আজকাল
মার সাথে কথা বলতে ভাল লাগে না অতুলের। বিরক্তির একশেষ । এক কথা একশ বার বললে কার
ভাল লাগেশুনতে ? মার মুখ কেমন স্যাঁতলা ধরা স্যাঁতলা ধরা হয়ে গেছে। অগাবগা করে শাড়ি
পরে থাকে। পেটিকোটের নীচ ছেঁড়ালেসঝুলঝুলকরে । ব্রার ফিতে দেখা যায়। চকচকে মা টা
কেমন ঘুনধরা হয়ে গেছে এই এক বছরে।পাশে বসলে কেমন কটরররর , কটর ররর শব্দ হয়।
অতুল দেখেছে মা যখন ঘুমোয় পায়ের পাতার গোঁড়ালিতে মরা মরা ভাব জেগে
উঠে। আগে দুটো করে আংটি পরত দু পায়ে। এখন খালি আঙ্গুল।শুকনোসাদাটে ঠোঁট। আজকাল
লিপস্টিক লাগায় কেবল বাইরে যেতে গেলে। কথাও বলে অসুস্থ অসুস্থ ভাব দেখিয়ে।অথচ
ডাক্তারের কাছে যেতে বললে যায় না শুধু হাসে। ডাক্তার ওষুধ ছাড়া দিব্যি আছে। তার
মানে মা অসুস্থ নয়। তবে হ্যা মার একটা অসুখ আছে তা হলো, অতুল পড়্ পড়্ পড়্। পড়তে
বোস গিয়ে। আমি মরে গেলে ভেসে যাবি যে বাবা !
এই
জন্যে আরো বিরক্ত লাগে। অতুল বুঝে পায়না মা মরে গেলে কেন তার পড়াশুনা হবে না, চাকরি হবেনা, বিয়ে হবেনা
কিচ্চছু হবেনা। কিচ্ছু না হয়ে সে ভেসে যাবে ? বোগাস! শুনতে শুনতে কানের ভেতর উচ্ছে
করলা নিম গাছ জন্মে গেছে। এক ঝটকায় মার রুম পেরিয়ে তাড়াতাড়ি লক করে দেয় আউট ডোর
।বসে বসে এবার যতক্ষণ খুশি বকবক করুক । সাজিদ ততক্ষণে হাওয়ায় হাওয়া। ফিরে এসে একটা
ধমক ধামক দিয়ে ম্যানেজ করে নিলেই হবে !
হাওয়ায়
ঘূর্ণি তুলে হাটতে থাকে অতুল। এতক্ষন নিশ্চয় সবাই এসে গেছে। ও দেরি করে গেলেইরাতুলআওয়াজ
দেয়, উলে উলে উলে মামাজ ডলি, ব্লাক বার্বি হ্যাভ য়ু এনি উল ? এই একুশে ভাল লাগে না
এগুলো শুনতে! ডিসগাস্টিং। সেরিলিনা ভেনিসের মত স্ম্যাশ মেরে রাতুলকে ঠেলেঠুলে
সামনে গিয়ে বসে ও। আফতাব ভাইয়া বক্তব্য রাখছে।
চশমার ফাঁকে ঘোঁচ করে একবার অতুলকে
দেখে নেয়। ফাঁকে পেলে দেরি করার জন্যে পাঁচ টাকার ডিটারজেন্টে ধুয়ে দেবে
জানে অতুল।
মন
দিয়ে আফতাবভাইয়ের বক্তব্যের পিক পয়েন্টগুলো ক্যাচ করে অতুল। আফতাব ভাইয়ার প্রতিটা
বক্তৃতার নোটস রাখে ও । আজকেও পেন বের করার সময় বাদামি রঙের খামটা একটু বেশি বের করে রাতুলকে দেখিয়ে আবার
ভেতরে ঢুকিয়ে রাখে। রাতুল এখন পাখির মত গলায় ডাকতে শুরু করবে । কিন্তু অতুল না
তাকিয়ে লিখে যেতে থাকে জঙ্গিবাদ আর মডার্ন ইসলামের ঝামেলার সাইডগুলো।
মাসিক
এই পাঠচক্রে ছ মাস ধরে যুক্ত হয়েছে ও। কি কি আলোচনাহবে তা ফেবুতে আগেই জানিয়ে
দেওয়া হয়।একজনগুডওডিয়েন্সএন্ড ব্রিলিয়ান্ট পার্টিসিপেন্টস হিসেবে অতুল মন কেড়েছে
সবার। যে কোন বিষয়ে হেলদি প্রশ্ন করতে অতুলের জুড়ি নাই। কি করে পারিস রে? মেয়ে
বন্ধুরা ভির্মি খায়, তুই সারাক্ষণ বই পড়িস তাই না রে? অতুল না হ্যা কিছুই না বলে
ধুসস করে উড়িয়ে দেয়। সিক্রেট ট্রুথ ইজ ,এজেন্ডার বিষয়তো আগেই জানা, সাথে আছেগুগলদাদু
। সার্চ করো আর মেমরিতে রেখে দাও ।তারপর পটপট কেরদানি মেরে বলে যাওয়া !
