাইমুনা কয়, "এবারে নয় ক্লাস থিকি দশ ক্লাসে উঠবিনে, আরো দুটো কেলাস
শ্যাষ হলি পারে বয়োস হবিনি এক দোশ সাত। কী যে কহন নাগর,এক দোশ আষ্টো সাল না হলি
পারে কী ম্যিয়া লোগের বিহা দিয়া যায়!" কয়াল মনে মনে হাসে আর ভাবে তুমার ডাগোর
ম্যিয়ার বিহে অন্যের লগে না ম্যুর লগে,কতায় কয় মিয়া বিবি রাজি- কী করবেনে কাজি!
তুমারে ছারে তুমার যোয়ানকি ম্যিয়াডারে কাজি ডাহে বউ করবানে তা তুমার -----! সে
প্রকাশ্যে কয়,আমি ম্যানিজ করে দিবানে,তুমার ভাবতি হবি নানে, সোনা। ইন্তাজ মরার পর
মামুনার রূপ যৌবন যেন উথলে উঠেছে।
পড়ায় তাদের নিয়ে
কানা ঘুষার অন্ত নেই। মফিজ আলীর মা পাড়ার মধ্যে বয়স্কা মহিলা। সে পড়ার অনেক খবর
রাখে,তার অনেক কিছুই করার ইচ্ছে করে,কিন্ত তার ছাওয়াল মফিজ ও তার বউয়ের জন্য
প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না সে।কারণ তাদের কথা, পরের ন্যাটা অযথা ক্যানে ঘরে আনতি
হবি। এ স্বত্ত্বেও মফিজের মা ছেলে ও বেটার বউয়ের আবডালে প্রতিবেশী নাত বউদের কাছে
কয়," তুমরা সব কিসু দেহেও দ্যাখতিছো না এটা কিন্তুক বালো হতিছি না। তবে
তুমদেরে একডা গল্প বলি: জমিদারনী নিস্তারিনি ঠাকরনির বাজার থিকি বেবুশ্যেখানা
তুলে ফ্যালায়ে দিলে তাগেরে ভিটেগুলো বড় মিয়ারা দল দহল করলি পারে তুমাগেরে দাদা
বাজার থিকে ফিরি আসে মোরে কইলো,' বেবুশ্যেখানা তুলে দিয়ে বালো করতিছেনা
জমিদারনী নিস্তারিনি ঠাকরনি কিন্তুক,এহন
থিকি গেরেস্থো বাড়িতি বেবুশ্যে কারবার হবিনি।' এহন দ্যাতাছি তার কতাই ঠিক হতি
লাগতিছে। ইন্তাজের বউ মাগী সোয়ামী বাঁচে
থাকতিই বাড়িতি বেবুশ্যেখানা খুলিছে।সোয়ামী মারা যাতি না যাতি মাগীডা কী করতি
লাগিছে তুরাতো দেখতি পাতিছিস। ময়না
ম্যিয়াডা জন্যি দুক্ষু হয়রে নাত বউরা।ময়নাডা খুব ভালরে!"
ময়না বাপ মারা যাওয়াতে মুষড়ে পড়ে,তার উপর মায়ের
ছিনালিপনায় আরো কষ্ট পায় সে। ভাল ছাত্রী হিসাবে স্কুলে তার একটা সুনাম আছে,মায়ের
এই অপকর্মের কথা স্কুলে জানাজানি হলে তার অবস্থা কী হবে ময়না ভেবে পায় না। এক সময়
সে পড়াশোনায় মাঝারি ধরনের ছাত্রী ছিল,কিন্ত নিজের আপ্রাণ চেষ্টায় ক্লাসে নিজেকে
একটা ভাল অবস্থানে আছে। তার কথাবার্তা মার্জিত হয়েছে।
ময়না মনে মনে
ভাবে, তাকে বিসু কয়ালের হাত থেকে বাঁচতে হলে স্কুলের রওসনআরা ম্যাডামের কাছে সব
কথা খুলে বলতে হবে। সে তো আজ পর্যন্ত তার সমস্যার কথা কাউকেই জানায়নি। মা এখন তার
পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে পারে কয়ালের যুক্তি শুনে।লজ্জাঘেন্নার মাথা খেয়ে সব কথা
ম্যাডামকে জানানো ছাড়া আর কোন উপায় সে দেখছে না।
ময়না এর মাঝে
একদিন কয়ালকে গালগালিজ করে বাড়ি থেকে বের করেও দিয়েছে,এতে মা তার উপর রেগে
গালিগালাজও করেছে।" তোর মাথায় ভূতে আছর করিছে,তা না হলি পারে তুই কয়ালকে
