গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৭

সুবীর ঘোষ

তালাশ
                     

-কেন নিজেকে নষ্ট করছ  বলো তো ?
-নষ্ট ? নষ্ট কোথায় করলাম ?
-আমার এ ধূপ না পোড়ালে
      গন্ধ কিছুই  নাহি ঢালে
-কিন্তু তুমি যত কথা বলছ ,তত দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে 

      

-কথা আর কোথায় বললাম ? কইতে কথা বাধে 
-কাব্য আর ভালো লাগছে  না আমার  তুমি অকারণ  আমার জন্যে সময় নষ্ট  করে পড়াশুনোর ক্ষতি করছ।  তুমি জীবনে আমার থেকে  অনেক ভালো মেয়ে পাবে 
-পৃথিবীতে তুমি একজনাই   তুমি মোনালিসা  তুমি  তিলোত্তমা ;তুমি উর্বশী ;তুমি ক্লিওপেট্রা । তোমার মতো চোখমুখ তোমার মতো নাক আর কারোর নেই
-থাক আর কালিদাস হয়ে  কাজ নেই 
      এ সংলাপ পাঁচ বছরের পুরোনো । পাত্রের নাম সৈকত,পাত্রী ঊর্মিমালা । বাস্তবের  ঊর্মিমালা আছড়ে পড়ে নি সমুদ্রসৈকতে
     বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে সৈকত পুরুলিয়ায়  চলতি পথে বাসে স্টেশনে মেলায় খেলায় অনেক মেয়ে  দেখা যায়  ঊর্মির মতো কাউকেই মনে হয় না । সৈকত ও তার ব্যাচমেট সঙ্কেত এক মেসে থাকে রাত্রে মশারি গুঁজতে গুঁজতে একদিন সঙ্কেত বলল---আমাদের ব্যাচের একটা মেয়ে পড়ত না ঊর্মি,ওকে আজ দেখলাম ।
    খাড়া হয়ে বসল  সৈকত  
-তুই ঠিকানা নিলি না ?
-দুর ওকে তো উল্টোদিকের  বাসে উঠতে দেখলাম 
    আবার ঢেউ ওঠে । এ শহরের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশ করা কি সম্ভব ? সৈকত পারলে তাই  করে ।
   সেদিন সৈকতের গোটাকতক পাসপোর্ট ছবির দরকার পড়ল । সন্ধেয় অফিস থেকে বেরিয়ে আলোছায়া স্টুডিয়োতে গেল সে ।ছবি তুলিয়ে বেরুতেই দেখল কাউন্টারে ভিড় জমে গেছে । পয়সা দিতে দেরি হল আর তখনই শো কেসে আবদ্ধ একজোড়া ছবির দিকে চোখ গেল । একজনের ছবি ।একটিতে ঈষৎ পাশ ফিরে অন্যটিতে সুইমিং কস্টিউমে । ছবির মেয়েটি ঊর্মিই ।  নিজেকে চ্যালেঞ্জ করল  সৈকত ।
                                        
                                                ৩


এরপর থেকে রোজ সন্ধেয় অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা স্টুডিয়োর সামনে আসতে লাগল সে । পাশের চায়ের দোকানের ভাঁড়ের চা ফুরোতে সময় নেয় না । সৈকত দেখেই চলে ঊর্মিকে । কোনো কোনো দিন  স্টুডিয়োতে ভিড় না থাকলে দোকানি বলে ওঠে ‘বলুন’
-না মানে হাফসাইজ ফটোর রেটটা  বলবেন ?
      একদিন  জোর  বৃষ্টি  বাজার প্রায়  ফাঁকা  স্টুডিয়োতে লোকজন  নেই  কাউন্টারে মালিক  ছিল না। অন্য একটা ছেলে   সৈকত সাহস করে এগোয় ।
-বলুন 
ছেলেটা বলে ।
- যে ফটো দুটো   বিক্রি করবেন ? কত দাম  নেবেন ?
-ওরে বাবা শোকেসের ছবিতে হাত দিতে পারব না 
     হল না । অতএব চুরি করে দেখে আসা ছাড়া আর কী করা !
      অন্য একদিন । অফিস থেকে বেরিয়ে বাজারে আসতেই  সৈকতের মনে দোলা । ঐ তো আলোছায়া এক্ষুনি দেখতে পাবে । সেই চোখ সেই মুখ সেই ঊর্মি ।
     সেদিনও দোকানের কাউন্টারে মালিক ছিল না। ছিল সেই অবোধ বালকটি । কিন্তু শোকেসে কোথায় সেই ছবি ! পরিবর্তে অন্য ছবি । একটিতে নববধূবেশে একজন অন্যটিতে এক চাবাগানবালিকা বালক এ পরিবর্তনের কথা বিশেষ জানে না । বলে ‘ঐ ছবি দুটো কে যেন চাইল । মালিক দিয়ে দিয়েছে’
    সেদিন বিছানায় শুতে না শুতেই অনেক দূরে চলে গেল সৈকত । জয়সল্মির । স্যান্ড ডিউনস্ । উটের পিঠে সৈকত । হঠাৎ ঝাঁকুনি । বালির ওপর পড়ে গেল সে । হাত ঢুকে গেল বালিতে । বালি থেকে হাত টেনে আনতেই দেখল নীলাঙ্গুরীয়টি নেই । অনেক খুঁজল সে । এখানে,সেখানে ।

                                               

এদিকের বালি সরিয়ে । ওদিকের বালি সরিয়ে ।  সন্ধে নামল সামনে মানুষের আবছায়া । মানুষটি কাছে আসতেই  সৈকতঃতুমিও কি ?
-এসো  সারা জীবন বালি সরিয়ে খুঁজতে থাকি ।
-চলো  খুঁজি 
     সায় দেয় সৈকত ।