পাঠচক্র
শেষে ওদের লুচি আলুর দম খাইয়ে চলে গেছে আফতাব ভাইয়ারা। ফাঁকা ক্যান্টিনে এবার রাতুল
নয়ন নম্রতা ঋষি ঠেসে ধরে অতুলকে। সানজানা আর ঋষি ওর পকেট থেকে টেনে বের করে নেয়
বাদামী খাম। ওয়াও –জোস্-- ওদের চীতকারেক্যান্টিনের ছেলেটাও হাসে। সানাজানা খপাত
করে চুমু খেয়ে বলে, ওয়াও ওয়াও বড় হয়ে গেছিস রেতুই বলটু মিয়া। অতুল ঝাঁপিয়ে কিল
ঘুষি ছোড়ে, শাট আপ গাইজ,বলটু বলবি না কেউ। আর একবার বলটু বললেই প্যান্ট খুলে এই টেবিলের
উপর দাঁড়িয়ে দেখিয়ে দেব শ্লা আমি বলটু কিনা। খুকখুক করে হাসে রাতুল, সোনারচান্দি
মাইয়ারাবলটুমিয়াকে একটু ফিজ্যিক্যাল একটিভিটিসও করাইও ত। ব্রেন আরো সাফ সুতরো হইবে
আনে আর কি! লাগলে কইও পাওয়ার সাপ্লাই দিমুনে।
সন্ধ্যা
কেটে রাত হচ্ছে। ওরা হাঁটতে হাঁটতে লেকের কাছে এসে বসে। রাতুল সানজানা কিছুটা
প্রাইভেট সময় কাটিয়ে যোগ দেয় ওদের সাথে।লেকের কালো জলে দূর আলো ঝলকে উঠছে। ক্ষয়া
চাঁদ জলের নীচে। লেকের জল থির থির কাঁপছে ! সানজানা ঋষি গান ধরেছে । রাতুল গীটারে।
নম্রতা শুয়ে আছে কুন্ডলি পাকিয়ে। আজ বেশি টেনে ফেলেছে। কি এক ঝামেলায় ওর ফেসবুকিয়
প্রেমিকের সাথে ব্রেক হবে হবে তাই মন খারাপ। অতুল গীটার পারে না গান জানে না দু এক
লাইন ছাড়া।ওর গীটার পড়ে থেকে পচে যাচ্ছে । মা ই কিনে দিয়েছিল। দু একমাস টুংটাং করে সেই যে ফেলে
রেখেছে কেমন স্যাতলা পড়ে গেছে। মার মত! কেঁপে উঠে অতুলের বুক। মা কি ক্ষয়ে যাচ্ছে ?
কিছু কি লুকিয়ে রাখছে ওর কাছ থেকে?