লুচ্চা বলে গালি দিতি পারতিস।কয়াল তোকে কত আদর সোহাগ করে।" মার কথা শুনে ময়নার
মাথা গরম হয়ে উঠে। সে রাগের মাথায় মাকে বলে," কী আদর সোহাগের শ্রী রে! আমি
তুমার মতো ছিনাল হলি কয়ালের সাথে এতদিনে ছিনালী করতাম।" "কী কলি তুই
মুইরে! আমি ছিনাল? তোর বাপ কত ধোনদোলত রাখে গিছে,যা দিয়ি তোগেরে গুষ্টির পিন্ড খাওয়াতি
পারি! নেমকহারাম, কয়ালকে একটুহ আদর যত্ন করবি, তা না তুই তাকেই আমাগেরে বাড়ি আসতি
বারণ করলি। তোর মধ্যি ভূতির আছোর হইছে! তোর ঘাড়ত থিকি ভূত তাড়াতি হলি রহম ওঝার
ডাকা লাগবেনে। ইস্কুলি পড়লি এমডাই হয় কয়ালও কাল কইছিল।কাল থিকি ইস্কুলি মুহো
হলিপারে তোর ঠ্যাং ভাঙে গুরো করে দিবানে বলে রাখতিছি। তুই কয়ালকে অপদোস্ত করিলি
কোন আস্পদ্দায়।" ময়না রাগের মাথায় মাকে বলে," আমারে ভূতির আছোর করেনি,করেছে
তোমার ।তা নাহলে পারে তোমার মতিগতি এমন
হয়! তোমার জন্যিই বাপটা অকালে মরলো !বাপ
বাঁচে থাকতিই তুমি কয়ালে সাথে চিনালি করতে না?বাপ সব জানতি পারেও তোমারে কিছু
কয়নি। তোমার আর কয়ালরে ঝাঁটাপেটা-----।" যত বড় মুক না তত বড়হ কতা।"
মায়মুনা উঠোন থেকে ঝাঁটা তুলে নিয়ে ময়নার পিঠে কয়েক ঘাঁ বসিয়ে দেয়। ঝাঁটার বাড়ি
খেয়ে ময়না বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। মায়মুনা মেয়ের উদ্দেশ্যে যাইচ্ছেতাই বলে গালি
পাড়তে থাকে।" এই মাগির লগে না আসে কতদিন থাকতি পারিস মুইও দ্যাখে নিবানে।
"
সেদিন ছুটির দিন। ময়না
ছুটতে ছুটতে প্রায় এক কিমি দূরের রওশনআরা ম্যাডামের বাড়ি গিয়ে উঠে ময়না। ময়নাকে ওই
ভাবে আসতে দেখে রওশনআরা অবাক হয়ে তাকে প্রশ্ন করে, " ছুটতে ছুটতে আসছো
কেন,ময়না? ময়না হাঁপাতে থাকে,তারপর এক সময় হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলে। রওশনআরা
জানেন,ময়নার বাবা অকালে মারা গেছ। দুই বোন আর এক ভাই ও মাকে নিয়ে তাদের সংসার।
ময়না একটু ধাতস্থ হয়ে যা বলে তা শুনে রওশনআপা তাজ্জব হয়ে পড়েন। তিনি সব কথা ময়নার
কাছ থেকে শুনে বলেন," তোমার মায়ের ঘাড়েই ভূতের আছর হয়েছে,তোমার ঘাড়ে
নয়।"রওশনআরা আপার আগামী মাসের শেষে অবসরে যাবেন। তার স্বামী শফিক সাহেব বছর
পাঁচেক আগে সমাজসেবা অফিসারের পদ থেকে অবসর নিয়েছেন। তার একমাত্র ছেলে কানাডায়
সেটেল্ড বউ বাচ্চা নিয়ে।রওশনআরা আপা ময়নাকে বললেন,"তোমাকে এভাবে আমার এখানে
আসা ঠিক হয়নি। তুমি তো আমাকে পরেও বলতে পারতে।" তিনি কিছু সময় ধরে কী যেন
ভাবলেন। তারপর ময়নাকে বললেন," এখন তুমি বাড়ি যাও।" আপার কথা শুনে ময়না
বললো," আমি বাড়ি গেলে মা আমাকে মেরেই ফেলবে। আমাকে আর স্কুলে যেত দেবে
না।" " মেরে ফেলা মুখের কথা! আমি কাল থেকে তোকে তোদের বাড়ি থেকে ডেকে
নিয়ে যাব স্কুলে যাবার পথে।"
