গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ১৯ মার্চ, ২০১৮

মনোজিৎকুমার দাস

কালরাত্রি 

সন্ধ্যের লগ্নে কমলের বিয়েটা ভালোয় ভালোয় হওয়ায় সবচেয়ে বেশি স্বস্তিবোধ করে বড়দা অমল। সে মাকে ফোন করে খবরটা জানাতে দেরি করে না। 
কমল সিলেটের রিয়েল টিগার্ডেনে ম্যানেজার পদে কর্মরত। ওরা তিন ভাই। অমল, বিমল কমল। অমল ঢাকাতে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে আছে। বিমল গ্রামের হাইস্কুলের শিক্ষক। বাবা দুভাইয়ের বিয়ে দিয়ে গত হয়েছেন। কমলের বিয়ের ভাবনা এসে পড়ে মা সুধাময়ীর উপর। 
দুবউ এর বাপের বাড়ির মতো গ্রামদেশের মেয়েকে ছোট ছেলের বউ করে আনা মায়ের ইচ্ছে। এখন রিলেশন করে বিয়েথা হচ্ছে। তাই কমলকে নিয়ে মায়ের দুর্ভাবনার অন্ত নেই।
কুসুমপুরের মেয়েটাকে তোরা দেখে আয়।মা মেঝছেলে বিমলকে তাগাদা দেয়। বড়দা বাড়ি এলে বিমলরা কুসুমপুরে কনে দেখতে যায়। ফিরে এসে অমল মাকে বলে,‘ মেয়ে তো আমাদের পছন্দ, কিন্তু কমলেরও তো মেয়ে দেখা দরকার।অমলের কথা শুনে মা বলে,‘ তোদের পছন্দই কমলের পছন্দ। আমি আমার ছেলেকে চিনি।’ ‘ছেলে মেয়ে দেখবে, মেয়ে ছেলে দেখবে এটা মাথায় রাখা উচিত।বিমল বলে বসে।
মা বলে,‘ এখন কমলের পক্ষে মেয়ে দেখতে বাড়ি আসা সম্ভব না।অমল এর মনটা খুঁত খুঁত করে। এটা তো বিদ্যাসাগরদের যুগ না। ছেলেমেয়েদের মন বোঝা কঠিন। অভিজ্ঞতার আলোকে অমল আজকাল ভাবে ছেলেমেয়ের বিয়ের আগে জিজ্ঞেস করা উচিত, ‘ আপনার কি কারো সাথে রিলেশনসিপ আছে?’ প্রশ্নটা ছেলে মেয়ে পরস্পরকেই জিজ্ঞেস করতে পারে। ছোট ভাইয়ের জন্য মেয়ে পছন্দ করতে গিয়ে কুসুমপুরের মেয়েটিকে বড়দা অমল কীভাবে প্রশ্নটা করবে! প্রশ্নে উত্তরটা পাবার জন্য কমলকেও মেয়ে দেখা উচিত ছিল। কিন্তু মা বেঁকে বসায় তা সম্ভব হয় না।
কমলের অন্তরঙ্গ বিবাহিত বন্ধু সমীরণ।যা করবি আজরাতেই কিন্তু কমল।সমীরণ কমলকে বলে। পাশে দাঁড়ানো বড়বৌদি মিষ্টি হেসে বলে উঠে,‘ ঠাকুরপো, বাসররাতেই কিন্তু বিড়াল মারতে হয় ’ ‘ বড়দা তো সেটা করেছিল বলে তুমি তার এতটা নেওটা, তাই না?” কমল বড়বৌদিকে ঠাট্টা করে সুখ পায়। কমলের সাথে কথা বলতে দেখে মেঝবৌদি এগিয়ে এসে দেবরকে বলে,‘ জানতো আগামী রাতে কিন্তু বউকে কাছে পাবে না।’ ‘ কেন?’ কমলের প্রশ্নের জবাবে বড় বৌদি বলে আগামীকাল কালরাত্রি তাও জান না!
বাসর রাতই যে কালরাত্রি হবে তা কিন্তু তখন কেউই ভাবে নি সমীরণ বলেছে রাতটাকে হেলাফেলায় মাটি না করে ইনজয় করিস কিন্তু। কমল ভাবলো, সমীরণ ঠিকই বলেছে।
বাসরঘরে প্রথম কমল তার বউকে চোখ মেলে দেখলো। বউয়ের মধ্যে কোন রকম আড়ষ্ঠতা নেই,নেই লাজে রাঙা হবার মতো ভাব। এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত কমলের হাতে দিয়ে বললো,‘ আমার হাতের এটাই প্রথম------’বউ এর কথা শেষ করার আগেই কমল বউ এর হাত থেকে শরবতটা খেয়ে বড়ই তৃপ্তি পেল। আদর সোহাগের কমতি নেই বউ এর।  
কমলের খটকা লাগলো বাসর রাতে নতুন বউ তো এমনটা করে না। কখন যে কমল ঘুমিয়ে পড়েছে সে বুঝতেই পারে নি। ঘুম ভাঙলো ভোরে। বাসর ঘরের দরজা হাট করে খোলা। বাইরে ফিসফিসানির শব্দ। প্রথমে সমীরণ ছুটে এসে কমলকে জিজ্ঞেস করে ,‘ কমল কী হয়েছে রে। তোর বউ কোথায়?’ ঘুম জড়ানো চোখে সে কিছু বলতে পারে না। বেলা একটু হতেই সবাই বুঝতে পারে নতুন বউ ঘুমের ওষুধ শরবতে মিশিয়ে কমলকে ঘুম পাড়িয়ে রাতের আঁধারে প্রেমিকের সাথে ভেগেছে। বৌদিরা ছুটে এসে বলে ,‘ তুই প্রেমিকের সাথে পালাবি পালা তবে বাসর রাতকে কালরাত্রি করে সবার মুখে চুনকালি দিয়ে পালালি কেন? বড়দা অমল পাথর হয়ে গেছে। সে ভাবছে, মাকে সে কী বলবে!