বন্ধুদের
চোখ এড়িয়ে সুইচ অন করে দেয় মোবাইলের। মা নিশচয় ফোন করে করে টেনশন করছে। নম্রতা উঠে
বসে, কটা বাজে রে? অতুল মোবাইল বের করে স্মার্টলি মুখ বাঁকায়, বেশি না, মাত্র নটা
সাতচল্লিশ। ছুট্টা খাবি আরেকটু ? হিহি হাহা করে হেসে উঠে সবাই। কারো কাছে আর
কিচ্ছু নাই। পুরো গাঁজার গাছটাই শেষ করে ফেলেছে ওরা। তবে চাইলেই অবশ্য পাওয়া যায়। ফ্লাক্সের
চা ওয়ালা ,বাদামওয়ালা ত আছেই। টাকা দিলেই ছু মন্তর ছু মন্তর এলিগেলি করে হাজির করে দেবে যা চাইবে তাই। ওরা
অবশ্য অন্যকিছু খায় না। কেবল গাঁজা খায়।
গুগল সার্চে অতুল দেখেছে গাঁজা ইজ মোস্ট ইউজফুল । ক্ষতিকর নয় মোটেই বরং হেলদি।
স্মরনশক্তি বাড়ায়। অ্যালঝেইমার্স রোগ প্রটেক্ট করে। ইদানিং নাকি অনেকগুলো দেশ
ভাবছে গাজার উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে
উন্মুক্ত করে দেবে। মাকে জানাতেই হা করে বলেছিল, তাই না কি! আমরা ত গাজাখোরদের আরো
অ্যাভয়েড করতাম। কি বিশ্রি হয়ে যায় ওদের দাঁত। অতুল তুচ্ছ করে হেসেছিল তোমাদের সময়
–ফুঃ- দ্যট ওল্ড এলিগেন্ট টাইম !
কতদিন
আগে ? অতুলের আবছা মনে পড়ে মা ভার্সিটিতে যাচ্ছে! মাত্র পয়তাল্লিশ। গ্রুপ ও ভ্যা ভ্যা কাঁদছে! ওদের স্টাডি সার্কেলে কত
আপু আসে, ম্যাম আসে তারা সবাই মার বয়েসি। কত স্মার্ট স্মাইলি ঝকঝকে লাগে ওদের। মার
কি সত্যি ই কিছু হয়েছে ? কেঁপে উঠে ওর বুক। মা ছাড়া আর কে আছে ওর? বছরে কে কতবার
খোঁজ নেয় ওদের ? ড্যাডা মারা যাওয়ার পর তেমন করে কেউ আসেও না। আর মার ত নিজের ভাই
বোন বাবা মা কেউ নেই। মানুষ ভালবাসে বলে মা ওর কাজিনদের ডেকে ডেকে বাসায় নিয়ে আসে।
আদর করে খাওয়ায়। থাকতে দেয়।
রাতুল
চাওয়ালাকে ডাকতে যেতেই সানজানা বারন করে। দশটা বাজতে মাত্র ক মিনিট বাকি । ঘড়ি
দেখে আঁতকে উঠে , আজ থাক রে। পাঁচটা মিসকল দিয়েছে আম্মু । সিওর কেলানো আছে কপালে ।
নম্মু এই নম্মু–নিম্মিসোনা ওঠ ওঠ । এই তুই একা যেতে পারবি ? নাকি পৌঁছে দিতে হবে? ঋষি দুঃখী চোখে চেয়ে দেখে নম্রতার মোবাইলের
স্ক্রীন জুড়ে ওর ফেবু প্রেমিকের ছবি। হাসিমুখ।অনেকটা রানবির কাপুরের মত। ঝকঝকে
দাঁতে হাসি ধরে রেখেছে।হঠাত মনে হয় ছবিটা ফেক্ নয় ত? কোত্থেকে সাহস ভর করে , ঋষি
এক ঝটকায় নম্রতায় টেনে তোলে , চল্ চল্ আমি তোকে পিক করছি।
ওরা
চলে যেতে রাস্তায় পুদিনা পাতা আর মাল্টা চা খায় সবাই । ঋষির জন্যে উইশ করে। নম্রতা
কি এবার বুঝবে ঋষি ওকে কত ভালবাসে! সানজানা প্রায় কেঁদে ফেলে রাতুলের হাত ধরে গভীরভাবে, নম্রতাকে কি ওরা অনুরোধ করবে? নাহ, রাতুল
অনেক ম্যাচুর, এ ব্যাপারে নো ফোর্স। ব্রিজের উঠার মুখে একজন আরেকজনেরচোখদেখে। লাল কমেছে
তো রে? রাতুল ওয়ার্ন করে,অতুলতুই মুখ ধুয়ে নে। এই নে –ওয়াটার বোটল বের করে দেয়,
আন্টি ধরে ফেলবে। যে চোখ আন্টির!
অতুল
মুখ ধোয় না। হাসে। পঞ্চমীর চাঁদের মত ক্ষয়া হাসি। এত রাত হল মা একটা ফোনও করেনি! আজকাল
জানতেও চায় না এত দেরি করলি যে বাবুয়া! ছিলিস কোথায় ?