" অগত্যা ময়না বাড়ির পথ ধরলো। বাড়ি পৌছালে ময়নার মা ময়নাকে একটি কথাও বললো না।
" অগত্যা ময়না বাড়ির পথ ধরলো। বাড়ি পৌছালে ময়নার মা ময়নাকে একটি কথাও বললো না।
পরদিনের ঘটনা,
রহম ওঝা তাদের বাড়িতে হাজির! পাড়ার লোকজন রহম ওঝাকে ময়নাদের বাড়িতে দেখে অবাক!তারা
ভাবলো,রহম ওঝার আগমনের হেতু কী! তারা একটু পড়েই রহম ওঝার আগমনের হেতু বুঝতে পারলো
ময়নার মায়ের কথা থেকে। ময়না উপর ভূতে আছর হয়েছে এই কথা তার মা রহম ওঝাকে বলছে শুনে ময়না প্রায় দিশেহরা । সে বুঝতে পারে বিসু
কয়ালের সঙ্গে যুক্তি করে এই কাজ করছে তার মা । রহম ওঝা তার কাঁধ থেকে ঝোঁলা নামিয়ে
তার ভেতর থেকে একটা ছেড়া জুতো আর একটা ছোট ঝাঁটা, একটা দড়ি ও কয়েকটা লাল লঙ্কা বের
করে ময়নার মাকে বলে," লঙ্কাগুলো পুরায়ে আনে মুইরে দেও। আর ময়নাকে ডাকি আনতি
হবি মুইর লগে। ভূতির আছোর যার ঘাড়ে পড়ে সে তো মুইর লগে আসবি নানে তা মুইর জানতি বাহি
নেই! না আসলি পারে মুইর এইটার ঘা লাগালিই ভূতির আছোর লাগা তুমার ম্যিয়া বাপ বাপ
করতি করতি মুইর পায়ে আছরে পড়বিনি।"
রহম ওঝা তার হাতের লাঠিটা দেখায়। রহম ওঝাকে ময়নাদেরতে আসতে দেখে পাড়ার
ছেলেবুড়ো থেকে মহিলারা ময়নাদের উঠোনে জমা হয়েছে।ময়না স্কুলে যাওয়া জন্য রেডি
হচ্ছিল।রহম ওঝার কথার্বাতা শুনে জটলার মাঝ থেকে করম আলী বুড়ো বলে উঠলো,“কলিকালে কত
কিছুই দেখতি হবিনি।ভূতের আছোর লাগা মাগীটার কান্ড তোমরা দেখেও ক্যানে কিছু বলতিছো
না? দ্যাশে কি আইনআদলোত নেই! নিজির ভাতারকে খায়ে কয়ালের সাথে পিরিত করতিছিস মাগী, সে
কতা কিঠা না জানে! ম্যিয়া সেডা কইছে তাই ছিনাল মা আর কয়াল ভাতার মিলি রহম ওঝারে
ডাকে আনিছে! তথাগুলো বলে করম আলী বুড়ো
রাগে ফুলতে থাকে। সে আক্ষেপ করে কয় আমার যোয়ানকী বয়োস থাকলি পারে ম্যুই রহম
শয়তান,কয়াল লুচ্চো আর ছিনাল মাগীডারে ঝাঁটা পিটে গ্রাম থিকে -----। তার কথা শেষ না
হতি না হতিই জটলার ভেরত থেকে যুবক পোলাপানরা চেঁচায়ে উঠে,"ধর শালার
ওঝাকে।" করম আলী সাহস পেয়ে বলতে থাকে," ব্যেবুশে মাগীডারেও গ্রাম থিকি
ঝাটা ম্যারে বিদেয় কর তোরা। ভদর সুমাজে কয়ালের লগে ছিনালী করা চলিনানে।"
ভাবগতিক খারাপ দেখে রহম ওঝা তার ঝোলা ঝটপট গুছিয়ে দে চম্পট।এদিকে,
ময়নার মা মায়মুনা চেঁচায়ে চেঁচায়ে কান্না জুড়ে দিয়ে বলতে থকে," ময়নার বাপ তুমি মুইরে ফ্যালায়ে
কনে চলে গেলি গো!তুমি বাঁচে থাকলি পারে কী মুইরে -----। তার
মুখ থেকে মরা সোয়ামীর জন্য বিলাপ শুনে জটলার মাঝ থেকে অনেকেই খিল খিল করে হেসে
ওঠে।
এর মাঝে মফিজের মা একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েলোকদের মাঝে উপস্থিত হয়েছে। সে
ময়না মায়াকান্না শুনে বলে উঠে," ছিনালমাগীর কায়কারবার তুমরা দেহ না! বিসু
কয়ালকে এপাড়ায় দেখতি পালি তুমরা তারে মজা দেহাতি পারোস না?"
