গানের গুঁতো
মুশকিলটা হচ্ছে এখনও পর্যন্ত তপন বাবুকে
কেউ মুখের ওপর আসল সত্যি কথাটা বলে উঠতে পারে নি । অনেকে অনেক চেষ্টা- চরিত্র করেও শেষরক্ষা কেউ করতে পারে নি ।
তপন গায়েন এই তল্লাটের বর্ধিষ্ণু ,
অভিজাত ব্যবসায়ী । নম্র ও ভদ্রতো বটেই ,
সবসময় তাঁর মুখে সলজ্জ হাসিটি লেগেই থাকে । এলাকায় যেকোনো
ত্রাণ , ডোনেশান ,
সেবামূলক , সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাঁর সহৃদয় সাহায্য ও সহযোগীতা অবশ্য স্বীকার্য । তাই আসল কথাটা তাঁকে
বলা ভীষণভাবে দুষ্কর ।
আসলে তিনি
হলেন একজন একনিষ্ঠ ও নিয়মানুগ সুর সাধক ! রোজ সকাল - সন্ধ্যাতে
সুর সাধনা তাঁর অবশ্য পালনীয় কর্তব্য ।
চুপিচুপি বলি ,
অনেক বছর রেওয়াজ বা সাধনা করেও তাঁর গায়কী ও সুর জ্ঞান
একটুও উন্নত হয় নি ।
এই নির্মম সত্যি টা ওনাকে বলার দুঃসাহস কারোর হয় নি । তবে অনেকেই সৎ পরামর্শ দিতে সচেষ্ট হয়েছেন
কিন্তু বিশেষ কোনো লাভ হয় নি ।
এলাকার যুবকবৃন্দ ক্লাব গত বছর এক
অত্যন্ত রুচিসম্পন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল যার বেশিরভাগ আর্থিক অনুদান তপনবাবুর ছিল ,
সে অনুষ্ঠানে পাড়ার কিছু লোক প্রায় অনুনয় - বিনয় করে উপস্থিত এক প্রথিতযশা শিল্পীকে সুর সাধনা ও
গান পরিবেশনের সঠিক নিয়ম সম্বন্ধে কিছু বলতে অনুরোধ করেছিল ,
যা পুরোটাই ছিল তপনবাবুকে পরোক্ষভাবে এ বিষয়ে শোনানো বা শেখানো । কিন্তু সে উদ্দ্যোগ ব্যর্থ করে পরদিন
সকালেই তাঁর বেসুরো গানে পাড়া উদভ্রান্ত হয়ে
উঠেছিল ।
এই পাড়ার
সকলের খুব উপকারী বন্ধু চিন্তামনি ডাক্তার । অনেকে তাকে হাতুরে ডাক্তার ও বলে কিন্তু যার যখনই দরকার সবার আগে এই চিন্তামনির দাওয়াই প্রাণ
রক্ষা করে ।
সেদিন মাঝরাতে তপন বাবুর ও বুকের বাঁ
দিকে হঠাৎ প্রচন্ড ব্যথা , পাড়ার
লোকেরা এই সময় হাতুরে
ঈশ্বরের স্মরণাপন্ন হয়েছিল সুবর্ণ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে
,সে রাতে তাঁকে সুস্থ করেছিলেন এই চিন্তামনি
ডাক্তার এবং তাকে বলতে অনুরোধ করা হয়েছিল যে , তপনবাবুর
এই বয়সে এইভাবে রোজ বুকে , পেটে ও
গলায় চাপ দিয়ে রেওয়াজ করাই নাকি
বুক ব্যাথার কারণ , তাই এ
মুহূর্ত থেকে এই সাধনা তাকে পরিত্যাগ করতেই হবে , তবেই তাঁর
শরীর -
স্বাস্থ্যের উন্নতি সম্ভব ।
এমনই শিখিয়ে
পড়িয়ে চিন্তামনি ডাক্তারকে পাঠানো হল গায়েন বাবুর চিকিৎসা করতে এবং আরও জোর দেওয়া হলো -শহরের বড় ডাক্তারকে গায়েন বাবুকে দেখিয়ে আনতে হবে এবং তাঁকে দিয়েও এমন সম্ভাবনার কথা বলানোর গুরু দায়িত্ব দেওয়া হল ।
কিন্তু পরমেশ্বর হয়তো সহায় ছিলেন
না এ যাত্রায় !
বড় ডাক্তার সেদিন তপনবাবুর গলা সাধা
যে তাঁর হৃদযন্ত্র বিকলের কারণ সেকথা নস্যাৎ করে এভাবেই আরও কিছুকাল মন - প্রাণ উজাড় করে গলা ছেড়ে গান গাওয়ার পরামর্শ
দিয়েছিলেন । এবং আরও বলেছিলেন তাঁর হার্ট অত্যন্ত দুর্বল তাই মনের আনন্দে গান গাওয়াই নাকি গায়েন
বাবুর বেঁচে থাকার একমাত্র রসদ ।
আসলে
এ যুগে তো ‘ ভূতের রাজাও নেই আর সত্যজিতের বুদ্ধিদীপ্ত গপ্পোও নেই ,যেখানে তপন গায়েন কে ভূতের রাজা বর দিয়ে সুরেলা গায়ক আর তার সুরের যাদুতে সকলকে মোহিত করে রাখবে । তাই
অগত্যা এইভাবেই পাড়-পড়শীর চরম
দুর্দশা চলছে - চলবেই !!