গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৭

মনোজিৎকুমার দাস

আলপনা


অনুপমের ঠাকুমা পৌষ সংক্রান্তিতে আলপনা আঁকতে অনুদীপাকে ডাকতো।অনুদীপা শোভনের সঙ্গে পড়তো।অনুদীপ শোভনদের একই পাড়ায়। ঠাকুমা বলতো,অনুপমার মতো গ্রামের আর কেউ আলপনা আঁকতে পারে না।শোভন অনুদীপের সাথে সব সময় আড়ি দিয়ে চললেও ঠাকুমা জানে শোভন অনুদীপাকে ভালবাসে।অনুদীপাও যে শোভনকে ভালবাসে না তা কিন্তু নয়। ঠাকুমার ইচ্ছে ছিল, অনুদীপাকে নাতবৌ করে ঘরে আনার। সেবার পৌষ পার্বণে গ্রামে আলপনা দেওয়ার প্রতিযোগিতায় অনুদীপা প্রথম হওয়ায় ঠাকুমার আনন্দ আর ধরে না! ঠাকুমা বললো,"শোভন দাদাভাই, অনুকে তুই আমাদের এখানে আসতে বলে আয়, বকুল পিঠে আর পাটিসাঁপটা খেতে বড় ভালবাসে!" শোভন কপট রাগ দেখিয়ে বলে,"আমি কী ভালবাসিনে! আমার দ্বারা হবে না ,পারলে তুমি যেয়ে ডেকে আন।"ঠাকুমা বেঁচে থাকতে তার বড় ইচ্ছে ছিল শোভনের সঙ্গে অনু' বিয়ে দেখে যাবার!তাদের পাল্টি ঘর! ঠাকুমা অনুকে ' বলতো,"তোকে আমি নাতবৌ করে আনবোই! আমার কথা কেউ পায়ে ঠেলতে পারবে না। তোর বিয়েতে তোকেই আলপনা আঁকতে হবে কিন্তু!" দু'জনেই পড়াশোনা নিয়ে ব্যাস্ত। দু'জনেই ডাক্তারী পড়ে। তবে দু'জন দু'জায়গায়। অনুদীপা এখন শোভনের ঘরণী।দু'জনেই জাতিসংঘের হেল্থ মিশনে নাইরোবিতে।ঠাকুমা তাদের বিয়ে দেখে যেতে পারেনি,তার আগেই গত হয়েছে।তাদের পাশাপাশি দু'বাড়িতে বিয়ের আলপনা কিন্তু অনুদীপাই এঁকেছিল,ঠাকুমার সেই দিনের কথা স্মরণ করে আজ পৌষ পার্বণ! ঠাকুমার কথা অনুদীপার বড়ই মনে পড়ছে, আজ পূর্ণিমা রাত,নাইরোবির সাততলা ফ্লাটের ব্যালকোনিতে চাঁদের আলোর দিকে তাকিয়ে সে ভাবলো, তাকে ড্রয়িং রুমের মেঝেয় আলপনা আঁকতে হবে আজ রাতে সাদা রঙ দিয়ে