ইতিমধ্যে রওশনআরা
আপাকে ময়নাদের বাড়ির দিকে আসতে দেখে ওখানকার জটলা নিশ্চুপ হয়ে যায়। শিক্ষিকা ও
সমাজসেবিকা হিসাবে আপাকে লোকজন যথেষ্ট শ্রদ্ধা ভক্তি করে।মফিজের মুখ থেকে সব। কথা
শুনে রওশনআরা ম্যাডাম তো তাজ্জব! " মানুষ এতো নিচেয় নামতে পারে আমার জানা ছিল
না!"
ময়না মা তখনো
কেঁদেই চলছিল।তবে সে বুঝতে পারছিল না কী হতে চলেছে। এক সময় সে বুঝতে পারলো বিসু
কয়ালের কথা মতো রহম ওঝাকে ডেকে এনে নিজের মেয়েকে ভূতে ধরেছে প্রমাণ করতে যেয়ে সে
ভুল করেছে। সে বুঝতে পারছে না কেন কয়াল তার মেয়েকে এভাবে হেনস্থা করার যুক্তি তাকে
দিয়েছে।সে কান্না থামিয়ে ভাবতে থাক, তার মনে পড়ে একদিনের কথা, কয়াল সেদিন তাকে
কয়ছিল,' তুমার ম্যিয়াডারে ইস্কুলে পড়ায়ে বেয়াদপ বানাচ্ছো। মুহি মুহি তক্কো করে, আর
আমি তুমার লগে ---- তা ও সহ্য করতি পারে না,ও যদি তুমার ম্যিয়া না হতো তাহলি---- ‘কয়াল
তার কথা শ্যাষ করে কপট হাসি দিয়ে যে ইঙ্গিত করে তা দেখে মায়মুনায় ভাল লাগে না। এখন
সে বুঝতে পারে কয়াল আসলে একটা শয়তান!
রওশনআরা ম্যাডাম মায়নার মাকে একটা ধমক লাগায়," কার কথায় কার
দিয়ে তুমি রহম ওঝার ডেকে এনে ময়নার ঘাড় থেকে ভূত ছাড়াতে চেয়েছিলে?" ময়নার
মা মুখ খুলতে চায় না।
" তুমি আমাকে মাস্টারনী বলে
হয়তো চেনো,তাই তো? আমার কিন্তু আর একটা পরিচয় আছে,নির্যাতিতা নারীদের পাশে দাঁড়ানো
আমাদের সংগঠনের কাজ। তোমার মেয়ে উপর ক্লাসের একজন স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী। পড়াশোনাও
ভাল। মা হয়ে কোন স্বার্থে তাকে ভূতে পেয়েছে বলে রহম ওঝার মতো একজন ভন্ডকে দিয়ে
ময়নাকে হেনস্থা করতে যাচ্ছিলে? এটা আইনতো দন্ডনীয় অপরাধ, তা তুমি জান না?।একারণে তোমাকে
আমরা পুলিশে দিতে পারি। রওশনআরা ম্যাডামের কথা শুনে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে মায়মুনা কাকে
যেন খোঁজে,কিন্তু তার পক্ষে কথা বলার মতো কাউকে সে খুঁজে পায় না। সে ভাবে বিসু
কয়াল হয়তো তার পাশে দাঁড়াবে।সে বুঝতে পারে, সে নিজের মেয়ের সাথে সত্যি সত্যি জঘন্য
আচরণ করেছে কয়ালের কথা শুনে। ময়নার মা মায়মুনা হাউমাউ করে কেঁদে ম্যাডামের পা
জড়িয়ে ধরে বলে," আমি জীবন থাকতে আমি আমার ময়না সাথে এমন আচরণ আর করবো না।
ময়নার বাপ যা রেখে গেছে,তা দিয়ে আমি ময়নাকে মানুষ করবো। " সে কাঁদতে কাঁদতে
ময়না জড়িয়ে ধরলে মা মেয়ে দু'জনেই কান্নায় ভেঙে পড়ে।