শিল্পভূমি
নিভন্ত
এই চুল্লিতে মা একটু আগুন দে , আরেকটু কাল বেঁচে থাকি
বাঁচার আনন্দে । শঙ্করের মেয়ের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলল হারান । কথা নয় কবিতা ।
শঙ্করের মেয়ে বুঝল না । শঙ্কর চা চপের দোকানি । মেয়ে ক্লাস এইটে । পড়াশোনা কামাই
করে মাঝে মাঝে এসে বাপকে হেল্প করে । বিকালবেলা যখন দোকানে ভিড় জমে । একা সামলাতে পারেনা
তার বাবা । -শঙ্কর
আগুন দে তো , বিড়িটা নিভে গেছে । এবার
একটা কাগজ পাকিয়ে উনুন থেকে আগুন ধরিয়ে হারানকে দিতেই হারান বলে - তোদের বোধ বুদ্ধি আর হল না । আমার শিল্পময় কথার ইঙ্গিত বুঝলি না ।
অথচ চপ আজ দেশের আয়বহুল শিল্প । উনুন জ্বলছে ওর নাম বয়লার । তোর মেয়ে যে হাতপাখা
নাড়ছে উনুনের মুখে ওটাকে বলে এফ ডি ফ্যান । আর দেখতেই পাচ্ছিস চিমনি দিয়ে ধোঁয়া
বের হচ্ছে । এসব গল্পের মাঝেই একটা ছোকরা এসে থামল শঙ্করের দোকানের সামনে – দাদা আমাদের বিশটা চা , পঞ্চাশটা চপ । জলদি
পাঠাবে গুণ্ডা মিলন সঙ্ঘে । - কিন্তু তোমাদের তো দুহাজার
টাকা বাকি আছে আগের মাসের । মিনমিনে ভেজা গলা শঙ্করের । - বাকি ? হো হো করে হাসল ছেলেটি ।
বাকি আবার কি? এ পাড়ায় বিজনেস করবে আর ঝন্টুদার ক্লাবে ট্যাক্স দেবে না , সে কি হয়?
বিড়িটা
টানতে টানতে হারান দেখছে শিল্পভূমি । শুধু চা চপ নয় কত শিল্প মাথা চাড়া দিচ্ছে ।
তোলা- নতুন
শিল্প , বিনিয়োগ হীন শিল্প ।
বিড়িটা নিভে যাচ্ছে কি ? জোরে টান দিতেই হারান
বুঝল এখনও ধোঁয়া উঠছে চিমনিতে ।
একটি
স্পনসর্ড গল্প
একটি
বহুল প্রচারিত বানিজ্যিক পত্রিকায় গল্প লিখে গোবর্ধন হালদার রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে
গেল । পত্রিকার মালিক ঘরে ঘরে পৌঁচে যাওয়া “ ঝটপট
ঝোল ’নামে একটি গুঁড়ো মশলার কর্নধার । পাশাপাশি দেশে
বিদেশে আরও অনেক কারবার । সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলও কিনেছেন । সেই চ্যানেলে
দিনরাত দেখা যাচ্ছে গোবর্ধনের গোলাপি মুখ । তার চারাপাশে তরুণী লেখিকাদের ভিড় ।
যারা দুচারদিন আগে গোবর্ধন নাম শুনলে যারা আঁতকে উঠত সেই বিশ্বসুন্দরীরা এখন
গোবর্ধনের করুণা প্রার্থনা করে – গোবুদা , আমাকে একটু দেখবেন প্লিজ । যদি আপনার পাশে বসার জায়গা পাই । কত বড় লেখক
আপনি । গোবর্ধন গম্ভীর থাকে । এটা তার কৌশল । সে সবই জানে । এইসব আদব কায়দা । আলো
এবং উদ্দীপনার কথা । গল্প কীভাবে লিখতে হবে সেই টেকনিকও বেশ রপ্ত করে নিতে পেরেছে
সে । তিনলাইন গল্প বলার পর কমারসিয়াল ব্রেক থাকবে । এরপর পাঞ্চলাইন হিসেবে ওই
গুঁড়ো মশলার গুণকীর্তনএর জন্য একটি আকর্ষণীয় বাক্যবিন্যাস । যাতে সহজেই বোঝা যায়
এই গল্পটি কে স্পন্সর করছে । এই সহজ হিসেব নিকেশের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে মিট মশালা
সেরা লেখক পুরষ্কারও পেয়ে গেল গোবর্ধন । এখন সে সেলেব্রিটি । দেশ বিদেশ ঘোরে ভাষণ
দেয় । কিন্তু গল্প লেখেনা । আয়নায় নিজের মুখ দেখে একদিন সত্যি সত্যিই চমকে উঠে
গোবর্ধন । নিজের প্রতিকৃতি রান্নার ঠাকুরের মতো হয়ে গেছে । গায়ে আদার গন্ধ । হাতে
হলুদ দাগ । প্রতিকৃতি হেসে ওঠে – বেশ আনন্দে আছো ?
- এতদিন ছিলাম । আজ বুঝতে পারছি - কি বুঝছ ? একজন গুঁড়ো মশলার মালিক শুধু হদুদ গুঁড়ো , জিরে
পাওডার , আদা বাটাই বানায় না । লেখকও বানিয়ে দেয় আজকাল ।