গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ১ মার্চ, ২০১৮

ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী

নিজস্বী 
          
পার্কে গিয়ে দেখি অবাক কাণ্ড । একটি মেয়ে আর ছেলে দুজনে বাঁশের মত এক লাঠি নিয়েছে তার সামনে মোবাইল ! কি হল ব্যাপারটা বুঝতে দেরি হল। দেখি বটন টিপলেই ছবি উঠছে।
 মানষী  , মানস  দুই অন্তরঙ্গ প্রেমী যুগল । ওদের নিজস্বী তোলার  স্বাদ বড় বিচিত্র । কখন নদীর বাঁধের ধারে , কখন শক্ত পাথরের ওপর । কখন বা চলন্ত মেট্রো তে। এক এক ছবি তোলে আর আপলোড করে মোবাইলে।  মানস বড়লোকের বকাটে ছেলে কিন্তু মানসী  তো তা নয় । মানসী  এই শহরে নতুন । দ্বিতীয় বর্ষ ইঞ্জিনিয়ারিঙের ছাত্রী । সাধারণ ঘরের মেয়ে। বাবা মা , মেয়েকে হস্টেলে রেখে নিশ্চিন্ত । মাস-গেলে মোটা টাকা মানসী  এখানকার ব্যাঙ্ক একাউন্টে ক্রেডিট হয়ে যাচ্ছে । প্রতিদিন মা রাতে একবার মেয়েকে ফোন না করলেই নয় । নানা প্রশ্ন ।
... হ্যাঁরে কি খাচ্ছিস ? পড়াশুনো করছিস তো ! ভালো রেজাল্ট করতে হবে মা । বাবার চাকরি আর বেশি দিন নেই।
...এক সঙ্গে এতগুলো প্রশ্নের জবাবে মানসী হাঁপিয়ে ওঠে ..... ওঃ মা , আমি কি বাচ্চা ? সব ঠিক আছে । তোমাদের চিন্তা করতে হবে না। 
মায়ের মন কি বোঝে রে ! জীও সিমের জন্য ভিডিও কল করেন মা। মেয়েকে একবার চাক্ষুষ দেখা। মনে শান্তি যাইহোক মেয়ে আমার ভালোই আছে ।  
মানস কলেজে  ইনোভা নিয়ে আসে । রোজ নতুন নতুন সাজ । প্রচুর বন্ধু । মানসী  ওর ফাঁদে পা দিয়ে নিজের সর্বনাশ যে ডেকে আনছে তা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারলোনা । প্রত্যেক দিন ঘোরা , বেড়ান , দামী হটেলে খাওয়া আর গিফট পাওয়া। মানষীর  রুম মেট অরুণা , ওকে অনেক বারুণ করে মানস এর  সঙ্গে মেলা মেশা করতে । কিন্তু কোন ফল হয়না। 

উলটে মানষী  বলে , তুই বড় জেলাস । আসলে তুই সহ্য করতে পারিস না আমাকে আর মনিষ কে এক সঙ্গে । তাই বলে বিনাশ কালে বিপরীত বুদ্ধি । অরুণা চুপ থাকতে বাধ্য হয়।

এরমধ্যে মানস  বাবার ফার্ম হাউসে মানসীকে  নিয়ে এক সন্ধ্যা বেলায় ওঠে। মানস  ড্রিংক  করে । ফার্ম হাউসের দারোয়ান কে বলে বাইরে পাহারা দিতে।

দারোয়ান গরীব হলেও তার নৈতিকতা বোধ আছে। সে মানসীর  মধ্যে তার গ্রামের মেয়ের ছবি দেখতে পায়। সে বলে , বাবু আপনার বাবা জানলে আমায় আস্ত রাখবেন না । আপনি বিটিয়াকে তার বাসায় নিয়ে জান । আপনি আমার ছেলের মতন বাবু । এই বুড়ো বাপের কথাটা শুনুন।

কথাগুলো শুনে মানষীর  চৈতন্য উদ্রেক হয় । সে বুঝতে পারে সে এক ফাঁদে পা দিয়েছে ।        তাই হটাত ফার্ম হাউস থেকে দৌড়তে থাকে রাস্তার দিকে। রাস্তায় ছুটতে ছুটতে এক ভ্যান রিক্সা পায় । মানষী তাতেই উঠে পড়ে । গ্রামের রাস্তায় একা মেয়েকে সন্ধ্যা বেলায় ভ্যান রিক্সা বালা দেখে আশ্চর্য হয়।

মানসী হাত জোড় করে ভ্যান চালক কে বলে তার বড় বিপদ তাকে যেন নিয়ে যায় । একটা দশ টাকার নোট ও তার হাতে বাড়িয়ে দেয়। 

ভ্যান রিক্সা-বালা বোঝে কিছু একটা ঘটেছে । বাক্যব্যয় না করে জোরে প্যাডেল চালায়। 
মানস ছাড়ার পাত্র নয় । সে তার ইনোভা ছোটাল মানষীর  পেছনে।
দারোয়ান তার পুরন সাইকেল নিয়ে ছুটল ওদের পেছনে কে জানে আজ কিছু অঘটন ঘটতে চলেছে কিনা ।
ইতিমধ্যে মানস , মানসীকে  প্রায় ধরতে চলেছে । ঠিক সেই সময় প্রচণ্ড জোরে ইনো-ভা গাড়ীটা ধাক্কা লাগে রাস্তার ধারের এক গাছে। আসলে মানস প্রচুর ড্রিঙ্ক করেছিল তাই গাড়ী সামলাতে পারেনি। পাওয়ার স্টিয়ারিং একটু বেসামাল হলেই এক্সিডেন্ট অব্যর্থ । সেই হল ।
চক্ষের নিমিষে এক দুর্ঘটনা ঘটে গেল। গাড়িটা প্রচণ্ড আওয়াজ করে থেমে গেল। ড্রাইভারের সিটের পাসের জানালা দিয়ে দেখা-গেল মানসের মাথা-থেকে প্রচণ্ড রক্ত স্রাব হচ্ছে ।
এরমধ্যে দারোয়ান এসে পৌঁছে যায়। ভ্যান রিক্সা চালক গাড়ি থামিয়ে ঘটনা দেখার জন্য নেবে পড়ে । মানষী  নির্জীব মানুষের মতন বোবা হয়ে  দাঁড়িয়ে থাকে। সে বিশ্বাস করতে পারেনা তার নিজের চোখ কে । সে বুঝতে পারে এখন পুলিশের ঝামেলা হবে । বাবা মার কানে সব উঠবে। তার হয়ত পড়া বন্দ হতে পারে......
নিজস্বী ছবিগুলো তার নিজের মোবাইল থেকে সব ডিলিট করে দেয়। কিন্তু মানসের  মোবাইল ? সেটার কি করবে........... ?