-কেন নিজেকে নষ্ট করছ বলো তো
?
-নষ্ট ?
নষ্ট কোথায় করলাম ?
-আমার এ ধূপ না
পোড়ালে
গন্ধ কিছুই
নাহি ঢালে
-কিন্তু তুমি যত কথা বলছ ,তত দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে
।
২
-কথা আর কোথায় বললাম
? কইতে কথা বাধে ।
-কাব্য আর ভালো লাগছে না আমার । তুমি অকারণ আমার জন্যে সময় নষ্ট করে পড়াশুনোর ক্ষতি করছ। তুমি জীবনে আমার থেকে অনেক ভালো মেয়ে পাবে ।
-পৃথিবীতে তুমি একজনাই । তুমি মোনালিসা । তুমি তিলোত্তমা ;তুমি
উর্বশী ;তুমি ক্লিওপেট্রা । তোমার
মতো চোখমুখ তোমার মতো নাক আর কারোর নেই ।
-থাক আর কালিদাস হয়ে কাজ নেই ।
এ সংলাপ পাঁচ বছরের পুরোনো । পাত্রের নাম সৈকত,পাত্রী ঊর্মিমালা । বাস্তবের ঊর্মিমালা আছড়ে পড়ে নি সমুদ্রসৈকতে ।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে সৈকত পুরুলিয়ায় । চলতি পথে বাসে স্টেশনে মেলায় খেলায় অনেক মেয়ে
দেখা যায় । ঊর্মির মতো
কাউকেই মনে হয় না । সৈকত ও তার ব্যাচমেট সঙ্কেত এক
মেসে থাকে । রাত্রে মশারি গুঁজতে গুঁজতে একদিন সঙ্কেত বলল---আমাদের ব্যাচের একটা মেয়ে পড়ত না ঊর্মি,ওকে আজ দেখলাম ।
খাড়া হয়ে বসল
সৈকত ।
-তুই ঠিকানা নিলি না
?
-দুর ওকে তো উল্টোদিকের বাসে উঠতে দেখলাম ।
আবার ঢেউ ওঠে । এ শহরের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশ করা
কি সম্ভব ? সৈকত পারলে তাই করে
।
সেদিন সৈকতের গোটাকতক
পাসপোর্ট ছবির দরকার পড়ল । সন্ধেয় অফিস থেকে
বেরিয়ে আলোছায়া স্টুডিয়োতে গেল সে ।ছবি তুলিয়ে বেরুতেই দেখল কাউন্টারে ভিড়
জমে গেছে । পয়সা দিতে দেরি হল ।আর তখনই শো কেসে আবদ্ধ একজোড়া ছবির দিকে চোখ গেল ।
একজনের ছবি
।একটিতে ঈষৎ পাশ ফিরে অন্যটিতে সুইমিং কস্টিউমে । ছবির মেয়েটি
ঊর্মিই ।
নিজেকে চ্যালেঞ্জ
করল
সৈকত ।
৩
এরপর থেকে রোজ
সন্ধেয় অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা স্টুডিয়োর সামনে আসতে লাগল সে । পাশের
চায়ের দোকানের ভাঁড়ের চা ফুরোতে সময় নেয় না । সৈকত
দেখেই চলে । ঊর্মিকে । কোনো কোনো দিন স্টুডিয়োতে ভিড় না থাকলে দোকানি বলে ওঠে ‘বলুন’ ।
-না মানে হাফসাইজ ফটোর রেটটা বলবেন ?
একদিন । জোর
বৃষ্টি । বাজার প্রায়
ফাঁকা । স্টুডিয়োতে লোকজন
নেই । কাউন্টারে মালিক
ছিল না। অন্য একটা ছেলে
। সৈকত সাহস করে এগোয় ।
-বলুন ।
ছেলেটা বলে ।
-ঐ যে ফটো দুটো । বিক্রি করবেন
? কত দাম নেবেন ?
-ওরে বাবা শোকেসের ছবিতে হাত দিতে পারব না ।
হল না । অতএব চুরি
করে দেখে আসা ছাড়া আর কী করা
!
অন্য একদিন । অফিস
থেকে বেরিয়ে বাজারে আসতেই সৈকতের মনে দোলা । ঐ তো আলোছায়া । এক্ষুনি
দেখতে পাবে । সেই চোখ সেই মুখ সেই ঊর্মি ।
সেদিনও দোকানের
কাউন্টারে মালিক ছিল না। ছিল সেই অবোধ বালকটি ।
কিন্তু শোকেসে কোথায় সেই ছবি ! পরিবর্তে
অন্য ছবি । একটিতে নববধূবেশে একজন । অন্যটিতে এক চাবাগানবালিকা । বালক এ পরিবর্তনের কথা বিশেষ জানে না । বলে ‘ঐ
ছবি দুটো কে যেন চাইল । মালিক দিয়ে দিয়েছে’ ।
সেদিন বিছানায় শুতে
না শুতেই অনেক দূরে চলে গেল সৈকত । জয়সল্মির ।
স্যান্ড ডিউনস্ । উটের পিঠে সৈকত । হঠাৎ ঝাঁকুনি । বালির ওপর পড়ে গেল
সে । হাত ঢুকে গেল বালিতে । বালি থেকে হাত টেনে আনতেই
দেখল নীলাঙ্গুরীয়টি নেই । অনেক খুঁজল সে । এখানে,সেখানে ।
৪
এদিকের বালি সরিয়ে ।
ওদিকের বালি
সরিয়ে । সন্ধে নামল । সামনে
মানুষের আবছায়া । মানুষটি কাছে আসতেই
সৈকতঃ—তুমিও কি ?
-এসো । সারা জীবন বালি সরিয়ে খুঁজতে থাকি ।
-চলো । খুঁজি ।
সায় দেয় সৈকত ।