গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৭

হাসান উজ জামান আনসারী

নার্ড

ইংরেজীতে এই প্রকৃতির মানুষকে বলা হয় নার্ড । সমসাময়িক আসাক পোষাক আদব কায়দা থেকে পিছিয়ে পড়া মেয়েটাও নিজেকে নার্ড ভাবতেই ভালোবাসে । কিন্তু ভাবনা আর বাস্তব যে খুব ফারাক । এই ফারাক বা গ্যাপ পূরণ করতে গিয়েই অনেকে পড়ে ফাটা বাঁশের মধ্যিখানে । মেয়েটারও সেই একই অবস্থা ।

অন্য মেয়েরা প্রেম করছে । সে পারছেনা । ভাবনায় সে এখনও কালিদাস । পোষাকে ডরোথি কিংবা লেডি ম্যাকবেথ । আহারে বিহারে একদশক পুরাতন ঠাকুমার মত যে কিনা প্রতিটি নাতি নাতনিকে আদেশ করে প্রতিটা দানার মর্ম বুঝতে । তো সেই পড়ল পাফড়ে । অন্য বান্ধবীর ঠোটে তার প্রেমিকের ঠোট রাখা ছবি দেখে সে বুঝতে পারল তার শরীরের মধ্যে যে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে ।

পিটুইটারী কি ? প্রশ্ন করে সে নিজেকে । হ্যা পিটুইটারীই তো । সে ই তো বড় শয়তান । বলে নিজেকে সে সামলে নিয়েছে বারে বারে । তারপরেও সে মানুষ । ইর্ষা লোভ মদ মাৎর্যও তো তাকেও গিলে ফেলে কখনো কখনো । কখনো কখনো তার ইচ্ছে হয় সে নিজেকে লাগাম ছাড়া ঘোড়া করে ফেলবে । কিংবা অশ্বমেধ যঞ্জের সেই ঘোড়ারা । যতটা ছেলেকে তার পছন্দ হবে সব তার ।

তার পরেও সে তার ভাবনার র্য়াডক্লিফ রেখা পেরতে পারে না । ভয় পায় ভীষন । মেকি সভ্যতা, সামাজিকতার রাইফেল উচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মনগড়া অনুশাসনের কড়া চোখ তার ভয় লাগে খুব । দোনামোনার দুমুখো সাপ তার বুকের অর্ধেক অংশ খেয়ে ফেলে । সে চায় বেরিয়ে আসতে তার নার্ডনেস থেকে । বেরিয়েও আসে । কিন্তু গল্প থেমে যায় নদীর এপারের দির্ঘনিশ্বাসে । কারণ সকল সুখ যে ওপারেই আছে কে গ্যারান্টি দিতে পারে ? পারেনি সে নিজেও । যাদের কাছেই সে নিজেকে সে সোপে দিতেই চাই তারাই তো তাকে গিলে ফেলতে চায় ময়াল সাপের মত । ভয় লাগে তার আরও একবার । ভীষন ভয় ।

বাথরুমে বসে কাঁদে সে । বাইশ বছরে রুমমেটদের সামনে কান্না মানায় ! কাঁদে ভীষন । তার মনে হয় আধুনিকতা একটা বিলাশিতা । আধুনিকতা একটা পতিতার সুখের মত । সামান্য কিছু সময়ের সুখের জন্য সারা জীবনের সুখ কেড়ে নেয় যে সুখ তাকে সে পতিতা বলতে ভালোবাসে ।