গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ১ মার্চ, ২০১৮

শেখর কর

রং নাম্বার

একটা টেলিফোন এসে সকালটা যেন কেমন এলোমেলো হয়ে গেল । তাও রং নাম্বার ডায়ালিং । কাকতালীয় হলেও মনটা যেন মানতে চায় না । এমন দিনে এধরণের একটা বিবশ করে দেওয়ার মত ফোন ! এই দূর্গাপঞ্চমী তিথিতেই আমার মায়ের মৃত্যুদিন । অনেক বছর হয়ে গেল মা চলে গেছেন । বন্ধুদের বলতাম- বোধনের দিনই আমার জীবনে বিসর্জনের বাজনা বেজে গেছে ।

প্রতি বছর এই দিনটায় সকালে উঠে ড্রইং রুমের শোকেসে রাখা মায়ের ল্যামিনেশন করা ছবিটা নামিয়ে যত্ন করে মুছি তারপর যথাস্থানে রেখে ফুল দিয়ে প্রণাম করি আর ধুপকাঠি জ্বালিয়ে খানিকক্ষণ চুপ করে ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকি ।

আজ যখন ছবিটা পরিস্কার করব বলে তৈরি হচ্ছি ঠিক তখুনি ল্যান্ডলাইন টেলিফোনটা বেজে উঠলো । এখন এই মোবাইলের যুগে টেলিফোনের ব্যবহার অনেকটাই কমে গেছে । দূরের আত্মীয়স্বজন ছাড়া আজকাল আর কেউ ল্যান্ডলাইন ফোনে টেলিফোন করেনা ।

স্বভাবতই আমি ছুটে গিয়ে রিসিভার তুলে হ্যালো করতেই ওপার থেকে এক বয়স্কা মহিলার প্রশ্ন , “কে কথা বলছ ?”আমি আন্দাজ করলাম এই প্রবীনা নিশ্চয়ই রং নম্বর ভায়াল করেছেন । তাই সবিনয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম, ‘আপনি কে বলছেন?’’ উত্তর এলো-‘আমি মা বলছি । আমার অনুভুতির দরজায় কে যেন সজোরে কড়া নাড়লো ! আবেগরুদ্ধ স্বরে বললাম হ্যা মা আপনি কাকে চাইছেন ? উনি যেন অবাক হয়ে বললেন- ‘তুই গোপাল না !” তারপরই হয়ত নিজের ভুলটা বুঝতে পেরে বললেন আমি গোপাল চক্রবর্তীর মা ।

আমার দুচোখ বেয়ে অকারণ অশ্রু । বললাম মাগো আপনি ভুল নম্বরে ফোন করেছেন । আমি আপনার গোপাল নই । নিঃশব্দে ফোনটা নামিয়ে আমার মায়ের ছবিটার তাকিয়ে খানিকক্ষণ স্থানুর মত দাঁড়িয়ে রইলাম ।