গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ১৯ মার্চ, ২০১৮

তাপসকিরণ রায়


ধারাবাহিক হ্যান্টেড কাহিনী--২১

কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরির ভূতের কথা


ভারতের সবচে বড় পুস্তকালয় কলকাতার আলিপুরের ন্যাশনাল লাইব্রেরী। ১৮৩৬ সালে যার স্থাপনাহয়েছিল। এটি শুরুতে প্রাইভেট সংস্থা হিসাবে চলত। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ছিলেন এই লাইব্রেরিরপ্রথম কর্ণধার। ভারতের তদানীন্তন গভর্নর-জেনারেল লর্ড মেটকাফ ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ লাইব্রেরির৪,৬৭৫টি বই এই গ্রন্থাগারে দান করেছিলেন। এই দানের ফলেই গ্রন্থাগারের গোড়াপত্তন সম্ভবহয়েছিল। স্বাধীনতার পরে এটি সরকার অধিগ্রহণ করে। তারপর থেকে তার নাম হয় ন্যাশনাললাইব্রেরী।
কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরির ভূতের কথা কে না জানে ? আমিও ব্যাপারটা পড়ে ছিলাম। একদিনবন্ধু সমর  দেবাশীষ আমাকে এসে বলল, চল না আমরা একদিন রাতে ন্যাশানাল লাইব্রেরী ঘুরেআসি।
আমি বলেছিলাম, কেন রে বইটই লিখবি নাকি ?  
সমর হেসে বলেছিল, না রে, চল না একদিন ওখানকার ভূত দেখে আসি।
দেবাশীষ সায় দিয়ে বলে ছিল, কিছু না হোক, ভূত দেখি না দেখি অন্তত লাইব্রেরিটা না হয় ঘুরে ফিরেদেখে আসি !
ভূতের ব্যাপারে আমি আগেই পড়েছিলাম, ভুতুড়ে কার্যকলাপের জন্য এই প্রাচীন লাইব্রেরিটির দুর্নামরয়েছে। যাঁরা এখানে পড়াশোনা করতে যান তাঁদের অনেকেই বলেছেন, পড়াশোনা করতে করতে তাঁরাআচমকা ঘাড়ে অদৃশ্য কারোর নিঃশ্বাস অনুভব করেছেন। কেউ বা বলেন, স্তব্ধ দুপুরে শুনেছেন অশরীরীকারোর পদচারণার শব্দ। লাইব্রেরির কর্মচারীরাও অনেকে অশরীরী সত্তার উপস্থিতি টের পেয়েছেন।অনেকেরই মত হল, লর্ড মেটকাফের স্ত্রীর আত্মাই নাকি এখনও ঘুরঘুর করে লাইব্রেরির অন্দরেবাহিরে। বই যখন তার সঠিক জাগায় না রাখা হয় বা অগোছানো ভাবে রাখা হয় তখন লর্ড মেটকাফেরস্ত্রীর উপস্থিতির আভাস পাওয়া যায়।  ছাড়াও কিছু কিছু আত্মার ছায়া এখানে দেখা যায়, কোন কোনচেয়ার দুলে ওঠে, কেউ কেউ আবার আত্মার গোপন অস্তিত্বের উপস্থিতি টের পায়। আরও রহস্য নাকিঘনীভূত হয় যখন ২০১০- লাইব্রেরী ইমারতের মাঝে খুঁজে পাওয়া যায় একটি দীর্ঘ ১০০০ স্কয়ারফিটের গুপ্ত ঘর যার কোন প্রবেশ পথ নেই ! এ ছাড়া লাইব্রেরীর সংস্কারের কাজের সময় কয়েকজন শ্রমিকের মৃত্যুও এখানে ঘটে ছিল।      
মনে পড়ে সেদিনের কথাবার্তার পর এক রবিবার আমরা তিন বন্ধু ঘুরতে গিয়েছিলাম লাইব্রেরীতে।সন্ধ্যে পার হয়ে গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে দেখলাম দীর্ঘ হলঘরের টেবিলগুলির চেয়ারে বেশীর ভাগবিজ্ঞ  বয়স্ক চেহারার লোক বসে আছেন। কেউ বইয়ে মনোযোগ দিয়ে বসে আছেন। কেউ বইয়েরপৃষ্ঠা উল্টে যাচ্ছেন। দু-এক জন বইয়ের সেলফের আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমরা গিয়ে একপ্রান্তের খালি চেয়ার টেবিল নিয়ে বসলাম। আমাদের বই পড়ার আদৌ ইচ্ছে ছিল না।  আমরা মনে মনেজানি, আসলে ভৌতিক রহস্য যাচাই করাই ছিল আমাদের এখানে আসার আসল উদ্দেশ্য কিন্তু চুপচাপটেবিলে বসে থাকলে তো হবে না, লোকের চোখে পড়তে পারি ভেবে বন্ধু দেবাশীষকে বললাম, যাসেলফ থেকে দু একটা বই নিয়ে আয়।
দেবাশীষ ইতস্তত করছিল।  সমরকে ডেকে নিলো। বুঝলাম দেবাশীষ ভয় পাচ্ছিল। হতেই পারেএমনটা। রাত বেশী হয়নি, অনেকেই দেখলাম ধীরে ধীরে হাঁটা দিচ্ছেন। বোধ হয় রাত আটটা অবধিখোলা থাকে লাইব্রেরী। দেখতে দেখতে চারদিকের নির্জনতা বাড়তে লাগলো। ইতিমধ্যে আমাদেরটেবিলে এক বিজ্ঞ-অভিজ্ঞ চেহারার লোক এসে বসলেন। আমার দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন,  আপনাকে তো এখানে কোন দিন দেখেছি বলে মনে করতে পারছি  না ?
--না আমরা রেগুলার আসি না। বহুদিন পরে তিন বন্ধুতে মিলে এলাম।
--বন্ধুদের দেখছি না তো ?
ওরা বই আনতে গেছে। ইতিমধ্যে কয়েটা বই হাতে নিয়ে দেবাশীষ  সমর এসে হাজির হল। আমিবইগুলি দেখলাম, প্রায়গুলিই ভৌতিক বই।
একটা বই--বাংলায় নাম তার--ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে বিদেশী ভূত। লেখকের নাম শাশ্বত রায়। এঁকেলেখক হিসাবে জানি না আমরা। লেখকের প্রথম বই হবে এটা, জানি না শেষ বইও কিনা।
পাশের ভদ্রলোক বলে উঠলেন, জানি না তো এমন একটা বইও এই লাইব্রেরীতে আছে ? আপনারাএখানকার সুপারনেচারল ঘটনা বিষয়ে নিশ্চয় জেনে থাকবেন ?
কৌতূহলী হলাম আমি, মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম, হ্যাঁ কিছু কিছু পড়েছি। আপনি নিয়মিত আসেন এখানে--আপনি কি কিছু দেখেছেন বা