গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৬

নীহার চক্রবর্তী

দিশারী


ছাতিমপুর হাইস্কুলে চারজন বাংলার শিক্ষক । রমেশবাবু,তরুণবাবু,নীলিমাদিদিমণি আর নতুন শিক্ষক তন্ময় । এরা চারজন বাংলাটাকে চারভাগে করে নিয়েছে । রমেশবাবু খুব পুরনো শিক্ষক । তিনি কবিতাটা দারুণ পড়ান । এ ব্যাপারে বেশ তার নাম আছে । তরুণবাবুকে ব্যাকরণে ওস্তাদ বলতে হয় । এলাকায় তার খুব যশ এ ব্যাপারে । নীলিমাদিদি বরাবর গদ্য পড়ান । বেশ ভালোই । 
তন্ময় বলেছে,আমি নির্মিতিটা পড়াবো । কেমন ?বাকি তিনজন তাতেই রাজী । এভাবেই বাংলা পড়ান চলছে ছাতিমপুর হাইস্কুলে ।
কিন্তু সব নামকে ছাড়িয়ে গেছে তরুণবাবু । এলাকায় তার মুখে-মুখে নাম । অভিভাবকরাও জেনে গেছে তার ব্যাপারে । অন্য দুই সিনিয়ার শিক্ষকের তার জন্য খুব ক্ষোভ ।
রমেশবাবু প্রায় মুখ-ভার করে বলে,আমি তো কম কষ্ট করি না । তাহলে ?
নীলিমাদিদিমণি তার স্কুলের সখীদের মধ্যে তার কষ্টের কথা জানায় । তন্ময় দুবছর পড়াচ্ছে । তাই তার এখনো মুখ ফোটেনি তেমন ।
কিন্তু কেন ? কেন তরুণবাবুর এত নাম ? সে ব্যাপারটা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন । শেষে স্কুলের সংস্কৃতের প্রবীণ শিক্ষক চক্রপাণিবাবু এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিলেন হেসে-হেসে । 
তিনি হেড-স্যার সহ বেশ কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকার সামনে সেদিন বললেন,’’আসলে হয়েছেটা কি জানেন ? তরুণবাবু তার ছেলেমেয়েদের মাকে চিনতে শিখিয়েছেন । ভাষা মানেই তো আমাদের মা । ব্যাকরণ পড়িয়ে তিনি সেই মাকে চিনিয়ে দিয়ে অসাধারণ কাজটা করে চলেছেন দিনের পর দিন । আবার শুনেছি তিনি সময় পেলে অন্য বিষয়গুলোও ধরেন । আমার নাতী বলছিল সেদিন । তাহলে বলুন তো এবার,তরুণবাবু সবার পুজো পাবে,না অন্য কেউ ? এই হল ব্যাপার ।
 
একথা বলে তিনি আবার এক-মুখ অমলিন হাসি হেসে উঠলেন । বাকি সবাই শুধু মুখ চাওয়াচায়ি করতে থাকলো তখন ।
তারপর থেকে বাকি তিনজনও ব্যাকরণ পড়াতে শুরু করেছে জোরকদমে । 
কিন্তু তরুণবাবু ক্লাসে গেলে ছেলেমেয়েরা খুব হতাশার সুরে প্রায় বলছে তাকে,কিছুই বুঝিনি । আপনি ধরুন তো,স্যার ।
 
একথা শুনে তরুণবাবু খুব লজ্জা পায় ।
তারপর অস্ফুট-স্বরে বলে,দে তো দেখি ।